ছাপার অক্ষরে, আভিধানিক অর্থে অশ্লীলতার সংজ্ঞা কি এটা এখানে আমার আলোচ্য বিষয় না।
আমার মনে হয় অবস্থান, সময়, ভঙ্গি, রুচি বোধ, একেকজনের কাছে অশ্লীলতার একেক অর্থ দাঁড় করায়। বৈদেশে অনেক টাট্টিখানার দরোজার বালাই নেই এটা তাদের কাছে কোন বিষয় না, কিন্তু আমরা কল্পনাও করতে পারি না, চেঁচিয়ে দেশ মাত করে ফেলব, অছলীল-অছলীল(!)।
অনেকের কাছে ন্যূড ক্লাবে কাপড় পরে যাওয়া অশ্লীলতা। অবশ্য দিগম্বর হওয়াটা শ্লীল না অশ্লীল এটা নিয়ে এদের সঙ্গে তর্ক চালিয়ে যেতে সমস্যা নেই।
কারও কাছে পাবে (যেখানে পাগলা পানি বিক্রি হয়) দুধ চাওয়াটা অশ্লীলতা। মুখ গম্ভীর করে এরা বলবে, বাওয়া, তুমি জানো এখানে লিকার বিক্রি হয় এখানে দুধ চাইতে এসেছে কেন? তারচেয়ে একটা ফিডার কিনে নিয়ে বাড়িতে বসে চুকচুক করে দুধ খাও।
একবার একটা ওয়েব-সাইটে একজন, দুর্ধর্ষ একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলেন, 'আমি একজন যৌনসঙ্গি খুঁজছি' এটা কি অশ্লীল?
কথাটা কোথায় বলা হচ্ছে এটা জানাটা বড়ো জরুরী। আমার মনে হয়, কোন হট-হাউজে কোন সেক্স-ভলন্টিয়ারকে বললে এটা অবশ্যই অশ্লীল না, অতি শ্লীল। কিন্তু অন্যত্র বললে এটা নিয়ে তর্কের অবকাশ থাকতেই পারে।
জনসমক্ষে হুজুররা যে নিমের ডাল দিয়ে দাঁত ঘসাতে ঘসাতে দাঁত খুলে ফেলার চেষ্টা করেন এটা আমার দৃষ্টিতে বড়ো অরুচিকর, অশ্লীল মনে হয়! নব্য আধুনিকগণ পিছিয়ে থাকবেন কেন? ভোর বেলায় একটা ব্রাশ নিয়ে জনসমক্ষে বেরিয়ে দাঁতের সঙ্গে দাঁতাদাঁতি(!) করে মনে করেন ভারী একটা কাজের কাজ হলো। মুখ পেস্ট-থুথুতে মাখামাখি; গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে, দৃশ্যটা দেখে অন্যরা আনন্দে পশ্চাদদেশ দোলালেও আমার গা গুলায়। মনে হয় গলায় আঙ্গুল দিয়ে বমি করে দিতে পারলে আরাম পেতাম!
কোন পুরুষ পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত মহিলাদের চকচকে-পিচ্ছিল কাপড় পরে ধর্মানন্দে ঘুরে বেড়ান, আমাদের উদ্ধার করেন। কিন্তু বিষাদের সঙ্গে বলি, পোশাকটা আমার কাছে স্রেফ অশ্লীল মনে হয়। আরে এ মহিলাদের পোশাক পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে কেন! তেমনি মনে হয় কোন পুরুষ মহিলাদের পারফিউম মাখলেও।
সজীব ওয়াজেদ এবং তারেক জিয়াকে নিয়ে দলের সিনিয়র বয়স্ক মানুষরা যখন কথা চালাচালিতে জড়িয়ে পড়েন তখন এটা আমার কাছে জাস্ট অশ্লীল মনে হয়। আমার বোধগম্য হয় না, এই বিষয় নিয়ে এইসব বুড়া-বুড়া ঝানু মানুষদের ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে কেন? সজীব ওয়াজেদ এবং তারেক জিয়া, এঁরা এখন পর্যন্ত এই দেশের জন্য কী এমন করেছেন যার জন্য বুড়া-বুড়া নেতারা নিজেরা তো জড়াবেনই গোটা জাতিকে বিভক্ত করে জড়াবার চেষ্টা করবেন। কারণ কী!
