হুমায়ূন আহমেদকে হাতের নাগালে পেলে পা ধরে কদমবুসি করতাম কারণ মানুষটা ভান নামের জিনিসটাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন! এই দুরূহ কাজটা সবাই পারেন না, হুমায়ূন আহমেদের মত মানুষরাই পারেন। ভান নামের লেবেনচুষটাকে আবেগের মোড়কে জড়িয়ে আমাদের হাতে ধরিয়ে দেন। তাই এই লেখাটা আমি শ্রদ্ধাভাজনেষু, শ্রদ্ধাস্পদেষু হুমায়ূন আহমেদকে উৎসর্গ করছি। ভাজনেষু-পদেষু টাইপের জিনিসগুলো হুমায়ূন আহমেদের খুবই প্রিয়- তাঁর বইয়ের উৎসর্গে নিয়ম করে থাকে।
হুমায়ূন আহমেদ কালের কন্ঠে 'ঈদ আনন্দ সংখ্যা ২০১০' (৭ সেপ্টেম্বর, ২০১০) [১] -এ ইমদাদুল হকের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, "১৯৭১ সালে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে আসার পর বেঁচে থাকার প্রতিটি মুহূর্তই আমার জন্য আনন্দের। শাওনের সঙ্গে যখন ঝগড়া করি তখনো আনন্দ পাই। মনে হয় বেঁচে আছি বলেই তো ঝগড়া করতে পারছি। আমি যে আপনি কেমন আছেন প্রশ্নের উত্তরে 'বেঁচে আছি' বলি, এটাই একটা কারণ।"
ওয়াল্লা! কী সোন্দর-কী সোন্দর! কী আবেগঘন বাতচিত- দুর্বলচিত্তের মানুষ হলে আমি কেঁদেই ফেলতাম! এই সাক্ষাৎকার পড়ে মনে হবে ১৯৭১ সালে হুমায়ূন আহমেদ বীরের মত লড়তে লড়তে একটুর জন্য বেঁচে গেছেন, পাক আর্মির নির্যাতন সেলে ছুঁরি পিছলে গেছে বলে গলা কাটা পড়েনি! যেমন মাসুদ রানার গায়ে গুলি চামড়া ছুঁয়ে চলে যায় অনেকটা এমন।
কিন্তু আমরা জানি, ১৯৭১ সালে যখন এই দেশের আপামর জনতা, মায় ১০ বছরের বালকও গ্রেনেড মেরে পাক-বাহিনীর বাঙ্কার উড়িয়ে দিচ্ছিল তখন হুমায়ূন আহমেদ ইঁদুরের মত পালিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছেন, তাঁর ভাই জাফর ইকবালসহ! কেবল তিনি প্রাণ হাতে নিয়ে ইঁদুরের মত পালিয়েই বেড়াননি তিনি চাচ্ছিলেন ঝামেলা এড়াতে। যেটার অনেকটা আঁচ করা যায় তাঁর লেখায়:
ওয়াল্লা! কী সোন্দর-কী সোন্দর! কী আবেগঘন বাতচিত- দুর্বলচিত্তের মানুষ হলে আমি কেঁদেই ফেলতাম! এই সাক্ষাৎকার পড়ে মনে হবে ১৯৭১ সালে হুমায়ূন আহমেদ বীরের মত লড়তে লড়তে একটুর জন্য বেঁচে গেছেন, পাক আর্মির নির্যাতন সেলে ছুঁরি পিছলে গেছে বলে গলা কাটা পড়েনি! যেমন মাসুদ রানার গায়ে গুলি চামড়া ছুঁয়ে চলে যায় অনেকটা এমন।
কিন্তু আমরা জানি, ১৯৭১ সালে যখন এই দেশের আপামর জনতা, মায় ১০ বছরের বালকও গ্রেনেড মেরে পাক-বাহিনীর বাঙ্কার উড়িয়ে দিচ্ছিল তখন হুমায়ূন আহমেদ ইঁদুরের মত পালিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছেন, তাঁর ভাই জাফর ইকবালসহ! কেবল তিনি প্রাণ হাতে নিয়ে ইঁদুরের মত পালিয়েই বেড়াননি তিনি চাচ্ছিলেন ঝামেলা এড়াতে। যেটার অনেকটা আঁচ করা যায় তাঁর লেখায়:
