মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নির্দিষ্ট বিশেষ কোন মাসে লিখতে ইচ্ছা করে না। কারণ ডিসেম্বরে, সবাই ঝাপিয়ে পড়ে লিখবে। এ বিষয়ে আমার নিজস্ব অভিমত হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, আবেগ থাকা প্রয়োজন সর্বক্ষণ। কিন্ত নির্দিষ্ট একটা সময়ে আমরা প্রবলভাবে আবেগক্রান্ত হয়ে পড়ি।
মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে আমাদের শেকড়। একটা গাছের শেকড়কে বাঁচিয়ে রাখতে যেমন প্রয়োজন নিবিড় পরিচর্যা- হৃদপিন্ড যেমন ধুকধুক করে চলে অবিরাম, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের আবেগ থাকবে বুকের ঠিক মাঝখানটায়, নিরবচ্ছিন্নভাবে! অনবধানবশত হঠাৎ মনে পড়ল আর কিছুটা সময় খুব আলোচনা হলো, এরপর আমরা ভুলে গেলাম, এর আসলে কোন অর্থ হয় না!
অবশ্য এটা আমাদের বৈশিষ্টও বটে। সমস্তটা জীবন আমরা চলি এলোমেলোভাবে, অন্যায় অত্যাচার করে- খানিকটা বয়স হয়ে গেলেই দাড়ি-টাড়ি ছেড়ে একেবারে সাধু হয়ে যাই। ইশ-শ, গড় আয়ুর সমান আমরা প্রত্যেকে বাঁচব এমন গ্যারান্টি কার্ড যেন আছে আমাদের কাছে! সেল ফোনে যেন সৃষ্টিকর্তা ফোন করে কনফার্ম করেছেন আর কী!
মুক্তিযুদ্ধের মজার ব্যাপারটা হচ্ছে, ঘুরেফিরে চলে আসে অল্প কয়েক জন মানুষের অবদানের কথা- এদের কথা বলে বলে আমরা মুখে ফেনা তুলে ফেলি। যেন এরাই দেশটা স্বাধীন করে ফেলেছেন- আর কারো অবদান ছিল না! আমরা বিস্মৃত হই, ‘ভাগিরথী নামের হিন্দু সেই বালিকাটির কথা! আমরা অবলীলায় ভুলে যাই ‘লালু নামের ১০/১২ বছর বয়সী সেই বালকটির কথা। যে অসমসাহসী বালকটি গ্রেনেড মেরে পাকিস্তানী আর্মীর বাংকার উড়িয়ে দিয়েছিল!
... ... ...
"মিসেস রাবেয়া খাতুন। সুইপার। রাজারবাগ পুলিশ লাইনের এস, এফ কেন্টিনের তখন কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ। পাক বাহিনী অতর্কিতে হামলা করে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে। ২৬শে মার্চ সকাল পর্যন্ত বাঙ্গালী পুলিশ বাহিনী প্রাণপণ যুদ্ধ চালিয়ে যান কিন্ত পাক বাহিনীকে ঠেকিয়ে রাখতে পারেননি। নিরুপায় তাঁদের প্রাণ ব্যতীত দেয়ার মতো আর কিছুই ছিল না!
বাঙ্গালী পুলিশদের নৃশংস ভাবে হত্যা করে পাক বাহিনীর শুরু করে তাদের তান্ডবলীলা। অনেকের সঙ্গে মিসেস রাবেয়া খাতুনকেও বের করে নিয়ে আসে। রাবেয়া খাতুনসহ সবাইকে শারীরিক চরম অত্যাচার করে একে একে মেরে ফেলা শুরু করে।
মিসেস রাবেয়া খাতুন এই বলে নিজের প্রাণ রক্ষা করেন: আমি সুইপার, আমাকে তোমরা মেরে ফেললে তোমাদের ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করার মতো কেউ থাকবে না। নিজেদের সুবিধার কারণে পাক বাহিনী তাঁকে বাঁচিয়ে রাখে এই শর্তে, তিনি এখানে সুইপারের কাজ চালিয়ে যাবেন। মিসেস রাবেয়া খাতুন, এখানে থাকার সূত্রে জানতে পারেন, না-জানা অনেক কথা। পাক সেনারা সাময়িক ক্যাম্প বানায় রাজারবাগ ব্যারাককে।
পাক সেনারা তাদের দালালদের সহায়তায় রাজধানীর স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অভিজাত এলাকা থেকে অসংখ্য বাঙ্গালী বালিকা, যুবতীদের এখানে ধরে নিয়ে আসে। এদের উপর শুধু চরম শারীরিক অত্যাচারই করেই এরা থেমে থাকেনি- অবলীলায় কেটে ফেলেছে, ছিড়ে ফেলেছে শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো। এমন কোন অন্যায় নেই যা ওই সময় এরা করেনি। মেয়েদের রোমহর্ষক চিত্কার, ঢাকা পড়ে গেছে মদ খাওয়া এইসব পশুদের হ্যা-হ্যা হাসির তোড়ে।
মিসেস রাবেয়া খাতুন তাঁর কাজ করার ছল করে যে অবর্ণনীয় দৃশ্য দেখেছেন, পরে বর্ণনা দিয়েছেন, একজন মানুষকে অসুস্থ করে দেয়ার জন্য, মাথায় সমস্যা করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট! এই বর্ণনাগুলো পড়তে কষ্ট হয়- বড় কষ্ট হয়, বুক ভেঙ্গে আসে।
এই অভাগা মেয়েদের বাহ্যজ্ঞান লোপ পেত- তখন তাঁদের ময়লা পরিস্কার করার জন্য ডাক পড়তো মিসেস রাবেয়া খাতুনের। অসহায় তিনি, নির্বাকদৃষ্টিতে দেখা ছাড়া তাঁর কোন উপায় ছিল না। তারপরও তিনি সময়ে সময়ে সুযোগ পেলেই এখান থেকে কিছু মেয়েদেরকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিতেন।"
"মিসেস রাবেয়া খাতুন। সুইপার। রাজারবাগ পুলিশ লাইনের এস, এফ কেন্টিনের তখন কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ। পাক বাহিনী অতর্কিতে হামলা করে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে। ২৬শে মার্চ সকাল পর্যন্ত বাঙ্গালী পুলিশ বাহিনী প্রাণপণ যুদ্ধ চালিয়ে যান কিন্ত পাক বাহিনীকে ঠেকিয়ে রাখতে পারেননি। নিরুপায় তাঁদের প্রাণ ব্যতীত দেয়ার মতো আর কিছুই ছিল না!
