এরশাদ-খালেদা জিয়ার সময় যেভাবে লেখা গেছে, ক্যারিকেচার, কার্টুন আঁকা গেছে আওয়ামী শাসনামলে সেটা ছিল স্রেফ একটা স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন! একদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (!) শহিদুল আলমকে নগ্ন পায়ে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেল। কোথায় নিয়ে গেল সেটা আবার অনেক পরে জানা গেল। কোর্টে আবার 'মাই লর্ড' বিচারক পুলিশকে জিজ্ঞেস করছেন, পুলিশ আসামীর (শহিদুল আলমের) ফোনের পাসওয়ার্ড নিয়েছে কিনা, সেদিনই লেখালেখির কফিনে পেরেক ঠোকা হয়ে গেল...!
Sunday, January 20, 2008
লেখালেখি বনাম লেখালেখি ডট কম
আমার মত অখ্যাত লেখকদের(!) জন্য, লেখার মান বোঝার জন্য লেখালেখি(বই) এবং লেখালেখি ডট কমের তফাত আকাশপাতাল।
বই লেখার প্রতিক্রিয়া হচ্ছে অনেকটা গন্ডারকে কাতুকুতু দেয়ার মত।
উদাহরণ দেই: কনকপুরুষ নামে একটা উপন্যাস কাজীদা বের করেছিলেন ৯৫ সালে। এটা যে কারও কারও ভাল লেগেছিল, দু-এক জন এখনও মনে করে বসে আছেন এইসব বিষয়গুলো আমি জানতে পারি ২০০৭ সালে; তাও ওয়েব-সাইটের মাধ্যমে। এর কোন মানে হয়!
লেখালেখি ডট কম বলতে আমি বোঝাচ্ছি ওয়েব-সাইটে লেখালেখি। প্রতিক্রিয়া বোঝার জন্য কখনও ৫ মিনিটও লাগে না।
২০০৬-এ সামহোয়্যার-এর খোজ পাই সম্ভবত প্রথম আলোতে। শুভ নামে লেখালেখির শুরু। প্রথমদিকে তো বিষয় খুঁজে পেতাম না। কপি-পেস্টই ভরসা। পরে সতর্কতার সংগে নিজের কিছু লেখা দিতে শুরু করলাম। ধরা পড়লে সমস্যা, হয় স্বীকার করতে হত শুভ’র পেছনের মানুষটা আমি নইলে সোজা বাংলায় চোর। আমি ব্যতীত অন্য কেউ যে আমার বই পড়ে না এর প্রমাণ পেলাম, তেমন কেউ ধরতে পারলেন না। সাবলীল গতিতে লেখা দিতে থাকলাম। কেউ কেউ ধরে ফেললেও চেপে গিয়েছিলেন বলে ধন্যবাদার্হ।
যাই হোক, সে এক সোনালি সময়। কী অপার আনেন্দেই না কেটেছে সময়টা। বাংলা টাইপ করতে পারতাম না। অক্ষরগুলো আমার কাছ থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াত তবুও অপার আনন্দে শব্দের পর শব্দ টাইপ করে গেছি, কখন ভোর হয়ে গেছে বলতেও পারিনি।
পরে ওখানকার অনেক পোস্ট নিয়ে শুভ’র ব্লগিং বের হল। ওখানে আর লেখালেখি হল না।
ওখানে লেখালেখি করার আর আগ্রহ ছিল না, সুর কেটে গিয়েছিল। কারণ অনেক। শুভ নামের পেছনের মানুষটা সামনে চলে এলো। অবশ্য ওই মানুষটা এসে গেল বলে তেমন কোন তারতম্যের কিছু নেই- দুইই অখ্যাত, উনিশ আর বিশ! তবুও পুরনো বন্ধুদের কারণে যাওয়া।
কালেভদ্রে এখনও।
ওখানে শিখেছি অনেক। আমার লেখালেখি যে ছাতাফাতা এটা অনেকের লেখা দেখে অবলীলায় বুঝতে পারতাম, এদের লেখার হাতকে এখনও ঈর্ষা করি।
পেয়েছিও অনেক। মমতায় বাড়ানো সব হাত। কোন শালা তাকায় মমতায় বাড়ানো নোখের দিকে! ওখানকার অনেকের সংগে এখনও যোগাযোগ আছে, অনেকের সংগে নাই।
তো, ওখানের অনেক কিছুর সংগে মানিয়ে নিতে আমায় বেগ পেতে হচ্ছিল। জায়গাটা ছিল বাংলাদেশের প্রতিবিম্ব-আয়না! কী নেই? ঈর্ষা, অহংকার, লম্বা লম্বা বাতচিত, অহেতুক ঠ্যাং ধরে টানাটানি। অন্যকে অসম্মান করার তীব্র ব্যাকুলতা। জায়গাটা যেহেতু লাইভ সেহেতু এখানে যারা লেখেন তারা থাকেন পুরোপুরি অরক্ষিত। কিন্তু আমরা ভুলে যাই ফ্রি স্টাইল কুস্তিতেও কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। একজন বেশ্যাকেও যে তার প্রাপ্য সম্মান দিতে হয় এটা আমরা আর কবে শিখব!
