Search

Friday, July 9, 2010

হরেক রকম জামা আছে, নীল-গোলাপী-সাদা

আমরা, মিডিয়া, রাজনীতিবিদগণ কোন একটা ঘটনা-দুর্ঘটনায় কতজন মারা গেল এটা নিয়ে বড়ো মাথা ঘামাই কিন্তু যারা মারা গেল না তাঁদের গুণতিতে ধরি না। 
জোয়ান মরদটা কালে কালে একজন বোঝা-ভিক্ষুক পরিণত হয় এই খবরে আমাদের কোন প্রয়োজন নাই; সময়, আগ্রহও নাই!

আমাদের দেশে কারও খানিকটা পয়সা হয়ে গেলেই এরা গা থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেন এদের পরিবার একদা কৃষক ছিলেন। বলার চেষ্টা করেন অন্য দেশে এদের ছোটখাটো জমিদারী ছিল, তাদের পূর্বপুরুষরা বাঈজি নাচাতে নাচাতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে দয়া করে বাংলাদেশে এসেছিলেন দেশউদ্ধার করার অভিপ্রায়ে। কেউ-বা এসেছিলেন ইরান-তুরান থেকে বাঘের পিঠে চড়ে। বাস্তবতা হচ্ছে, এই দেশের অধিকাংশ মানুষই কৃষক-জেলে-মজুর। এঁরাই এই দেশের চাকাটা ঘোরাচ্ছেন বনবন করে। 
কেন মানুষ তার পূর্বের স্মৃতি বিস্মৃত হন আমি জানি না। কেন আমাদের গভর্নর আতিউর রহমানের [১] মত অতীতকে সগর্বে বলতে পারেন না এটাও আমার বোধগম্য হয় না। আমার ধারণা, আমাদেরকে দেয়া শিক্ষার মধ্যে বড়ো ধরনের গলদ আছে। কেন আমাদেরকে এটা শেখানো হয় না কেমন করে আমাদের শেকড়কে বুকে জাপটে ধরে রাখতে হয়।

বাবা-মা তাঁদের জমি-জায়গা বিক্রি করে সন্তানকে পাঠান শিক্ষার জন্য- সন্তানকে পাঠান না, পাঠান তাঁর স্বপ্নকে। তাদের স্বপ্নগুলো এভাবে পড়ে থাকে? ফোকাস বাংলার সৌজন্যে এখানে আমরা যাদের ছবি দেখতে পাচ্ছি এরা তাঁদেরই খন্ড-খন্ড স্বপ্ন। এই মানবদেহগুলোকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয়, চতুর্থ তলা থেকে ফেলে দেয়া হয়েছে। এরা কিন্তু সবাই মৃত না, হয়তো কেউ কেউ বেঁচে যাবে কিন্তু কখনই স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারবে না।
কারা ফেলেছে এদের? অন্য গ্রহের কেউ? 
উঁহুঁ, ওরাও কারও-না-কারও সন্তান, কারও-না-কারও স্বপ্ন। এদেরকেও পাঠানো হয়েছিল এখানে শেখার জন্য। এরা কি এই শিক্ষা লাভ করছে, দানব হওয়ার শিক্ষা? তাহলে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কী দানব বানাবার কারখানা? এখানে কি এদের পাঠানো হয় কেমন করে মানবতাকে নষ্ট করতে হয় এই শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য?

এই যে এখানে ছাত্রদের মধ্যে তুমুল কান্ড ঘটে গেল, এদের মধ্যে সমস্যাটা কোথায়? সমস্যা আর কিছু না, দলবাজি-ক্ষমতার রাশ। যে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দলবাজী [২] করেন সেখানে তাঁদের ছাত্ররা দলবাজি করবে না এটা কি হয়? যোগ্য শিক্ষকদের যোগ্য শিক্ষার্থি!
দলবাজি হচ্ছে একটা শেকল- এটার একটা আংটার সঙ্গে অন্য একটা আংটা জোড়া দেয়া, নিয়ম অনুযায়ী একটা পেছনে অন্য একটাকে চলে আসতেই হয়। পত্রিকায় যে সংবাদগুলো আসছে এগুলো নতুন কিছু না। এই সব ক্ষমতার লড়াইয়ের পেছনে আছে আর্থিক লেনদেন। এই লেনদেনের প্রধান উৎস হচ্ছে, অন্যের জমি বিক্রি লেনদেন থেকে অবৈধ আয়, চাঁদাবাজি।