"মাতাল হাওয়ায় (পৃষ্ঠা নং: ১৯৫) হুমায়ূন আহমেদ নিজের সম্বন্ধে বলছেন, 'আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে কেমেস্ট্রির বইখাতা খুললাম। ধুলা ঝাড়লাম। সব ঠিক হয়ে যাচ্ছে...আবারও কেমিস্ট্রের বইখাতা বন্ধ। ...আসামি শেখ মুজিবর রহমান প্যারোলে মুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছেন। আবার আমার স্বস্তির নিঃশ্বাস। যাক সব ঠিক হয়ে যাচ্ছে। এখন ভাসানী কোন ঝামেলা না করলেই হলো। এই মানুষটা বাড়া ভাত নষ্ট করতে পারদর্শী। হে আল্লাহ, তাকে সুমতি দাও। সব যেন ঠিক হয়ে যায়। দেশ শান্ত হোক।"
মাতাল হাওয়ায় হুমায়ূন আহমেদ সীমাহীন ফাজলামী করেছেন। তাঁর 'মাতাল হাওয়া' নিয়ে আমি যে লেখাটা লিখেছিলাম, 'মাতাল হাওয়ায় মাতাল হুমায়ূন আহমেদ' [২], ওই লেখায় আমি উল্লেখ করেছিলাম, "আমি বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করি, স্বাধীনতার এই উত্তাল সময়টায় হুমায়ূন আহমেদ নামের মানুষটার গাছাড়া, উদাসীন মনোভাব। যেখানে ১০ বছরের বালক গ্রেনেড মেরে পাকআর্মির বাঙ্কার উড়িয়ে দিচ্ছে সেখানে একজন তরতাজা, মতান্তরে ধামড়া মানুষ গা বাঁচিয়ে চলে কেমন করে! মানলাম, একেকজনের একেক ভূমিকা। সবাইকে যোদ্ধা হতে হবে এমনটা নাও হতে পারে। আহা, হুমায়ূন আহমেদ নামের কেমেস্ট্রির পুতুপুতু ছাত্রটা যদি একখানা পেট্রল বোমা বানিয়ে কাউকে ধরিয়ে দিত তাও তো একটা কাজের কাজ হতো। আর কিছু না পারলে নিদেনপক্ষে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নিয়ে একখানা ৪ লাইনের কবিতা লিখতেন?"
বেচারা, হুমায়ূন আহমেদ, তখন তিনি কেমিস্ট্রের বইখাতা নিয়ে তখন বড়ই চিন্তিত ছিলেন।
শর্ষীনার পীর তাঁকে এবং তাঁর ভাইকে লুকিয়ে থাকার জায়গা দেননি বলে হুমায়ূন আহমেদ অনেক কষ্ট বুকে পুষে রেখেছিলেন। এই নিয়ে তিনি ফেনিয়ে প্রচুর লেখা লিখেছেন, কাঁদতে কাঁদতে কপোল (!) ভিজিয়ে ফেলেছিলেন! এই করে করে, কী কষ্ট-কী কষ্ট, বুকের ভালভ নষ্ট!
বেচারা এই কষ্ট চেপে রাখতে না-পেরে রাজাকার মাওলানা (!) মান্নানের [৩] পত্রিকা 'ইনকিলাব', 'পুর্ণিমা'য় নিরবচ্ছিন্ন-নিয়ম করে লেখা শুরু করলেন। ননস্টপ লিখতে থাকলেন। এমন কি জাহানারা ইমাম বলে বলে হুমায়ূন আহমেদকে থামাতে পারেননি। বেচারা জাহানারা ইমাম, তিনি কেমন করে জানবেন হুমায়ূন আহমেদের অতি লোভের ন্যালনেলে, লকলকে জিভ কেমন লম্বা হয়!
