'বৈদেশি' সিরিয়াল কিলারদের কাহিনি পড়ে আমরা হিম-হিম শ্বাস ছাড়তাম, আহারে, সব বৈদেশে কেন? গরীব দেশ বলে কী আমাদের কপালে সিরিয়াল কিলার থাকতে নেই! রসুর কল্যাণে আমাদের সেই কষ্ট দূর হলো!
রসু এখন পর্যন্ত ১১ জন নারীকে হত্যা করেছে। খুনের প্রতিজ্ঞা পূরণে ১২ বছর ধরে অপেক্ষা করেছে। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সে নাকি প্রতিজ্ঞা করেছিল, ১০১ জন নারীকে হত্যা করে কোন এক পীর সাহেব-আউলিয়ার মাজারে চলে যাবে। তার মাজারে চলে যাওয়ার ভাবনাটা মন্দ না! কে জানে, একদিন সেও কোন এক আউলিয়া হয়ে যেত- রসু আউলিয়া! (সত্যি সত্যি একজন অসংখ্য মানুষকে কচুকাটা করতে করতে অবশেষে বড়ো আউলিয়া হয়ে গিয়েছিলেন।)
এই বঙ্গালদেশে মাজারের দবদবার শেষ নাই। অথচ ইসলাম ধর্মমতে, অতি বিখ্যাত গরম মানুষের মাজার ওরফে কবর এবং ছলিমুল্লা-কলিমুল্লার কবরের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। চলার পথে কোন কবর জিয়ারত করা যাবে কিন্তু জিয়ারতের উদ্দেশ্যে কোন মাজার ওরফে কবরে যাওয়া যাবে না এবং মাজার ওরফে কবরে শুয়ে থাকা মানুষটার কাছে কোন কিছু চাওয়া ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ! মাজার ওরফে কবরবাসী মানুষটার নিজেরই নাকি দৌড়ের শেষ নাই!
ওয়াল্লা, রসু নামের মানুষটার দেখি ক্রসফায়ারের বড়ো ভয়- ক্রসফায়ারের রহস্য কী উদঘাটন করে ফেলেছে? রসু বড় অভাগা, নইলে কী আর ধরা পড়ে! আমাদের দেশে কাউকে ধরা কী এতই সহজ? কই, এই মানুষটাকে দেখি আজও ধরা গেল না!
"মরিলে শুনিয়া গীতা মহাপাপী জন
মহাপাপ দূরে যায় মুক্তিভাগী হন।"
(মৃত্যুর পূর্বে মহাপাপীও যদি গীতা শ্রবণ করে তবে তাহার মহাপাপ নষ্ট হয়, সে মুক্তিভাগী হয়।)(শ্রীমদ্ভগবদগীতা, শ্রীশ্রীগীতা-মাহাত্ম্যম, ৫৯)
রসু, হিন্দু হলে, গীতা-পাঠ করে তার মহাপাপ কেটে যেত।
রায়ের পর রসুর মৃত্যুদন্ড হবে নাকি বেকসুর খালাস, সে তো পরের কথা। কিন্তু কোন উকিল রসুর পক্ষে দাঁড়াবেন না বলে ঘোষনা দিয়েছেন। এটা এঁরা কোন যুক্তিতে সিদ্ধান্ত নিলেন? কোন আইনের কেতাবে এটা লেখা আছে, এঁরাই ভাল বলতে পারবেন! রসুকে এখনও আদালত গিল্টি বলে রায় দেয়নি।
ভাগ্যিস, রসু খ্রিস্টান না, খ্রিষ্টান হলে পাল্টা মামলা করতে পারতেন।
পাভেল মির্চা। রুমানিয়ার এক আদালত, একজনের খুনের দায়ে পাভেল মির্চার ২০ বছরের সাজা হয়েছিল। কিন্তু ভদ্রলোক বেঁকে বসলেন, পাল্টা মামলা করলেন।
তিনি একা এই সাজা ভোগ করতে রাজি নন। তার এককথা, এই খুনের জন্য আমি একা দায়ি নই, সমান দায়ি ঈশ্বরও। পাভেল মির্চার বক্তব্য, ব্যাপ্টিজমের সময় ঈশ্বরের সঙ্গে অন্য খ্রিষ্টানদের মতই আমারও চুক্তি হয়েছিল, তিনি আমাকে সমস্ত অশুভ কাজ থেকে বিরত রাখবেন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। শয়তান জয়ী হয়েছে। ঈশ্বর আমার সঙ্গে চুক্তিভঙ্গ করেছেন বিধায় ঈশ্বরের বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গের মামলা করেছি।
ভয়াবহ সমস্যা দেখা দিল। বাদী মামলা করলে বিবাদীকে জানাতে হয়, সমন জারী করতে হয়। উকিলরা বিবাদী ঈশ্বরের নামে নোটিশ জারী করতে পারছিলেন না। তাদের বক্তব্য, অনেক চেষ্টা করেও আমরা ইশ্বরের আবাসিক ঠিকানা খুঁজে পেলাম না বিধায় সমন জারী করা গেল না।
আফসোস, ঠিকানা না-থাকার কারণে সমন জারী করা না গেলে, তাঁর-ইশ্বরের বিচার করা যাবে কেমন করে?
অতএব মামলা ডিসমিস।
*ছবিঋণ: প্রথম আলো
No comments:
Post a Comment