Search

Monday, December 6, 2010

আখাউড়া মুক্ত দিবস, ৬ ডিসেম্বর

৬ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালে আজকের এই দিনটাতে আখাউড়া মুক্ত হয়েছিল। হঠাৎ করেই মাথায় এসেছিল, আমরা যে যেখানে আছি সেখান থেকেই যদি প্রত্যেকে ওই জায়গার মুক্ত দিবস পালন করি তাহলে লাভ যেটা হবে, এই প্রজন্ম অন্তত জানতে পারবে। এই ভাবনা থেকেই আখাউড়া মুক্ত দিবসের উদযাপন করার ভাবনাটা মাথায় আসে। আগেও অবশ্য এই দিবসটা বিক্ষিপ্ত আকারে পালন করা হয়েছে।
তো, আমি কয়েকজনের সঙ্গে এই দিনটাকে উদযাপন করার জন্য কথাও বলেছিলাম। বিস্তারিত আলোচনায় যাই না কিন্তু কোথাও থেকে আশার কথা শুনতে পাইনি।

হা হা হা। তাই বলে আমি বসে থাকব বুঝি! গতকালই মাত্র ঠিক করি, আমাদের ইশকুলের বাচ্চাদের নিয়ে একটা অনুষ্ঠান করে ফেলি না কেন? গতকাল রবিবার, রবিবার স্কুলগুলো বন্ধ থাকে তাছাড়া এই স্বল্প সময়ে এই আয়োজন করাটা প্রায় অসম্ভব। ইশকুল: এক [১] এবং ইশকুল: তিন [২]-এর বাচ্চাদের একত্র করা যাবে কিন্তু ইশকুল: দুই-এর [৩] দূরত্বের কারণে ওই স্কুলের বাচ্চাদের এখানে আনা যাবে না। দেখা যাক...।

আখাউড়ার মুক্ত দিবস নিয়ে নৌ কমান্ডো ফজলুল হক ভূইয়ার [৪] সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু তিনি তখন আখাউড়ার ছিলেন না বলে তেমন কোন তথ্য দিতে পারেন নি। কিন্তু যে তথ্য দিয়েছেন এটা জেনে আমার মাথা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। আলী আহসান মুজাহিদ কেমন ছলনা করে ৩০ জন নৌ-কমান্ডোকে ১৯৭১ সালে হত্যা করিয়ে ছিলেন তার বর্ণনা দিলেন তিনি। পরে এই নিয়ে অন্য লেখা লিখব...।    


...

আখাউড়া মুক্ত-দিবস
১৯৭১ সালে ক্যাপ্টেন এস এ ভূইয়া, পরে মেজর জেনারেল হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি 'মুক্তিযুদ্ধে নয় মাস' নামে তথ্যবহুল একটি বই লেখেন। ১৯৭১ সালে দুর্ধর্ষ যুদ্ধ করেও এই যোদ্ধা তাঁর যথার্থ সম্মান পাননি যার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই এই লেখায় [৫]
আখাউড়া নিয়ে তাঁর লেখায় আমরা জানতে পারি:
"...নভেম্বরের ২০ তারিখের পরে যুদ্ধের তীব্রতা বেড়ে গেল...।
... নভেম্বরের এই সময়টাতে আমরা আখাউড়ায় শক্র সৈন্যের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হই।
...এ সময় 'এস' ফোর্সের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল শফিউল্লাহর অধীনে ছিল পুরো দুই ব্যাটিলিয়ন পদাতিক সৈন্য। এ ছাড়াও ছিল কয়েকটি কোম্পানী যাকে আমরা 'সেকটর ট্রুপস' বলতাম।
...২৭ নভেম্বর কর্নেল শফিউল্লাহ মেজর মঈনকে মেরাসানী, নিরানসানী, সিঙ্গারবিল রেলওয়ে স্টেশনে, সিঙ্গারবিল ঘাটি, রাজাপুর, আজমপুর ইত্যাদি এলাকা দখল করার নির্দেশ দেন।
...কর্নেল শফিউল্লাহ মেজর মঈনকে ৩০শে নভেম্বর এবং ১লা ডিসেম্বর তারিখ রাতে এইসব এলাকা আক্রমণ চালাবার আদেশ দিয়েছিলেন।

মেজর মঈন  দ্বি-ধারা আক্রমণ চালালেন।
...এই অভিযানে আমাদের পক্ষ থেকে অংশ নিয়েছিল মুক্তিফৌজের প্রায় এক ব্যাটালিয়ন। শক্রপক্ষের সৈন্যসংখ্যা ছিল প্রায় এক ব্যাটালিয়নের বেশী। এই যুদ্ধে শক্রসেনারা আর্টিলারী, মর্টার, মেশিনগান ইত্যাদি ছোটবড় সব অস্ত্রশস্ত্রই ব্যবহার করে।
...আখাউড়ার এই যুদ্ধে হতোদ্যম পাকিস্তানী সেনারা পশ্চাদপসরণে বাধ্য হয়। এবং তাদের প্রচুর লোকসান স্বীকার করতে হয়। একজন শক্রসেনা জীবিত অবস্থায় বন্দী হয় এবং ২০ জন নিহত। এ ছাড়ার মুক্তিফৌজের হস্তগত হয় হানাদার বাহিনীর প্রচুর পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র, রেশন, পোশাক-পরিচ্ছদ, ডিফেন্স স্টোর।
...পর্যুদস্ত শত্রবাহিনী সাময়িকভাবে পিছু হটলেও ২রা ডিসেম্বরের সকালে আমাদের বাহিনীর উপর পাল্টা আক্রমণ শুরু করে এবং সারাদিন ধরে খন্ডযুদ্ধ চলতে থাকে। শত্রবাহিনীর প্রবল আক্রমণের মুখে আমাদের বাহিনী পিছু হটে যেতে বাধ্য হয়।
...প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির পর আমাদের বাহিনী সিঙ্গারবিলে গিয়ে জমায়েত হয়। এই যুদ্ধে শত্রু বাহিনীরও অসম্ভব ক্ষতি হয়। মুক্তিফৌজের নায়েক সুবেদার আশরাফ আলী শক্রর হাতে শাহাদাৎ বরণ করেন।
...৩রা ডিসেম্বর আমাদের বাহিনী নিজেদেরকে পুর্নগঠিত করে পাক বাহিনীর উপর পুনরায় আক্রমণ চালায়। ...এই আক্রমণে শক্রপক্ষের এগারজন সৈন্য নিহত হয়। 
...ডিসেম্বরের ৩/ ৪ তারিখে আমাদের বাহিনী পুর্নদখলকৃত এলাকাকে সুরক্ষিত করে।
...আমাদের সেক্টরে ৪ঠা ডিসেম্বরের যুদ্ধে মুক্তিফৌজের যে বীর সৈন্যরা শাহাদত বরণ করেন তারা হচ্ছেন, লেঃ বদিউজ্জামান, সিপাহী রুহূল আমিন, সিপাহী ছিদ্দিকুর রহমান।

...ডিসেম্বরের ৫ তারিখে পাকিস্তান বাহিনী আমাদের বাহিনীর উপর পাল্টা আক্রমণ চালায়। কিন্তু আমাদের তীব্র আক্রমণের মুখে তারা পিছু হটে যেতে বাধ্য হয়। আখাউড়ায় তুমুল লড়াই চলে। এই লড়াইয়ে মুক্তিবাহিনী ও সংযুক্ত মিত্রবাহিনী অপরিসীম বীরত্ব ও সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করে। অবশেষে ৫ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী আখাউড়া দখল করে। ৪/ ৫ ডিসেম্বরের যুদ্ধে এই এলাকায় শক্রবাহিনীর প্রায় ১৬০ জন সৈন্য মারা যায়।
...বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের ইতিহাসে আখাউড়ার লড়াইয়ের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এখানকার যুদ্ধে উভয় পক্ষই সর্বাধিক সংখ্যক আর্টিলারী ব্যবহার করে। ...।"

(বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, সশস্ত্র সংগ্রাম, ১০ খন্ড, পৃষ্ঠা: ৩২৯-৩৩৩)

সহায়ক সূত্র:
১. আমাদের ইশকুল, একhttp://tinyurl.com/3xpuov5 
২. আমাদের ইশকুল, তিন: http://tinyurl.com/327aky3
৩. আমাদের ইশকুল, দুই: http://tinyurl.com/2fs9j4p
৪. নৌ-কমান্ডো ফজলুল হক ভূইয়া: http://www.ali-mahmed.com/2009/04/blog-post_18.html
৫. পদকের পদাবলি...: http://events.amardesh.com/articles/8/1/aaaaa-aaaaaa-aaa-aaaaaa-aaaaaaaaaaa/Page1.html 

No comments: