(এই লেখাটা আগেও পোস্ট করেছি কিন্তু টাইমলাইনে এখন নাই। রিপোস্ট।)
ওখানে মিসেস রাবেয়া খাতুনকে নিয়ে যে লেখাটা লিখেছিলাম:
https://www.facebook.com/ali.mahmed1971/posts/10151488939132335
কেবল একটা ঘটনার কথা বলি: ভুরুঙ্গমারীর যুদ্ধে উক্য চিংদের সাফল্য ছিল অন্যদের জন্য অহংকার করার মত! মুক্তাঞ্চল থেকে স্বয়ং মিত্রবাহিনীর প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা ছুটে এসেছিলেন। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে যুদ্ধের সাফল্যের কারণ জানতে চেয়েছিলেন। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখেন, উক্য চিংদের বান্কারের মুখে একটা এলএমজির ট্রিগারে রশি বেঁধে সেই রশিটিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অনেক দূরে। সেখান থেকে রশিতে টান দিয়ে অনেকটা রিমোট কন্ট্রোলের মত এলএমজি ব্যবহার করা হয়েছে!
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমার যে অল্প পড়াশোনা কিন্তু তারপরও আর কোথাও এমন প্রতিবাদ আর কেউ করেছিলেন বলে অন্তত আমার জানা নাই। অথচ এই অগ্নিপুরুষকে এক বিজয় দিবসে বান্দরবান টাউন হলে ১০০ টাকার প্রাইজ বন্ড দিয়ে সম্মানিত (!) করা হয়েছিল!
অশ্রুসজল চোখে উক্য চিং বীর বিক্রম তখন প্রশ্ন রেখেছিলেন একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা ২০০০-এর কাছে:
এডামুই পাইং সংঘ থেকে গত তিন বছর ধরে উক্য চিং এর নামে মেধা বৃত্তি চালু হয়েছে। প্রথম শ্রেণীর স্কুল-ছাত্র ‘অনীক’ জানে না কার নামে এ বৃত্তি, কেন এ বৃত্তি কী তার ভূমিকা?
অনীকের দোষ দিয়ে লাভ কী! আমরা স্বাধীনতার এতো বছর পরও বেমালুম ভুলে গেছি আরেকজন আদিবাসি-আদিনারি প্রিনছা খেঁ-র কথা। ভাগিরথীর কথা। কী অবলীলায় ভুলে যাই, লালু'র কথা।) ঠিক ১৬ ডিসেম্বরে মুক্তিযোদ্ধঅ সুরুয মিয়া আত্মহত্যা করলে এতে আমাদের কোন লাজ নাই! আসলে ভুলে যেতে হয় কারণ এখন মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে একটা বিক্রয়যোগ্য পণ্য! যে যেভাবে পারছে বিক্রি করছে!
ওখানে মিসেস রাবেয়া খাতুনকে নিয়ে যে লেখাটা লিখেছিলাম:
https://www.facebook.com/ali.mahmed1971/posts/10151488939132335
ওখানে তাঁর বর্ণনার সবটা আমি কিন্তু দেইনি কেবল "এদের উপর শুধু চরম শারীরিক অত্যাচারই করেই এরা থেমে থাকেনি- অবলীলায় কেটে ফেলেছে, ছিঁড়ে ফেলেছে শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো...!"
এটা লিখে মেয়েদের উপর নির্যাতনের ভয়াবহতা, বীভৎসতা বোঝাবার চেষ্টা করেছি। আমাদের নারীদের প্রতি পাক-বাহিনীর আচরণ এমন বীভৎস ছিল যার বর্ণনা লিখতেও বুকের জোর লাগে। সেই জোর আমার নাই! এসব পড়ার জন্যও আসলে শক্ত নার্ভ দরকার! আমি যেটা আগেও বলেছি, পাক-আর্মি, এরা আসলে যোদ্ধা ছিল না, ছিল সাইকোপ্যাথ! এই সাইকোপ্যাথদের পুরুষাঙ্গ কেটে রাস্তায় শুইয়ে রাখার মত প্রতিবাদ করেছিলেন, 'উক্য চিং'। জঙ্গলে চলে কেবল জঙ্গলের আইন...।
একমাত্র আদিবাসি উক্য চিং বীর বিক্রম। তিন পার্বত্য জেলার একমাত্র আদিবাসি বীর বিক্রম। তিনি বাংলাদেশের ১৭৫ জন বীর বিক্রমের একজন।
৭১ এর ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যার হাতে এলএমজি, গ্রেনেড, মর্টার গর্জে উঠেছে বারবার। মাতৃভূমিকে বর্বর পাক-হানাদার বাহিনীর কবল থেকে স্বাধীন করতে মরণপণ যুদ্ধে যিনি ১৩ জন সদস্য নিয়ে অংশগ্রহন করেছেন। দুঃসাহসী এ যোদ্ধার প্রতিটি অভিযান শত্রুসেনার ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে। একের পর এক বর্বর পাকিস্তানি সেনারা লুটিয়ে পড়েছে মাটিতে।
৭১ এর ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যার হাতে এলএমজি, গ্রেনেড, মর্টার গর্জে উঠেছে বারবার। মাতৃভূমিকে বর্বর পাক-হানাদার বাহিনীর কবল থেকে স্বাধীন করতে মরণপণ যুদ্ধে যিনি ১৩ জন সদস্য নিয়ে অংশগ্রহন করেছেন। দুঃসাহসী এ যোদ্ধার প্রতিটি অভিযান শত্রুসেনার ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে। একের পর এক বর্বর পাকিস্তানি সেনারা লুটিয়ে পড়েছে মাটিতে।
কেবল একটা ঘটনার কথা বলি: ভুরুঙ্গমারীর যুদ্ধে উক্য চিংদের সাফল্য ছিল অন্যদের জন্য অহংকার করার মত! মুক্তাঞ্চল থেকে স্বয়ং মিত্রবাহিনীর প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা ছুটে এসেছিলেন। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে যুদ্ধের সাফল্যের কারণ জানতে চেয়েছিলেন। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখেন, উক্য চিংদের বান্কারের মুখে একটা এলএমজির ট্রিগারে রশি বেঁধে সেই রশিটিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অনেক দূরে। সেখান থেকে রশিতে টান দিয়ে অনেকটা রিমোট কন্ট্রোলের মত এলএমজি ব্যবহার করা হয়েছে!
উক্য চিং একবার একটি ছোট্ট ব্রিজের নীচে সার্চ করে দেখেন সাত-সাতটি রক্তাক্ত ছিন্নভিন্ন নারীদেহ। তখনও কারো জামায় শোভা পাচ্ছে ঝকঝকে ফাউন্টেন পেন। বুঝতে সমস্যা হয় না এরা স্কুল-কলেজের ছাত্রী, বয়স ১৬ থেকে ১৮। পাক বাহিনী দ্বারা চরম পৈশাচিক নির্যাতনের পর এদের হত্যা করে পানিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে।এই উক্য চিং, যিনি বাঙালী নারীদের ওপর পাক সৈন্যদের বর্বর নির্যাতনের প্রতিবাদে পাক বাহিনীর এক কমান্ডারসহ সাত সেনাকে ধরে তাদের পুরুষাঙ্গ কেটে হত্যা করে রাস্তায় ফেলে রেখেছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমার যে অল্প পড়াশোনা কিন্তু তারপরও আর কোথাও এমন প্রতিবাদ আর কেউ করেছিলেন বলে অন্তত আমার জানা নাই। অথচ এই অগ্নিপুরুষকে এক বিজয় দিবসে বান্দরবান টাউন হলে ১০০ টাকার প্রাইজ বন্ড দিয়ে সম্মানিত (!) করা হয়েছিল!
অশ্রুসজল চোখে উক্য চিং বীর বিক্রম তখন প্রশ্ন রেখেছিলেন একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা ২০০০-এর কাছে:
'কেন এই প্রাইজ বন্ড দিয়ে আমাদের লজ্জা দেয়া'?
উক্য চিং বীর বিক্রম বললেন, ‘দ্যাখেন, করাচি থেকে পূর্ব পাকিস্তানে এসে ‘৭১ সালে কেমন গোল খেয়ে গেল পাকিস্তানিরা! বলেই হা-হা- করে হেসে উঠলেন। কথা বলছেন আর বুকে ঝোলানো মেডেলগুলো ঝন ঝন করে উঠছে।
এডামুই পাইং সংঘ থেকে গত তিন বছর ধরে উক্য চিং এর নামে মেধা বৃত্তি চালু হয়েছে। প্রথম শ্রেণীর স্কুল-ছাত্র ‘অনীক’ জানে না কার নামে এ বৃত্তি, কেন এ বৃত্তি কী তার ভূমিকা?
অনীকের দোষ দিয়ে লাভ কী! আমরা স্বাধীনতার এতো বছর পরও বেমালুম ভুলে গেছি আরেকজন আদিবাসি-আদিনারি প্রিনছা খেঁ-র কথা। ভাগিরথীর কথা। কী অবলীলায় ভুলে যাই, লালু'র কথা।) ঠিক ১৬ ডিসেম্বরে মুক্তিযোদ্ধঅ সুরুয মিয়া আত্মহত্যা করলে এতে আমাদের কোন লাজ নাই! আসলে ভুলে যেতে হয় কারণ এখন মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে একটা বিক্রয়যোগ্য পণ্য! যে যেভাবে পারছে বিক্রি করছে!
*একজন একবার এক পত্রিকায় চিঠি লিখেছিলেন। উক্য চিং পাকসেনাদের পুরুষাঙ্গ কেটে হত্যা করে রাস্তায় শুইয়ে রেখেছিলেন এই বিষয় নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। তার দৃষ্টিতে এটা নৃশংসতা, জেনেভা কনভেনশন ইত্যাদি...। বটে রে! পাক আর্মিদের সীমাহীন নৃশংসতা কয়টা উদাহরণ দেব? কেবল এই একটাই কী যথেষ্ঠ না?
2 comments:
শুভ ভাই,ওনার না কি উক্য চিং না ইউ কে চিং? কালের কন্ঠে পড়লাম ইউ কে চিং।
এটা আমিও দেখেছি।
উক্য চিংকে নিয়ে দীর্ঘ একটা সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছিল সাপ্তাহিক ২০০০।
কালের কন্ঠের ইউ কে চিং এটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে কারণ যে পত্রিকা মুক্তিযুদ্ধের এই অসাধারণ ছবিকে সংগৃহিত বলে চালিয়ে দেয় তাদের উপর আস্থা রাখাটা কঠিন। লিংকটা দেখুন:
http://www.ali-mahmed.com/2010/03/blog-post_6688.html
ধন্যবাদ, আপনাকে। অন্যত্র এই সংক্রান্ত লেখা পেলে দয়া করে লিংক দেবেন।
Post a Comment