ইশকুলটা [১] চালু করা হয়েছিল (১৩ জুন, ২০১০)। প্রায় এক মাস হতে চলল। দেশের বাইরে যাওয়ার কারণে এবং আমার নিজস্ব কিছু জাগতিক সমস্যায় জড়িয়ে পড়েছিলাম বলে ইশকুলে নিয়মিত যাওয়া সম্ভব হয়নি।
কিছু কারণে আজ আমার মনটা ভারী বিষণ্ন। আমার মন খারাপ হলে হাঁটতে হাঁটতে ইশকুলে চলে যাই- বিচ্ছুদের যন্ত্রণায় কখন মনটা ভালো হয়ে যায় টেরটিও পাই না!
আজ এখানে আসার পর মাস্টার মশাই শশব্যস্ত হয়ে এদের পড়ার অগ্রগতি আমাকে বোঝাবার চেষ্টা করেন। কিন্তু আমি আগের পোস্টেও [২] উল্লেখ করেছিলাম, মাস্টার মশাইকে আমি স্পষ্ট করে বলেছিলাম, আমার কাছে এদের পড়ার চেয়ে গুরুত্ব বেশি যেটা এদের সহবত, পরিছন্নতা...। কারণ এরা আপনার আমার সন্তান না, এরা হরিজনদের সন্তান- যাদের আমরা তাচ্ছিল্য করে বলি, মেথরদের সন্তান।
ভাল লাগে এটা দেখে, এদের নোখগুলো ছোট করে কাটা, দাঁত পরিষ্কার! খাওয়ার পূর্বে হাত ধোয়ার অভ্যাসটাও এরা রপ্ত করে ফেলেছে।
ধন্যবাদ, মাস্টার মশাই।
ডান পাশেরটাকে আমি বলি, ব্যাটা দাঁত দেখি। এ একটু বেশি দাঁত দেখাতে গিয়ে মুখের চকলেটটা পড়ে গিয়েছিল। এদের জন্য আবার চকলেট না নিয়ে গেলে বড়ো যন্ত্রণা করে।
ডান পাশের বাচ্চাটাকে তার মা নিয়ে যেতে চাচ্ছিল কারণ এর গায়ে জামা নাই। এই পরিবারটা এতই হতদরিদ্র, বাচ্চাটা ইশকুলে আসে জামা ছাড়া।
অনেক সমস্যা রয়ে গেছে। এদের জামা-কাপড় প্রয়োজন, প্রয়োজন একটা ইশকুল ঘরের। এখন যে উঁচু চাতালটায় ক্লাশ করা হয় বৃষ্টি এসে সব পন্ড করে ফেলে। প্রয়োজন এদের প্রাথমিক চিকিৎসার।
ডাক্তার সাহেবদের তৈলমর্দন করে করে আমার ঘটির তৈল ফুরিয়ে গেছে। এমন না যে এদের মাগনা দেখে দেবেন কিন্তু ওখানে যেতে এদের বড়ো সমস্য। একজন ডাক্তার সাহেব আবার অতি ধার্মিক টাইপের, ধর্মের গাট্টি নিয়ে দেখি প্রায়ই ছুটাছুটি করতে। তো, ওনার আবার সামনে যেন কি একটা পরীক্ষা, তিনি ৩০ মিনিট সময়ও বের করতে পারছেন না! তিনি স্বর্গ জয় করুন!
কেন যে 'নেকাপড়াটা' ভালো করে করলাম না। ...শ্লার জীবন একটা আমার! ছোটখাটো একজন ডাক্তার হতে পারলেও কাজ হতো। এই একটা পেশাকে আমি ঈর্ষা করি।
আমার ভাষায় এঁরা দ্বিতীয় ঈশ্বর- একজন মুমূর্ষু রোগি যখন আধ-জবাই পশুর মত ছটফট করতে থাকে তখন উপরে প্রথম ঈশ্বর আর নীচে দ্বিতীয় ঈশ্বর ডাক্তার; মাঝামাঝি আর কেউ নাই, কিছু নাই।
আমি এই মা-টার মুখ [৩] এখনো ভুলতে পারি না।
সহায়ক লিংক:
১. ইশকুল, এক: http://www.ali-mahmed.com/2010/06/blog-post_14.html
২. ইশকুল, দুই: http://www.ali-mahmed.com/2010/06/blog-post_5273.html
৩. মা এবং তাঁর অদেখা সন্তান: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_10.html
No comments:
Post a Comment