শর্ষীনার পীর তাঁকে এবং তাঁর ভাইকে লুকিয়ে থাকার জায়গা দেননি বলে হুমায়ূন আহমেদ অনেক কষ্ট বুকে পুষে রেখেছিলেন। এই নিয়ে তিনি ফেনিয়ে প্রচুর লেখা লিখেছেন, কাঁদতে কাঁদতে কপোল (!) ভিজিয়ে ফেলেছিলেন! এই করে করে, কী কষ্ট-কী কষ্ট, বুকের ভালভ নষ্ট!
বেচারা এই কষ্ট চেপে রাখতে না-পেরে রাজাকার মাওলানা (!) মান্নানের [৩] পত্রিকা 'ইনকিলাব', 'পুর্ণিমা'য় নিরবচ্ছিন্ন-নিয়ম করে লেখা শুরু করলেন। ননস্টপ লিখতে থাকলেন। এমন কি জাহানারা ইমাম বলে বলে হুমায়ূন আহমেদকে থামাতে পারেননি। বেচারা জাহানারা ইমাম, তিনি কেমন করে জানবেন হুমায়ূন আহমেদের অতি লোভের ন্যালনেলে, লকলকে জিভ কেমন লম্বা হয়!
তাঁর সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গে আসি। হুমায়ূন আহমেদই কি এই দেশের একমাত্র ব্যক্তি যিনি ১৯৭১ সালে বেঁচে গেছেন? সমস্ত কিছু বাদ দিয়ে তিনি ১৯৭১ সালের প্রসঙ্গ কেন নিয়ে আসলেন? ওই যে ভান, 'ভানবাজী'!
তাঁর কথায় আমরা জানতে পারি মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ওটির ট্রলিতে হাত-পা ছড়িয়ে তিনি নাকি চিঁ চিঁ করছিলেন, "বাঁচব নারে, বাঁচব না। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটা কাজের লেখা না-লিখে শেষ শ্বাস ত্যাগ করব না"।
তাঁর স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল। তিনি আয়ু পেয়েছিলেন। ফিরে এসে অনেক বছর পর তার স্বপ্ন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে বইটা লিখলেন সেই বইটার দাম ৪০০ টাকা। প্রচুর পাঠক বইটার চড়ামূল্যের কারণে কিনতে পারেননি! অথচ ইচ্ছা করলে তিনি অন্তত এই বইটার মূল্য কমিয়ে রাখার চেষ্টা করতে পারতেন। কিন্তু তিনি ওপথ মাড়াননি। ন্যূনতম চেষ্টাও তাঁর ছিল না।
ওই যে লেখার শুরুতে বলেছিলাম, ভান-গুরু। এমনিতে ১৯৭১ সাল নিয়ে তাঁর আবেগ এতোটাই প্রবল যে তাঁর 'তহবন' ভিজে একাকার হয়ে যায়! অতি সিক্ত 'তহবন' দিয়ে যে আমরা খানিকটা চোখ মুছব সেই অবকাশটুকুও রাখেননি। এ অন্যায়, ভারী অন্যায়!
