তাঁর মনে কোন আনন্দ নাই। অথচ কী যে বিপুল ক্ষমতা তাঁর! কী নেই- অমরত্ব, অসীম সময়, অফুরন্ত ক্ষমতা। কিন্তু তাঁর পরও তাঁর মনে কোন আনন্দ নাই। কেবল মনে হচ্ছে ক্যাপসুলের খোলে ঢুকে পড়লে বেশ হয়। সমস্যা নেই, ১০০ বছর-হাজার বছর-লাখ বছর স্থির করে নিলেই হয়। চলে যাবেন তাঁর ভাষায় সাময়িক নিদ্রায়- যথাসময়ে তাঁর সেই নিদ্রা ভাঙ্গানো হবে। কিন্তু এ যে নিজের কাছে নিজেই হেরে যাওয়া। কাউকে কৈফিয়ত দিতে হবে না কিন্তু নিজের চোখে চোখ রাখবেন
কেমন করে?
সুবিশাল এই স্পেস-শিপের অতি ক্ষীণ হাশহাশ শব্দ ব্যতীত
আর কোন শব্দ নেই! এতেই বড়ো বিরক্ত লাগছে। এই স্পেস-শিপ চালাবার বিষয়ে ‘তিনি’ কখনই
মাথা ঘামান না, এটা এতই নিখুঁত করে তৈরি
করা হয়েছে নিজ নিয়মেই অনাদিকাল ধরে চলতে থাকবে। অতি উঁচুমানের আকৃতিহীন রোবটগুলো নিরলস তাদের কাজগুলো করে যায়, ক্লান্তিহীন।
বিরক্তি কাটাবার জন্য ‘তিনি’ ঘুরে
ঘুরে তাঁর সংগ্রহশালা দেখছেন। কী বিপুল
তাঁর সংগ্রহের সমাহার! তাঁর দীর্ঘ ভ্রমণে যেখানেই গেছেন স্মৃতিচিহ্ন কিছু-না- কিছু
নিয়ে এসেছেন, সযতনে রেখে দিয়েছেন। একটা গ্রহ থেকে বেশ খানিকটা ধূসর মাটি এবং বিচিত্র একটা ফল
নিয়ে এসেছিলেন। বিচিত্র তো বটেই- একবার খেলেই হয়েছে, নিয়ম করে এটা খেতে হবে, খেতেই হবে। সবচেয়ে জটিল সমস্যাটা হচ্ছে, এটা অতি দুর্গন্ধময়
পদার্থ উৎপন্ন করে। অসহ্য-সহ্যাতীত! প্রায়শ ভাবেন ফলটা ফেলে দেবেন কিন্তু অনাবশ্যক একটা মায়া পড়ে গেছে যে!
অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে ‘তিনি’ এটা-ওটা
নাড়াচাড়া করছেন। কী খেয়াল চাপল এটা-সেটা মিশিয়ে তাল পাকিয়ে নিভাঁজ একটা অবয়ব তৈরি করলেন, অতি ক্ষুদ্র একটা আকৃতি। যখন
প্রাণ সঞ্চার করলেন অবয়বটা গড়িয়ে গড়িয়ে এদিক-ওদিক গড়াতে লাগল। তিনি বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে রইলেন, কী অর্থহীনই না দেখাচ্ছে! অবয়বটাকে দাঁড় করিয়ে দিলে আরও হাস্যকর ভঙ্গিতে
লাফিয়ে লাফিয়ে নড়াচড়া করতে লাগল। এবার ‘তিনি’ অবয়বটার নীচের অংশটা দু-ভাগ করে
দিলে অবয়বটার নড়াচড়া-হাঁটাহাঁটি খানিকটা সহনীয় হলো কিন্তু ভঙ্গিটা কেমন আড়ষ্ট। এবার ‘তিনি’ উপরের
অংশটায় দু'পাশে দু-ভাগ করলে এবার অবয়বটার নড়াচড়ায় একটা ছন্দ এলো।
তাঁর মুখে খানিকটা তৃপ্তির ছাপ। আরে-আরে, দেখো দিকি এটা কেমন
ছুটাছুটি করছে! একসময় অবয়বটা ক্লান্ত হয়ে, উবু হয়ে কী-যেন-একটা-কিছু উঠাবার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। উপরের দুইটা অংশ ব্যবহার করেও খুব একটা লাভ হচ্ছে না। ‘তিনি’ সুবিধার জন্য উপরের দুইটা অংশের
একেকটা অংশের শেষ মাথায় কেটে-কেটে পাঁচটা ভাগ করে দিলেন। বাহ, এইবার অবয়বটা সরু সরু ''কাঠি-আঙ্গুল
দিয়ে কী চমৎকার করেই না অনায়াসে পড়ে থাকা ছোট্ট জিনিসটা তুলে নিল। বাহ, বেশ তো, বেশ তো!
