আমাদের ইশকুল: ১ [১], যেটা হরিজনদের সন্তানদের নিয়ে, এটা শুরু হয় এ বছরের জুন মাসে। আমাদের ইশকুল: ২ [২], অন্ধদের সন্তানদের জন্যে, এটা চালু হয় এ বছরেরই জুলাইয়ে। আমাদের ইশকুল: ৩ [৩], মূলত মৌলিক সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্যে, যাদের অধিকাংশদেরই বাবা-মা-স্বজন নেই, এরা পানি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং ঘুমায় স্টেশনের ওভারব্রীজে। এটা আরম্ভ হয় গত মাসে।
এই স্কুলটা করার কথা আমি আমার নিজের সাইটে লিখেছিলাম, "পারলে আমি আগামীকালই চালু করে দেই। কে দেখেছে সামার, কে দেখেছে শীত"?
এটা একরকম পাগলামি ছিল কারণ তখন পর্যন্ত স্কুলঘরের পাত্তা নেই, টিচারের পাত্তা নেই। আমি জানি না কেমন কেমন করে পরদিনই স্কুলটা চালু করা সম্ভব হয়েছিল!
আমি খুবই সৌভাগ্যবান, জানি না কেমন কেমন করে তিনটা স্কুলই দাঁড়িয়ে গেল! লাক? হতে পারে! কিন্তু অনেকের অযাচিত সহায়তা পেয়েছি যার বর্ণনা শুরু করলে আস্ত একটা উপন্যাস হয়ে যাবে! কার কথা ছেড়ে কার কথা বলব?
সম্প্রতি 'আমাদের ইশকুল' নিয়ে ডয়চে ভেলে একটা রেডিও অনুষ্ঠান করেছে [৪]। ডয়চে ভেলের তাদের সাইটে প্রতিবেদনও ছাপিয়েছে [৫]। আমাদের দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমেও কিছু প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে [৬], [৭], [৮], [৯]।
ওখানে আমি বলেছিলাম, "আমি কেবল অক্ষর শেখাবার উপরই জোর দিচ্ছি না। একটা শিশুর শেখার জন্য যা যা প্রয়োজন। হাতের নোখ ছোট কি না, খাওয়ার আগে হাত ধুচ্ছে কি না। কলাটা কেমন করে খাচ্ছে"?
আমি কিছু বয়স্ক মানুষদেরকেও দেখেছি, কলার খোসাটা সবটা ছাড়িয়ে কলাটা হাতে ধরে অবিকল বাঁদরের মত খেতে! তো, শিশুটি কলাটা খাচ্ছে কেমন করে? মনে করে কলার খোসাটা আবর্জনার বাক্সে ফেলছে কি না? এরপর সমস্ত খোসা জমিয়ে ছাগলকে দিচ্ছে কি না। তাকে এটাও শেখাবার চেষ্টা করা তার জন্য যেমন কলাটা প্রয়োজন তেমনি ছাগলের জন্য খোসা।
যাই হোক, মিডিয়ায় স্কুলের প্রসঙ্গ আসাটা অত্যন্ত আনন্দিত হওয়ার মত বিষয় কিন্তু আমি বেশ খানিকটা বিব্রত বোধও করছি। কারণ সব ছাপিয়ে কেবল আমার নাম চলে আসছে। এ অন্যায়! সত্যি বলতে কি এখানে আমার ভূমিকা গৌণ- আমি কেবল এই সব শিশুদের স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করছি। ব্যস, এই-ই। আমার কাজ এটুকুই। তবে এও সত্য, আমি আমার অর্জিত অতি সামান্য মননের পুরোটাই কাজে লাগাবার চেষ্টা করছি।
আর স্বার্থপরের মত নিজে যে স্বপ্নটা দেখছি, রাখালবালক থেকে একজন ড. আতিউর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হতে পারলে এদের কেউ পারবে না কেন, কে এই মাথার দিব্যি দিয়েছে?
আমি কেমন করে বিস্মৃত হই, আমার এই স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নের পেছনে সাদিক আলমের অবদানের কথা। যে 'পড়শী ফাউন্ডেশন' আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে, এবং পড়শী ফাউন্ডেশনে যারা আর্থিক যোগান দিয়েছেন তাঁদের কথা। এই মানুষগুলোর অধিকাংশই কী নির্মোহ, এঁরা তাঁদের নাম কোথাও আসুক এটা পর্যন্ত চাননি! আর আমার স্ত্রী, যে দিনের-পর-দিন মুচির মেয়েদেরকে পড়াচ্ছে তার কথাই বা কেমন করে ভুলে যাব?
ভাল কথা, চর্মকার-মুচির সন্তানদের নিয়ে পরবর্তী স্কুল করার ভাবনাটা মাথায় আছে আমার। এবং বেদেদের সন্তানদের নিয়েও একটা স্কুল চালু করার।
বেদে নামের এই রহস্যময় মানুষদের নিয়ে আমার আগ্রহ সীমাহীন।
এঁদের বিষয়ে জানতে আমি আগ্রহী। আমার সংগ্রহশালার জন্যে একটা বীনও (সঠিক নামটা আমি জানি না, যেটা বাজিয়ে সাপের খেলা দেখানো হয়) প্রয়োজন। এটা সংগ্রহ করার শখ আমার অনেকদিনের।
কালই এক বেদে বহরের খোঁজ পেয়েছিলাম। এরা নাকি গঙ্গাসাগর নামের একটা জায়গায় আস্তানা গেড়েছে। কিন্তু গিয়ে হতাশ হলাম কারণ এখানে সাকুল্যে চারটা পরিবার থাকে তাও এরা মাসখানেকের মধ্যে এখান থেকে সরে পড়বে। এমনিতে এরা সাপ ধরে না, সাপের খেলাও দেখায় না, নৌকায়ও বসবাস করে না। ডাঙ্গায় ছাপড়ার মত ঘর উঠিয়ে থাকে।
এমন না বাস্তবতা আমি বুঝি না, আমি চাইলেই নতুন স্কুল খুলতে পারব না- আমাকেও কিছু জবাবদিহিতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এভাবে কাজ করে আমি আরাম পাই না। আমার মধ্যে সমস্যা আছে, আমি কোন চাপে থেকে কাজ করতে পারি না। আমি আমার নিজস্ব ভঙ্গিতে কাজ করতে পছন্দ করি। এটা কারও ভাল লাগুক বা না-লাগুক এতে আমার অহেতুক কাতরতা নাই।
যে তিনটা স্কুল এখন চলছে এটা কতদিন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলবে আমি জানি না। আমি শিউরে উঠি এটা ভেবে, কখনও যদি স্কুলগুলো বন্ধ করে দিতে হয়...। এসবের মধ্যে নতুন স্কুল করার কথা ভাবাটাও বোকামি।
কিন্তু আমি ভাবব, এমন বোকামি করব, বারবার করব। চালু করব মুচিদের সন্তানদের নিয়ে এবং বেদেদের সন্তানদের জন্যে স্কুল।
পুরনো কথাটাই আবারও বলি, কে দেখেছে সামার...?
সহায়ক লিংক:
১. আমাদের ইশকুল, এক: http://tinyurl.com/3xpuov5
২. আমাদের ইশকুল, দুই: http://tinyurl.com/2fs9j4p
৩. আমাদের ইশকুল, তিন: http://tinyurl.com/327aky3
৪. ডয়চে ভেলের রেডিও অনুষ্ঠান: http://tinyurl.com/2umlksm
৫. ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন: http://www.dw-world.de/dw/article/0,,6087822,00.html
৬. কালের কন্ঠ, ১: http://tinyurl.com/3a5ckr4
৭. কালের কন্ঠ, ২: http://tinyurl.com/33mdvw9
৮. আমার দেশ, ১: http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/07/31/36761
৯. আমার দেশ, ২: http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/08/22/40362
১০. পড়শী ফাউন্ডেশন, সাদিক আলমের ব্লগ: http://www.mysticsaint.info/p/sacred-activism.html
এই স্কুলটা করার কথা আমি আমার নিজের সাইটে লিখেছিলাম, "পারলে আমি আগামীকালই চালু করে দেই। কে দেখেছে সামার, কে দেখেছে শীত"?
এটা একরকম পাগলামি ছিল কারণ তখন পর্যন্ত স্কুলঘরের পাত্তা নেই, টিচারের পাত্তা নেই। আমি জানি না কেমন কেমন করে পরদিনই স্কুলটা চালু করা সম্ভব হয়েছিল!
আমি খুবই সৌভাগ্যবান, জানি না কেমন কেমন করে তিনটা স্কুলই দাঁড়িয়ে গেল! লাক? হতে পারে! কিন্তু অনেকের অযাচিত সহায়তা পেয়েছি যার বর্ণনা শুরু করলে আস্ত একটা উপন্যাস হয়ে যাবে! কার কথা ছেড়ে কার কথা বলব?
সম্প্রতি 'আমাদের ইশকুল' নিয়ে ডয়চে ভেলে একটা রেডিও অনুষ্ঠান করেছে [৪]। ডয়চে ভেলের তাদের সাইটে প্রতিবেদনও ছাপিয়েছে [৫]। আমাদের দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমেও কিছু প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে [৬], [৭], [৮], [৯]।
ওখানে আমি বলেছিলাম, "আমি কেবল অক্ষর শেখাবার উপরই জোর দিচ্ছি না। একটা শিশুর শেখার জন্য যা যা প্রয়োজন। হাতের নোখ ছোট কি না, খাওয়ার আগে হাত ধুচ্ছে কি না। কলাটা কেমন করে খাচ্ছে"?
আমি কিছু বয়স্ক মানুষদেরকেও দেখেছি, কলার খোসাটা সবটা ছাড়িয়ে কলাটা হাতে ধরে অবিকল বাঁদরের মত খেতে! তো, শিশুটি কলাটা খাচ্ছে কেমন করে? মনে করে কলার খোসাটা আবর্জনার বাক্সে ফেলছে কি না? এরপর সমস্ত খোসা জমিয়ে ছাগলকে দিচ্ছে কি না। তাকে এটাও শেখাবার চেষ্টা করা তার জন্য যেমন কলাটা প্রয়োজন তেমনি ছাগলের জন্য খোসা।
যাই হোক, মিডিয়ায় স্কুলের প্রসঙ্গ আসাটা অত্যন্ত আনন্দিত হওয়ার মত বিষয় কিন্তু আমি বেশ খানিকটা বিব্রত বোধও করছি। কারণ সব ছাপিয়ে কেবল আমার নাম চলে আসছে। এ অন্যায়! সত্যি বলতে কি এখানে আমার ভূমিকা গৌণ- আমি কেবল এই সব শিশুদের স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করছি। ব্যস, এই-ই। আমার কাজ এটুকুই। তবে এও সত্য, আমি আমার অর্জিত অতি সামান্য মননের পুরোটাই কাজে লাগাবার চেষ্টা করছি।
আর স্বার্থপরের মত নিজে যে স্বপ্নটা দেখছি, রাখালবালক থেকে একজন ড. আতিউর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হতে পারলে এদের কেউ পারবে না কেন, কে এই মাথার দিব্যি দিয়েছে?
আমি কেমন করে বিস্মৃত হই, আমার এই স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নের পেছনে সাদিক আলমের অবদানের কথা। যে 'পড়শী ফাউন্ডেশন' আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে, এবং পড়শী ফাউন্ডেশনে যারা আর্থিক যোগান দিয়েছেন তাঁদের কথা। এই মানুষগুলোর অধিকাংশই কী নির্মোহ, এঁরা তাঁদের নাম কোথাও আসুক এটা পর্যন্ত চাননি! আর আমার স্ত্রী, যে দিনের-পর-দিন মুচির মেয়েদেরকে পড়াচ্ছে তার কথাই বা কেমন করে ভুলে যাব?
ভাল কথা, চর্মকার-মুচির সন্তানদের নিয়ে পরবর্তী স্কুল করার ভাবনাটা মাথায় আছে আমার। এবং বেদেদের সন্তানদের নিয়েও একটা স্কুল চালু করার।
এঁদের বিষয়ে জানতে আমি আগ্রহী। আমার সংগ্রহশালার জন্যে একটা বীনও (সঠিক নামটা আমি জানি না, যেটা বাজিয়ে সাপের খেলা দেখানো হয়) প্রয়োজন। এটা সংগ্রহ করার শখ আমার অনেকদিনের।
কালই এক বেদে বহরের খোঁজ পেয়েছিলাম। এরা নাকি গঙ্গাসাগর নামের একটা জায়গায় আস্তানা গেড়েছে। কিন্তু গিয়ে হতাশ হলাম কারণ এখানে সাকুল্যে চারটা পরিবার থাকে তাও এরা মাসখানেকের মধ্যে এখান থেকে সরে পড়বে। এমনিতে এরা সাপ ধরে না, সাপের খেলাও দেখায় না, নৌকায়ও বসবাস করে না। ডাঙ্গায় ছাপড়ার মত ঘর উঠিয়ে থাকে।
এমন না বাস্তবতা আমি বুঝি না, আমি চাইলেই নতুন স্কুল খুলতে পারব না- আমাকেও কিছু জবাবদিহিতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এভাবে কাজ করে আমি আরাম পাই না। আমার মধ্যে সমস্যা আছে, আমি কোন চাপে থেকে কাজ করতে পারি না। আমি আমার নিজস্ব ভঙ্গিতে কাজ করতে পছন্দ করি। এটা কারও ভাল লাগুক বা না-লাগুক এতে আমার অহেতুক কাতরতা নাই।
যে তিনটা স্কুল এখন চলছে এটা কতদিন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলবে আমি জানি না। আমি শিউরে উঠি এটা ভেবে, কখনও যদি স্কুলগুলো বন্ধ করে দিতে হয়...। এসবের মধ্যে নতুন স্কুল করার কথা ভাবাটাও বোকামি।
কিন্তু আমি ভাবব, এমন বোকামি করব, বারবার করব। চালু করব মুচিদের সন্তানদের নিয়ে এবং বেদেদের সন্তানদের জন্যে স্কুল।
পুরনো কথাটাই আবারও বলি, কে দেখেছে সামার...?
সহায়ক লিংক:
১. আমাদের ইশকুল, এক: http://tinyurl.com/3xpuov5
২. আমাদের ইশকুল, দুই: http://tinyurl.com/2fs9j4p
৩. আমাদের ইশকুল, তিন: http://tinyurl.com/327aky3
৪. ডয়চে ভেলের রেডিও অনুষ্ঠান: http://tinyurl.com/2umlksm
৫. ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন: http://www.dw-world.de/dw/article/0,,6087822,00.html
৬. কালের কন্ঠ, ১: http://tinyurl.com/3a5ckr4
৭. কালের কন্ঠ, ২: http://tinyurl.com/33mdvw9
৮. আমার দেশ, ১: http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/07/31/36761
৯. আমার দেশ, ২: http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/08/22/40362
১০. পড়শী ফাউন্ডেশন, সাদিক আলমের ব্লগ: http://www.mysticsaint.info/p/sacred-activism.html
No comments:
Post a Comment