বাঙ্গালী পুলিশদের নৃশংস ভাবে হত্যা করে পাক বাহিনীর শুরু করে তাদের তান্ডবলীলা। অনেকের সঙ্গে মিসেস রাবেয়া খাতুনকেও বের করে নিয়ে আসে। রাবেয়া খাতুনসহ সবাইকে শারীরিক চরম অত্যাচার করে একে একে মেরে ফেলা শুরু করে।
মিসেস রাবেয়া খাতুন এই বলে নিজের প্রাণ রক্ষা করেন: আমি সুইপার, আমাকে তোমরা মেরে ফেললে তোমাদের ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করার মতো কেউ থাকবে না। নিজেদের সুবিধার কারণে পাক বাহিনী তাঁকে বাঁচিয়ে রাখে এই শর্তে, তিনি এখানে সুইপারের কাজ চালিয়ে যাবেন। মিসেস রাবেয়া খাতুন, এখানে থাকার সূত্রে জানতে পারেন, না-জানা অনেক কথা। পাক সেনারা সাময়িক ক্যাম্প বানায় রাজারবাগ ব্যারাককে।
পাক সেনারা তাদের দালালদের সহায়তায় রাজধানীর স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অভিজাত এলাকা থেকে অসংখ্য বাঙ্গালী বালিকা, যুবতীদের এখানে ধরে নিয়ে আসে। এদের উপর শুধু চরম শারীরিক অত্যাচারই করেই এরা থেমে থাকেনি- অবলীলায় কেটে ফেলেছে, ছিড়ে ফেলেছে শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো। এমন কোন অন্যায় নেই যা ওই সময় এরা করেনি। মেয়েদের রোমহর্ষক চিত্কার, ঢাকা পড়ে গেছে মদ খাওয়া এইসব পশুদের হ্যা-হ্যা হাসির তোড়ে।
মিসেস রাবেয়া খাতুন তাঁর কাজ করার ছল করে যে অবর্ণনীয় দৃশ্য দেখেছেন, পরে বর্ণনা দিয়েছেন, একজন মানুষকে অসুস্থ করে দেয়ার জন্য, মাথায় সমস্যা করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট! এই বর্ণনাগুলো পড়তে কষ্ট হয়- বড় কষ্ট হয়, বুক ভেঙ্গে আসে।
এই অভাগা মেয়েদের বাহ্যজ্ঞান লোপ পেত- তখন তাঁদের ময়লা পরিস্কার করার জন্য ডাক পড়তো মিসেস রাবেয়া খাতুনের। অসহায় তিনি, নির্বাকদৃষ্টিতে দেখা ছাড়া তাঁর কোন উপায় ছিল না। তারপরও তিনি সময়ে সময়ে সুযোগ পেলেই এখান থেকে কিছু মেয়েদেরকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিতেন।"
( তথ্যসূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, অষ্টম খন্ড, পৃষ্টা: ৫৩-৫৬)
... ... ...
... ... ...
'মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশের একেকটি সুইপার কলোনি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের একেকটি আশ্রয়স্থল। চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, ঈশ্বরদি, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জাত সুইপাররা মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছেন, খবর এনে দিয়েছেন, আর্মস লুকিয়ে রেখেছেন, এমনকি সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহনও করেছেন। কিন্তু দলিত মুক্তিযোদ্ধাদের কথা সাধারণত কোথাও উল্লেখ করা হয় না।'
কথাগুলো ক্ষোভের সঙ্গে বলেন সুইপারদের নেতা বিজি মূর্তি। আর মিরনজল্লা কলোনির হরিজন সেবক বাবুর চন্দ্র দাস বলেন:
'মিরনজল্লা সুইপার কলোনিতে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেয়ার খবর ঠিকই গিয়েছিল পাকিস্থানি বাহিনীর কাছে। তাই হানাদার বাহিনি ১৯৭১ সালের ২২ নবেম্বর কলোনি ঘেরাও করে কলোনির প্রধান সরদার মহাবীর সামুন্দসহ ১০ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে ধরে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে হত্যা করে।'
সুইপাররা দুঃখের সঙ্গে জানান, মুক্তিযুদ্ধে তারা অবদান রাখলেও মুক্তিযোদ্ধাদের নাম তালিকায় তাদের নাম নাই, কোন স্বীকৃতি দেয়া হয় না।
(বিজি মূর্তি এবং বাবুর চন্দ্র দাসের সাক্ষাৎকার: দৈনিক যায়যায়দিন ১৮.১০.০৬)
(বিজি মূর্তি এবং বাবুর চন্দ্র দাসের সাক্ষাৎকার: দৈনিক যায়যায়দিন ১৮.১০.০৬)
No comments:
Post a Comment