তাঁর বিষণ্ণ ভাবটা অনেকটা কেটে গেছে। অনেক, অনেক দিন পর ‘তিনি’ খানিকটা উত্তেজনা বোধ করছেন। যা হোক, একটা
মনের মত কাজ পাওয়া গেল তাহলে।
’তিনি’ অবয়বটা নাম দিলেন 'লীআ'। ‘লীআ’ হয়ে গেল তাঁর সময় কাটাবার একটা
মজার খেলা। ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন করে শেষঅবধি
‘তিনি’ যেটা দাঁড় করালেন, ওটার দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলেন। নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না কুৎসিতসব জিনিস দিয়ে এমন চমৎকার একটা কিছু দাঁড়
করানো যায়! কালে- কালে ‘লীআ’ স্পেস শিপের যে-কোন স্থানে
মহাআনন্দে ঘুরে বেড়াতে পারে, কেবল
একটাই নিষেধাজ্ঞা। ‘তিনি’ ফলটার বিষয়ে
সাবধান করে দিয়েছেন। খবরদার, এটা নিষিদ্ধ ফল, এককিনিও মুখে দেয়া চলবে না।
'লীআ'-র
আকৃতিহীন রোবটদের সঙ্গে তেমন জমে না, কোথায় যেন সুর কেটে যায়। কারণ আকৃতিহীন
রোবটদের কাজগুলো বড়ো একঘেয়ে, এদের
অহেতুক কোনো বিকার-বৈচিত্র নেই, উনিশ-বিশ
নেই! ‘লীআ’ বিমর্ষমুখে ঘুরে বেড়ায়। কী কষ্ট-কী কষ্ট!
একদিন, ‘তিনি’
দয়ার্দ্র চোখে লীআ'র
অস্থিরতা কাটাবার জন্য তার মতই একজন-সঙ্গিনী তৈরি করলেন। নাম দিলেন ‘লীআনি’। এবার এরা
দু-জন গোটা স্পেস-শিপ দাবড়ে বেড়ায়, এটা
উল্টায় তো ওটা পাল্টায়; অনর্থক
হি হি হেসে কুটিকুটি হয়। ‘তিনি’ প্রশ্রয়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন।
রোবটদের মধ্যে সবচেয়ে চৌকশ যে রোবট 'নতায়শ', লীআ এবং
তার সঙ্গিনীর এইসব আদিখ্যেতা-ন্যাকামি দেখে নতায়শের ভাল লাগছিল না।
নতায়শ একদিন বলল, ‘মাস্টার, তোমার কী মনে হচ্ছে না এদের নিয়ে যা করছ এটা বাড়াবাড়ি হচ্ছে’?
তিনি নতায়শের দুর্বিনীত এই আচরণ দেখে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলেন। হিম গলায় বললেন, ‘নতায়শ, তুমি কী রোবোটিক্সের নিয়মগুলো ভুলে গেছ’?
নতায়শ স্থির গলায় বলল, ‘না মাস্টার, কিন্তু আমি এদের কর্মকান্ডে যারপর নাই বিরক্ত। রোবোটিক্সের নিয়মানুযায়ী আমার কাজ হচ্ছে এই স্পেস-শিপ এবং তোমাকে যে কোন মূল্যে রক্ষা করা। কিন্তু লীআ এবং লীআনি এরা এই শিপের জন্য হুমকিস্বরূপ। আমার স্পষ্ট বক্তব্য, এদের নষ্ট করে ফেলতে হবে, যথাসম্ভব দ্রুত, সম্ভব হলে এখুনি।
তিনি নতায়শের দুর্বিনীত এই আচরণ দেখে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলেন। হিম গলায় বললেন, ‘নতায়শ, তুমি কী রোবোটিক্সের নিয়মগুলো ভুলে গেছ’?
নতায়শ স্থির গলায় বলল, ‘না মাস্টার, কিন্তু আমি এদের কর্মকান্ডে যারপর নাই বিরক্ত। রোবোটিক্সের নিয়মানুযায়ী আমার কাজ হচ্ছে এই স্পেস-শিপ এবং তোমাকে যে কোন মূল্যে রক্ষা করা। কিন্তু লীআ এবং লীআনি এরা এই শিপের জন্য হুমকিস্বরূপ। আমার স্পষ্ট বক্তব্য, এদের নষ্ট করে ফেলতে হবে, যথাসম্ভব দ্রুত, সম্ভব হলে এখুনি।
তিনি ক্রুদ্ধ কন্ঠে কাঁপতে কাঁপতে বললেন, ‘নতায়শ, তুমি
সীমা লঙ্ঘন করছ। এই শিপের মাস্টার
তুমি না, আমি। আমিই ঠিক করব কে এখানে থাকবে, কে থাকবে
না। বরং তুমিই দূর হও, বাজ অফ-গেট লস্ট’!
