Search

Monday, May 24, 2010

ধন্যবাদ, সি-নিউজ


সাক্ষাৎকার নামে যে জিনিসটা চালু আছে এটা নিয়ে আমার মধ্যে এক ধরনের অনীহা কাজ করে। কারণ আমি মনে করি, লেখালেখি ভুবনের একজন মানুষের আলাদা করে বলার মত তেমন কিছু থাকে না কারণ ওই মানুষটা যা বলার তা তার লেখার মাধ্যমেই বলার চেষ্টা করেন। 
আর এমন একজন মানুষ যে প্রতিদিনই হাবিজাবি কিছু-না-কিছু লেখে তার আবার আলাদা করে বলার কী থাকে!

সাক্ষাৎকার নামের জিনিসটা হচ্ছে স্টারদের জন্য। যারা একটা বিজ্ঞাপন করে স্টার হয়ে যান। তারা কি কি দিয়ে ভাত খান, কেমন কাপড় পরেন, কেমন করে বেড়ালের মত করে হাঁটেন এই সব পাবলিককে ঘটা করে জানানো হয়। পাবলিক এটা দেদারসে খায়, কপকপ করে। 
কোথাকার কোন অখ্যাত লেখক, তাঁর সাক্ষাৎকার ছাপতে কারো বয়েই গেছে [১]! এই সব অখ্যাত লেখকদের বইয়ের বিজ্ঞাপনও পত্রিকায় যায় না। কোন প্রকাশকের দায় পড়েছে তার বইয়ের বিজ্ঞাপন ছাপাবার? তিনি তো জনপ্রিয় কোন লেখক না [২]

সাক্ষাৎকার জিনিসটার প্রতি  অনীহার পাশাপাশি আমি আতংকের চোখে দেখা শুরু করলাম, কারণ যা বলা হচ্ছে তা ছাপার হচ্ছে না। তারচেয়েও ভয়াবহ হচ্ছে, যা বলা হচ্ছে না তাও ছাপা হচ্ছে [৩]। কী ভয়ংকর!

নুরুন্নবী হাসিব যখন বললেন তখন আমি খানিকটা চাপে পড়ে গেলাম। কারণ এই মানুষটার প্রতি আমার আলাদা সমীহ আছে। এই মানুষটার আছে ভুল করে ভুল স্বীকার করার সৎসাহস। এমন একজন মানুষকে সমীহ না করে উপায় কী!

তারপরও আমি বললাম, ভাইরে, আমি তো সাক্ষাৎকার বিষয়টা ভালো বুঝি না। 
তিনি বললেন, কোন সমস্যা নাই, আপনি আপনার মতো করে বলবেন।
এবার আমি খানিকটা আগ্রহী হই, আমি যা বলতে চাই তা বলতে পারব, আপনি ছাপাতে পারবেন?
বলতে পারবেন সমস্যা নাই।
ভেবে দেখেন। পরে আবার আমার বলা কথা উধাও করে না দেন। ভেবে দেখেন, আমার কোন বক্তব্যে যদি আপনার আপত্তি থাকলে আগেই বলবেন। আপনার কথায় যুক্তি থাকলে আমি আমার বক্তব্য প্রত্যাহার করব।

তিনি সানন্দে রাজি হলেন। এবং কোন আপত্তি উত্থাপন করলেন না। আমি ভয়ে কাঠ হয়ে থাকি। না জানি এবার কোন নমুনা দেখতে পাই। আমি "সি-নিউজ" নামের এই ম্যাগাজিনকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই এই কারণে না যে, এরা আমার সাক্ষাৎকার ছাপিয়েছেন। এই কারণে, আমার বক্তব্য অবিকৃত ছাপার সাহস দেখিয়েছেন। সাহস দেখিয়েছে এটা বলার যথার্থ কারণ আছে।

প্রিন্ট মিডিয়া নিয়ে আমার কিছু বক্তব্য ছিল। আমি অনেক জায়গায় এটা বলেছি, অন-লাইনে লেখালেখি যারা করেন তাঁদের প্রতি প্রিন্ট মিডিয়া কখনই সুবিচার করেনি কিন্তু যখনই প্রয়োজন পড়েছে তখনই চোরের মত এখান থেকে নিয়ে গেছে, যা খুশী। ন্যূনতম কৃতজ্ঞতাও স্বীকার করেনি। অন-লাইনের ব্লগার নামের লেখকদের প্রতি এদের আছে সীমাহীন তাচ্ছিল্য।

আমার বক্তব্যটা ছিল, "...আমি ডয়েচে ভেলের কাছে নতজানু হই আমাকে এই সম্মানটা দেয়ার কারণে না। ডয়েচে ভেলে এদের (প্রিন্ট মিডিয়া) এই তাচ্ছিল্যের মুখে সজোরে একটা চপেটাঘাত করেছে। থাপ্পড়ের এই শব্দটা আমি স্পষ্ট শুনতে পাই...।"

এটা "সি-নিউজ" নামের এই প্রিন্ট মিডিয়া হুবহু ছাপিয়েছে বলে আমার বিনম্র শ্রদ্ধা। সত্যর মুখোমুখি হবার সাহস সবার থাকে না, কারও কারও থাকে। "সি নিউজ" তাদের একজন।
আমি আমার একটা পোস্টে স্পষ্ট করে লিখেছিলাম, একটি দৈনিকের মালিক এবং সম্পাদককে আমি নীতিগত কারণে পছন্দ করি না। ব্যস, স্যারদের বড়ো নাগ (!) হলো। বেচারারা ববস-এর খবরই ছাপায়নি কারণ তাহলে আমার নাম যে চলে আসে। হা হা হা। কী ছেলেমানুষী!

অন্য একটা দৈনিক আমার বিরুদ্ধে তাদের পোষা বাহিনী লেলিয়ে দিল। কেন? কারণ তাদের পক্ষে চমৎকার চমৎকার লেখা না লিখে কঠিন-কঠিন লেখা লিখেছিলাম। এই সব বালক কবে বড়ো হবে [৪]?

আমি বিস্মিত হই, অনেকে কেন এটা বুঝতে পারছেন না, আমার এই লড়াইটা আমার নিজের জন্য না। এই সব করে প্রকারান্তরে আমি নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, প্রিন্ট মিডিয়ার চক্ষুশূল হচ্ছি। কারণ আমি নিজেও তো প্রিন্ট মিডিয়ার লোক। আগামী বছর হয়তো আমার বই বের হলো না- প্রকাশক সাহেব রেগেমেগে বললেন, যান মিয়া, আপনার বইই আর ছাপব না। আমাদের নিয়ে কী সব ছাতাফাতা উল্টাপাল্টা লেখেন। তখন আমার গতি কী!

একটা মজার বিষয় লক্ষ করলাম, অনলাইনের একজন সহযোদ্ধা (যদিও তিনি এলিট গোত্রের লোক) তাকে খানিকটা অন্য রকম মনে হতো। তিনি একটা ডকুমেন্টারি নিয়ে খুবই উচ্ছ্বসিত হয়ে লম্বা-লম্বা কাহিনী লিখলেন, এটা জার্মানীতে একটা সম্মান বয়ে এনেছে। 
বেশ, তার উল্লাসে আমিও উল্লসিত হই। কিন্তু তিনি আমার বেলায় একটা শব্দও ব্যয় করেননি। অভিনন্দন-এর 'অ' অক্ষরও না! কারণ কি এটা, আমি এলিট গ্রুপের সদস্য না। এই সব মানুষগুলোর জন্য আমার করুণা হয়।

এরা কেন বুঝতে চান না, যখন বাংলাদেশের কথা আসবে তখন কে ব্রাক্ষণ, কে শূদ্র এটা আলোচ্য বিষয় না। এখানে প্রয়োজন হাতের সবগুলো আঙ্গুলকে গুটিয়ে মুঠি শক্ত করে রাখা। চেইনের সবগুলো আংটাকে একত্রিত করে রাখা।
আফসোস, কেন এরা কেবল এটা আমার বিজয় দেখছেন। আমি বিশ্বাস করি এবং এখানে আমি যেটা বলেছি: "...এবং আমি মনে করি, এটা ব্লগার নামের লেখকদের একটা বিজয়, অভূতপূর্ব ঘটনা। আমার সহযোদ্ধাদের এই বিজয়ের মিছিলে আমি সামান্য একজন মাত্র। আমি গর্বিত আমার সহযোদ্ধাদের পাশে থাকতে পেরে...।"

আমি জানি না কেন, এই দেশের জাত-লেখকদের পাশে থাকার চেয়ে আমি অনেক আরাম বোধ করি ব্লগার নামের লেখকদের সঙ্গে থাকতে পেরে। হয়তো এই কারণে, জাত-লেখকদের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকে। অনেক বড়ো লেখক হওয়ার স্বপ্ন থাকে। প্রয়োজনে শাহআলমের কালের কন্ঠে [৫] বা গোলাম আজমের 'মুড়ির ঘন্ট'-এ লেখার চাপও থাকে- গলা দিয়ে আওয়াজহ বের হয় না, নীচের অংশ ঢিলা হয়ে যায়। এখানে এতো হ্যাপা নেই- চোখে চোখ রেখে উচ্চারণ করা যায় অমোঘ সত্যটা।

সহায়ক লিংক:
১. কলম নামের মারণাস্ত্র: http://www.ali-mahmed.com/2008/08/blog-post_15.html 
২. বইয়ের বিজ্ঞাপন: http://www.ali-mahmed.com/2009/03/blog-post_21.html
৩. অশ্বডিম্ব: http://www.ali-mahmed.com/2010/05/blog-post_05.html 
৪. বালক-বালক খেলা: http://www.ali-mahmed.com/2010/04/blog-post_22.html
৫. মুড়ির ঘন্ট: http://www.ali-mahmed.com/2010/01/blog-post_16.html

5 comments:

FaysaL said...

Dear Alim Ahmed. glad to see and read your blog. I am a new comer in blooger;s world. I try to write something as well

here is my blog : http://sightbywalk.blogspot.com/

I notice that you are using service from blogger by your own self title domain: http://www.ali-mahmed.com. How may i manage my own, I guess your account is a prime blogger account. ধন্যবাদ।

FaysaL said...

I got the point, you use a customize domain for your blogs. Its a payable subject...

Congratulation ! for being the first বাংলাদেশি to take বাংলা blog to the world stage.

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

ধন্যবাদ আপনাকে। প্রথম কথা হচ্ছে, আমার নাম Alim Ahmed না, Ali Mahmed

জ্বী, আপনি ঠিকই ধরেছেন এটা কেনা ডোমেইন, গুগলের কাছ থেকে।

আপনাকেও এখানে দেখে আমার ভালো লাগছে। @Faysal

Rafiqul Islam said...

Ali Mahmed,
We are very proud of you as bangladeshi on the other hand I personally proud of you as I also a guy of Akhaura.

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

"...as I also a guy of Akhaura."
এটা আপনার কথা কিন্তু আমার ভাবনাটা খানিকটা অন্য রকম।

যেহেতু আমি এখানেই জন্ম নিয়েছি। দিনের পর দিন, মাসের-পর মাস, বছরের-পর-বছর ধরে আখাউড়া নামের জায়গাটা আমাকে খাইয়েছে, পরিয়েছে, লালন করেছে। কখনও আমার হাত ছাড়েনি- আমার মূল শেকড় ছেড়ে আমাকে অন্য কোথাও যেতে হয়নি। জায়গাটা ছেড়ে আমি কোথাও যেতে চাই না, এ গ্রহের সব চাইতে সুন্দর দেশেও না।

আমার সুতীব্র ইচ্ছা, আমার মৃত্যুটাও এখানেই হোক। মস্তিষ্ক যদি তখন পর্যন্ত সচল থাকে, গাদা গাদা সুখস্মৃতি এসে ভিড় করবে- হয়তো তখন আমার মৃত্যুযন্ত্রণা খানিকটা কম হবে।

জার্মানি থেকে আমার প্রথম সাক্ষাৎকারের প্রথম শব্দটা ছিল 'আখাউড়া'। তখন আমার চোখ ঝাপসা, আমার কেবল মনে হচ্ছিল, আখাউড়ার প্রতি খানিকটা ঋণ শোধ করার চেষ্টা করেছি। আমার মত সামান্য একজন মানুষের আর কী চাওয়ার থাকতে পারে...। @TAKAANAPIE.