শফিক রেহমান, মানুষটার রসময় গুপ্ত নামে যথেষ্ঠ কুখ্যাতি ছিল।
যাযাদির বিশেষ সংখ্যাগুলোতে এমন কিছু আদিরসাত্মক গল্প ছাপা হত যা পড়ে শরীর ছমছম করত- শরীর তার নিজস্ব ভাষায় কথা বলত।
আমি কেবল শফিক রেহমানকে দোষ দেই না- এই দেশের অনেক বড় বড় লেখক এই দোষে দুষ্ট! এঁরা যখন অহেতুক শরীরে শরীর ঠোকাঠুকির অন্তরঙ্গ বর্ণনা দেন, এমন বিস্তারিত লেখেন, যেন প্রাপ্তবয়স্ক পাঠকের এই সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান নাই!
এঁদের ধারণা, পাঠক শিশুতুল্য, ব্রেন বলতে কোন জিনিস এদের নাই, বা পাঠক ফ্লাওয়ার-ভাসে ব্রেন জমা রেখে তাঁদের লেখা পাঠ করতে বসেন।
এঁরা এটা কেন বিস্মৃত হন, একেকজন পাঠক মাত্রই একেকটা চলমান ক্ষুর। পাঠক বেচারা তার ভাবনাগুলো গুছিয়ে লিখতে পারেন না বা আলস্য বোধ করেন বলেই অন্যজনের (লেখকের) চোখ দিয়ে দেখেন।
শফিক রেহমানের আরেকটা ভয়াবহ রকমের বাড়াবাড়ি ছিল, সব কিছু নিয়ে কুৎসিত রসিকতা করা। ভিনসেন্ট পিউরিফিকেশনের নামে যা তা রসিকতা। একবার দিলেন এমন, মাস্তান নামের অসভ্যরা ইডেন কলেজের কিছু ছাত্রীর জামা ছিঁড়ে ফেলেছিল, ভেতরের অন্তর্বাস দেখা যাচ্ছিল। শফিক রেহমান এই ছবিটার পাশে বোম্বের ব্রা প্রদর্শনীর একটা ছবি দিয়ে কুৎসিত রসিকতা করার চেষ্টা করেন। এখানে এসে এই মানুষটার বুদ্ধিশুদ্ধি নিয়ে সংশয় জাগে।
এরই মাঝে আবার বানান নিয়ে পড়লেন। ক্রিকেটকে কৃকেট, ব্রিটেনকে বৃটেন এইসব শব্দ পরিবর্তনের জন্য ধস্তাধস্তি অনেকের ভাল লাগেনি। আমারও। কিন্তু মানুষটার পড়াশোনা, রুচি বোধ এক কথায় অসাধারণ!
তবে মানুষটার কিছু সদগুণের কথা না-বললে অন্যায় হয়। যাযাদিন পত্রিকায় অনেক বৈচিত্র এনেছিলেন। আমার মতে, আমাদের সম্পাদক মহোদয়গণের ওখানে গিয়ে কিছু শিখে আসা প্রয়োজন ছিল। একটা মনে পড়ছে। প্রথম পাতায় বক্স টাইপের ছোট্ট একটা জায়গা থাকত। শেষ মুহূর্তের কোন আপডেট, ভুল স্বীকার করার জন্য। এটা খুব জরুরি।
তাঁর এবং মুহম্মদ জাফর ইকবালের হরতাল নিয়ে এক লেখায় আমি খুব ক্ষুব্ধ হয়েছিলাম। আমার কাছে মনে হলো, দু-জগতের এই দুজন মানুষ এমন ভাবনা পোষণ করে অন্যায় করছেন।
নতুন প্রজন্মকে প্রভাবিত করায় জাফর ইকবালের তো কথাই নেই। আর শফিক রেহমান এক নির্বাচনের পূর্বে নতুন প্রজন্মকে অভাবনীয় প্রভাবিত করতে পেরেছিলেন।
হরতালে আমার নিজেকে মানুষ বলে মনে হতো না! হরতাল নিয়ে আমার যে বইটা প্রকাশিত হয়েছিল ২০০৫ সালে, 'কয়েদী'। তখনই আমি এই 'কয়েদী' বইটা শফিক রেহমান এবং জাফর ইকবালকে পাঠিয়েছিলাম, সঙ্গে চিঠি। চিঠির বিষয়বস্ত সবটা আজ মনে নাই। মূল বিষয় ছিল, 'আপনাদের এই বক্তব্যে আমি ক্ষুব্ধ এবং আপনাদের হাতের লেজার গান দিয়ে আপনারা পাখি শিকার করছেন'।
পরে ভুলে গেলাম। প্রায় এক বছর পর শফিক রেহমান এই চিঠিটা পাঠালেন। আমার মত সাধারণ একজন মানুষকে হতভম্ব করে দেয়ার জন্য যথেষ্ঠ! অন্তত এক বছর ধরে চিঠির উত্তর দেয়ার দায়িত্বটা কাঁধে বয়ে বেড়ানো, এও তো কম না!
অনেকেই বলবেন, এটাই তাঁর স্টান্টগিরি, কৌশল। বেশ, এই কৌশলটাই আমাদের অন্য সম্পাদকরা মহোদয়গণ করে দেখিয়ে দিক না! নামে কেবল মুক্তচিন্তা বলে হইচই করলেই হয় না- ইনাদের, ইনাদের চ্যালা-চামুন্ডাদের তো একটা মেইল পড়ার, উত্তর দেয়ারও সময় নাই!
শফিক রেহমানের বিশেষ একটা দলের প্রতি আনুগত্য হেতু মেরুদন্ড হয়ে যায় জেলির মত কিন্তু এমনটা নাই এই দেশে এমন ক-জনকে খুঁজে পাওয়া যাবে? শফিক রেহমানদের মত মানুষরা ভুল জায়গায়, ভুল ভাবনা আঁকড়ে থাকেন বলেই মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। এ প্রজন্মের বড় ক্ষতি হয়ে যায়। আমাদের দেশে স্বপ্নবাজের বড়ো অভাব!
*এখানে তাঁর সবচে বড় অবদানের কথা উল্লেখ করিনি সেটা হচ্ছে পাঠককে লেখক বানাবার জন্য তাঁর আপ্রাণ চেষ্টা, সবিরাম।
পত্রিকাওয়ালাদের পাঠকদের প্রতি থাকে প্রচ্ছন্ন তাচ্ছিল্য। এদিক দিয়ে শফিক রেহমান ব্যতিক্রম। তাঁকে লেখক বানাবার মেশিন বললে অতিশয়োক্তি হবে বলে আমার মনে হয় না।
1 comment:
Valo lekchen
Post a Comment