এই গ্রহের কোন পেশার প্রতি আমার আলাদা মোহ নাই। কিন্তু...। ডাক্তার, এই পেশাটার প্রতি আমার একধরনের ঈর্ষা কাজ করে। এটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে যখন মা এবং তাঁর অদেখা সন্তানদের [১] মুখোমুখি হই। তখন কেবল মনে হয়, আহা, 'গুছলেংটি' দিয়ে লেখাপড়া না-করে কী ভুলই না করলাম।
অবশ্য আমি এই জীবনে ডাক্তার হতে পারতুম কি পারতুম না এই কুতর্কে যাব না। কারণ ডাক্তার হওয়ার জন্য চলনসই একটা ব্রেন থাকাটা জরুরি। ইতিমধ্যে অনেকে জেনে গেছেন চলনসই দূরের কথা ব্রেন নামের জিনিসটাই আমার নাই! থাকলে
ভাল হতো।
ডাক্তারি, এটা এমন একটা পেশা উঠতে-বসতে-দাঁড়াতে-শুতে গিয়েও লোকজনের রূহের আরাম দেয়া সম্ভব। এমন কি লোটা নিয়ে টাট্টিখানায় যেতে যেতেও। এটা সত্য এখনকার ডাক্তার সাহেবরা লোটা জিনিসটা ব্যবহার করেন না। সেই টাট্টিখানাও নাই, নাই সেই লোটাও। আহা, এরা তো আর আগের আমলের ডাক্তার বাবু না।
ইশ, কী বিপুল ক্ষমতাই না ডাক্তারদের! কী অনায়াসেই না আমরা তাঁদের কথা বিশ্বাস করি, প্রিয়জনের চেয়েও! আমার প্রিয়মানুষের হাত ঘসে ঘসে যখন উত্তাপ সঞ্চারিত করার চেষ্টা করছিলাম তখন এই ডাক্তারই নিমিষে ছুঁয়েই বলেছিলেন, এটা একটা লাশ [২]! তখন আমি ওই প্রিয়মানুষ নামের লাশটার কথা বিশ্বাস করিনি কিন্তু ডাক্তারের কথা বিশ্বাস করেছিলাম।
আমি কোনও লেখায় লিখেছিলাম আমাদের দেশের অধিকাংশ ডাক্তার কসাইয়েরও অধম। ওই লেখায় কসাইদের প্রতি এই ক্ষমাটুকুও চেয়েছিলাম কাউকে হেয় করতে গেলে কসাই বলাটা সমীচীন না কারণ কসাই একটা বৈধ পেশা। এবং কসাইদের মধ্যেও অনেক হৃদয়বান মানুষ আছেন।
ওই যে বললাম অধিকাংশ ডাক্তার...। ডাক্তারদের মধ্যেও এমন কিছু মানুষ আছেন যাদের আছে দূরসম্পর্কের আত্মীয়, অসহায় মানুষ, সমাজ এবং দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা [৩]। কিন্তু এঁদের সংখ্যা বড়ো অল্প!
তবলার ঠুকঠাক অনেক হলো এবার কাজের কথায় আসি। চট করে বোতলের ছবিটা দেখলে বোতলে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে এই ভ্রম কারও কারও হতেও পারে। আসলে এটা বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস-এর নামে সসের বোতল। সসের সাথে ওষুধের কী সম্পর্ক!
