সভ্যতার পোশাক পরা মানুষগুলোর চেয়ে ভয়ংকর আর কেউ এই গ্রহে নাই। জঙ্গী নামের নির্বোধদের চেয়েও এরা ভয়ংকর। এদের শিক্ষা একই- এদের মধ্যে পার্থক্যটা হচ্ছে, কেবল শেখাবার ভঙ্গির মধ্যে। শিক্ষক মহোদয় কতটা চৌকশ এটাই আসল।
একবার জঙ্গিদের স্কেচ করতে গিয়ে খানিকটা সমস্যায় পড়েছিলাম। কেমন হওয়া উচিৎ এদের অবয়ব? পরে মনে হলো দানব তো দানবই এর আবার অবয়ব কী! দানবের ছবি আঁকতে গেলে অনেকটা মানুষের আদল আসবেই। দানব তো আর আলাদা কিছু না। মানবের ছাল গায়ে দিয়ে এরা এই গ্রহেই বনবন করে ছড়ি ঘোরাচ্ছে।
এই দানবগুলো, কেউ সভ্যতার পোশাকে শরীর মুড়িয়ে রাখে, কেউ তথাকথিত অসভ্যতার পাশাকে। কেবল চকচকে মোড়কে যা পার্থক্য, ভেতরে জিনিস একই। আলকাতরাকে ঝাঁ চকচকে মোড়কে মোড়ালেও আলকাতরা আলকাতরাই থেকে যায়।
অতি উত্তম! এখানে কুত্তারা কনসার্ট শুনবে। কুত্তা লিখেছি বলে সূক্ষরূচির পাঠকের আহত হওয়ার কিছু নাই। কুত্তা কনসার্ট শুনলেও কুত্তা কুত্তাই থেকে যাবে- আফসোস, মানুষ হওয়ার কোন সুযোগ নাই তার। সেই কারণেই আমি কুত্তার পূর্বে জনাবটা আর লাগাচ্ছি না। সূক্ষরূচির পাঠক আহত বোধ করলে পড়ার সময় কুত্তার পূর্বে জনাব বসিয়ে নিলে আমার কোন আপত্তি নাই।
কুত্তাদের জন্য পোশাক, কুত্তাদের সঙ্গে বিছানা শেয়ার করা- কত্তো কত্তো আইডিয়া সভ্য মানুষদের মাথায়! অ, কুত্তাওয়ালারা, প্রকৃতি কুত্তাদের জন্য পোশাক বানিয়েই এই গ্রহে পাঠিয়েছে। প্রকৃতি ব্যত্যয় পছন্দ করে না। কারও গায়ে মেকি পোশাক চাপিয়ে দেয়ার শোধ প্রকৃতি নেবে কোন-না কোন ভাবে এতে সন্দেহ নাই।
রক্তের দাগ যেমন থেকে যায় তেমনি দানবও দানবত্বের ছাপও রেখে যায়! এই অস্ট্রেলিয়াই ইরাকি শিশুদের উপর গুলি চালিয়েছে সভ্যতার পোশাক পরে। আমেরিকার না হয় ফাদার-ল্যান্ড রক্ষার সমস্যা ছিল. আমার জেনে ভাল লাগছে, এরা এদের ফাদারের পরিচয় জানে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার কোন বাপকে রক্ষার সমস্যা ছিল?
এই অস্ট্রেলিয়াই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাড়ে ছয় লক্ষ উটকে [১] গুলি করে মেরে ফেলার। আমি জানি না এই সিদ্ধান্ত এরা কবে, কখন কার্যকর করেছে। আমি এটাও জানি না, এরা কি বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেছিল ওই উটগুলোকে বাঁচাবার? আমি যতটুকু জানি, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রয়েছে উটের বিপুল চাহিদা- সৌদির মত দেশগুলো, ভারত, এমকি বাংলাদেশেও। এরা কি একবারও এটা বলার চেষ্টা করেছে আমাদের দেশের বিমানবন্দর, পোতাশ্রয় থেকে বিনে পয়সায় তোমরা এসে নিয়ে যাও? ওই দেশগুলো কৃতজ্ঞচিত্তে অস্ট্রেলিয়ার এই বদান্যতা মনে রাখত।
এটা এরা করবে না কারণ হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে উট মারার যে পাশবিক, দানবীয় আনন্দ সেটা অন্যত্র কোথায়? এখন বিভিন্ন বিকৃত আসনে বিছানা কাঁপিয়ে সুখ যে আর পাওয়া যাচ্ছে না।
সুখ না পাওয়ার হাহাকার, লুকিয়ে থাকা পাশবিক আনন্দ জন্ম দেয় আরও বড়ো আনন্দের। কেমন করে এপাচি হেলিকপ্টার থেকে ইরাকী মানুষ, শিশুদের পাখির মতো গুলি করে মেরে ফেলা যায়। কী চমৎকার অ্যাকসেন্টেই না বলে, "নাইস, গুড শ্যুটিং..."! কেমন হ্যা হ্যা করে হাসতে পারে।
আমরা এদের ভাষা শিখব, এদের অ্যাকসেন্ট রপ্ত করব, এদের মতো চমৎকার করে হাসব।
পেন্টাগন বিবৃতি দিয়েছে, "অ্যাপাচির মনিটর খুব ছোট ছিল বলে সেনারা ক্যামেরা এবং অস্ত্র আলাদা করতে পারেনি"।
পেন্টাগন আরও বলছে, "এ বিষয়ে যথার্থ তদন্ত করা হয়েছে এবং কারও বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি"।
বেশ-বেশ। মেনে নিলাম অ্যাপাচির ছোট্ট মনিটরের কারণে বড়ো ধরনের অনিচ্ছাকৃত একটা ভুল হয়ে গেছে। মানুষ ভুল করতেই পারে তবে প্রাণ ফিরিয়ে দিতে পারে না। কিন্তু আমার যেটা জানার ছিল যেটা হচ্ছে, এটা হলো প্রথম পর্বের কথা। দ্বিতীয় পর্বে আমরা দেখতে পাই, একটি বেসামরিক গাড়ি এসে একজন মুমূর্ষু মানুষকে হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করলে, সেই গাড়ি লক্ষ করেও গুলি চালিয়ে অনেককে হত্যা করা হয়েছে। ওই গাড়িতে শিশুও ছিল। এর উত্তরে পেন্টাগন কি বলতে চাচ্ছে?