'নতায়শ' তার
কষ্টার্জিত স্বাভাবিক ভঙ্গি ধরে রেখে বলল, ‘আচ্ছা, ঠিক আছে মাস্টার। আমি চলে
যাব’।
'নতায়শ' কোনো ভাবেই
এটা বিস্মৃত হতে পারছিল না 'লীআ'-দের জন্যই আজ তার এই দশা, দুর্দশা। কেমন করে এর শোধ নেয়া যায় মাথায় কেবল ঘুরপাক খায় কেবল এটাই। হুম-ম, বুদ্ধি একটা পাওয়া গেছে। 'নতায়শ' নিয়ম করে
লীআ, লীআনির কানে অনবরত বকে মরে: ওই ফলটা খেতে। আরে, খাও-খাও! মাস্টার কেন না করেছেন এটা জানো
না বুঝি তোমরা; আহা, এটা খেলে অমরত্ব পাওয়া যায় যে। মাস্টার
চান না তোমরা অমর হও।
একদিন কী-এক ঘোরে লীআ নতায়শের প্ররোচনায় ফলটা খেয়ে ফেলল। স্পষ্ট টের পাওয়া যাচ্ছে ভেতরে তুমুল ভাংচুর- অজানা, অচেনা, অদেখা
কিছু একটা পরিবর্তন! গোটা স্পেস-শিপের সবগুলো পাগলা ঘন্টি একযোগে বাজছে। লীআ ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। হা মাস্টার, এ আমি কী করলাম-এ আমি কী করলাম!
লীআ কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘মাস্টার, আমি মহা অন্যায় করেছি। নতজানু হয়ে ক্ষমা চাইছি’।
তিনি মনখারাপ করা ভঙ্গিতে লীআ-র পানে তাকিয়ে আছেন। আশ্চর্য, তাঁরই তৈরি সামান্য একটা রোবট নতায়শ তাঁকে কেমন মাত দিয়ে দিল। কষ্টের শ্বাস ফেলে বললেন, ‘লীআ, এখন এটা বলে লাভ কী, বলো’?
লীআ বলল, ‘মাস্টার, আমি আর কক্ষনও তোমার কথার বাইরে কোন কাজ করব না’।
তিনি মনখারাপ করা ভঙ্গিতে লীআ-র পানে তাকিয়ে আছেন। আশ্চর্য, তাঁরই তৈরি সামান্য একটা রোবট নতায়শ তাঁকে কেমন মাত দিয়ে দিল। কষ্টের শ্বাস ফেলে বললেন, ‘লীআ, এখন এটা বলে লাভ কী, বলো’?
লীআ বলল, ‘মাস্টার, আমি আর কক্ষনও তোমার কথার বাইরে কোন কাজ করব না’।
তিনি উদাস হয়ে বললেন:
‘লাভ কী? তোমাকে এখানে আর রাখা যাবে না। এটাকে নিষিদ্ধ ফল কেন বলেছিলাম, জানো? এটা একবার খেলে তোমার কাঠামোতে বিপুল পরিবর্তন হবে। একবার খেলে যে পরিবর্তনটা হয় তা হলো তখন এটা নিয়ম করে খেতে হয়। এতে তোমার ক্ষমতা, বেঁচে থাকার সময় সীমিত হয়ে আসবে। তোমার গোটা অবয়ব ভঙ্কুর এক শরীরে পরিণত হবে, এবং যথানিয়মে তা নষ্ট হবে। তারচেয়েও তীব্র জটিলতা হচ্ছে, তোমার শরীরের সামনে পেছনে ফুটা করে এটার অবশিষ্টাংশ বের করে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
তোমাকে নিয়মিত বাহ্যে ত্যাগ করতে হবে। ওই অবশিষ্টাংশ-বর্জ্য এতই কদর্য, দুর্গন্ধময়, অসহ্য যেটা কোনো অবস্থায় এখানে, এই স্পেস-শিপে রাখার ব্যবস্থা নাই। ইচ্ছা করলেও এটা করা যাবে না কারণ এখানকার পরিবেশ এমন উপযোগী করে তৈরি করা হয়নি। তাছাড়া আরও সমস্যা আছে, এখন থেকে নিয়ম করে ফলটা খেতে হবে বিধায় এ যোগানের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ভারী জটিল সমস্যা...’।
(তিনি জটিল সমস্যার বিস্তারিত বললেন না কারণ লীআ সবটুকু
বুঝবে না। লীআদেরকে রেখে দিলে এতে করে স্পেস-শিপে তাঁর
নিয়ন্ত্রিত নিয়ম ক্রমশ এলোমেলো হয়ে পড়বে। সবকিছু
আবার নতুন করে সাজাতে হবে। যাত্রা
বিরতিসহ অজস্র সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। এটা
সম্ভব না, তিনি অনিয়ন্ত্রিত জটিলতা
পছন্দ করেন না।)
লীআ কাতর হয়ে বলল, ‘মাস্টার, কোন উপায়ই কী নাই’?