তাঁর কথায় আমরা জানতে পারি মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ওটির ট্রলিতে হাত-পা ছড়িয়ে তিনি নাকি চিঁ চিঁ করছিলেন, "বাঁচব নারে, বাঁচব না। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটা কাজের লেখা না-লিখে শেষ শ্বাস ত্যাগ করব না"।
তাঁর স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল। তিনি আয়ু পেয়েছিলেন। ফিরে এসে অনেক বছর পর তার স্বপ্ন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে বইটা লিখলেন সেই বইটার দাম ৪০০ টাকা। প্রচুর পাঠক বইটার চড়ামূল্যের কারণে কিনতে পারেননি! অথচ ইচ্ছা করলে তিনি অন্তত এই বইটার মূল্য কমিয়ে রাখার চেষ্টা করতে পারতেন। কিন্তু তিনি ওপথ মাড়াননি। ন্যূনতম চেষ্টাও তাঁর ছিল না।
ওই যে লেখার শুরুতে বলেছিলাম, ভান-গুরু। এমনিতে ১৯৭১ সাল নিয়ে তাঁর আবেগ এতোটাই প্রবল যে তাঁর 'তহবন' ভিজে একাকার হয়ে যায়! অতি সিক্ত 'তহবন' দিয়ে যে আমরা খানিকটা চোখ মুছব সেই অবকাশটুকুও রাখেননি। এ অন্যায়, ভারী অন্যায়!
নাটক-ভান কেমন করে করতে হয় এটা তাঁর চেয়ে ভাল কে জানে [৪]! হুমায়ূন আহমেদ ভান নামের বলটাকে নিয়ে জাগলিং করেন আর আমরা গোল হয়ে দাড়িয়ে মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় দেখি। হুমায়ূন আহমেদ বলেন, 'তালিয়া'। আমরা সজোরে তালি বাজিয়ে বলি, জয় গুরু, জয় ভান-গুরু।
সহায়ক লিংক:
১. হুমায়ূন আহমেদের সাক্ষাৎকার, কালের কন্ঠ: http://tinyurl.com/39t44ja
২. মাতাল হাওয়ায় মাতাল হুমায়ূন আহমেদ: http://www.ali-mahmed.com/2010/03/blog-post_6179.html
৩. মাওলানা (!) মান্নান: http://www.ali-mahmed.com/2009/11/blog-post_18.html
৪. হুমায়ূন স্যারের নাটক: http://www.ali-mahmed.com/2010/04/blog-post_2278.html
16 comments:
আপনার স্কুল নিয়ে কালের কন্ঠে আজ পড়লাম লেখার লিংক
http://dailykalerkantho.com/?view=details&type=gold&data=Islam&pub_no=279&cat_id=1&menu_id=56&news_type_id=1&index=24
ভাই....এগুলা দেখে যাওয়া ছাড়া কিসুই করার নাই.....
হুমায়ুন আহমেদ তো ৭১ নিয়া তেমন একটা মাতামাতি করে না.....কিন্তু তার ভাই......জাফর ইকবাল যখন ৭১ নিয়া লিখেন......তখন মনে হয় জাফর ইকবাল ৭১ এর চেতনা নিয়া ডাকাতি করতাসে.....আর সেই তুলনায় হুমায়ুন আহমেদ কিসুই না....বা বেসি হইলে চুরি করতাসে.......
জোট শাসনামলে জাফর ইকবালের কলম যেভাবে চলতো অন্যায় এর বিরুদ্ধে.... যে আবেগ দিয়া তিনি লিখা গুলা লিখতেন......
আর এখন তার কলম দিয়া কিসুই বাইর হয় না....আর তার সেই আগের আবেগ .......
মুখ দিয়া সুধু একটা কথাই বাইর হয়.... ''সালার চুসীল''........
আরো দুক্ষ হয় .... যখন দেখি........এগুলারে আমরা খাটি দেশ-প্রেমিকের সার্টিফিকেট ধরায়া দিই.......
@রাকেশ ভাই আপনার লিংকটা তো কাজ করছে না।
@ আলি মাহমেদ ভাই, কি করার আছে বলেন? এরাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান। শুনিয়ে সার্টিফিকেটও দেন। আপনার মনে আছে কিনা জানিনা জাফর ইকবাল স্যার এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। উনি আবার ইতিহাসও লিখে ফেলেন।
war er somoye jafar iqbal er obosthan er details / link dile khusi hobo
হুমায়ন আহমেদ যে পূর্ণিমা সাপ্তাহিকে লিখতেন , তথ্যটা অজানা ছিল| এই তথ্যটা জানার পর হুমায়ন আহমেদ সম্পর্কে আমার দৃষ্টি ভঙ্গি বদলেছে, আপনাকে ধন্যবাদ|
http://www.ali-mahmed.com/2010/01/blog-post_15.html
@রাকেশ,
ধন্যবাদ আপনাকে। তবে আপনার লিংকটা কাজ করছে না!
