Search

Tuesday, December 15, 2009

ফটোগান বনাম স্টেনগান: নাইব উদ্দিন আহমেদ



একবার আমি একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, সব যুদ্ধ স্টেনগান দিয়ে হয় না। একেকজনের একেক ভূমিকা- একেকজনের যুদ্ধ করার ভঙ্গি একেক ধরনের। সময় ঠিক করে দেয় কার ভূমিকা কতটা প্রবল।

পাকআর্মি ধর্মের দোহাই দিয়ে এহেন কোন অন্যায় নেই যা যুদ্ধের সময় করেনি। ধর্মের দোহাই দিয়ে আমাদের মধ্যে বিভাজন করা হয়েছিল। পাকআর্মির সহায়তাকারী, তারা আজও মনে করে তাদের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। তর্কের খাতিরে ধরে নেই, ঠিক, তারা ধর্ম-রক্ষা করেছেন। অফ-টপিক এই উদাহরণটা আমি টানতে চাই, কে সঠিক?
যে অন্যায় যুদ্ধ না-করে পালিয়ে গেল, সে? নাকি ধর্মের নামে যে অন্যায় যুদ্ধ চালিয়ে গেল!

আমি মনে করি, এই ২টা ছবিই নাইব উদ্দিন আহমেদকে অমর করে রাখবে।

সব যুদ্ধ স্টেনগান দিয়ে হয় না, ওই পোস্টে আমি উল্লেখ করেছিলাম, এই ধর্ষিতার ভয়াবহ ছবিটা তুলতে দিতে অন্যরা চাননি; কিন্তু এই ধর্ষিতার মা তাঁকে ছবিটা তোলার জন্য অনুরোধ করেন। যেন বিশ্ববাসি জানতে পারে পাক আর্মিরা কী ভয়ংকর অনাচার করছে এই দেশে, যুদ্ধের নামে।
আজ আমরা এই প্রজন্ম সেই মা-টার ওই অনুভূতিটা স্পর্শ করতে পারি নাইব উদ্দিন আহমেদের কল্যাণে। নাইব উদ্দিনের এই ছবিটা তোলার পর সহ্য করতে পারছিলেন না, তাঁর হার্ট এ্যাটাক হয়ে যায়। যেমনটা হয়েছিল কেভিন কার্টারের বেলায়, তিনি সইতে না-পেরে আত্মহত্যা করেছিলেন।

পত্রিকা সময় করে পড়া হয় না, পড়া হয় না খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। এই যেমন এখন রাত ৯টা। এখন পত্রিকায় (প্রথম আলো) চোখ বুলাচ্ছিলাম। খবরটা এড়িয়েই যেত প্রায়, ১৯ পৃষ্ঠায় ছাপা হয়েছে: 'আলোকচিত্রি নাইব উদ্দিন আহমেদ আর নেই'।
আলোকচিত্রি নাইব উদ্দিন আহমেদ? আমি যে নাইব উদ্দিন মানুষটার কথা ভাবছিলাম এই মানুষটা কি তিনি নন? পুরো খবরটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়লাম। নিজেকে কেমন বিভ্রান্ত-বিভ্রান্ত লাগছে! কোথাও লেখা নেই মুক্তিযুদ্ধে এই মানুষটার অবদানের কথা। মুক্তিযুদ্ধ দূরের কথা মনে হচ্ছে 'ম' শব্দটাও নেই।

কেন এই খবরটা ফলাও করে ছাপানো হলো না এই নিয়ে প্রশ্ন তুলি না, কোন নেতা বলেছেন, "শহীদের স্বপ্ন পূরনে..." এইসব বাছাল(!) ছাপিয়ে কুমিরের অশ্রুতে প্যান্টলুন ভিজে যায়।
মুক্তিযুদ্ধের সেরা সন্তানদের নিয়ে এদের তাচ্ছিল্য নতুন কোন সংবাদ না। আমি প্রথম আলোকে ধন্যবাদ দেই, অন্তত অগ্নিপুরুষ লালুর মত বিজ্ঞপ্তি আকারে এই খবরটা ছাপানো হয়নি। যাক, এদের এতোটা আক্কেল তো হয়েছে...কিন্তু বড়ো দেরিতে আক্কেল-দাঁত উঠল!
এখন এদের ইন্টারনেট ভার্সানে (ই-প্রথম আলো) খুঁজতে গিয়ে দেখি ওখানে এই খবরটাও নাই। নাই মানে নাই! হে আল্লাহ, একি রহস্য! চুতিয়াদের কী ব্রেনে শর্ট-সার্কিট হয়ে গেল?

নাইব উদ্দিন আহমেদ, চুতিয়ারা তোমাকে ভুলে গেলেও আমরা এই প্রজন্ম তোমাকে ভুলিনি।
এই প্রজন্ম মাথা নীচু করে হাটু গেড়ে তোমার শিয়রে বসে থাকে।
তুমি ঘুমাও, শান্তিতে। বিদায়, হে প্রিয়মানুষ...


*মুক্তিযুদ্ধে তাঁর আরেকটি অনবদ্য ছবি, এটা মুক্তি মন্ডলের ব্লগ থেকে নেয়া:

No comments: