Search

Saturday, November 20, 2010

গুটিগুটি পায়ে এগুচ্ছে 'হরতাল' নামের পশুটা

এটা পুরনো লেখা, রি-পোস্ট! এই লেখাটা গত বছর [০] যখন লিখেছিলাম তখন ওখানে লিখেছিলাম: "কে জানে, বাড়ি নিয়ে বাড়াবাড়ি [০১] করে হয়তো হরতালের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করা হবে"। আসলে এটা জানার জন্য রকেটবিজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। দেশ জাহান্নামে যাক দলবাজী ঠিক থাকুক [১]। ফল যা হওয়ার তাই হয়!
শীতের যেমন না এসে উপায় নেই- শীত যেমন আসি আসি করছে, হরতাল নামের পশুটাও গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে আসবে এতে সন্দেহ কী! প্রবল আশা, হরতালের পদ্ধতি বদলাবে- ডিজিটাল [৪] হরতাল নামের নতুন কোন জিনিস প্রসব হবে। 

"শুভ'র ব্লগিং" থেকে পুরনো লেখাটা আবারও দেয়ার কারণ হচ্ছে, এখন আবার দেখছি আমাদের মহান রাজনীতিবিদরা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে হরতালের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের কথা বলে গলাবাজি করছেন। আমাদের রাজনীতিবিদ- একেকজনের ত্যাগের নমুনা দেখে [২] কাঁদব না হাসব বুঝে উঠতে পারি না! আমাদের রাজনীতিবিদ মহোদয়গণ অপচয়ে কেমন অভ্যস্ত এর একটা নমুনাই যথেষ্ঠ [৩]
আগেও একটা লেখায় লিখেছিলাম, এমনিতে এয়ারপোর্ট-টেয়ারপোর্টের নাম না বদলে একবারে দেশের নাম পাঁচ বছরের জন্য বদলে ফেললেই তো ঝামেলা চুকে যায়। নাম রাখা যেতে পারে 'আওয়ামী বাংলাদেশ' বা 'জাতীয়তাবাদী বাংলাদেশ'।

হরতাল নিয়ে লিখতে গিয়ে দেখলাম নতুন করে আসলে লেখার কিছু নাই। ভঙ্গি একই, কেবল জলিল সাহেবের জায়গায় দেলোয়ার সাহেব। আর আমরা হচ্ছি দাবার গুটি। এঁরা 'হরতাল হও' বলবেন আর গোটা দেশ থেমে যাবে। আমাদের দেশের লোকজনরা এই অন্যায় মানেন কেমন করে এটাই আমার বোধগম্য হয় না। এ তো অন্যায়, ভয়াবহ অন্যায়!
গোটা দেশের লোকজন মেনে নিক, আমি মানি না। গোটা দেশের লোকজন এটাকে ন্যায় মনে করলেই অন্যায় ন্যায় হয়ে যাবে বলে আমি মনে করি না।   
... ... ... ...
"...এ গ্রহের সবচেয়ে বড়ো কারাগার- কয়েদী সংখ্যা আনুমানিক ১৬ কোটি! অবশ্য কারাগারটা ৩৬৫ দিন চালু থাকে না, এটাই আমাদের জন্যে ভারী বেদনার! পৃথিবীতে ফাইভ স্টার সুবিধাসহ, বেশ কিছু বিচিত্র কারাগার আছে, ওইসব নিয়ে না হয় অন্য দিন কথা বলা যাবে। আমি যেটার কথা বলছি, এখানে আপনি যা খুশি তা করতে পারবেন না, ইচ্ছা-অনিচ্ছা বলে কিছু থাকবে না।

কারাগারটা হচ্ছে বাংলাদেশ, আমাদের সোনার বাংলাদেশ- গোটা দেশটাই সোনার হয়ে গেছে, মাটি কোথায়- আফসোস, কাউকে কবর দেয়ার জায়গাটুকুও নাই! 

