(অতি সূক্ষ রূচির পাঠক লেখাটা না পড়লেই ভাল করবেন)
সভ্য, সভ্যতা এই বিষয়গুলো আজও আমি ভালো বুঝি না! আমরা নাকি কালে কালে জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিরাট কামাল দেখাচ্ছি, সভ্য থেকে অতি সভ্য হচ্ছি। তাই হবে!এইচ এ আর গিব-এর "ট্রাভেলস অব ইবনে বতুতা" (১৩০৪-১৩৬৯) থেকে অনেকটা আঁচ করা যায়, আজ থেকে আনুমানিক ৭০০ বছর পূর্বে মানুষ কেমন ছিল। একটা বর্ণনা এমন:
"...আমরা শহরে প্রবেশ করার সময় একটা বাজার পড়ল। আমাদের দেখেই অনেকে ছুটে এসে ঘিরে, ঘোড়ার লাগাম ধরে ফেলল। অন্যরাও এসে হইচই বাঁধিয়ে দিল, ঘোড়ার লাগাম ধরার চেষ্টা করতে লাগল। এই নিয়ে বিরাট বচসা। কেউ কেউ প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য ছুঁরিও বের করে ফেলল। আমরা ভয় পেয়ে গেলাম, আমরা কী ডাকাতদের কবলে পড়লাম?
আল্লার ইচ্ছায়, একজন আরবী জানা লোক এসে আমাদের বুঝিয়ে দিলেন, এরা স্থানীয় এবং এরা সবাই চাইছেন আমাদেরকে তাদের এখানে আতিথ্য গ্রহন করাবার জন্য। শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম!
পরিশেষে ভোটাভুটি হলো, ভোটে যে দলের নাম উঠবে আমরা তাদের এখানেই থাকব।...(এদের আতিথেয়তার কথা ভোলা অসম্ভব!)"
এরিমধ্যে প্রায় ৭০০ বছর চলে গেছে। এইসব বেদুইনদের চেয়ে আমরা অনেক শিক্ষিত-সভ্য হয়েছি। আজ আমরা মঙ্গলে পানি আছে কিনা এই নিয়ে বড়ো কাতর- আমাদের সে খোঁজ কতটা জরুরী কে জানে! আমার একটা রাগী চরিত্র রাব্বির ভাষায়, "...মঙ্গলের পানি দিয়া নিজের হাগা ধোব..."।
অন্য একটা পোস্টে উল্লেখ করেছিলাম, একটা মামলার তদ্বিরে মাসে দুবার আমাকে কোর্টে চক্কর লাগাতে হয়। এখানে বিচিত্রসব অভিজ্ঞতা হয়। আস্ত একটা উপন্যাস নামিয়ে ফেলা যায়।
থ্রিলার বই-টই যখন পড়তাম তখন নায়কদের দুর্ধর্ষসব কর্মকান্ড পড়ে মুগ্ধ হতাম কিন্তু এইসব নায়কদের একটা বিষয়ে উদাসীনতা আমার ভাল লাগত না সেটা হচ্ছে, বাথরুম বিষয়ক। পরে আমার মনে হলো এরা অতিমানব তো তাই এদের পেশাব-টেশাব করার প্রয়োজনই নাই!
তো, কোর্টের কাজে দীর্ঘ সময় আমাকে থাকতে থাকতে হয় এবং আমি অতিমানব না বলেই ব্লাডারের সঙ্গে আমায় কস্তাকস্তি করতে হয়।
হাজার-হাজার মানুষ পিলপিল করে এখানে আসেন কিন্তু টাট্টিখানা, হালের 'ওয়শরুম', খানিকটা পরিষ্কার করে বললে পেশাব করার কোন ব্যবস্থা আমার চোখে পড়েনি। প্রতি তলায় যেসব বাথরুম নামের জায়গায় মুত্রত্যাগ করা যায় সবগুলো তালা মারা থাকে। ভাবখানা এমন, বডি নিয়া আসছ, বডি নিয়া ফেরত যাবা, সঙ্গে নিয়া যাবা থলিভর্তি মুত্র। আইডিয়াটা মন্দ না!
আমার মনে পড়ছে, বছর চারেক আগের কথা। ওয়ারেন্টি ছিল বিধায় ঢাকায় এক সার্ভিসিং সেন্টারে সেল ফোন নিয়ে গিয়েছিলাম। ১৫/ ১৬ তলায়, চোখ ধাঁধানো পশ একটা অফিস। গেছি রাতের ট্রেনে, সময় কম ছিল বলে সোজা এদের অফিসে। এদের অফিসের একজনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনাদের এখানে ওয়শরুমটা কোন দিকে?
তিনি বললেন, কি করবেন?
রাগ চেপে আমি খাস গ্রামের ভাষায় বলি, মুতব।
তিনি বললেন, আমাদের এখানে তো ব্যবস্থা নাই।
আমি বললাম, তা আপনারা কোথায় যান?
তিনি জানালেন, তাদের জন্য লাগোয়া বাথরুম আছে কিন্তু কাস্টমারের (মতান্তরে গেস্ট) জন্য না।
এমনিতে আমার কথা জড়িয়ে যায় কিন্তু খুব রেগে গেলে ঠান্ডা মাথায় গুছিয়ে বলতে পারি। আমি অমায়িক ভঙ্গিতে বললাম, ইয়ে আপনাদের ছাদে যাওয়া যায়?
তিনি হাসিমুখে বললেন, যায় তো। কেন?
আমি বললাম, ছাদে গিয়ে মুতব।
মানুষটা হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। আমার মুত্র ত্যাগ না করেও মুত্র ত্যাগের আনন্দ হচ্ছিল।
তো, আমার মাথায় আসছিল না এই কোর্টে, এখানে হাজার-হাজার মানুষ আসছে কিন্তু এদের জন্য অন্তত এই ব্যবস্থাটা রাখা হয়নি, কেন? পরে বাইরে দেখলাম, আরে কাহিনী তো অন্য!
আরে, এইটার দেখি আবার উদ্বোধনও করা হয়েছিল! বাথরুম উদ্বোধন কেমন করে হয় এটা দেখার আমার বড়ো ইচ্ছা। জানি না এই বিরল সৌভাগ্য আমার হবে কিনা!
আমার শেষ ইচ্ছার কেউ তালিকা চাইলে এর মধ্যে এটাও থাকবে এতে আমার দ্বিমত নাই।
প্রফেসর সাহেবরা বাথরুম উদ্বোধন করেন। আমরা শিখি। শেখার কোন শেষ নাই!
এখন কেউ যদি রাস্তায় জিপার খুলে বসে যান, ভাসিয়ে দেন তাহলে আমাদের খুব চোখে লাগে বুঝি? সূক্ষ রূচি প্রচন্ড আহত হয়, না?
পুরুষদের যাও এই বাড়তি সুবিধা আছে কিন্তু মহিলাদের কথা ভেবে আমি শিউরে উঠি। কোন ডাক্তারের সঙ্গে কথা না বলেও বলে দিতে পারি বাংলাদেশের মহিলাদের ইউরিন ইনফেকশন সংক্রান্ত সমস্যার অন্যতম কারণ এটাও।
একটা শহর-নগরে কেউ গেলে এরা সেই শহরের অতিথি। অতি সভ্য আমরা অতিথিদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হয় এটাই এখনও শিখিনি। এদের বসতে দেব না (হা ঈশ্বর, রাস্তার পাশে বসার জায়গায় রশি দিয়ে টব বেঁধে দিয়েছে যেন কেউ বসতে না পারে এই শহরে বসে ক্ষণিকের জন্য শ্বাসও ফেলতে পারব না, আকাশ দেখতে পারব না?), মুততে দেব না। আজিব, এটা কোথাকার মানবতা?
এইবার বাস্তবতাটা বলি, একজন যখন কোন শহরে যান তাকে যেতে দিয়ে কেউ মাথা কিনে নিচ্ছে না। ওই মানুষটা ওই শহরে বিভিন্ন উসিলায় গাদা-গাদা টাকা খরচ-খুইয়ে আসেন। শহরটার চাকা বনবন করে ঘোরে অতিথিদের টাকার কল্যাণে।
এইবার সূক্ষ রূচির পাঠক বিদায় নেন। আল্লাহ হাফেজ (খোদা হাফেজ এখন আর বলি না কারণ এটা নিয়ে অনেকে আপত্তি করেন। যেমনটা করেন গোশত না বলে মাংস বললে।)
...
এইবার কঠিন কিছু কথা বলি, কোর্টে কেউ হাওয়া খাওয়ার জন্য যায় না। মামলাটা করার পূর্বেই আমাকে সরকারী কোষাগারে গুনে গুনে ৪০ হাজার টাকা জমা দিতে হয়েছিল (যেখানে মাত্র ২০০ টাকা জমা দিয়ে একটা মামলা করা যায় সেখানে এই বিপুল টাকা আমাকে জমা দিতে হয়েছিল মামলার বিশেষ প্রকৃতির কারণে)। এখন আমাকে ৪০ ফোঁটা মুত্রত্যাগের সুযোগ না দেয়ার কারণ কি?!
No comments:
Post a Comment