তিনি বললেন, ‘উঁহু, নাই। ফল নামের জিনিসটা এখন তোমাকে নিয়মিত গ্রহন করতে হবে, যা পরবর্তীতে তোমরা 'খাবার' নামে চিনবে। তোমরা ক্রমশ জ্যামেতিক হারে বৃদ্ধি পাবে, এ ফল নামের খাবারের জন্য শুরু হবে তোমাদের
প্রাণান্তকর চেষ্টা। কেবল এর
অবশিষ্টাংশই যে বের হবে এমন না এই খাবারের জন্য তোমাদের শরীর থেকে রক্তও বেরুবে। জঘন্যতম কান্ড ঘটবে, তোমরা নিজেরাই একে অন্যকে হত্যা করবে। আফসোস, এ থেকে তোমাদের মুক্তি নাই’।
লীআ চোখের জলে
ভাসতে ভাসতে বলল, ‘মাস্টার, এই-ই যদি শেষ কথা হয় যে বেরুবেই তাহলে এই বর্জ্য পুনরায়
গ্রহন করার কি কোনো ব্যবস্থা করা যায় না?
তিনি গম্ভীর হয়ে বললেন, ‘না’।
লীআ বলল, ‘কেন মাস্টার’?
(কেন? 'তিনি' এর ব্যাখ্যা দিলেন না। তখন আর খাবারের তাড়া না-থাকলে কেউ ৩ দিন ঘাটপাড় বসে থাকবে তো কেউ তিতাসপাড় ৩০ দিন! এটা করলে একে-একে অর্গানগুলো কাজ করা বন্ধ করে দেবে- একসময় এরা স্থবির হয়ে পড়বে, নিচিহ্ন হয়ে যাবে-প্রাণের লেশমাত্রও থাকবে না। তিনি এইসব জটিলতা পছন্দ করেন না।)
লীআ বলল, ‘কেন মাস্টার’?
(কেন? 'তিনি' এর ব্যাখ্যা দিলেন না। তখন আর খাবারের তাড়া না-থাকলে কেউ ৩ দিন ঘাটপাড় বসে থাকবে তো কেউ তিতাসপাড় ৩০ দিন! এটা করলে একে-একে অর্গানগুলো কাজ করা বন্ধ করে দেবে- একসময় এরা স্থবির হয়ে পড়বে, নিচিহ্ন হয়ে যাবে-প্রাণের লেশমাত্রও থাকবে না। তিনি এইসব জটিলতা পছন্দ করেন না।)
লীআ বলল, ‘মাস্টার...’।
তিনি চাপা কষ্ট
নিয়ে বললেন,’উহু, আর কথা না। তোমার
সময় ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে। ফলের অবশিষ্টাংশ তোমায়
ফুটো করে বের করে না-দিলে তুমি যন্ত্রণায় বদ্ধউম্মাদ হয়ে পড়বে। তোমাদেরকে এবং নতায়শকে অতি ক্ষুদ্র এক স্থানে নামিয়ে দিচ্ছি, পরবর্তীতে এটাকে তোমরা একটা গ্রহ হিসাবে চিনবে। নতায়শ আর তোমরা- আলো এবং অন্ধকার, মিলেমিশে থাকবে। আমার নির্দেশ
অনুযায়ি চলার চেষ্টা করবে। পরবর্তী
বিবেচনার ভার তোমাদের হাতেই ছেড়ে দিলাম। আমি আশা
করছি, তোমাদের সাহায্য করার জন্য
হয়তো-বা কেউ, সময়ে-সময়ে আসবে, তাঁদেরকে তোমরা 'দেবদূত'
হিসাবে জানবে। একেকজন দেবদূত তোমাদের একেক ভঙ্গিতে
শেখাবার চেষ্টা করবে কিন্তু সবারই একটাই উদ্দেশ্য থাকবে, তোমাদের মঙ্গল করার চেষ্টা করা।
ভাল থেকো’।
ভাল থেকো’।
'তিনি' অতি ক্ষুদ্র বিন্দুমত একটা
জায়গায় এদেরকে নামিয়ে দিলেন। অতি ক্ষুদ্র
বিন্দু বটে কিন্তু এর এমাথা থেকে ওমাথা যাওয়ার পর্যাপ্ত
জ্ঞান-ক্ষমতা লীআদের আপাতত নাই। পরে কালে-কালে যার নাম হবে পৃথিবী। তাঁর প্রবল ইচ্ছা, কালে কালে অন্তত লীআ-র বংশধররা পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন করবে। তিনি হাসলেন, পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জনের পরও লীআ'র বংশধরদের বুকের ভেতর থেকে হাহাকার বেরিয়ে আসবে, আমি কেউ না, আমি কিছু না!