তিনি [৫] যেমন বলেছিলেন হও, আর হয়ে গেল, তেমনি বিরোধীদল (যখন তাঁরা ক্ষমতায় থাকেন না, বিরোধীদল বা যাহার জন্য প্রযোজ্য) বললেন, হরতালের নামে কারাগার হও- ব্যস, হয়ে গেল! এবং আপনার জীবনের দাম যাই থাকুক, এ দিন আপনার জীবন রক্ষার দায়িত্ব ঈশ্বর ব্যতীত আর কারও না। কী এক কারণে যেন এদিন ঈশ্বরের ভারী ঘুম পায়!
এদিন বড়ো মজা, অনেক চাকুরীজীবীকে অফিস করতে হয় না। এদের অহরহ প্রার্থনা থাকে, কেন যে সারাটা বছর হরতাল থাকে না। মাস শেষে খালি গিয়ে বেতনটা উঠিয়ে আনা। হরতালে আর কিছু না হোক আমরা জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে অবদান রেখেই যাচ্ছি, জনশক্তি বড় শক্তি! ইনশাল্লা, হরতালের কারণে জনশক্তি বিষয়ে আমরা যথেষ্ঠ অবদান রাখব। ১৬ কোটি একদিন ৬১ কোটি হবে...।

এদিন ইচ্ছা করলেই গান পাউডার দিয়ে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া যায়। আমাদের অনেকের বাড়ীর চুলায় বিড়াল ঘুমায় কিন্তু এমন একটা দিনে আমাদের পায়ের শব্দে রাজপথ থরথর কাঁপে। ইচ্ছা করলেই গাড়ি ভেঙ্গে ফেলা যায়, ইচ্ছা করলেই পেট্রোল ঢেলে কারও গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া যায়, আগুনের লেলিহান শিখায় আমাদের রক্তের কথা মনে পড়ে যায়। চড়চড় শব্দ করে যখন মানুষের চামড়া পুড়তে থাকে, শরীরে ঝনঝন করে একটা ভাল লাগা ছড়িয়ে পড়ে! মানুষের চামড়া পোড়ার গন্ধে আমাদের এখন আর গা গুলায় না!
ঈশ্বর নিঃশ্বাস বন্ধ করে রাখেন!

এদিন ইচ্ছা করলেই আমরা বাবার বয়সী একজন অফিসযাত্রীর গায়ের কাপড় এক এক করে খুলে নগ্ন করে ফেলতে পারি [৬] এক সময় তিনি অবিকল ভিক্ষুকের গলায় ভারী কাতর হয়ে হাহাকার করে বলবেন, '...আমাকে কেউ আল্লারওয়াস্তে একটা কাপড় দেন'। আমরা সবাই গোল হয়ে তামাশা দেখি- আহা, তার সন্তানকেও যদি এনে এ তামাশাটা দেখাতে পারতাম [৭]! অন্তত বিটিভিতে উপস্থাপক হয়ে লম্বা লম্বা বুলি কপচানো যায়।
ঈশ্বর অন্য দিকে তাকিয়ে থাকেন!


হরতাল, এ গ্রহের সবচেয়ে কুৎসিত বেশ্যার গর্ভে যার জন্ম। হরতাল নামের গা ঘিনঘিনে জন্তুটা জন্ম দিচ্ছে অসংখ্য দানবের। যে আমাদের, এক ফোঁটা রক্ত দেখলে গা গুলাতো আজ সেই রক্তের স্রোত মাড়িয়ে নির্বিকারচিত্তে আমরা হেঁটে যাই। গণতন্ত্রের জন্য গরম গরম রক্তের স্রোতের উপরে হাঁটাটা আমাদের জন্য খুব জরুরি!
ঈশ্বর গালে হাত দিয়ে ভাবনায় তলিয়ে যান!
 

হরতাল নামের এ দানবটা ক্রমশ আকাশ ছুঁয়ে ফেলছে, আমরা নপুংসকরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি। এ দেশের সেরা সন্তানরা তাঁদের মস্তিষ্ক ...-এ জমা রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকেন। টনকে টন কাঁচামাল পচে দুর্গন্ধ ছড়ায়। বিদেশীদের মাথায় গন্ডগোল না থাকলে এ দেশে বিনোয়োগ করার কথা না [৮], কেন করে আল্লা মালুম! হয়তো আর অন্য কোন দেশে আমাদের দেশের মতো শোষণ করার সুযোগ অপ্রতুল!
ঈশ্বর থুথু ফেলেন!


হরতালে একটা লাশ আমাদের বড়ো প্রয়োজন। যে হরতালে অন্তত একটা লাশ পড়বে না ওই হরতাল সম্বন্ধে মিডিয়া বলবে বা মিডিয়ায় লেখা হবে, ঢিলেঢালা হরতাল পালিত হইয়াছে।
একটা লাশ পেলে নেতাদের আনন্দ-আমোদের শেষ নাই। ঝড়ের গতিতে ছুটে যাবেন লাশের পরিবারের বাসায়, কোন একজনকে ধরে কান্না কান্না ভাব করবেন, মিডিয়া ফটাফট ছবি তুলবে। সেই ছবি আমরা পরের দিন পত্রিকায় বিশাল আকারে দেখি। নিউজপ্রিন্ট ভিজে যায়।

...
আমি আইন সম্বন্ধে খুবই অল্প জ্ঞান রাখি, তবুও আমার অল্প জ্ঞান নিয়ে বলি, টর্র্ট আইনের মাধ্যমে অনায়াসে মামলা করতে পারার কথা। কিন্তু এ পর্যন্ত কয়টা মামলা হয়েছে? হরতাল-অবরোধে, আমাদের ক্ষতির একশোটা কারণ থাকতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে, কে বাঁধবে বেড়ালের গলায় ঘন্টা- এটা খুব চমৎকার একটা পাশ কাটানোর অপবুদ্ধি, গণতন্ত্রের অপ-মহাযন্ত্র।
আমাদের এ প্রজন্মই পারবে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে। ইচ্ছা করলেই এটা সম্ভব, প্রয়োজন হলে চাঁদা তুলে মামলা করা যায়, প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছার।
ঈশ্বর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করেন...।"


এটা অনেক পুরনো লেখা। পূর্বে একটা লেখায় লিখেছিলাম: "...বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন আওয়ামী লীগ সম্ভবত ১৭৩ দিন হরতাল দিয়েছিল কিন্তু ১৭৩ সেকেন্ড আগেও বিএনপিকে ক্ষমতা থেকে হটাতে পারেনি। এই হচ্ছে ন-মু-না" [৯]! তাহলে এই সব ফাজলামি করার মানে কী!
এখন আমার স্পষ্ট বক্তব্য, আইন করে হরতাল বন্ধ করা হোক। যিনি হরতাল ডাকবেন তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক। হাইকোর্ট কত সুয়োমটো রুল জারি করেন, পারেন না আর একটা জারি করতে যেন কোন ইস্যুতে কেউ কখনও হরতাল করতে না পারে।

সহায়ক লিংক:
০. পুরনো লেখা: http://www.ali-mahmed.com/2009/09/blog-post_26.html
০১. বাড়ি নিয়ে বাড়াবাড়ি: http://www.ali-mahmed.com/2009/04/blog-post_24.html
১. দলবাজী: http://www.ali-mahmed.com/2010/11/blog-post_09.html
২. মহান রাজনীতিবিদ: http://www.ali-mahmed.com/2009/05/blog-post_12.html
৩  অপচয়: http://www.ali-mahmed.com/2009/04/blog-post_16.html
৪. ডিজিটাল: http://www.ali-mahmed.com/2009/04/blog-post_8733.html 
৫. তিনি: http://www.ali-mahmed.com/2009/09/blog-post_18.html 
৬. গণতন্ত্রের বলি: http://www.ali-mahmed.com/2009/09/blog-post_22.html
৭. গণতন্ত্রের শিশু: http://www.ali-mahmed.com/2009/02/blog-post_18.html
৮. বায়ার: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_5073.html
৯. অসভ্যতা: http://www.ali-mahmed.com/2010/11/blog-post_16.html 

No comments: