
এখন আর ঘুষ দিতে আমার মোটেও আপত্তি নাই এই বিষয়ে একটা লেখা দিয়েছিলাম।
ওখানে লিখেছিলাম, ঘুষখোরদের চাহিদামত টাকা অবশ্যই দেয়া হবে, সঙ্গে এই টাইপের নোট, একদম ফ্রি।
এই দেশে এখন ঘুষ বিষয়টা অতি সাধারণ একটা বিষয় হয়ে গেছে। সাধারণ একজন ক্লার্কের ছেলে-মেয়েরা প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ছে, মেডিকালে পড়ছে কেউ জানতে চাইছে না কেমন করে? সরকারী অধিকাংশ কর্মকর্তার ঢাকায় ন্যূনতম একটা হলেও বাড়ি আছে, কেউ জানতে চাইছে না কেমনে কী! তেলিবেলি রাজাকারের নাম শুনলেও আমাদের গায়ে আগুন ধরে যায় কিন্তু ঘুষখোরের সঙ্গে লটপট-ঘসাঘসি করতে আমাদের কোন বিকার নাই! আমরা খুবই আরাম পাই। বিমলানন্দে অনেক বাবা তার মেয়েকে ঘুষখোরের বিছানায় তুলে দিতে অনাগ্রহ বোধ করেন না, অবশ্য বৈধ উপায়ে, কবুল পড়িয়ে।
এমন কি, আমাদের দেশে হুজুররা পর্যন্ত এই বিষয়ে রা কাড়েন না। কেন, কে জানে? অবশ্য কোরানে দেখলাম, সামান্য অনেক অন্যায় নিয়ে অসংখ্য আয়াত আছে কিন্তু ঘুষ নিয়ে তেমন আয়াত পেলাম না। সবেধন নীলমনি একটাই (আপ্রাণ চেষ্টা করেও একটাই পেলাম। অনিচ্ছাকৃত, অসচেতনার কারণে মিস করে থাকলে আমি আগাম ক্ষমা চাচ্ছি):
"আর মানুষের ধনসম্পদের কিছু অংশ জেনেশুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারকদের ঘুষ দিয়ো না।" (২ সুরা বাকারা: ১৮৮)
ঘুষ, বিষয়টা আমরা বড়ো তাচ্ছিল্য-হালকা করে দেখি। ঘুষ একজন অন্যজনকে তখনই দেয় যখন তার পাপ ঢাকার প্রয়োজন হয়। ঘুষের কারণে একটা খুনের বিচার হয় না। ঘুষের কারণে একজন ধর্ষিতা শিশুর বাবা কাঁদেন, সেই বাবাটার কান্না কেউ শোনে না! কোরবানির পশুর কান্না বুঝি শোনা যায়? ঘুষের কারণেই আমরা এহেন কোন অন্যায় নেই যা করি না।
"রাব্বি শামসিরর নতচোখে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলল, কেউ কেউ ক্যারিয়ারের জন্য তার মাকে অন্যের বিছানায় তুলে দেয়। তুই তাদের একজন।" (জীবনটাই যখন নিলামে)
রাব্বির সুরে সুর মিলিয়ে আমিও বলি, ক্যারিয়ার-ফ্যারিয়ার বলে আলাদা কিছু নাই। ভাল টাকা পেলে...ভাল টাকার ঘুষ পেলে...।
যাই হোক, এখন আমার বিশেষ ওই টাকা দিতে গেলে টাকার ব্যবস্থাটা তো করতে হবে। আমার পরিচিত এক আর্টিস্ট বন্ধু আছেন। তাকে বলেছিলাম, টাকাটার ডিজাইন করে দিতে। বন্ধুটি আগে ছিলেন বড়ো ছটফটে, এখন চলাফেলা বড়ো স্লথ! বড়ো কোম্পানিতে চাকরি করেন বলে পেছনটা অনাবশ্যক ভারী হয়ে গেছে, চলাফেরায় স্লথ না হয়ে উপায় কী! আজকাল কথাও বলেন মেপে। আমার প্রস্তাব শুনে কেবল বললেন, পাডা। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম আঞ্চলিকতার দোষে দুষ্ট বন্ধুটি আমাকে বুঝি পাঁঠা বলে গাল পাড়লেন, বন্ধু মাথা নাড়লেন। খসখস করে কাগজে লিখে স্লিপটা ধরিয়ে দিলেন, পাডা- পাগলের ডাক্তার।
এমন হার্মাদের সঙ্গে কথা চালাচালি করে সুখ নাই।
কি আর করা বিমর্ষ মুখে নিজেই টাকাটার ডিজাইনটা করলাম। কেউ কথা রাখে না- কেউ সাহায্য করে না।
ঘুষখোর ব্যাংকের গর্ভনর হওয়ার জন্যও কাউকে রাজী করনো গেল না। দায়ে পড়ে নিজেই এ পদে যোগ দিলাম। কেন কেউ এই পদে যোগ দিতে সম্মত হননি এটা এখন বুঝি।
কাউকে বলবেন না, আপনাকে বলি। এখন পর্যন্ত বেতন হিসাবে আমাকে একটা কাঁচা টাকাও দেয়া হয়নি, কোন একদিন অফিস যাওয়ার জন্য গাড়িও পাঠনো হয়নি। কে এটা বিশ্বাস করবে, যথেষ্ঠ লোকবল দূরের কথা আমাকে কাজ চালাবার মতো একটা অফিস পর্যন্ত দেয়া হয়নি!
এখন হাড়ে হাড়ে বুঝি এই পদে যোগ দেয়ার জন্য কেন কাউকে পাওয়া গেল না...। কপাল!
2 comments:
নোটের ডিজাইন হেভি হৈছে। :D
১০০০ টাকা নোটের একটা ডিজাইন কইরা দ্যান।
Post a Comment