উত্তরটা আমি বলে দেই, আপনাদের জন্যই বড়ো প্রয়োজন একজন ওসামা বিন লাদেনের মত একজন নায়ক। যাকে আপনারা বলছেন, বড়ো একজন সন্ত্রাসী। হাসি পাচ্ছে, প্লিজ, এই কথাটা অন্তত বিশ্বাস করতে বলবেন না! লাদেন কি আপনাদের চেয়েও বড়ো সন্ত্রাসী?
ওসামা বিন লাদেন খুব খারাপ, না? খুব খারাপ! আমার তো মনে হয়, এই ভিডিও ক্লিপিংস দেখার পর যে কোন মর্যাদাবান, হৃদয়বান মানুষই লাদেন হতে চাইবে। এ গ্রহে অসংখ্য লাদেনের জন্ম হবে।
এরাই আমাদের সভ্যতা [২] শেখাবে, মানবতা শেখাবে। প্রয়োজনে সেমিনারের নামে আমাদের দেশে চলে আসবে। এরাই আমাদের শেখাবে কেমন করে সভ্য হওয়া যায়। এদের দেশের ইশকুলে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রয়োজনে আমরা ঘুষ নামের 'স্পিড'-এ বদৌলতে দেশ বিক্রি করে দেব, পারলে নিজের মাকেও।
সেই ইশকুলে শেখার নাম করে, তথাকথিত ক্যারিয়ারের নামে আমরা আমাদের উদ্দাম যৌবন নষ্ট মাখনের মতো গলে যেতে দেব। পরিণত হবো একেকটা চলমান রোবটে, অপেক্ষায় থাকব বুড়ো হওয়ার।
সেই ইশকুলে শেখার নাম করে, তথাকথিত ক্যারিয়ারের নামে আমরা আমাদের উদ্দাম যৌবন নষ্ট মাখনের মতো গলে যেতে দেব। পরিণত হবো একেকটা চলমান রোবটে, অপেক্ষায় থাকব বুড়ো হওয়ার।
এরা দুর্বল দেশের সেরা সন্তানদের দিয়ে মঙ্গলের পানি খোঁজার [৩] কাজটা করাবে! এরাই এক সময় এই পৃথিবীকে বসবাস অযোগ্য করে অন্য কোন গ্রহে বসতি স্থাপন করবে।
আমরা এদের দেখে দেখে শিখব কেমন করে মানব থেকে দানব হওয়া যায়, কেমন করে দুর্বলের প্রতি অত্যাচার করা যায়। আদিমানুষ নামের মানুষদের তীর-ধনুকের সামনে ট্যাংক দাঁড় করিয়ে দেয়া যায়। পাশের দেশের উপাসনাস্থল ভেঙ্গে ফেললে আমাদের খুব রাগ হয়, সেই রাগ আমরা সামলাতে পারি না। চোখের সামনে যা পড়ে সব পুড়িয়ে ফেলি, এমন কি শিশুও।
কিন্তু আমাদের দেশেই উপাসনাস্থল ভেঙ্গে ফেললে [৪] আমাদের বিন্দুমাত্র রাগ হয় না কারণ ওটা যে দুর্বলদের। পাশবিকতা তো আমাদের রক্তেও খেলা করে।
*ভিডিও ঋণ: উইকিলিকস (http://www.wikileaks.com/), ইউটিউব।
সহায়ক লিংক:
১. সাড়ে ৬ লক্ষ উট: http://www.ali-mahmed.com/2009/10/blog-post_9297.html
২. সভ্যতা: http://www.ali-mahmed.com/2009/05/blog-post_493.html
(দুর্বলচিত্তের কেউ এই ২ নং লিংকটা না দেখলেই ভাল করবেন)
৩. মঙ্গলের পানি: http://www.ali-mahmed.com/2009/12/blog-post_28.html
৪. আদিমানুষ পড়ো, আমাদের নামে: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_23.html
No comments:
Post a Comment