এক দেশে একটা দেশ ছিল। সেই দেশের যথারীতি একটা নাম ছিল, বাংগুরাদেশ। সরে গিয়ে না-থাকলে বাংগুরাদেশ আগের জায়গায়ই থাকার কথা। বাংগুরাদেশ নামের দেশটার জনগণ শোক দিবস পালন করছেন, কত দিনের জন্য কেউ জানে না! পূর্বে একবার এক নেতা মারা গেলে চল্লিশ দিন শোক পালন করা হয়েছিল! জাতীয় পতাকা হয়ে গিয়েছিল, বিবর্ণ-ধুসর!
এইবার প্রচুর নেতা মারা গেছেন। প্রত্যেক নেতার জন্য চল্লিশ দিন করে ধরলে...! ঘটনাটা মর্মন্তিক, 'বাংগুরাদেশ বিমান' ক্রাশ করেছে! কী ভয়াবহ! দেশের বিখ্যাত-বিখ্যাত সব পলিটিশিয়ানরা মারা গেছেন অথচ বেঁচে গেল কিনা একটা বান্দর! সৃষ্টিকর্তার একি অবিচার! দেশ চালাবে কে?
এত পলিটিশিয়ানরা মারা যেতেন না যদি না জনগণের প্রতি তাঁদের মাত্রাতিরিক্ত দরদ থাকত। ঘটনাটা হচ্ছে এমন: বাংগুরাদেশ বিমানের প্রচুর দুর্নাম হয়ে গিয়েছিল। বিমানরা নাকি যখন-তখন মাটিতে শুয়ে পড়ত। বাছবিচার নাই ধানখেত, বিল-হাওড়। মাটির প্রতি টান আর কী! এটা কী কারণে যেন ওই দেশের জনগণ ভালো চোখে দেখছিল না। বিশেষ করে ওই দেশের প্রবাসী জনগণরা বাংগুরাদেশ বিমানে ট্রাভেল করতে চাচ্ছিল না।
(পলিটিশিয়নরা তাঁদের বিশেষ মন্ত্রীশুদ্ধ ভাষায় বলার চেষ্টা করেন)
দুর্নাম ঘুচাবার জন্য পলিটিশিয়ানরা জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিলেন: আমাদের ভাই ও বুনেরা (আমার ইস্তিরি সাহেবা ব্যতীত), ভয় নাই উরে ভয় নাই। বাংগুরাদেশ বিমান আমার, ছরি আপনাদের বিমান। আপনারা বাংগুরাদেশ বিমানে সপর-ভরমন করুইন।
জনগণ বলল: আমাদের সাহস হয় না। পলিটিশিয়ানরা বললেন: আমরা টেরাবুল-ভরমন কইরা দেখায়া দিতাছি।
এরপর যা হওয়ার তাই হলো। ইন্না..., রাম নাম সাত্য হয়। যীশু তাদের আত্মাকে শান্তি দিন। পৃথিবীব্যাপী তোলপাড় পড়ে গেল। এখন একমাত্র বেঁচে যাওয়া বান্দর হচ্ছে হিরো, যারা মরে গেল তারা সব জিরো! সাংবাদিকরা সবাই বান্দরকে ঘিরে ধরেছে। সমস্যা হচ্ছে, বিমানের ব্লাকবক্স উদ্ধার করা যাচ্ছে না- এটা বাংগুরাদেশ সাগরে তলিয়ে গেছে।
একজন জাপানী সাংবাদিক বান্দরকে বললেন, মুশি মুশি-হ্যালো।
বান্দর বলে, খিচ-খিচ!
মহা মুসিবত, বান্দরের ভাষা তো কেউ বুঝতে পারছে না। বাংগুরাদেশের বিমানমন্ত্রীর মেজাজ খারাপ, খুব খারাপ। কপাল, প্লেনটা ক্রাশ করেছে সীমান্ত এলাকায়। মোবাইলে কাউকে পাওয়ার সম্ভাবনা নাই কারণ বিশেষ নির্দেশে দেশের সমস্ত মোবাইল ফোনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এই অজুহাতে, পাবলিক ফোন চার্জ দিয়ে নাকি সমস্ত কারেন্ট শেষ করে ফেলছে! (প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান ২০০৬ সালে বলেছিলেন, 'দেশে উন্নয়ন হচ্ছে তার প্রমাণ এখন ফকিরের হাতেও মোবাইল'। এখন ২০১০। এখন ফকিরে দু-হাতে দুইটা মোবাইল এতে সন্দেহ কী!)