কারও বিরুদ্ধে ( নেতাদের পুত্রধন) কোন অন্যায় অভিযোগ উঠলে দলের ল-অফিসার এটা নিয়ে বক্তব্য দেবেন, খন্ডন করার চেষ্টা করবেন, প্রয়োজনে আইনি লড়াই লড়বেন। আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন- দুধের দুধ, পানির পানি প্রমাণ করে ছাড়বেন। ব্যস, সমস্যাটা কোথায়, কে আটকাচ্ছে!
অবদানের কথা উঠলে বলা চলে এঁদের মত অবদান এই দেশের লক্ষ-লক্ষ তরুণ রেখে যাচ্ছেন, নাথিং নিউ। জানি-জানি, অনেকে বলার চেষ্টা করবেন, সজীব ওয়াজেদ দেশের বাইরে থাকেন তাঁকে কোন হুজ্জত পোহাতে হয়নি কিন্তু তারেক জিয়া জেল-জুলুম খেটেছেন। তারেক জিয়ার জেলের যথার্থতা নিয়ে আমি এখানে আলোচনা করতে চাচ্ছি না। তবে জেল-জুলুমের কথা বলা হলে তখন এই দেশে এমন অনেকের উপর দিয়েই এমন ঝড় বয়ে গেছে। আমাদের টাকায় পোষা আর্মিরা নিজেদেরকে প্রায় ঈশ্বরের পর্যায়ে ভাবছিলেন।
আমি মনে করি, অন্যায়-জুলুমের কথা যদি উঠে তাহলে কার্টুনিস্ট আরিফুর রহমানের সঙ্গে অন্য কেউ নস্যি। ড. মো: আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে এই ছেলেটির জেলখানায় দেখা হয়েছিল। অল্পবয়সী অভাগা এই ছেলেটি (ছোটবেলায় তার বাবা-মার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়) কার্টুন প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়ার পর সে সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকায় চলে আসে। প্রথম আলো পত্রিকার আলপিনের জন্য কার্টুন আঁকা শুরু করে। যে কার্টুনের (ওই কার্টুনের মাধ্যমে সে নাকি ইসলাম ধর্ম বঙ্গোপসাগরে ডুবিয়ে দিচ্ছিল) জন্য তাকে অমানুষিক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছিল (জেলখানায় এক কয়েদী তার মুখে লাঠির আগায় করে গু লাগিয়ে দিয়েছিল পর্যন্ত) অথচ এই কার্টুনের সংলাপগুলো তার না। তার না বলতে (এটা অনেক পুরনো কৌতুক, 'কিশোরকন্ঠ' নামের ইসলামের ধারক-বাহক মহতরামদের পত্রিকায় বহু পূর্বেই ছাপা হয়েছিল) আমি বলতে চাইছি এই সংলাপগুলো সে ঠিক করেনি, প্রথম আলো থেকে নির্বাচন করে দেয়া হয়েছিল।
এর দায় বর্তায় বিভাগীয় সম্পাদক, সম্পাদকের উপর। অথচ এঁরা বহাল তবিয়তেই আছেন, যথারীতি বনবন করে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন; গোটা দেশবাসীকে শপথ করাচ্ছেন। সব মিলিয়ে প্রকারান্তরে আমার কাছে এইসব অশ্লীলতারই নামান্তর। অনেকের অমত থাকতে পারে, কিন্তু আমি পূর্বেই উল্লেখ করেছি, অনেক অন্যায় আছে যার প্রকাশ ভঙ্গির কারণে আমার কাছে অন্যায় এবং অশ্লীলতা সমার্থক মনে হয়।
দুধ থেকে আমরা যেমন মাছি ফেলে দেই, প্রথম আলো ঠিক তেমনি এই অভাগা ছেলেটার হাত ছেড়ে দিয়েছিল, তাকে অতি নিষ্ঠুরতার সঙ্গে ছুঁড়ে ফেলেছিল। তার প্রতি করা এই অন্যায়ের অন্য কিছুর সঙ্গে তুলনা হয় বলে আমি মনে করি না। আমার কাছে প্রথম আলোর এই অশ্লীলতার সঙ্গে তুলনা করলে কোন দুই বুড়ার সমকামিতার দৃশ্যও অনেকটা সহনীয় মনে হবে...!
1 comment:
:(
Post a Comment