এরশাদ-খালেদা জিয়ার সময় যেভাবে লেখা গেছে, ক্যারিকেচার, কার্টুন আঁকা গেছে আওয়ামী শাসনামলে সেটা ছিল স্রেফ একটা স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন! একদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (!) শহিদুল আলমকে নগ্ন পায়ে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেল। কোথায় নিয়ে গেল সেটা আবার অনেক পরে জানা গেল। কোর্টে আবার 'মাই লর্ড' বিচারক পুলিশকে জিজ্ঞেস করছেন, পুলিশ আসামীর (শহিদুল আলমের) ফোনের পাসওয়ার্ড নিয়েছে কিনা, সেদিনই লেখালেখির কফিনে পেরেক ঠোকা হয়ে গেল...!
Monday, July 2, 2007
কনক পুরুষ: ১
(আমার ইচ্ছা ছিল চালবাজি করার জন্য। অনেক পুরনো উপন্যাস ছিল এটা। আমার ধারণা ছিল, এটা ধারাবাহিকভাবে পোস্ট করব। আফসোস, ধরা খেয়ে গেলাম। হা ঈশ্বর, এমন মানুষও আছেন। ‘কনক পুরুষ’ উপন্যাসটার কথা এখনও মনে রেখেছেন!
যাই হোক, এই পোস্টটা আমি উৎসর্গ করছি মোসতাকিম রাহী এবং তাঁর মেজদা মোরসালিনকে। কেন?
লেখকরা গল্প বলেন, এই তাঁদের কাজ। আমার মতো অগাবগা লেখকও লেখকদের অনুকরণ করে চেষ্টা করেন গল্প বলতে।
কিন্তু মোসতাকিম রাহী এবং তাঁর মেজদা মোরসালিন গল্প সৃষ্টি করেন, উপাদান যোগান। আমার মতো মানুষকে বিভ্রান্ত, হতবাক করে দেন তাঁদের ভালবাসায়-মমতায়...)।
...
"জয় যথাসম্ভব নিঃশব্দে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে, সশব্দে নিঃশ্বাস ফেলে বলল, উফ-ফ, কি ধকলটাই না গেল আজ!
ঘুরে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে গেল। মেয়েটা বড় বড় চোখ মেলে তাকিয়ে আছে সেই চোখে আছে রাজ্যের ভয়। এর মানে কী! আজ ওর বাসর রাত। বিয়েটা হঠাৎ করেই হয়ে গেল। এর আগে মা বেশ কয়েকটা মেয়ে দেখে কোন না কোন খুঁত খুঁজে বের করেছেন।
এ বিয়েতেও মা গররাজি ছিলেন। জয়ের এককথা, এ বিয়ে না হলে আর বিয়ে করব না। কাঁহাতক আর সহ্য করা যায়! তাছাড়া এ মেয়েকে দেখতে গিয়ে সব কেমন ওলটপালট হয়ে গেল, চোখের দৃষ্টিতে এমন কিছু একটা ছিল ওর সব কেমন জট পাকিয়ে গেল।
ফুলের তীব্র গন্ধে ওর কেমন দমবন্ধ ভাব হচ্ছে। ফ্যানের রেগুলেটর এক থেকে পাঁচে নিয়ে এল। চরম বিরক্তি নিয়ে গা থেকে আচকানটা খুলল। এসব পরার কোন মানে হয়, নিজেকে কেমন ক্লাউন ক্লাউন মনে হচ্ছিল!
আড়চোখে তাকিয়ে বিস্ময়ের সীমা রইল না। মেয়েটা কেমন বিবর্ণ হয়ে গেছে, ভয়ে মনে হচ্ছে চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসবে! এসব কী, ও বাঘ না ভালুক! যথেষ্ট দূরত্ব রেখে খাটে বসে কোমল গলায় বলল, ইভা এমন করছ কেন, কি হয়েছে!
ইভা চোখের জলে ভাসতে ভাসতে বলল, আপনার পায়ে পড়ি, আমাকে ছোঁবেন না। ইভা সত্যি সত্যি জয়ের পা ধরতে গেল।
জয় বিদ্যুৎগতিতে সরে যেতে গিয়ে মশারীর একটা স্ট্যান্ড ফেলে দিল। মশারীর স্ট্যান্ডটা একপাশে দাঁড় করাতে করাতে ভাবছে , আরে, এ এমন রকম করছে কেন!
