Search

Sunday, February 7, 2010

আনিসুল হক: একজন আদর্শ সাহিত্যিক!

কেউ কেউ নায়ক থেকে মহা-নায়কে রূপান্তরিত হন। সবাই পারেন না, কেউ কেউ- যারা অসম্ভব বুদ্ধিমান। এরা তাদের বুদ্ধির খেলায় সবাইকে মাত করে দেন।
শিল্প-সাহিত্য ভুবনটাকে আমাদের কাছে দূর থেকে কী মোহনীয়ই না মনে হয়, না? আমরা হাঁ করে তাকিয়ে থাকি। এই ভুবনের মানুষগুলোকে অন্য ভুবনের মানুষ মনে হয়। হাতের আঙ্গুল থাকে পাঁচটার স্থলে ছ-টা! এরা যখন আকাশপানে তাকিয়ে পা ফাঁক করে এলোমেলো হাঁটেন, এই দেখাও সুখ!
কিন্তু আমাদের দেশটা বড়ো বিচিত্র এখানে সব উল্টা- ভূতের পার মতো। যা না হওয়ার তাই হয়, যা হওয়ার তা মাথা কুটে মরলেও হয় না।
কার কথা এটা? একটা বই থেকে মেরে দিলে নকল হয় কিন্তু অনেকগুলো বই থেকে মারলে গবেষণা!

হুমায়ূন আহমেদের মত লেখক যখন চৌর্যবৃত্তি শেখান [], অন্যদের না শিখে উপায় কী! তাঁর যে বই বেরই হয়নি সেই বইয়ের বিজ্ঞাপন গেল প্রথম আলোতে, 'প্রথম মুদ্রণ শেষ'!
কী তামশা!
শত-শত ছোকরা-ছোকরিদের হলুদ কাপড় পরিয়ে যখন মেলায় তুলকালাম করে লোকজনকে বিরক্ত করেন তখন মানুষটার কি বিন্দুমাত্র লাজ হয় না? দৃষ্টি আকর্ষন করাই যদি মূল উদ্দেশ্য হয় তাহলে হাফ-প্যান্ট ফারুকীর স্টাইল অনুকরন করলেই হয়। তবে সবচেয়ে সহজ হচ্ছে 'নাংগাপাংগা' হয়ে যাওয়া। নাম দিলেই হবে, 'নাংগা হিমু'। মেলায় এলা নাংগা হিমু!
মুক্তিযুদ্ধের বই প্রকাশের দিন কাঁদতে কাঁদতে তাঁর প্যাটলুন ভিজে যায়। কী কান্না-কী কান্না! কিন্তু বইয়ের দাম রাখেন 'আকাশজোড়া', আকাশছোঁয়া!

হানিফ সংকেত, অসম্ভব প্রতিভাবান এই মানুষটি চৌর্যবৃত্তিকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। এটা কিন্তু চাট্টিখানি কথা না। পরের প্রজন্মকে চোর বানাবার পেছনে তাঁর অবদানের শেষ নাই! এদের দেখে দেখে পরবর্তী প্রজন্ম শিখেছে।

আনিসুল হক। লেখালেখি জগতের এই মানুষটির অবদানও অপরিসীম। কেমন করে লেখালেখি নামের এই শুভ্র ভুবনকে নিয়ে খেলা করা যায় এটা ভালই দেখিয়েছেন। এটা যে কী জটিল একটা কাজ এটার খানিকটা ধারণা করা যাবে এখানে (বিজ্ঞাপনতরঙ্গ-লেখকরঙ্গ

এবারের বইমেলায় এই বিজ্ঞাপনটা দেখলেও খানিকটা আঁচ করা যাবে। প্রথম আলোর ছুটির দিনে (এটা আবার এই পত্রিকায় সঙ্গে জড়াজড়ি করে থাকা স্যারদের জন্য রিজার্ভ থাকে যার চালু নাম বেতনভুক্ত। সাধারণ প্রকাশকদের এখানে বিজ্ঞাপন দেয়ার কোন সুযোগ নাই) আনিসুল হকের প্রকাশিত বইয়ের এই বিজ্ঞাপনটা দিয়েছেন ৯জন প্রকাশক!
ভাবুন দিকি, এই একটা বিজ্ঞাপনটা দিতে গিয়ে ৯ জন প্রকাশকের কত্তো কত্তো কালঘাম বেরিয়েছে। মেডিকেল সায়েন্স মতে পেশাব বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। আরে বাওয়া, পেশাব থাকবে কোত্থেকে, পানি সব ঘাম আকারে বেরিয়ে গেছে না?