নিজের একটা ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ শেয়ার করি। ঢাকায় একজন জমি বিক্রি করবেন, সম্পর্কের জের ধরে আমার সহায়তা চাইলেন। আমি বিষয়টা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখলাম, ভয়াবহ অবস্থা! কোন অবস্থাতেই চাঁদা না দিয়ে এই জমি বিক্রি করা সম্ভব না। এই চাঁদার সঙ্গে জড়িয়ে যেসব নাম উঠে এল এদের নাম, দৌড় দেখে আমি হতভম্ব! স্থানীয় এমপি থেকে শুরু করে পুলিশ, ছাত্রনেতা কে নেই! 
পরে আমি ওই মানুষটার কাছ থেকে বিনীত অব্যহতি নিয়ে বলেছিলাম, আমি থাকলে আপনি এই জমি কেয়ামতের আগ পর্যন্ত বিক্রি করতে পারবেন না। কারণ আমি তো কাউকে চাঁদা-ঘুষ দেব না। আমার অন্য এক বন্ধুর হাতে এই দায়িত্ব অর্পণ করে আরামের শ্বাস ফেলেছিলাম।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছেন, "...তা ছাড়া ঘটনাস্থলে পুলিশের আসতেও তো সময় লাগে..."। (প্রথম আলো: ৭ জুলাই, ২০১০) 
কথা সত্য। কিন্তু সাংবাদিদের আসতে সময় লাগে না, এ বড়ো বিচিত্র বিষয়! এঁরা কেমন কেমন করে যেন যথা সময়ে যে কেবল হাজিরই থাকেন এমনটা না, একের পর এক ছবি উঠাবার সময়ও পান। এমনি-কি ইলেকট্রনিক মিডিয়াও চলে আসতে পারে, ফুটেজের পর ফুটেজ দেখাবার সুযোগ পেয়ে যায়। কেবল পারেন ন আমাদের পুলিশ বাহিনী! আমাদের সিনোমায় পুলিশ মারপিট শেষ হলে ভিলেনকে রাশভারী গলায় বলেন, হ্যান্ডস আপ, নড়েছো কি মরেছো। দেরীতে হলেও, তবুও তো সিনেমায় অন্তত ভিলেনকে পুলিশ পাকড়াও করতে পারেন কিন্তু বাস্তবে এরা পারেন না!

পত্রিকায় আমরা এটাও পড়ছি, পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করা দূরের কথা নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। এটাও তো নতুন কিছু না। আমি একটা লেখায় লিখেছিলাম, পুলিশ লিখবে কবিতা [৪]। পুলিশকে কবিতা লেখার জন্য লাগিয়ে দেয়া হোক এবং চৌকশ ফটো সাংবাদিকদের পুলিশ অফিসার হিসাবে দায়িত্ব দেয়া হোক। কারণ ফটো সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে যেভাবে ঝড়ের গতিতে হাজির হয়ে যান সেখানে পুলিশ অফিসার মহোদয়গণ আসেন গদাই লস্করি চালে! 
আচ্ছা, এরা আসার জন্য গাড়ি ব্যবহার করেন না বুঝি? এমন কাজে হেঁটে হেঁটে আসাটা তো বুদ্ধিমানের কাজ না! পুলিশ এভাবে হেঁটে হেঁটে আসলে বুঝি অপরাধি বসে বসে বাদাম খাবে?

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শরীফ এনামুল কবীর বলেছেন, "...আমি আর্মি বা পুলিশ নই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব লেখাপড়া দেখা..."। (প্রথম আলো: ৭ জুলাই, ২০১০)
বেশ! স্যার, আমি আপনার সঙ্গে একমত কিন্তু আপনি এই প্রশ্নটা কেন উত্থাপন করলেন না, পুলিশ কেন তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেনি? এটাও কি স্যার আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না? স্যার, এই দেশের প্রায় শিক্ষকই কোন-না-কোন দলের জামা গায়ে চড়িয়ে রাখেন; আপনার গায়েও কোন দলের জামা নাই এই বাহাসে অংশগ্রহন করার কোন কু-ইচ্ছা অন্তত আমার নাই।

সহায়ক লিংক:
১. গভর্নর আতিউর রহমান, সাদা মানুষ: http://www.dhakanews24.com/%E0%A6%96%E0%A7%8B%E0%A6%B2%E0%A6%BE-%E0%A6%95%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE,/8212.html 
২. স্যাররা দলবাজী বন্ধ করেন: http://www.ali-mahmed.com/2009/12/blog-post_19.html 
৩. পুলিশ লিখবে কবিতা: http://www.ali-mahmed.com/2010/05/blog-post_09.html



5 comments:

দীপ said...

একদম ঠিক বলেছেন।আসলে পড়াশোনা থেকে রাজনীতিকে আলাদা না করা গেলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে,এবং ঘটছেও।প্রশাসনের সময় এসেছে এটা নিয়ে ভাবনার।

সময়চিত লেখা। ++

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

ধন্যবাদ। @দীপ

Nahid said...

Teacher ra kono dol korle somossa ki? P-alo te apnar news ta porlam.competition ta bangla language nia chilo akhane porlam arek rokom!

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

সমস্যা অন্য কিছু না। স্যারের সঙ্গে সুযোগ্য চেলা-শিষ্য-শাগরেদও দলবাজি করবে। ওই চেলা খুন করে আসলেও স্যার তাকে অমায়িক হাসি দিয়ে বরণ করবেন কারণ তাদের দুজনের গায়ে একই রঙের জামা!

আমি অন্য একটা পোস্টে এর উত্তর দিয়েছি। প্রথম আলো জলবায়ু বিষয়ক তথ্যটা কোথায় থেকে পেয়েছে এটা এরাই ভাল বলতে পারবে। আমার জানা নাই। এদের অসঙ্গতি লিখে লিখে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, এখন আর উৎসাহ বোধ করি না...।
আপনি ডয়চে ভেলের এই রিপোর্টটার সঙ্গে মিলিয়ে নিন:
http://ht.ly/21Z7s

দীপ said...

জলবায়ু নিয়ে রিপোর্টটা পড়ে আমি তন্ন-তন্ন করে আপনার সাইট খুজেছি,যে বিজয়ী ব্লগটা তো পড়তে হবে,কোথাও পেলাম না।পরে ডয়চে ভেলে থেকে আসলে বুঝতে পারলাম।আসলে পুড়ো সাইট-টাই তো বিজয়ী?কারন প্রতিযোগীতাই তো Best online Blog Site!