যেটা বলছিলাম, এই ইন্টারায়্যাকশন- আমার উপর চাপ পড়ত। অনেকের কাছে বিষয়টা হাস্যকর মনে হলেও এই চাপ কখনও কখনও আমি নিতে পারতাম না। কী আর করা, একজন দুর্বল মানুষের দুর্বল ভাবনা!
ওখানে থাকতে থাকতেই শুনছিলাম আরেকটা সাইট দাঁড়াচ্ছে। এখানকারই কিছু মেধাবী মানুষ নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। খোদার কসম, ওখানে যাওয়ার কোন গোপন ইচ্ছা আমার ছিল না। নিরিবিলিতে দু-কলম লেখার চেষ্টা করতেই আমার আনন্দ। কিন্তু এখানকার বেশ কিছু পরিচিত মুখ এবং আবেগীয় কিছু কারণে গেলাম। অবশ্যই এটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।
অরি আল্লা, ওখানে গিয়ে দেখি ব্রাক্ষণ, শূদ্রের খেলা। ওখানে কেবল ব্রাক্ষণরাই থাকবেন অন্যরা খেলা থেকে বাদ। ব্রাক্ষণদের মাঝে আমি ভারী বিব্রত হচ্ছিলাম। কারণ, উচুমার্গের বা উচু কোন বিষয়ের সংগে আজও খাপ খাওয়াতে পারিনি। এমনিতে আমার উচু-ভীতি আছে, উচু কমোডেও।
মূল প্রসংগ থেকে সরে এসেছি, শূদ্রের দলে এমন অনেককে ফেলা হলো যারা আমার প্রিয় মানুষ। অসহায় আমি, কেমন করে এদের চোখে চোখ রাখি!
তখন আমি এখান থেকে পালাতে উদগ্রীব।
ভাজা মরিচ পড়ল গিয়ে ল্যাটকা খিচুরিতে- অজান্তেই সুযোগ এসে গেল। ওখানে একজন আমাকে রাজাকার ভাবাপন্ন বলে ফতোয়া দিলে, আমি মন্তব্য করলাম, "শুভ রাজাকার ভাবাপন্ন এই কথাটা ঠিক না, সে আস্ত একটা রাজাকার। তার কর্মকান্ডের বর্ণনা পাবেন তার লেখা ‘আমি রাজাকার বলছি’ বইয়ে"।
হা হা হা। মন্তব্যটা করে খুব মজা পেয়েছিলাম। মানুষটা আমার মন্তব্যর রসিকতাটা ধরতে পারেননি!
কিছু সহৃদয় মানুষ আমার প্রতি অযাচিত মমতার কারণে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন। সত্যি বলি, আমি লজ্জায় লাল-নীল হয়ে যাচ্ছিলাম, ভারী বিব্রত হচ্ছিলাম। আমাকে নিয়ে এই হইচই ভাল লাগছিল না। পরে ওখানে আর ফিরে যেতে চাচ্ছিলাম না। কেননা অন্যদের উপর আমাকে নিয়ে অহেতুক চাপ পড়ত। হায়রে মায়া, হায় মমতা! ফিরে না গিয়ে উপায় ছিল না।
এরিমধ্যে আমি খুব বড় একটা বিপর্যয়ের মধ্যে পড়লাম। সব কেমন এলোমেলো হয়ে গেল। অস্বাভাবিক জীবন-যাপন করি। আর লেখা-টেখা!