জয় সামলে নিয়ে হাসিমুখে বলল, নিষেধ করে তুমিই দেখি আমাকে ছুঁয়ে ফেলছ, শান্ত হও, আমি তোমার গায়ে হাত দেব না। কি বিশ্বাস হচ্ছে না? ইভার গা ভয়ে কাঁপছে। খুব ইচ্ছা করছে কথাগুলো বিশ্বাস করতে- বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলায় দুলছে?
জয় হাঁই চেপে বলল, তোমার নিশ্চই ঘুম পাচ্ছে, শুয়ে পড়ো। আমার মনে হয় আমি অন্য ঘরে শুলে তুমি আরামে ঘুমাতে পারতে। কিন্তু সেটা ঠিক হবে না, এ নিয়ে ভারী গোলমাল হবে। সবাই তোমাকেই দুষবে। তুমি খাটে শোও, আমি শোফায় শুচ্ছি। প্লিজ আমার উপর বিশ্বাস রাখো। কি রাখা যায় বিশ্বাস?
ইভা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে কৃতজ্ঞ চোখে তাকাল। নতুন জীবনের শুরুটা তো ভালই মনে হচ্ছে- সামনে কি আছে কে জানে! সব কথা জানলে এরা কি অনর্থই না করবে! আচ্ছা, তাইলে কি এরা সমস্ত সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলবে?
জয় সোফায় একটা বালিশ আর কোল বালিশ ফেলল। ওর এই একটা বদভ্যাস। কিছু আঁকড়ে না শুলে ঘুম হয় না। সিগারেট ধরিয়ে অপ্রসন্ন হয়ে বলল, সরি, তোমার কথা মনে ছিল না, সিগারেটের ধোঁয়ায় নিশ্চই তোমার সমস্যা হচ্ছে। ইয়ে, জাস্ট এক টান দিয়ে নিবিয়ে ফেলব, প্রমিজ। মনে মনে ভাবছে, ধ্যাত, নিজের ঘরে আরাম করে সিগারেট টানা না গেলে বেঁচে থেকে সুখ কী!
ইভা হাসি গোপন করে শংকিত চোখে তাকিয়ে আছে, এর এক টানের নমুনা ভয়াবহ। ভাব দেখে মনে হচ্ছে এক টানে পুরো সিগারেটটা শেষ করে ফেলবে। চোখ কেমন বড়ো হয়ে গেছে! জয় তাড়াহুড়ো করে অ্যাশট্রেতে সিগারেট নিভিয়ে খকখক করে কাশতে লাগল। অসতর্কতায় পানি খেতে গিয়ে টেবিলের কিনারায় রাখা কাঁচের জগ ফেলে দিয়েছে। কাঁচ ভাঙ্গার শব্দ সুনসান রাতে কানে তালা লাগার উপক্রম। ইভার কেমন মায়া হচ্ছে, আহা, বেচারা ধীরে-সুস্থে শেষ করলে কি হত। ও তো আর নিষেধ করেনি।
মা দমাদম দরজা পেটাচ্ছেন। খোকা-খোকা, কি হইল, দরজা খোল।জয় লাফিয়ে দরজা খোলার চেষ্টায় পায়ে জড়িয়ে গেছে আচকানটা, আচকানসহ পা টেনে টেনে হাঁটতে চেষ্টা করছে- ঘন ঘন পা ঝাঁকিয়ে ছাড়াবার চেষ্টা করছে। একহাতে হেলমেটের মতো ধরে রেখেছে বিয়ের পাগড়ি, অন্য হাতে ছিটকিনি খোলার আপ্রাণ চেষ্টা। অনেক কসরৎ করে অবশেষে আটকে যাওয়া দরজাটা খুলতে পারল। ইভার মজা লাগছে মানুষটা উদ্ভটসব কান্ড দেখে!
জয় বিব্রত ভঙ্গিতে বলল, তুমিও মা, এমন করে কেউ দরজা পেটায়! জয়ের মা ভেতরে না ঢুকে, দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আগুন গলায় বললেন, থাপড়াইয়া কানপট্টি ফাটায়া ফেলব। গোটা ফ্লাটের লোক জেগে গেছে। অপদার্থ, হইছেটা কী! তোর পায়ে এইটা কি, ব্যান্ডেজ! অরি আল্লা, পাও কাটছে!