লীআরা আকাশপানে তাকিয়ে থাকে আর লম্বা লম্বা শ্বাস ফেলে। লীআদের সন্তানেরাও আকাশপানে তাকিয়ে থাকার এই অভ্যাসটা
বাড়াবাড়ি রকম রপ্ত করে ফেলেছে। মেজাজ শরীফ
থাকলে আকাশপানে তাকিয়ে কাকুতি-মিনতি করে কিন্তু মেজাজ বিগড়ে, ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকলে আবার আকাশপানে তাকিয়ে
গাল পাড়ে। কখনও খাদ্যাভাসের কারণে হাগু শক্ত
হয়েছে তো দাও উপরে তাকিয়ে কষে গালি! সবই আকাশময়!
লীআ থেকে লীআনি- এক থেকে দুই, দুই থেকে ৭০০ কোটি ইউনিট হলো- সমস্ত তথ্য জমা হয় স্পেস-শিপের মূল সার্ভারে। ইচ্ছা করলেই তিনি প্রতিটি ইউনিটের ডিটেইলস তথ্য জানতে পারেন কিন্তু এতে তাঁর ভারী আলস্য।
তিনি ক্যাপসুলের খোলে ঘুমাচ্ছেন। ক-লাখ বছর (লীয়াদের হিসাবে) ধরে ঘুমাবেন, না-জাগলে এটা জানার কোনো উপায় নেই। আদৌ তিনি জাগবেন কিনা এটাও বলা মুশকিল। তিনি
বড্ড খেয়ালি...!
*এটা একটা নিছক কল্পকাহিনী তাও আবার অন্য গ্রহের। এ গ্রহের
সঙ্গে কোনো প্রকারে মিলে গেলে সেটা হবে নিছক
কাকতালীয়।
**"তিনি" এখন কোথায় কারও জানা নেই! যেহেতু কারো জানা নেই, আমি জানব কেমন করে?
ওয়েল, আমি অন্য এক লেখায় লিখেছিলাম, জ্ঞান, কবেকার জ্ঞান? ২০০৮ সালের জ্ঞান নাকি ৮০০২ সালের? কে জানে একদা হয়তো এই আমরাই বলব, আলোর গতিকেও ছাড়িয়ে যাবে কিছু...। আমি জানি না-আমি জানি না...।
ওয়েল, আমি অন্য এক লেখায় লিখেছিলাম, জ্ঞান, কবেকার জ্ঞান? ২০০৮ সালের জ্ঞান নাকি ৮০০২ সালের? কে জানে একদা হয়তো এই আমরাই বলব, আলোর গতিকেও ছাড়িয়ে যাবে কিছু...। আমি জানি না-আমি জানি না...।
***"তিনি", তাঁর হাসার সুযোগ থাকলে হাসতেন নিশ্চিত। বাহ, এখন
দেখছি এরা যথেষ্ঠ উন্নতি করে ফেলেছে। বাহ-বাহ, এরা দেখি পৃথিবীর আবার একটা দামও ধরেছে, পাঁচ কোয়াড্রিলিয়ন ডলার! (পাঁচের পর ১৫টি শূন্য)
**** আমি অনেকখানি নিশ্চিত, বুদ্ধিমানেরা এই লেখায় ফাঁকফোকর বের করে ফেলবেন। সলাজে স্বীকার যাই, এই ফাঁক বন্ধ করার মত পর্যাপ্ত জ্ঞান এই মুহূর্তে আমার নাই। যখন হবে তখন আবারও চেষ্টা করব নে...।
সূত্র:
2 comments:
Osadaron!
Post a Comment