এই ছবিটা আপাততদৃস্টিতে সামান্য একটা ছবি মনে হলেও এটা অসামান্য একটা ছবি।
ওষুধ কোম্পানিগুলো মার্কেটিং-এর নামে কি করছে এর ছোট্ট একটা নমুনা মাত্র। এরা এই সসগুলো ডাক্তারদের জন্য নিয়ে এসেছে। ওষুধ কোম্পানিগুলো উপঢৌকনের নামে ডাক্তার সাহেবদের কি দেয় এটা না বলে বলা উচিত কি দেয় না; মাসে মাসে মাসোহারা, টিভি-ফ্রিজ-ওভান- হেনতেন। স্যাম্পলের নামে যে ফ্রি ওষুধগুলো দেয়া হয় মাস শেষে ডাক্তাররা বস্তায়-বস্তায় সেই ওষুধ বাজারে বিক্রি করেন। অথচ ইচ্ছা করলে ওই ওষুধগুলো এরা হতদরিদ্র রোগিদেরকে দিতে পারেন, যাদের পরোক্ষ ট্যাক্সের টাকায় এদের ডাক্তারি পড়ার অধিকাংশ যোগান এসেছে।
এছাড়া ভয়ংকর কিছু তথ্যও আছে- ফেন্সিডিলে আসক্ত ডাক্তারদের এই জিনিসটা যোগান দেয়া। কাজটা করেন ওষুধ কোম্পানিগুলোর বিক্রয়প্রতিনিধিরা। বিনিময়ে ডাক্তার সাহেবরা এই সব কোম্পানির ওষুধগুলো লিখবেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপ্রয়োজনে।
একজন রিকশাচালক ডাক্তারকে গিয়ে বললেন, স্যার শইলে শক্তি নাই। ব্যস, আই.ভি ফ্লুইড দিয়ে ওই মানুষটাকে শুইয়ে রাখা হবে। অথচ আই.ভি ফ্লুইড দেয়া হয় সেই সমস্ত রোগিকে যারা মুখে খেতে পারেন না, এটা জানার জন্য রকেটবিজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এই রিকশাচালক নামের দরিদ্র মানুষটার কেবল পকেটই কাটা হলো না, ঘন্টার-পর-ঘন্টা স্যালাইন লাগিয়ে দেয়ার কারণে তাঁকে শুয়ে থাকতে হলো। আয়ের পথটাও রুদ্ধ হয়ে গেল।
ডাক্তার সাহেব এই অন্যায় কেন করলেন? কারণ ওই স্যালাইন কোম্পানি থেকে তিনি মোটা অংক পান। ওই স্যালাইন কোম্পানির লোকজনরা ডাক্তারকে বলেছে, বস, অবস্থা খারাপ, স্যালাইন মারেন। আর যায় কোথায়, ডাক্তার সাহেব ঝাপিয়ে পড়লেন!
আমার এটা জানার খুব আগ্রহ, ওষুধ কোম্পানিগুলো ডাক্তার সাহেবদের কি আন্ডারওয়্যারও দেয়? হয়তো দেয়। ডাক্তার সাহেবরা ওইসব আন্ডারওয়্যার পরে প্রকাশ্যে আসেন না বলে আমাদের আর জানা হয় না। এই সসে যেমন লেখা ওষুধ কোম্পানির ওষুধের নাম, xelophes; আন্ডারওয়্যারে কি লেখা থাকবে ভায়েগ্রা? কে জানে, এটাও হয়তো আমরা একদিন ঠিক দেখতে পাব।
সুপারম্যান, এই ভদ্রলোক আন্ডারওয়্যার নামের এই জিনিসটা উপরে পরেন। তার দেখাদেখি মাইকেল জ্যাকসনও চর্চাটা শুরু করেছিলেন। এদের দেখাদেখি আমাদের ওই সব ডাক্তার সাহেবরাও উপরে আন্ডারওয়্যার পরার চর্চা শুরু করলে ওষুধ কোম্পানিগুলোর ওষুধের লোগোসহ আন্ডারওয়্যার দেখার অপার সৌভাগ্য আমাদের হবে। আমরা একালের সুপারম্যানদের অপেক্ষায় আছি...