বিমানমন্ত্রী অবশেষে কবুতরের পায়ে বেঁধে আর্জেন্ট ‘কবুতরগ্রাম’ পাঠালেন। কবুতরগ্রামে (মন্ত্রীশুদ্ধ ভাষায়) লিখলেন: সেন্ড বান্দর, লাইভ। আ ডোন্ট মাইন্ড, হোটাভার হি হিম অর হার, গে অর লেসবিয়ান! বান্দরকে বিমানমন্ত্রীর সামনে হাজির করা হলো।
সবাই বলল, স্যার, বান্দইরার সাথে আলাপ করে লাভ নাই। এর ভাষা কেউ বুঝে না।
বিমানমন্ত্রী বললেন: খামোশ, মন্ত্রীরা জ্ঞানী, এরা জানে না এমন কিছু নাই। ডাবল খামোশ, আমরা সব বুঝি। বিমানমন্ত্রী এবং বান্দরের মধ্যে কথাবার্তা মানুষের ভাষায় রূপান্তর করে হুবহু তুলে দেয়া হলো:
বিমানমন্ত্রী: বান্দর, যাহা বলিবা সত্য বলিবা। সত্য বৈ মিথ্যা বলিবা না।
বান্দর: আমরা বান্দররা সত্য কথাই বলি, মিথ্যা বলা আমাদের 'বাইন্দইরাধর্মে' নিষেধ আছে ।
বিমানমন্ত্রী: কথা কম! বিমান মাটিতে পড়ল কেমনে?
বান্দর উপরে আঙ্গুল তুলে: সবই তার ইচ্ছা!
বিমানমন্ত্রী: আমার লগে বান্দরগিরি করবা না, অনেক বান্দরের লেজ বেকা করছি! এখন বলো, ড্রাইভার, না-না, এরারে তো পাইলট কয়। হে কই আছিল?
বান্দর: সবটা তো জানি না, দরজা বন্ধ ছিল। এয়ার হোস্টেসরে নিয়া মেটিং করতাছিল।
বিমানমন্ত্রী: বুঝছি-বুঝছি, এরা মিটিংয়ে ব্যস্ত ছিল। চু...(সেন্সর) পুতরা, পাইলটরা যদি মিটিং-ফিটিং করে তো আমরা কি করুম বা...(সেন্সর)।
বান্দর: মিটিং না মেটিং!
বিমানমন্ত্রী: ইংলিশ আমারে শিখাইও না, অংকে ১৩ গ্রেস লাগছিল কিন্তু একবারে মেট্রিক পাশ দিছি। তা, কো-পাইলট কই আছিল?
বান্দর: তাইনে আর্মি পলিটিশিয়ান 'হোমো স্যারের' ব্যাগ থিক্যা এক বোতল স্কচ হুইস্কি সরাইয়া ফেলছিল, পুরাটা খাইয়া লম্বা হইয়া গেছিল।
বিমানমন্ত্রী: কাট মাই শিট! হোমো আছিল প্লেনে! তা ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার, হে কই আছিল?
বান্দর: এক ধর্মের মা-বাপ 'গোআ স্যারের' কাছে ধর্ম শিখতাছিল।
বিমানমন্ত্রী: মন্ত্রীসাব এইবার একটু ভুল করে 'কাট মাই শিক' বলে ফেললেন। শ্লা, গোয়াও আছিল, মারিছে! আচ্ছা, এয়ারহোস্টেস, এরা?
বান্দর: দুই ম্যাডাম ডাইকা নিয়া কিতা জানি বকবক-বকবক-বকবক করতাছিল।
বিমানমন্ত্রী: আরে, এই হালা বান্দর, এইডা কয় কি! আরে বান্দরের ছাও, বিমান চালাইতাছিল কেডা?
বান্দর হাঁই তুলে বলল: আমিই চালাইতে ছিলাম। ভালই চালাইতে ছিলাম, একটু কেরি কাটতে গিয়া...!
*বাংগুরাদেশ, এটা ঠিক কোথায় এই মুহূর্তে হাতের নাগালে ম্যাপ না থাকায় বিস্তারিত বলতে পারছি না।
অন্য প্রসঙ্গ
**বাংলাদেশেও নাকি বাংলাদেশ বিমানকে বিভিন্ন যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। বৈদেশিগণ বাংলাদেশ বিমান ভ্রমণ করতে আগ্রহ বোধ করেন না! এখন বাংলাদেশ বিমানকে চাঙ্গা করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এটা অতি আনন্দের সংবাদ।
পত্রিকার খবর, কালের কন্ঠ (৩০.০৩.১০) জানাচ্ছে: "গত ৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ বিমানের নতুন লোগো উদ্বোধন করেন। এর এক সপ্তাহ পর...সেই অনুষ্ঠানে পাঁচ হাজার অতিথিকে আপ্যায়ন করা হয়। সম্প্রতি বিমানবহরে তিনটি উড়োজাহাজ লিজ নেয়া হয়। এসব উড়োজাহাজ সরবরাহ করার সময় নতুন লোগো ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া হয়। ...নতুন লোগোসহ বিমানগুলো বুঝে নেয়া হয়।
...ঘটা করে উদ্বোধনের ২৬ দিনের মাথায় নতুন লোগো বাদ দিয়ে আবার সেই পুরনো লোগোতে ফিরে যাওয়া হয়।"
এটাও আনন্দের সংবাদ। পুরনো চাল ভাতে বাড়ে। হ্যাপি জার্নি...।
No comments:
Post a Comment