এরশাদ-খালেদা জিয়ার সময় যেভাবে লেখা গেছে, ক্যারিকেচার, কার্টুন আঁকা গেছে আওয়ামী শাসনামলে সেটা ছিল স্রেফ একটা স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন! একদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (!) শহিদুল আলমকে নগ্ন পায়ে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেল। কোথায় নিয়ে গেল সেটা আবার অনেক পরে জানা গেল। কোর্টে আবার 'মাই লর্ড' বিচারক পুলিশকে জিজ্ঞেস করছেন, পুলিশ আসামীর (শহিদুল আলমের) ফোনের পাসওয়ার্ড নিয়েছে কিনা, সেদিনই লেখালেখির কফিনে পেরেক ঠোকা হয়ে গেল...!
Tuesday, February 2, 2010
বীরাঙ্গনা, কে চাইবে তোমাদের কাছে ক্ষমা?
স্বাধীনতার ৩৮ বছর পর রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হয়েছে ১৯ বীরাঙ্গনাকে, সিরাজগঞ্জে। তবুও ভাল, অন্তত শুরু তো হলো!
বীরাঙ্গনা আছিয়া খাতুন বলেন, "স্বাধীনতার পর ৩৮ বছর চলে গেলেও কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি।"
বীরাঙ্গনা হাজেরা বেগম বলেন, 'অসুখে, ক্ষুধায় আমাদের অনেকেই আজ আর বেঁচে নেই। মৃত্যুর পরও তাদের রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হয়নি।"
কিন্তু আমার মাথায় এটা আসে না, কেন এতো বছর লাগল? আমি জানি না বীরশ্রেষ্ঠদের মধ্যে কেন একজন বীরাঙ্গনা নাই? কেনই বা বীরশ্রেষ্ঠদের মধ্যে একজনও সিভিলিয়ান নাই? কেন কেবল মুক্তিযোদ্ধা হলেই আমরা একজন পুরুষের কথা ভাবব।
বীরাঙ্গনা। মুক্তিযুদ্ধে এঁদের অবদান অনুমান করা যাবে কেবল ভাগীরথী'র সম্বন্ধে জানলে, প্রিনছা খেঁর আত্মত্যাগের কথা পড়লে। এঁদের প্রতি আমরা যে অন্যায় করেছি এর ক্ষমা কার কাছে চাইব? ওই সময়ে মাদার তেরাসার মত অল্প কিছু মানুষ এঁদের প্রতি মমতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। অন্যরা, আমরা এদের পোকার মত দূরে সরিয়ে দিয়েছে- এমন কি একজন বাবাও!
বীরাঙ্গনা রীনার এই প্রশ্নের উত্তর কে দেবে?
"একটি মেয়ে তার জীবনের যা কামনা করে তার আমি সব পেয়েছি। তবুও মাঝে মাঝে বুকের ভেতরটা কেমন যেন হাহাকার করে ওঠে। কিসের অভাব আমার, আমি কি চাই? হ্যাঁ একটা জিনিস, একটি মুহুর্তের আকাঙ্ক্ষা মৃত্যু পর্যন্ত রয়ে যাবে। এ প্রজন্মের একটি তরুণ অথবা তরুণী এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলবে, বীরাঙ্গনা আমরা তোমাকে প্রণতি করি, হাজার সালাম তোমাকে।"
অজানা এই বীরাঙ্গনাকে আমরা যেমন খুঁজে পাইনি তেমনি পাইনি সেই জজ সাহেবকে।
"ফারুক এখন জজ সাহেব। আর কখনোও হাফ শার্ট পরে না। কেউ হাতের দাগ দেখে ফেললে বলে মুক্তিযুদ্ধে আহত হলেছিল বেয়ানাট চার্জে । দেখুন তাহলে এ দেশে মুক্তিযোদ্ধা কারা?"
বীরাঙ্গনা তারা ব্যানার্জীর এই হাহাকার কে শোনে?
"...নিয়েলের ভালবাসা, স্নেহ, মমতা আমার অতীতকাল মুছে ফেলল। তারা ব্যানার্জী থেকে আমি হলাম মিসেস টি নিয়েলসন ।
...স্বদেশে আমার সত্যিকার পরিচয় নেই, তারা ব্যানার্জী মরে গেছে ... আমি কোথায়? ওদের কাছে আমি ঘৃণ্য, নিন্দিত, মৃত।"
আমরা বড়ো অভাগা। এই দেশের সেরা সন্তানদের অসম্মান করি, পদে পদে। এতে এঁদের কিছু যায় আসে না- নগ্ন, দিগম্বর হয়ে পড়ি আমরা।
ফ্রান্সে ছয়টি গণকবর থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে, ১৯১৬ সালে ফ্রান্সে নিহত ব্রিটিশ এবং অষ্ট্রেলীয় ২৫০ সেনাদের উঠিয়ে নিয়ে পূর্ণ সম্মানে পুনরায় সমাহিত করা হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই হাড্ডি-গুড্ডি উঠিয়ে আবার সম্মানের সঙ্গে সমাহিত করলে কী হয়? এটাই কথা, কী হয়? আমরা অনেকে নাক কুঁচকে বলব, ছাতা হয় ফাতা হয়- মিলে মিশে ছাতাফাতা। তা হয়- যার যেমন বুঝ...।
*ছবি সূত্র: এএফপি
বিভাগ
১৯৭১: প্রসব বেদনা
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment