Search

Friday, January 15, 2010

হুমায়ূন আহমেদ: এক চোখে জল, এক চোখে পানি

'কালের কন্ঠ' [১] নামের একটা দৈনিকের প্রথম সংখ্যায় হুমায়ূন আহমেদ 'বৈরী স্বর' নামের একটা লেখা লিখেছেন। তিনি লেখার এক জায়গায় গভীর বেদনা প্রকাশ করেছেন। তাঁর এই বেদনা আমাকে ছুঁয়ে যায়, হুমায়ূন আহমেদের দেখাদেখি এক চোখে জল এক চোখে পানি চলে আসে!
ওই দৈনিকে তিনি লিখেছেন: ‍‍"শর্ষিনার পীর সাহেবকে পদক (স্বাধীনতা পদক) দেয়ার গল্প। ...এই নামের তালিকায় শর্ষিনার পীর যুক্ত হলেন ১৯৮০ সালে। ১৯৭১ সালে তাঁর ভুমিকা আমি দেখেছি।
...আমি কোন উপায় না দেখে আমার ছোট ভাই জাফর ইকবালকে নিয়ে শর্ষিনার পীর সাহেবের মাদ্রাসায় গেলাম, যদি সেখানে লুকিয়ে থাকা যায়।
...শর্ষিনার পীর সাহেব আমাদের দুই ভাইকে আশ্রয় দিলেন না। সংগত কারণেই শর্ষিনার পীর সাহেবের স্বাধীনতার পদক প্রাপ্তিটা আমার বুকে বিষমাখা তীরের মতো বিঁধল।"

খারাপ, খুব খারাপ! শর্ষিনার পীর সাহেব কাজটা মোটেও ভালো করেননি! কিন্তু শর্ষিনার পীর সাহেবের বিরুদ্ধে এমন কোনো অন্যায়ের (যা দেশের প্রচলিত আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ) প্রমাণ না থাকলে তাঁকে কাঠগড়ায় উঠাবার যো নাই।

তবে কিছু অন্যায় আছে যার জন্য একরাশ ঘৃণা ছুঁড়ে দিতে কোন সমস্যা নাই। আমি শর্ষিনার পীর সাহেবের প্রতি একরাশ ঘৃণা বর্ষণ করি!

হুমায়ূন আহমেদ মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের ওটির টেবিলে শুয়ে অনেক কান্না করেছিলেন। আহা, মুক্তিযুদ্ধের উপর বইটা শেষ না করে মরে যাওয়াটা কোন কাজের কাজ হচ্ছে না। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে তিনি 'জননী ও জ্যোৎস্নার গল্প' লিখে প্রকাশের দিন মেলায় আরেক দফা কান্নাকাটি করেছিলেন।
আমারও তখন কাঁদতে ইচ্ছা করছিল। আমার আবার একটা অসুখ আছে, কারও কান্না দেখলে হুদাহুদি কাঁদতে ইচ্ছা করে, তহবন ভিজে যায়। লোকজনকে অবশ্য বলে বেড়াই চোখে পোকা পড়েছে।

তো, চোখ থেকে পোকাটা বের করে দেখি, হুমায়ূন আহমেদের মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত বইটার দাম ৪০০ টাকা! এই দামে বইটা কেনা হলো না। বইটা পড়ে আরও খানিকটা কাঁদার সুযোগ হলো না, আফসোস, তহবনটা শুষ্কই থাকল!

হুমায়ূন আহমেদ কান্নাকাটিটা একটু কমিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বইটার দাম কমিয়ে রাখলে আমাদের মতো আমজনতার খানিক সুবিধা হতো। এটা কঠিন কোন কাজ ছিল না। প্রকাশককে বললেই হতো, বইটার দাম অর্ধেক রাখেন, আপনার লোকসান হলে আমি দেখব। তাঁর শত-শত বইয়ের কোটি-কোটি টাকার খেলা থেকে অন্তত এই একটা বইয়ের জন্য আমাদের এমন আবদার, মামা বাড়ির আবদার হতো বলে আমি মনে করি না।

মূল প্রসঙ্গে ফিরে যাই, শর্ষিনার পীর সাহেব খতরনাক অন্যায় করেছেন এতে কোন সন্দেহ নাই। বেশ-বেশ! তা হুমায়ূন আহমেদ স্যার, তিনি কী করেছেন? মাওলানা মান্নানের দৈনিক 'ইনকিলাব', 'পূর্ণিমায়' বছরের পর বছর ধরে লিখে গেছেন। তখন কার কী ক্ষতি হয়েছিল আমি জানি না, অন্যদের কথা বলতে পারব না কিন্তু তখন আমার নিজের কাছে মনে হতো দাঁড়াবার আর কোন জায়গা থাকল না।

আলোকিত এই সব মানুষ এমনটা করলে কার কাছে গিয়ে দাঁড়াব? 

জাহানারা ইমাম তাঁকে বারংবার অনুরোধ করেছিলেন, ইনকিলাব-পূর্ণিমায় না লিখতে। হুমায়ূন আহমেদ লিখে গেছেন। এতে হুমায়ূন আহমেদের গাত্রদাহ না হলেও আমাদের হয়। হুমায়ূন আহমেদকে নিশ্চয়ই মন করিয়ে দিতে হবে না রাজাকার মাওলানা মান্নান কতো বড়ো মাওলানা ছিলেন? তাহলে হুমায়ূন আহমেদ নামের মানুষটা এইসব মুক্তিযুদ্ধের আবেগ নিয়ে ফিচ ফিচ করে কান্না করেন কেন? কেন অন্তর্বাস ভিজিয়ে ফেলেন? কেন আমাদের প্রজন্মকে আফিম মেশানো লেবেনচুষ খাইয়ে বিভ্রান্ত করেন?

অপরাধ কার বড়ো, শর্ষিনার পীরের নাকি হুমায়ূন আহমেদের? কাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাব? শর্ষিনার পীরকে যেমন সম্ভব না তেমনি হুমায়ূন আহমেদকেও? কারণ বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে এমন কোন নিষেধাজ্ঞা নাই যে, কাউকে আশ্রয় না-দিলে আইন ভাঙ্গা হবে আবার ইনকিলাব-পূর্ণিমায় লেখা যাবে না। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদের মত লেখক যখন এই কাজটা করেন তখন এই প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধটা একটা খেলা ব্যতীত আর কিছুই মনে হয় না!

এই দেশে কখনও-কখনও অনেক লেখক ক্ষিধার জ্বালায় তাঁর কলম বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। একজন আল মাহমুদ (একটা উদাহরণের জন্য নেয়া) যখন সংগ্রাম পত্রিকায় লেখেন তখন খুব দোষ হয়ে যায়, না? আমি তো আল মাহমুদের প্রতি দুঃখ বোধ করি, বেচারা! এই দেশে লেখকদের কাছ থেকে আমাদের প্রত্যাশা আকাশচুম্বি কিন্তু তাঁর জীবন ধারণের ভাবনা কারও নাই। লেখক নেংটি পরে উবু হয়ে লিখে যাবেন, আজিব!

এ দিক দিয়ে ব্যতিক্রম হুমায়ূন আহমেদ, তাঁর কলম দিয়ে টাকা বের হয়। ক্ষিধার জ্বালায় না, তিনি কলম বিক্রি করেন অতি লোভের কারণে, সীমাহীন দুর্দান্ত লোভ! তাঁর যেমন ইনকিলাবে লিখতে কোন সমস্যা নাই তেমনি কালের কন্ঠেও। আই বেট, ভালো টাকা পেলে তিনি গোলাম আজমের পত্রিকাতেও লিখবেন।
ইনকিলাবের মাওলানা মান্নান এবং সুপুত্র সানবীরের গর্বিত পিতা কালের কন্ঠের আহমেদ আকবর সোবহান শাহ আলম, এরা দু-জনেই, সাব্বির এবং ডাক্তার আলীম চৌধুরীকে খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত।


শাহআলম এবং মান্নান, এ সত্য দুজনের কেউই নিজ হাতে খুন করেননি, এও সত্য দুজনের কাউকেই দেশের প্রচলিত আইনে শাস্তি দেয়া যায়নি। তাহলে? আমার মতে, নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার করলে শাহ আলম নাকি মাওলানা মান্নান, কার অপরাধ কঠিন এটা ভাবনার বিষয়...


সহায়ক সূত্র:
১. কালের কন্ঠ: http://www.ali-mahmed.com/2010/01/blog-post_16.html 
২. জাহানারা ইমাম: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_3476.html
৩. মাওলানা মান্নান: http://www.ali-mahmed.com/2009/11/blog-post_18.html 
৪. আল মাহমুদ: http://www.ali-mahmed.com/2009/12/blog-post_29.html 
৫. গোলাম আজম: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_29.html    

3 comments:

Tareq said...

Durdanto!
Amon kore vabi nai.

Anonymous said...

Apnake "inkilab" a likte bolle apni ki lakben?

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

না লিখব না কারণ আমি ভানগুরু হুমায়ূন আহমেদ না। হুমায়ূন আহমেদের মত লোভের লকলকে জিহ্বা আমার আয়ত্বে নাই। @Anonymous