পোস্টের সঙ্গে ছবিটা দেখে বিজ্ঞাপন জটিলতা যতটা সহজ মনে হচ্ছে ততটা সহজ কিন্তু না। ৯জন প্রকাশক মিলে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে, তারা কোথায়, কিরূপে, কেমনে বিজ্ঞাপন দিবেন। টস করেছেন। সিনিয়র, জুনিয়র নির্ধারণ করা হয়েছে। অনেক ভেরেন্ডা, ভুট্টা ভেজে তারা সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন একযোগে প্রথম আলোতেই (এর জন্য
যথারীতি ৯ জনের মধ্যে অনেক মিটিং-মেটিং, চিঠি, ফোনালাপ, মেইল, চালাচালি হয়েছে) বিজ্ঞাপন দেবেন। অন্য কোন পত্রিকায় এই ৯জনের কেউ-ই বিজ্ঞাপন দিতে আগ্রহী নন।  এবং আনিসুল হকের গালে হাত দেয়া এই ছবিটাই দেবেন। অন্য জায়গায় হাত দেয়া ছবি দেবেন না।

বা এমনও হতে পারে ৯জন প্রকাশক মিলে আনিসুল হকের বিজ্ঞাপনের জন্য টেন্ডার দিয়ে ছিলেন এবং সেই টেন্ডার ড্রপ করার বাকস রাখা হয়েছিল প্রথম আলো অফিসে। অনুমান করা যায়, এই টেন্ডার নিয়ে টেন্ডারবাজি হয়নি কারণ প্রথম আলো অফিসে গিয়ে কেউ হুজ্জত করার সাহস পায়নি। ৯জন প্রকাশক রাতের-পর-রাত পার করেছেন প্রথম আলো অফিসে, কখনও গোল-টেবিলে পশ্চাদদেশ রেখে, কখনও চারকোনা টেবিলে। তর্কতর্কি বেঁধে গেলে লটারি হয়েছে। 
জেনারেলদের সঙ্গে বৈঠকে থাকা মতিউর রহমানকে তড়িঘড়ি করে আসতে হয়েছে লটারির বাকসে ঘুটা দেয়ার জন্য। সে এক দক্ষযজ্ঞ- শিবের অনুচররাও সতীর শব কাঁধে এমন প্রলয়-নৃত্য করতে পারেননি!
আচ্ছা, এই ছবিটার ভঙ্গি কি গালে হাত দেয়া (লেখকদের গালে হাত দিয়ে ছবি উঠানোরও নিয়ম আছে) নাকি নববধুর লাজুকতায় মোটা 'বরালগ্রীবা' (মেয়েদের বেলায় মরাল গ্রীবা হয়, ছেলেদের মরাল গ্রীবা হওয়ার নিয়ম নাই। আপাতত আমরা 'বরাল-গ্রীবা' দিয়েই কাজ চালাই) বাঁকিয়ে দাঁতে নখ কামড়ানোর ভঙ্গি করা। আফসোস, সাথে গলায় চাদর টাইপের ওড়নাটা (লেখকদের গলায় চাদর থাকার নিয়ম আছে) থাকলে ভালো হতো।

এই যে 'বিজ্ঞাপন খেলা' এই মানুষটার দেখাদেখি পরবর্তীতে অনেক লেখকই এই কান্ডটা শুরু করেছিলেন; প্রণব ভট্ট (ঘুষের বড়ো একটা অংশ তিনি বিজ্ঞাপনের পেছনে খরচ করতেন), মোহিত কামাল, মোস্তফা কামাল, সুমন্ত আসলাম। এই লাইন অনেক লম্বা! এদের বিজ্ঞাপনের বহর দেখে মনে হয় লেখালেখির দন্ডটা এরাই ধরে রেখেছেন!  দেশে আর কোনও লেখক নাই!
সরদার ফজলুল করিম, আবুল ফজল, রশীদ করীম এঁদের বইয়ের বিজ্ঞাপন দূরের কথা বইয়ের রিপ্রিন্টই আর হয় না! এই প্রজন্ম এদের চেনার চেষ্টা করছে না। 
ইমদাদুল হক মিলনের মত লেখকের 'ভা' মানে ভালবাসা দিয়ে দিয়ে শুরু বইয়ে মেলা ছাপাছাপি! হায় লেখক-হায় লেখালেখি! এই মেলা উদ্বোধন করানো হয় সরকার প্রধানকে দিয়ে এখান থেকেই এর পচন শুরু, শব পচে এখন বিকট গন্ধ ছড়াচ্ছে।