মজার বিষয় হচ্ছে, স্টেশনের যে ছেলেগুলো এই স্কুলে পড়ে তাদের কয়েকজন, কাউছার, নয়ন, সবুজ, দেলোয়ার, খোকন, জাহান...পত্রিকায় এদের নামের কারণে কি না জানি না, এরা চাঁদা করে একটা আস্ত পত্রিকা কিনে ফেলেছিল আমাকে দেখাবে বলে। কী উল্লাস এদের! হা হা হা। এদের কাছেই আমি এটা প্রথমে জানতে পারি।
আপনার লিংকটা ঠিক করে দিচ্ছি:
http://tinyurl.com/3adh7uu
আমি দুঃখিত, আপনার সঙ্গে একমত হতে পারছি না। ড. জাফর ইকবালের ৭১-এর চেতনা-আবেগ নিয়ে আমার কোন সংশয় নেই।
তিনি কেন যুদ্ধে গেলেন না এটার ভাল উত্তর তিনিই দিতে পারবেন- কাজটা অমর্যদার। তবে হুমায়ূন আহমেদের মত অতি ভান জিনিসটা তাঁর মধ্যে নাই বলেই আমার মনে হয়।
এটা সত্য, তাঁর পক্ষপাতদুষ্ট লেখা আমার ভারী অপছন্দের:
http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_8885.html
তখন মানুষটাকে নীচু হয়ে দেখতে হয়। এটা জাফর ইকবালের মত মানুষের জন্য লজ্জার...। @mutasim
"...আপনার মনে আছে কিনা জানিনা জাফর ইকবাল স্যার এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। উনি আবার ইতিহাসও লিখে ফেলেন।"
এটা একটা অসাধারণ কাজ বলেই আমি মনে করি।@Shaqlain Shayon
Faysal-এর লিংকটা দেখে নিন। @Anonymous
"হুমায়ন আহমেদ যে পূর্ণিমা সাপ্তাহিকে লিখতেন , তথ্যটা অজানা ছিল...|"
ইনি কেবল কালেভদ্রে লিখতেন এমন না, নিয়ম করে লিখতেন। বছরের পর বছর ধরে লিখে গেছেন। জাহানারা ইমাম হুমায়ূন আহমেদকে অনেকবার না-লেখার জন্যে অনুরোধ করেছেন...। @Faysal
হুমায়ুন আহমেদ মুলত একটা চটি লেখক। বিশ্বাস না হলে নীচের লিংকটি দেখুন। এই লোকটাকে সাহিত্যিক বলতে আমার ঠিক ঘৃণা লাগে।
http://banglarnobab.blogspot.com/2010/05/blog-post_4789.html
হুমায়ূন আহমেদ একজন চটি লেখক এমনটা আমি মনে করি না।
একজন লেখক রঙিন চশমা চোখে দিয়ে লিখবেন এমনটাও আমি আশা করি না- প্রয়োজনে অন্ধকার দিকগুলে তুলে আনবেন, কেমন করে তুলে আনবেন সেই ভঙ্গিটাই হচ্ছে আসল...। @মোঃ লিয়াকত হোসেন লিকু
এই মানুষটার লেখার ক্ষমতা ছাড়া লোকটা পুরা একটা তেলাপোকা। তার ভানের আরেকটা নমুনা এই খানে
http://www.prothom-alo.com/detail/news/204340
য়ূন আহমেদ
কোনো নিউইয়র্কবাসীকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, আবহাওয়া আজ কেমন যাবে?