তো, এখানকার প্রধান উদ্যেক্তা যিনি, তাকে একটা মেইল করলাম। প্রধান উদ্দেশ্য ছিল আবারও ভুল বোঝাবুঝির হাত থেকে রেহাই পাওয়া। কাতর হয়ে লিখেছিলাম, আমার সমস্যার কারণে এখন আর লেখা হয়ে উঠছে না, আপাতত ওই সাইটটাতেও লেখা হয়ে উঠবে না। বিষয়টা যেন বিবেচনা করা হয়, অন্য কোন অর্থ করা না হয়।
তিনি ফিরতি মেইল করলেন, কোন সমস্যা নাই।
হা ঈশ্বর, কেন কেন কেন? ঠিক ঠিক জবাব চাই! আমার বেলায়ই কেন এমন হয়? ড্রেন রাস্তার মাঝখানে চলে আসবে কেন? একান্তে একটু হাঁটতেও পারব না বুঝি, হুট করে ড্রেনে পড়ব কেন? নাকি আমাকে অমানুষ বলে তোমার ভ্রম হয়!
ওই সময়টাতে মেইল-টেইল চেক করার অবকাশ আর কই। বেশ সময় পর একদিন মেইল চেক করে দেখি জ্বলজ্বল করছে, আপনাকে এই সাইটে ব্লক করা হইয়াছে।
কেন? তার অবশ্য কোন ব্যাখ্যা নাই; কত ‘লম্বর’ আইন ভেংগেছি তারও কোন উল্লেখ নাই।
ওখানকার সতীর্থ কয়েকজনকে জানালে তারা জানালেন, এইটা কিছু না, টেকনিক্যাল সমস্যা- এইটা ওই সাইটের বাগ নাকি ‘বাঘ’। ‘বাঘ’ হলে ভালু(!)- কুনু সমস্যা নাই।
কিন্তু লগ-ইন করতে গিয়ে ব্যাটা সব ফাঁস করে দিল। সত্যি সত্যি ব্লক। ওই প্রধান উদ্যেক্তাকে বিষয়টা জানার জন্য মেইল করলাম। দিন যায, মাস, বছর- আজও সেই মেইলের উত্তর আসিনি। এটা আমার মানতে মন সায় দেয় না। একজন মানুষের কাছ থেকে মানুষের মত আচরণ আশা করাটা দোষের হবে কেন? এই ভব্যতা শেখাবার অভব্য দায়িত্ব আমায় নিতে হবে কেন!
তবে এ-ও হতে পারে যিনি মেইল পেয়েছেন তিনি ঠিক করেছেন হাতে-হাতে আমাকে এর উত্তর দেবেন। হেঁটে রওয়ানা দিয়েছেন, সময় লাগতেই পারে, কী আর করা; অপেক্ষা করা ব্যতীত!
ব্লক করায় এখানে লিখতে না পেরে হাপুষ নয়নে কান্না করার কোন আবশ্যকতা আমার ছিল না, বরং ভারমুক্ত লাগছিল। কিন্তু...। একটা কিন্তু রয়েই যায়, দু:সময়ে নাকি ছোট ছোট আঘাত সহ্যাতিত মনে হয়- তুচ্ছসব বেদনা তখন বুকে বড় বাজে।
বিভাগ
ক্ষমতার অপব্যবহার
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
1 comment:
আমি নিজে অনেকদিন লিখছি না, অনেকদিন ঠিক পড়াও হয়না। নানাবিধ কারণে। পড়া শুরু করলাম আবার, আপনার ব্লগের ঠিকানা পেলাম। সব আক্ষেপ, ভুল বোঝাবুঝি, বেদনা এ সবকিছু ছাপিয়ে একটা বিষয় খুব আনন্দের। সেই আনন্দের বিষয় হলো আপনি এখনো অনলাইনে লিখছেন। কোথায় লিখছেন, কেন লিখছেন সেটা একেবারেই তুচ্ছ ইস্যু। অনলাইনে লিখছেন,হাজার ক্রোশ দূরে বসে আমরা পড়ছি। ছোট ছোট ফন্টে একহাতি এক একটা লেখা, আমাদের মধ্যে কি অপূর্ব প্রণোদনা সঞ্চার করে সেটা আপনি বুঝবেন না।
আপনার জন্য, আমার কনগ্যারীর এক আঁজলা ভালোবাসা দিলাম।
Post a Comment