এই যে বিজ্ঞাপনতরঙ্গ, বলতে গেলে আনিসুল হক এই আইডিয়া-চালবাজির পথপ্রদর্শক না-হলেও এটাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। প্রথম আলো নামের পত্রিকাকে কত উপায়েই না ব্যবহার করেছেন। প্রথম আলোয় কোন-না-কোন উপায়ে তাঁর বই-নাটকের কথা আসা চাই। হোক সেটা কোন একটা চরিত্রের মুখ দিয়ে। বা পরিচালকের নাকের নীচে যে ছিদ্রটা থাকে যার চালু নাম মুখ ওটা দিয়ে।
সম্পাদকীয় পাতায় ১০১ লাইনের কবিতা ছাপানো আনিসুল হকের পক্ষেই সম্ভব। এ এক অভাবনীয়! তখন সম্ভবত এই পোড়া দেশের সমস্ত কবি হিমালয় পর্বতে বাথরুম সারতে গিয়েছিলেন। যাদের বাথরুম পর্ব আগেভাগে শেষ হয়েছিল তারা ফিরেই কুহতুর পর্বতে জিকির করতে চলে গিয়েছিলেন! গুরু তোমায় সালাম।

তো, আমার কথা হচ্ছে, আনিসুল হকের এতো লাজুকতা-চোট্টামির আবশ্যকতা কী? হাত থেকে দাঁত নামিয়ে অথবা দাঁত থেকে হাত নামিয়ে সাফ-সাফ বললেই তো হয়, বিজ্ঞাপন প্রকাশক দেন না, আমি আনিসুল হক দেই। আমি আনিসুল হকই পরবর্তীতে লিখে দেই, তৃতীয় মুদ্রণ শ্যাষ, চতুর্থ মুদ্রণ আসিতেছে। আপনাদের কোন সমস্যা?
না আনিস ভাইয়া, এটা স্বীকার করলে, ম্যান, এতে আপনার লজ্জারও কিছু নেই, আমাদের সমস্যাও নেই। বরং আমরা আপনার সততাকে স্যালুট করব।

*ছবি সূত্র: প্রথম আলো, ছুটির দিন
...
'আমারও একটি প্রেমকাহিনি আছে' পুস্তকে আনিসুল হকের গল্পের মেয়েটির একটি ছেলেকে দেখে প্রতিক্রিয়া এমন:
"আমার বুক কাঁপছে। পেটের ভেতরে গুড়গুড় করছে...।"
এটা যতবার পড়ি ততবারই আমার নিজেরই পেট গুড়গুড় করার উপক্রম হয় এই ভেবে আমার প্রেমিকা জোলি হোক বা জরিনা ওর কাছ থেকে সহস্র হাত দূরে থাকব। কারণ যে প্রেমিকার পেট গুড়গুড় করে তার আশেপাশে থাকাটা অতি সাহসের কাজ। সলাজে স্বীকার যাই আমার এত সাহস নেই...।

সহায়ক সূত্র:
  1. হুমায়ূন আহমেদের চৌর্যবৃত্তি: http://www.ali-mahmed.com/2010/01/blog-post_15.html
  2. ফারুকি স্টাইল: http://www.ali-mahmed.com/2010/01/blog-post_11.html
  3. হানিফ সংকেত: http://www.ali-mahmed.com/2009/02/blog-post_02.html
  4. বিজ্ঞাপনতরঙ্গ-লেখকরঙ্: http://www.ali-mahmed.com/2009/03/blog-post_21.html
  5. ইমদাদুল হক মিলন: http://www.ali-mahmed.com/2010/01/blog-post_29.html
  6. বইমেলা উদ্বোধন করানো হয়: http://www.ali-mahmed.com/2010/01/blog-post_30.html
  7. ১০১ লাইনের কবিতা http://www.ali-mahmed.com/2009/10/blog-post_28.html 

9 comments:

Tamim said...

Anis becharer kapor ta deya den, lengta hoya gese

রায়হান said...

হাঃ হাঃ হাঃ

Anonymous said...

You are just a dirty backbiter. If this resembles the language of your books, God save your readers!

