এই গাছটা কেটে ফেলেছিল কেউ চাল করে। জজ-কোর্টের চত্বরে চা-র এই দোকানটা চলবে জব্বর, গাছটা না-থাকলে সুবিধে হয় যে বড়! বুদ্ধির তারিফ না করে উপায় কী!
দেখো দিকি কান্ড- পাতাশূন্য হয়েও গাছটা দিব্যি বেঁচে ছিল! এখন কী মায়ায়ই না সদ্য গজানো কচি-কচি পাতা।
পাতাগুলোয় আগুনগরম চা ছুঁড়ে মারে কেউ-কেউ। গাছটার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। গাছটা কিচ্ছু বলে না।
কেউ ডালে ময়লা একটা দড়ি ঝুলিয়ে দেয়। তুলতুলে-নরোম ডাল-পাতা চাপা পড়ে থাকে। গাছটার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। গাছটা কিচ্ছু বলে না।
কেউবা পান খেয়ে চুন মোছার জন্য পাতা ছিঁড়ে ফেলে অবলীলায়। গাছটার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। গাছটা কিচ্ছু বলে না।
চা-র চামচ খুঁজে না পেয়ে চা-দোকানদার একট শুকনো ডাল ভেঙ্গে বেদম নাড়ায়। গাছটার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। গাছটা কিচ্ছু বলে না।
কালো কোটের উকিল আসে। নাক ঝেড়ে সময় নিয়ে গাছে মোছে। ফুড়ুৎ-ফুড়ুৎ শব্দে চা খায়। অন্যমনস্ক হয়ে পাতা ছেঁড়ে, অযথাই। মনে মনে ভাবে, মক্কেলটাকে আজ চটকাতে হবে। ওর ফৌজদারী মামলায় জামিন হবে না, এটা বললেই হাত উপুড় করে 'টংকা' না-দিয়ে বাছাধন যাবেটা কই? হারামজাদাটা আজ আসলেই হয়...।
গাছটার যে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে, শত অত্যাচারেও গাছটা কিচ্ছু বলে না। নিদেনপক্ষে একটা ডাল ফেলে কারও-না-কারও মাথা ফাটিয়ে ফেললেও হয়। সে তাও করে না!
একদিন। বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে মামলার তদ্বিরে আসে একজন মানুষ। মানুষটাকে দেখে ঠিক মামলাবাজ মনে হয় না। ভারী চশমার পেছনে এর চোখগুলো যেন কেমন! মানুষটা সিগারেট ধরিয়ে চুপচাপ বসে থাকে। চুকচুক করে চা খায়। লোকজনের চোখ বাঁচিয়ে হাত বাড়িয়ে আলতো করে গাছটার চকচকে পাতা ছোঁয়। কী যে নরোম মানুষটার হাতের স্পর্শ! অজান্তেই গাছটার গা কাঁপে! পাতাগুলোর উপর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই যেন- কাঁপে, চোখে দেখা যায় না এমন। গাছটার দমবন্ধ ভাবটা আর নেই!
মানুষটাও অপলক চোখে তাকিয়ে থাকে অদ্ভুত সবুজ চকচকে পাতাগুলোর পানে। মানুষটার চোখগুলো যেন কেমন- অবিকল মাছের মত, পলকই পড়ে না! পাগলাটে টাইপের এই মানুষটার খুব ইচ্ছা করে গাছটাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে। এ এক অসম্ভব পাগলামী ভাবনা আর কী!
গাছটার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে, আবারও। গাছটা কিচ্ছু বলে না। অনড় দাঁড়িয়ে থাকে। এখন গাছটার কান্না পায়। কেবলই কান্না পায়, পাগলাটে এই মানুষটার সঙ্গে যেতে না পেরে।
No comments:
Post a Comment