Search

Tuesday, November 3, 2009

কী নিতল অন্ধকার!

"আপাদমস্তক ডুবে আছি থইথই জ্যোৎস্নায়
ঈশ্বর, কেবল নিজেকেই দেখতে পাই না।"

এই দেশকে প্রকৃতি দু-হাত ভরে দিয়েছে। যেখানে প্রকৃতি এমন উদার, তার সন্তান আমরা এমন হলাম কেন? কেন আমরা এমন অসভ্য, লেন্দু উপজাতি রয়ে গেলাম! লেন্দুরা পরাজিত মানুষের খুলি বাঁশের ডগায় ঝুলিয়ে আনন্দ-মিছিল করে, মানুষের মাংস খেতে খেতে রসালাপ করে; এ আর তেমন দোষ কী!   
তবুও বুকের ভেতর থেকে কেন হাহাকার বেরিয়ে আসে, কেন আমাদের চারপাশে এমন নিতল অন্ধকার, যে অন্ধকারে নিজেদেরও হারিয়ে ফেলি!



আমরা আম খেয়ে বড়া চুষে চুষে সাদা করে ফেলি, এরপর অবহেলায় দূরে ছুঁড়ে মারি। এটা থেকেও দিব্যি গাছ হয়ে যায়! প্রকৃতি এ গ্রহের অন্য কোথাও এমন পক্ষপাতিত্ব করেছে বলে আমার জানা নাই। এমন-কি, খুটির বাঁশেও দিব্যি আম গাছ হয়ে বসে থাকে!

ইউরোপে কেউ কারও বাড়িতে গেলে মাথা থেকে হ্যাট-টুপি, মাথার আবরণ খুলে ফেলে। আমার ধারণা, এই সহবতটা চলে এসেছে প্রাচীনকাল থেকে। প্রাচীনকালে হ্যাট-টুপির বদলে ছিল শিরস্ত্রাণ। কারও নিমন্ত্রণ রক্ষা করলে মাথা থেকে শিরস্ত্রাণ খুলে ফেলত। মেসেজটা পরিষ্কার, আমি তোমায় পুরোপুরি বিশ্বাস করি, এখন আমার মাথা রক্ষার দায়িত্ব আমার না, তোমার।
এটা আমার অনুমান, ভুল হতে পারে।

এই প্রসঙ্গটা বলার কারণ হচ্ছে। ৩৪ বছর পূর্বে (১৯৭৫) ঠিক আজকের দিনটাতেই জেলখানায় ৪জন মানুষকে মেরে ফেলা হয়েছিল। বিনা দোষে।
কোন একটা দেশের সরকার হচ্ছে সেই দেশের জনগণের পিতা। তাঁর দায়িত্ব তার সন্তানদের রক্ষা করা। জেলখানায়, সরকারের কাস্টডিতে যখন ফট করে গুলি করে কাউকে মেরে ফলা হয় তখন কেবল কয়টা প্রাণ গেল সেটা জরুরি না, এই প্রাণগুলো কার ছিল সেটাও এখানে আলোচ্য বিষয় না। স্রেফ একটা সভ্যতার মৃত্যু হয়। মানুষ হিসাবে লেন্দু এবং আমাদের মধ্যে খুব একটা ফারাক থাকে না!

কোন রাষ্ট্রপ্রধানকে মেরে ফেলা এর কাছে নস্যি। কর্নেল তাহেরের খুনও এটার সঙ্গে তুলনা হয় না। তবুও তো একটা প্রহসন সাজিয়ে এই খুনটাকে জাস্টিস বলার চেষ্টা করা হয়েছিল। রসু খাঁর করা খুনগুলোও এর তুলনায় বাদামের খোসা।
 

কতশত বিচার নিয়ে কথা বলে-বলে আমরা মুখে ফেনা তুলে ফেলি কিন্তু এই ভয়াবহ অন্যায় নিয়ে আমরা সোচ্চার হই না। ৩৪ বছর ধরেও প্রকৃত সত্য জানতে পারি না, বিচার হয় না। নির্লজ্জ-দিগম্বর আমরা, বিশেষ দিনে এদেঁর কবরে গিয়ে ফুল দেই!
আসলে ৩৪ বছর ধরে আমরা সভ্য-সভ্য ভাব ধরে ঘুরে বেড়াই। চমৎকার-সব কাপড়ে গোটা অবয়ব মুড়িয়ে রাখার চেষ্টা করি; আফসোস, কেবল লুকিয়ে রাখতে পারি না একপেট আবর্জনা!

No comments: