'আমাদের সময়'-এর প্রকাশনায় সাপ্তাহিক ডিজিটাল সময়-এ (২৮ এপ্রিল, ২০১০) আমার একটা সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছে। আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, এঁরা আমাকে এর জন্য যোগ্য মনে করেছেন। এবং যিনি সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তাঁকে আলাদা করে ধন্যবাদ দেই।
কিন্তু...। এই সাক্ষাৎকার নিয়ে আমার খানিকটা বলার আছে। আমাকে কিছু প্রশ্ন দেয়া হয়েছিল, আমি ওই প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে উত্তরগুলো দেয়ার চেষ্টা করেছিলাম। আবারও কিন্তু! প্রশ্ন-উত্তর আকারে সাক্ষাৎকারটা কিন্তু ছাপানো হয়নি। ছাপানো হয়েছে কেবল আমার বক্তব্য খন্ডিত আকারে। এতে সমস্যা কোথায়? ভয়ানক সমস্যা আছে, বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করি।
একটা প্রশ্ন ছিল এমন, "...লেখালেখি করে আপনার জীবনের প্রথম আয়..."?
এর উত্তরে সত্য কথাটাই বলতে হয়। সাক্ষাৎকারেও আমিও সত্যটাই বলেছিলাম, '৯৩ সালে বাংলা একাডেমী আমার একটা উপন্যাসের জন্য [৪] ২০০১ টাকা সম্মানী দিয়েছিল। ১ টাকার বিষয়টা নিয়ে রসিকতা করে একটা লেখাও তখন লিখেছিলাম, ১ টাকা সম্ভবত বাদাম খাওয়ার জন্য!
প্রশ্ন-উত্তর পর্বের ধারাবাহিকতা না-রেখে ছাপালে বিষয়টা খাপছাড়া হয়ে যায়!
এই সাক্ষাৎকারে আরেকটা প্রশ্নের উত্তরে আমি বলেছিলাম:
"এই দেশে একজন মেথরও মেথরগিরি করে তাঁর প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করতে পারবেন কিন্তু ব্লগার নামের লেখক পারবেন না। এটা অন্যায়, এমনিতে একজন লেখককে নির্দিষ্ট একটা সময়ে লিখলেই চলে; যেমন বইমেলার আগের এক-দু মাস কিন্তু একজন ব্লগার নামের লেখককে অনবরত লিখে যেতে হয়। তার মাথায় সর্বদা ঘুরঘুর করে বিভিন্ন তাৎক্ষণিক ভাবনা, যেটা অফিস নামের কারাগারে আটকে থেকে সম্ভব না"।
যথারীতি এই অংশটুকু ছাপা হয়নি! কেন? ছাপা না-হওয়ার কারণ কী! বক্তব্যটা কী অশ্লীল?
অথচ সাক্ষাৎকার যিনি নিয়েছেন তাঁকে আমি এটাও বলেছিলাম, মেথর বা মেথরগিরি [১] এই শব্দ-বাক্যে আপনার আপত্তি থাকলে বলেন। তিনি তখন বলেছিলেন: না, কোন সমস্যা নাই।
একটি পত্রিকা-ম্যাগাজিনের নিজস্ব কিছু ভঙ্গি, পলিসি, সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। একজনের সমস্ত বক্তব্য ছাপতে হবে এমনটিও কোন কথা নেই। এটা আমার বুঝতে না-পারার কথা না। কিন্তু যেটায় আমার প্রচন্ড আপত্তি সেটা হচ্ছে, যে কথাটা আমি বলিনি সেই কথাটা জুড়ে দেয়া। এর মানে কী? মানে কী এই ফাজলামীর! কী নোংরা সাহস আপনাদের!
সাক্ষাৎকারের এক জায়গায় ছাপা হয়েছে যেটা আমি বলিনি:
"ছোটবেলা থেকে আমি স্বপ্ন দেখতাম একদিন বড়ো লেখক হব। দেশ-বিদেশে আমার অনেক ভক্ত থাকবে। কিন্তু চাইলেই তো আর সব স্বপ্ন পূরণ হয় না।"কী সর্বনাশ, এদের কল্যাণে আমি কী কালে-কালে রাজনীতিবিদ হয়ে গেলাম! দূর-দূর, বালকবেলায় আমি রাখাল-বা মুচি হতে চেয়েছিলাম কারণ আমার দু-জন 'জিগরি-দোস্তদের' মধ্যে একজন ছিল রাখাল অন্যজন মুচির পোলা।
সত্যটা হচ্ছে, এমন কোনো কথাই আমি বলিনি। কি হবার ইচ্ছা ছিল? এমনিতে বেসুমার বই পড়ার সুবাদে লেখক হওয়ার ইচ্ছা ছিল, হতে পারিনি [২]।
আমি যা বিশ্বাস করি তাই লিখি। আমার লেখার সঙ্গে যারা পরিচিত তাঁরা জানেন, আমিও অসংখ্যবার এই কথাটা বলেছি। এখন বিষয়টা কি দাঁড়ালো? পাঠককে বলে এসেছি এক রকম। অথচ প্রিন্ট মিডিয়ায় আমি বলছি আরেক রকম। আমি নাকি ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখতাম লেখক হব। দেশ-বিদেশে অসংখ্য পাঠক থাকবে...ইত্যাদি ইত্যাদি।
ওরে, আমি কি সেই মহান রাজনীতিবিদ নাকি রে, যে ছোটবেলা থেকেই দেশ স্বাধীন করার স্বপ্ন দেখব?
আচ্ছা, প্রিন্ট মিডিয়া কি তাদের মতো করে আমাদের ভাবনাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে? তাঁরা কি চায় আমরা আদর্শ মানুষের মত আদর্শ কথাবার্তা বলি, আদর্শ সাক্ষাৎকার দেই বা সর্বদা ছাপার অক্ষরে কথা বলি? সেজন্য কপটতার আশ্রয় নিলেও কোন সমস্যা নাই, না?
ওরে, আমি তো পেয়ারাকে 'গয়াম' বলা লোক আর এখনও গা থেকে ভক করে সরষে তেলে র গন্ধ বের হয়!
মজার বিষয় হচ্ছে, 'ডয়েচে ভেলে' রেডিও সাক্ষাৎকারের জন্য আমাকে কিছু প্রশ্ন দেয়া হয়, যে এই সব বিষয়ে আপনাকে প্রশ্ন করা হবে। ছকবাঁধা প্রশ্নের বাইরেও আমি তাঁদেরকে বলি:
ব্লগস্ফিয়ারে যে লেখালেখি করা হয় ওখানে আমরা ব্লগারদের জন্য কঠিন একটা সমস্যা থেকে যায়। একজন লেখক কিছু-না-কিছু আয় করতে পারেন কিন্তু একজন ব্লগার নামের লেখক 'নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো' কাজটা করে যান খালি পেটে উবু হয়ে।
ডয়েচে ভেলে থেকে আমাকে বলা হয়, আমরা সরি, প্রশ্নের তালিকায় এই প্রশ্নটা নেই। কিন্তু আমি এঁদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, এঁরা এই প্রশ্নটা যোগ করেছিলেন এবং তা ব্রডকাস্টও হয়েছিল [৩]।
এখানেই পার্থক্যটা, এঁরা আমাদেরকে আমাদের মতো করে ভাবতে দেন কিন্তু কেউ কেউ তাঁদের মতো করে আমাদেরকে ভাবতে বাধ্য করেন। ফল যা হওয়ার তাই হয়, প্রসব হয় অশ্বডিম্ব!
*ওহ, আরেকটা জরুরি কথা, ময়-মুরুব্বির দোয়া, আল্লাহ বাঁচাইছেন! এদের কল্যাণে আমার বাপের নাম নিজাম উদ্দিন আহমেদ থেকে 'নিজাম উদ্দিন মাহমেদ' হয়ে গেছে।
ভাগ্যিস, বাপজান বেঁচে নেই এবং তাঁর স্ত্রীও, নইলে তাঁরা তাঁদের বাড়ি থেকে আমাকে বের করে দিতেন। এই একটা সাক্ষাৎকারের কারণে আমাকে রাস্তায় ফ্যা-ফ্যা করে ঘুরে বেড়াতে হত! বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলা একাডেমির রাস্তায় হয়তো আমাকে বাদাম বিক্রি করতে দেখা যেত। এক ঠোঙ্গা বাদাম হয়তো আপনিও কিনে নিয়ে যেতেন ... :(
সহায়ক সূত্র:
১. বইমেলা: http://www.ali-mahmed.com/2010/01/blog-post_30.html
২. লেখক: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_18.html
৩. ডয়েচে ভেলে রেডিও: http://www.dw-world.de/popups/popup_single_mediaplayer/0,,5476841_type_audio_struct_11977_contentId_5476430,00.html
৪. উপন্যাস: http://www.ali-mahmed.com/2009/05/blog-post_01.html
No comments:
Post a Comment