জয়ের লাজুক ভঙ্গি, কিছু না মা, পানির জগ ভেঙ্গেছে। জয়ের মা হাহাকার করে উঠলেন, কাঁচ দিয়ে পা কেটেছিস?
আরে না মা, তুমিও! আর এইসব কি কথা, আচকানটা তোমার কাছে ব্যান্ডেজ মনে হচ্ছে, আশ্চর্য।
জয়ের মা এইবার কাশি দিয়ে ঘরে ঢুকে চোখে বুলিয়ে ধোঁয়া দেখে আঁচ করে নিলেন। তীব্র কন্ঠে বললেন, এই বান্দর, অন্য একজন মানুষ ঘরে আছে সেই খেয়াল নাই। আবার নতুন জগটাও ভেঙ্গে ফেলেছিস দেখি! জয় বিব্রত হল, সরি মা।
জয়ের মা এইবার ইভার দিকে ফিরে বললেন, ইভা মা, তুমি একটু কানে আঙ্গুল দাও তো। এই বান্দরটার সাথে আমি বান্দরের ভাষায় একটু কথা বলি। না-না, সত্যি সত্যি কানে আঙ্গুল দাও।
ইভা বিভ্রান্ত হয়ে কানে আঙ্গুল দিয়ে মা-ছেলের কান্ডকারখানা দেখছে। আল্লা জানে, সামনের দিনগুলো কেমন যাবে জয়ের মা কাঁচের টুকরোগুলো কুড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় ইভাকে কোমল গলায় বলে গেলেন, ইভা মা, ওর দিকে একটু খেয়াল রেখ, মাঝেমাঝে ওর শ্বাসকষ্টের মত হয়।
জয়ের মা বেরিয়ে গেলে জয় মাথা নীচু করে হাসল। ইভা, মার কথায় কিছু মনে করো না। দেখবে, তোমার সঙ্গে ভাব হতে সময় লাগবে না।
জয়ের দু-চোখ ঘুমে জড়িয়ে আসছে। সোফায় লম্বা হলো। কিছুটা সময় চশমা পরেই নাক বরাবর ছাদের দিকে তাকিয়ে রইল, উসখুস করে চশমা সোফার হাতলে ঝুলিয়ে দিল। ঘুমে তলিয়ে যেতে যেতে ভাবল, এই মেয়েটি তাইলে সারা জীবন এখানে থাকবে। ওর, ওর পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে নেবে! আজন্ম পরিবেশ ছেড়ে সম্পূর্ণ নতুন এ পরিবেশে মানিয়ে চলতে হবে। আগে হয়তো সকাল দশটা পর্যন্ত ঘুমাত। এখন এ পরিবারের সকাল ছ-টায় হলে ওকেও কি ছ-টায় উঠতে হবে?"...
*পরের পর্ব: http://www.ali-mahmed.com/2010/08/blog-post_17.html
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
6 comments:
শুভ ভাই:
গতরাতে ২/৩টা কমেন্ট করেছিলাম, আসেনি কেনো? আপনি কি কমেন্ট মডারেশন করছেন, নাকি আপলোড হয়নি!
যেটা বলছিলাম, আপনার 'এসব নিয়েই' আর 'কনকপুরুষ' পড়তে আগ্রহী। নেক্সট বইমেলায় রিপ্রিন্ট করা যায় কিনা দেখবেন, প্লিজ।
আমি দুঃখিত শিমুল, সমস্যাটা কি দেখছি। আমার পেজে তো আমি মডারেশন রাখিনি!
আপনি কি মন্তব্যগুলো আবার করতে পারেন?
মন্তব্য নিয়ে আমি যে কি লালচি-লোভী, তা তো জানেই! হা হা হা!
দেখি শিমুল, অন্য কোন প্রকাশক রাজি হলে...
আরও সমস্যা আছে আমাকে পুরনও রোগে পেয়ে বসেছে। আগেরবার এই রোগটার বয়স ছিল ১০ বছর...
আর বাড়তি একই মন্তব্যগুলো মুছে ফেললে আশা করছি কিছু মনে করবেন না•••
প্রচ্ছদটা খোঁচা মেরে অনেক স্মৃতি জাগ্রত করে দিলো...!! আচ্ছা, 'কনক পুরুষ' এর একটা সিকোয়েল করা যায় না?
Post a Comment