সে হতাশ ভঙ্গি করে বলে, তিন ডব্লিউ! তিন ডব্লিউর বিষয়ে কিছু বলা ঈশ্বরের
পক্ষেও সম্ভব না।
তিন ডব্লিউ হচ্ছে—
১. Women
হ্যাঁ, মেয়েদের বিষয়ে কিছু বলা সব দেশের জন্যই কঠিন।
২. Work
‘কাজ’ আমেরিকায় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দেশের অর্থনৈতিক
অবস্থা আসলেই ভয়াবহ। অকারণ দেশ দখল করে করে দেউলিয়ার কাছাকাছি।
লিবিয়া চলে গেল। পরবর্তী দেশ কোনটি, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছি।
৩. Weather
তিন ডব্লিউর শেষটি Weather। নিউইয়র্কের জন্য সম্ভবত এটা সত্যি।
অক্টোবরে এখানে কখনো বরফ পড়ে না। এই অক্টোবরে বরফ পড়ে একাকার।
মানুষ মারা গেছে তিনজন। আমেরিকানের মৃত্যু সহজ কথা না।
যা-ই হোক, বরফপাতের গল্প বলি। সকাল নয়টা বাজে। আমার পুত্র নিষাদ
আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বলল, বাবা ‘ভয়মকর’ অবস্থা। (পুত্র ভয়ংকর
বলতে পারে না, বলে ভয়মকর।)
আমি বললাম, ঘটনা কী?
সে বলল, আকাশের সাদা মেঘগুলো মাটিতে পড়ে যাচ্ছে।
বাংলা ভাষার লেখকদের বরফপাতের বর্ণনায় থাকে, ‘পেঁজা তুলার মতো বরফ
পড়ছে।’ এর বাইরে আমি কিছু পাইনি। শিশুর কাছে শুনলাম, আকাশের সাদা মেঘ
নেমে এসেছে। নবীজি (দ.) বলেছেন, ‘বিদ্যাশিক্ষার জন্য সুদূর চীনে যাও।’
আমি বলছি, ভাষা শিক্ষার জন্য শিশুদের কাছে যাওয়া যেতে পারে।
থাকুক এই প্রসঙ্গ। তৃতীয় ডব্লিউ নিয়ে কথা বলি। আগের দিন প্রচণ্ড
ঠান্ডা গিয়েছে। বাড়ির বয়লার ফেটে গেছে। হিটিং কাজ করছে না। আমরা ঠান্ডায়
জবুথবু। পরদিনই আবহাওয়া উষ্ণ। ঝলমলে রোদ।
আমি গায়ে রোদ মাখানোর জন্য ঘরের বাইরে রোদে বসেছি। হাতে কফির মগ।
আমার সামনে পাশের বাড়ির গায়ানিজ এক যুবক এসে দাঁড়াল। হাসিমুখে বলল,
গ্র্যান্ডপা। কেমন আছ?
আমি ধাক্কার মতো খেলাম। এই প্রথম এমন বয়স্ক মানুষ আমাকে ‘গ্র্যান্ডপা’
ডাকল। তাহলে কি আমার চেহারা গ্র্যান্ডপা ডাকার মতো হয়ে গেছে!
শাওন বলল, গ্র্যান্ডপা ডাকায় তোমার কি মন খারাপ লাগছে?
আমি বললাম, লাগছে।
শাওন বলল, তোমার নিজের নাতি-নাতনি আছে।
তারা যদি তোমাকে ‘গ্র্যান্ডপা’ ডাকে, তাহলে কি তোমার খারাপ লাগবে?
আমি বললাম, অবশ্যই না।
আমি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে চুপ করলাম। আসলেই তো। গ্র্যান্ডপা ডাকায়
আমার মন খারাপ হবে কেন?