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

"...You are just a dirty backbiter..."
এটা আপনার বক্তব্য, আমার না।
দেবতাদেরও ভুল হয়, আমি দেবতা না। কেউ আমার ভুল ধরিয়ে দিলে ভুল স্বীকার করতে আমার কোন লাজ নাই। ঠিক কোন বিষয়ে আপত্তি? এই মন্তব্যে এর কোন বালাই নেই বলে এই বিষয়ে আর আলোচনা বাড়াতে চাচ্ছি না। গুড বাই।
আর আমার যা বলার তা স্বনামেই বলি আপনার মত মুখ লুকিয়ে না @Anonymous ওরফে নামহীন, ওরফে অজ্ঞাত, ওরফে...।

"God save your readers!"
মগজ এবং প্রাপ্তবয়স্কতা থাকাটা জরুরি, যা আপনার নাই। কিন্তু পাঠকদের এটা আছে বলে এই নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন না। প্রবল আশা, বয়ঃপ্রাপ্ত হলে এবং মগজচ্যুত না-হলে আপনার সিদ্ধান্ত পাল্টাতেও পারে।

গুড বাই এগেইন। @Anonymous

Anonymous said...

জনাব Anonymous
ঈশ্বর আপনাকেও রক্ষা করুন। সেই সাথে আপনার দাঁত দুটিকে। ভুবন ভুলানো হাসির জন্য দাঁতের বড়ই প্রয়োজন।

Anonymous said...

boss eishob faul public-re apnar blog-e comment post korte den ken? jara apnar lekha bojhe na tader ghilu nia asholei shondeho ase. ami apnar blog-er ekjon silent reader and huge vokto. at least 100 email-e apnar blog-er link disi. i want to see you as an idol for future generation. apnar boi porei ashole ami apnar vokto hoisi, then found the blog. amio tuktak lekhalekhi kori, jodi kokhono ekta boi likhte pari apnake utshorgo korbo. last kotha, jara apnar shomalochona kore tader nia chinta korben na, amra apnar voktora chhal chharaia dibo.

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

"...eishob faul public-re apnar blog-e comment post korte den ken?..."
দেখুন, এরই নাম হচ্ছে বাক-স্বাধীনতা। যেহেতু মানুষটা কোন অশ্লীলতা, কদর্যতার সীমা ছাড়াননি তাই তাঁর এই মত প্রকাশে আমি বাধা দিতে ইচ্ছা করি না, এটাই ভদ্রতা- জেন্টেলম্যান নর্ম।
তবে এই মানুষটার উপর আমি চরম বিরক্ত অন্য কারণে। ঠিক কোন জায়গায় তার আপত্তি এটা বুঝিয়ে বললে আমার জন্য সুবিধা হত। পূর্বেও উল্লেখ করেছি আমি দেবতা না, খুব সাধারণ একজন মানুষ, ভুল আমিও করি। এবং কেউ আমার ভুল ধরিয়ে দিলে ক্ষুব্ধ হওয়া দূরের কথা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে আমার আমার আপত্তি থাকে না।

"amio tuktak lekhalekhi kori, jodi kokhono ekta boi likhte pari..."
আমার পরামর্শ কি জানেন, লিখতে থাকুন নিয়মিত। যদিও এটা সত্য কারও বই বের না-হলে মানুষটাকে ঠিক গুরুত্ব দেয়া হয় না। কিন্তু বিষয়টা আমার কাছে স্রেফ একটা প্রহসন মনে হয়। এই বিষয়ে আমার খানিকটা অভিজ্ঞতা আছে বলে সবিনয়ে বলি, অধিকাংশ প্রকাশক এমন বইও ছাপান যা তিনি জীবনেও পড়ে দেখেননি! এরাই ঠিক করে দেন কে লেখক, কে লেখক নন! এ প্রহসন না তো কি, বলুন?
তাই অনুরোধ করি, লিখুন, লেখা থামাবেন না। বই না-বের হলে কী আসে যায়! হয়তো আপনার লেখার মাধ্যমে এমন কোন বিষয়, আইডিয়া বের হয়ে আসবে যা নিয়ে একটা তুলকালাম হয়ে যাবে। কে বলতে পারে এমনটা হবে না। লিখতে থাকুন, আমরা অপেক্ষায় আছি :) @Anonymous

admin said...

রণব ভট্ট (ঘুষের বড়ো একটা অংশ তিনি বিজ্ঞাপনের পেছনে খরচ করতেন), মোহিত কামাল, মোস্তফা কামাল, সুমন্ত আসলাম। এই লাইন অনেক লম্বা! এদের বিজ্ঞাপনের বহর দেখে মনে হয় লেখালেখির দন্ডটা এরাই ধরে রেখেছেন!
apnar mote ei projonme adorsho lekhok k?

sumanto aslamer kishoreuponnas valo pai!

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

"...sumanto aslamer kishoreuponnas valo pai!"
ভাল তো :)@admin