সহায়ক সূত্র:
১. মা এবং তাঁর অদেখা সন্তান: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_10.html
২. ...লাশ: http://www.ali-mahmed.com/2011/06/blog-post_19.html
৩. একজন ডাক্তার এবং...: http://www.ali-mahmed.com/2011/05/blog-post.html
অবশ্য আমি এই জীবনে ডাক্তার হতে পারতুম কি পারতুম না এই কুতর্কে যাব না। কারণ ডাক্তার হওয়ার জন্য চলনসই একটা ব্রেন থাকাটা জরুরি। ইতিমধ্যে অনেকে জেনে গেছেন চলনসই দূরের কথা ব্রেন নামের জিনিসটাই আমার নাই! থাকলে
ভাল হতো।
ডাক্তারি, এটা এমন একটা পেশা উঠতে-বসতে-দাঁড়াতে-শুতে গিয়েও লোকজনের রূহের আরাম দেয়া সম্ভব। এমন কি লোটা নিয়ে টাট্টিখানায় যেতে যেতেও। এটা সত্য এখনকার ডাক্তার সাহেবরা লোটা জিনিসটা ব্যবহার করেন না। সেই টাট্টিখানাও নাই, নাই সেই লোটাও। আহা, এরা তো আর আগের আমলের ডাক্তার বাবু না।
ইশ, কী বিপুল ক্ষমতাই না ডাক্তারদের! কী অনায়াসেই না আমরা তাঁদের কথা বিশ্বাস করি, প্রিয়জনের চেয়েও! আমার প্রিয়মানুষের হাত ঘসে ঘসে যখন উত্তাপ সঞ্চারিত করার চেষ্টা করছিলাম তখন এই ডাক্তারই নিমিষে ছুঁয়েই বলেছিলেন, এটা একটা লাশ [২]! তখন আমি ওই প্রিয়মানুষ নামের লাশটার কথা বিশ্বাস করিনি কিন্তু ডাক্তারের কথা বিশ্বাস করেছিলাম।
আমি কোনও লেখায় লিখেছিলাম আমাদের দেশের অধিকাংশ ডাক্তার কসাইয়েরও অধম। ওই লেখায় কসাইদের প্রতি এই ক্ষমাটুকুও চেয়েছিলাম কাউকে হেয় করতে গেলে কসাই বলাটা সমীচীন না কারণ কসাই একটা বৈধ পেশা। এবং কসাইদের মধ্যেও অনেক হৃদয়বান মানুষ আছেন।
ওই যে বললাম অধিকাংশ ডাক্তার...। ডাক্তারদের মধ্যেও এমন কিছু মানুষ আছেন যাদের আছে দূরসম্পর্কের আত্মীয়, অসহায় মানুষ, সমাজ এবং দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা [৩]। কিন্তু এঁদের সংখ্যা বড়ো অল্প!
তবলার ঠুকঠাক অনেক হলো এবার কাজের কথায় আসি। চট করে বোতলের ছবিটা দেখলে বোতলে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে এই ভ্রম কারও কারও হতেও পারে। আসলে এটা বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস-এর নামে সসের বোতল। সসের সাথে ওষুধের কী সম্পর্ক!
এই ছবিটা আপাততদৃস্টিতে সামান্য একটা ছবি মনে হলেও এটা অসামান্য একটা ছবি।
ওষুধ কোম্পানিগুলো মার্কেটিং-এর নামে কি করছে এর ছোট্ট একটা নমুনা মাত্র। এরা এই সসগুলো ডাক্তারদের জন্য নিয়ে এসেছে। ওষুধ কোম্পানিগুলো উপঢৌকনের নামে ডাক্তার সাহেবদের কি দেয় এটা না বলে বলা উচিত কি দেয় না; মাসে মাসে মাসোহারা, টিভি-ফ্রিজ-ওভান- হেনতেন। স্যাম্পলের নামে যে ফ্রি ওষুধগুলো দেয়া হয় মাস শেষে ডাক্তাররা বস্তায়-বস্তায় সেই ওষুধ বাজারে বিক্রি করেন। অথচ ইচ্ছা করলে ওই ওষুধগুলো এরা হতদরিদ্র রোগিদেরকে দিতে পারেন, যাদের পরোক্ষ ট্যাক্সের টাকায় এদের ডাক্তারি পড়ার অধিকাংশ যোগান এসেছে।
এছাড়া ভয়ংকর কিছু তথ্যও আছে- ফেন্সিডিলে আসক্ত ডাক্তারদের এই জিনিসটা যোগান দেয়া। কাজটা করেন ওষুধ কোম্পানিগুলোর বিক্রয়প্রতিনিধিরা। বিনিময়ে ডাক্তার সাহেবরা এই সব কোম্পানির ওষুধগুলো লিখবেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপ্রয়োজনে।
একজন রিকশাচালক ডাক্তারকে গিয়ে বললেন, স্যার শইলে শক্তি নাই। ব্যস, আই.ভি ফ্লুইড দিয়ে ওই মানুষটাকে শুইয়ে রাখা হবে। অথচ আই.ভি ফ্লুইড দেয়া হয় সেই সমস্ত রোগিকে যারা মুখে খেতে পারেন না, এটা জানার জন্য রকেটবিজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এই রিকশাচালক নামের দরিদ্র মানুষটার কেবল পকেটই কাটা হলো না, ঘন্টার-পর-ঘন্টা স্যালাইন লাগিয়ে দেয়ার কারণে তাঁকে শুয়ে থাকতে হলো। আয়ের পথটাও রুদ্ধ হয়ে গেল।
ডাক্তার সাহেব এই অন্যায় কেন করলেন? কারণ ওই স্যালাইন কোম্পানি থেকে তিনি মোটা অংক পান। ওই স্যালাইন কোম্পানির লোকজনরা ডাক্তারকে বলেছে, বস, অবস্থা খারাপ, স্যালাইন মারেন। আর যায় কোথায়, ডাক্তার সাহেব ঝাপিয়ে পড়লেন!
আমার এটা জানার খুব আগ্রহ, ওষুধ কোম্পানিগুলো ডাক্তার সাহেবদের কি আন্ডারওয়্যারও দেয়? হয়তো দেয়। ডাক্তার সাহেবরা ওইসব আন্ডারওয়্যার পরে প্রকাশ্যে আসেন না বলে আমাদের আর জানা হয় না। এই সসে যেমন লেখা ওষুধ কোম্পানির ওষুধের নাম, xelophes; আন্ডারওয়্যারে কি লেখা থাকবে ভায়েগ্রা? কে জানে, এটাও হয়তো আমরা একদিন ঠিক দেখতে পাব।
সুপারম্যান, এই ভদ্রলোক আন্ডারওয়্যার নামের এই জিনিসটা উপরে পরেন। তার দেখাদেখি মাইকেল জ্যাকসনও চর্চাটা শুরু করেছিলেন। এদের দেখাদেখি আমাদের ওই সব ডাক্তার সাহেবরাও উপরে আন্ডারওয়্যার পরার চর্চা শুরু করলে ওষুধ কোম্পানিগুলোর ওষুধের লোগোসহ আন্ডারওয়্যার দেখার অপার সৌভাগ্য আমাদের হবে। আমরা একালের সুপারম্যানদের অপেক্ষায় আছি...
সহায়ক সূত্র:
১. মা এবং তাঁর অদেখা সন্তান: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_10.html
২. ...লাশ: http://www.ali-mahmed.com/2011/06/blog-post_19.html
৩. একজন ডাক্তার এবং...: http://www.ali-mahmed.com/2011/05/blog-post.html
4 comments:
হা হা হা....... সস, ডাইলের বোতল (ফেনসিডিল), মদের বোতল , টাকা এগুলাতো নরমাল ভাই..... এদের সকালের কাচা-বাজার থেকে সুরু করে কোনো কোনো ডাক্তারকে মেয়ে মানুষ পর্যন্ত সাপ্প্লাই করে অনেক ওষুধ কোম্পানি......
আপনার কোনো এম.আর.(ওষুধ কোম্পানির মেডিকেল রেপ্রেজেনটেটিভ) এর সাথে পরিচয় থাকলে আমার কথার সত্যতা জেনে নিবেন........
সর্বনাশ, বলেন কী! @Anonymous
আমাদের এলাকায় ডাক্তারদের প্রসার ব্যাপক।ওষুধ কোম্পানীর লোকেরা বাজার সদাই করে দেয়া তো সাধারন ব্যাপার ডাক্তারের ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা ও করে।কেউ কেউ ওষুধ লেখানোর জন্য ডাক্তার কে বাপ ও ডাকে।ধর্মের আব্বা।
তবে সবচেয়ে বেশী যে ডাক্তারের প্রসার উনার নিয়ম বড়ই অদ্ভুত।তার সাথে একটা ক্লিনিকের সম্পর্ক ভাল।ওই ক্লিনিকে একবার রক্তের দরকার হলে তার নিয়ম ছিল যে এক ব্যাগ রক্ত দিতে পারবে তার ওষুধ লিখবেন।সেই ব্যাগ রক্ত তিনি বিক্রি করে দিতেন ক্লিনিকে।
:0 কী ভয়াবহ! @মুরাদুল ইসলাম
Post a Comment