আমার এখন চার নাতি-নাতনি। আমি যেখানে বাস করি, তা তাদের জন্য নিষিদ্ধ
বলে এদের আমি দেখি না। ওরাও গ্র্যান্ডপা ডাকার সুযোগ পায় না।
‘এভরি ক্লাউড হ্যাজ এ সিলভার লাইনিং’। আমার কর্কট রোগের সিলভার
লাইনিং হলো, এই রোগের কারণে প্রথমবারের মতো আমার তিন
কন্যা আমাকে দেখতে তাদের সন্তানদের নিয়ে ‘দখিন হাওয়া’য় পা দিল। ঘরে ঢুকল
তা বলা যাবে না। বারান্দায় হাঁটাহাঁটি করতে লাগল। সূর্যের চেয়ে বালি গরম হয়—
এই আপ্তবাক্য সত্য প্রমাণ করার জন্য মেয়েদের স্বামীরা মুখ যতটা শক্ত
করে রাখার, ততটা শক্ত করে রাখল।
অবশ্য আমিও সেই অর্থে তাদের দিকে যে ফিরে তাকালাম, তা না।
ঘরভর্তি মানুষ। মেয়েদের দেখে হঠাৎ যদি আবেগের কাছে আত্মসমর্পণ
করে কেঁদে ফেলি, সেটা ভালো হবে না।
আমি আমার তিন ডব্লিউর অর্থাৎ তিন কন্যার গল্প বলি।
১. প্রথম ডব্লিউ
নোভা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন শিক্ষকতা করেছে।
আমেরিকা থেকে পিএইচডি করে বর্তমানে দেশে ফিরেছে। পিএইচডি ডিগ্রির
সঙ্গে সে হিজাবও নিয়ে এসেছে। মাশআল্লাহ, কেয়া বাত হায়।
আমি যখন নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করছি, তখনকার
কথা। ইউনিভার্সিটি আমাকে বাগান করার জন্য দুই কাঠা জমি দিয়েছে।
আমি মহা উৎসাহে শাইখ সিরাজ হয়ে গেলাম। খুন্তি, খুরপি, কোদাল কিনে এক
হুলুস্থুল কাণ্ড। মহা উৎসাহে জমি কোপাই, পানি দিই। বীজ বুনি। আমার
সার্বক্ষণিক সঙ্গী কন্যা নোভা।
বিকেল পাঁচটায় ইউনিভার্সিটি থেকে ফিরে দেখি, বাড়ির সামনে খুরপি ও কোদাল
নিয়ে নোভা বসে আছে। প্রথমে জমিতে যেতে হবে, তারপর বাসায় ঢোকা। যেদিন
ফসলে জমি ভরে গেল, সেদিনের দৃশ্য—মেয়ে গাছ থেকে ছিঁড়ে টকটকে লাল
টমেটো প্লাস্টিকের বালতিতে ভরছে এবং বলছে, বাবা, আই মেইড ইট!
(মেয়ে তখনো বাংলা বলা শেখ
ে তখনো বাংলা বলা শেখেনি)।
মেয়ের আনন্দ দেখে চোখ মুছলাম।
২. দ্বিতীয় ডব্লিউ
নাম শীলা। শুরুতে ছিল শীলা আহমেদ। স্বামী এসে স্ত্রীর নামের
শেষে ঘাপটি মেরে বসে থাকা বাবাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে ফেলে দেয়। এখন শীলার
নামের অবস্থা কী জানি না। এই মেয়েটিও বড় বোনের মতো মেধাবী।
ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে অনার্স ও এমএতে ইকোনমিকসে প্রথম শ্রেণী পেয়েছে।
এখন তার গল্প। তখন শীলার বয়স ১২ কিংবা ১৩। সবাইকে নিয়ে লস
অ্যাঞ্জেলেসে গিয়েছি। হোটেলে ওঠার সামর্থ্য নেই। বন্ধু ফজলুল আলমের
বাসায় উঠেছি (ফজলুল আলম হচ্ছে আগুনের পরশমণির শহীদ
মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলমের ছোট ভাই।)
আমি ক্যাম্পিং পছন্দ করি, ফজলু জানে। সে বনে ক্যাম্পিংয়ের ব্যবস্থা করল।
আমরা জঙ্গলে এক রাত কাটাতে গেলাম। প্রচণ্ড শীত পড়েছে। তাঁবুর ভেতর
জড়সড় হয়ে শুয়ে আছি। একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম। গভীর রাতে ফুঁপিয়ে কান্নার
শব্দে ঘুম ভাঙল। দেখি, শীলা বসে আছে। ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আমি বললাম, মা,
কী হয়েছে?
আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে, আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।
আমি বুঝলাম, এই মেয়ে কঠিন ক্লস্ট্রোফোবিয়া। আসলেই সে নিঃশ্বাস
ফেলতে পারছে না। আমি বললাম, গরম কাপড় পরো। তাঁবুর বাইরে বসে থাকব।
সে বলল, একা একা থাকতে পারব না। ভয় লাগে। কিছুক্ষণ
একা থাকতে গিয়েছিলাম।
আমি বললাম, আমি সারা রাত তোমার পাশে থাকব।
তাই করলাম। মেয়ে একপর্যায়ে আমার কাঁধে মাথা রেখে নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাল।
সকাল হলো। মেয়ের ঘুম ভাঙল। সে বলল, বাবা, তুমি একজন ভালো মানুষ।
আমি বললাম, মা! পৃথিবীতে অসংখ্য খারাপ মানুষ আছে, একজনও খারাপ
বাবা নেই।
এখন মনে হয় শীলা বুঝে গেছে—পৃথিবীতে খারাপ বাবাও আছে। যেমন, তার বাবা।
৩. তৃতীয় ডব্লিউ
তৃতীয় কন্যার নাম বিপাশা। অন্য সব ভাইবোনের মতোই মেধাবী (বাবার জিন
কি পেয়েছে? হা হা হা। আমাকে পছন্দ না হলেও আমার জিন কিন্তু
মেয়েকে আজীবন বহন করতে হবে।)
এই মেয়ে ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে ইকোনমিকসে অনার্স এবং এমএতে প্রথম
শ্রেণী পেয়ে আমেরিকায় কী যেন পড়ছে। আমি জানি না।
আমার ধারণা, এই মেয়েটি অসম্ভব রূপবতী বলেই খানিকটা বোকা। তার
বালিকা বয়সে আমি যখন বাইরে কোথাও যেতাম, সে আমার
সঙ্গে একটি হোমিওপ্যাথিক ওষুধের শিশি দিয়ে দিত। এই শিশিতে নাকি তার
গায়ের গন্ধ সে ঘষে ঘষে ঢুকিয়েছে। তার গায়ের গন্ধ
ছাড়া আমি ঘুমুতে পারি না বলেই এই ব্যবস্থা।
যেদিন আমি আমেরিকা রওনা হব, সেদিনই সে আমেরিকা থেকে তিন মাসের জন্য
দেশে এসেছে। আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। একবার ভাবলাম, বলি—মা,
অনেক দিনের জন্য বাইরে যাচ্ছি। ফিরব কি না, তা-ও জানি না। এক শিশি গায়ের
গন্ধ দিয়ে দাও। বলা হলো না।
আমার তিন কন্যাই দূরদ্বীপবাসিনী। ওরা এখন আমাকে চেনে না, হয়তো আমিও
তাদের চিনি না। কী আর করা? কে সারা সারা!
পাদটীকা
ফ্রম এভরি ডেপ্থ্ অব গুড অ্যান্ড ইল
দ্য মিস্ট্রি হুইচ বাইন্ডস মি স্টিল।
ফ্রম দ্য টরেন্ট অর দ্য ফাউন্টেন,
ফ্রম দ্য রেড ক্লিফ অব দ্য মাউন্টেন
মাই হার্ট টু জয় অ্যাট দ্য সেইম টোন
অ্যান্ড অল আই লাভ্ড্, আই লাভ্ড্ অ্যালোন।
(এডগার অ্যালান পো)
পাঠকের মন্তব্য
Post a Comment