Search

Tuesday, November 27, 2012

তন্তুপাড়ার জন্তুগুলোর জন্যে মাতমের একটি মুসাবিদা

লুৎফর রহমান রিটন, এই মানুষটাকে আমার মত সাধারণ মানুষেরা খুব করে চিনি ছড়াকার হিসাবে। আর চিনি তাঁর পেল্লায় গোঁফের কারণে :)
এই মানুষটা হাত-পা ছড়িয়ে, শব্দ নিয়ে চমৎকার এক খেলা খেলেন, গদ্য-গদ্য খেলা! কেমন করে থরথর করা উঠে আসা অদম্য রাগকে নিয়ন্ত্রণ করে লেখায় দ্রোহ-ব্যঙ্গ উঠে আসে, পাঠককে এর সঙ্গে একাত্ম করে ফেলে তার এক দুর্দান্ত নমুনা! আজকের অতিথি লুৎফর রহমান রিটন (http://www.facebook.com/riton100)। তিনি লিখেছেন:
"নিশ্চিন্তপুরে নিশ্চিন্তে পুড়ে ছাই হয়ে গেলো শতাধিক দু’পেয়ে জন্তু। এই জন্তুগুলোকে ‘মানুষ’ নামেও ডাকা হয়ে থাকে। এদের দুটি হাত দুটি পা দুটি চোখ দুটি কান একটি নাক ও একটি মুখ আছে। আর আছে সভ্যতার সমান মাপের বিপুল বিশাল একটি উদর।
ক্ষুধার্ত এই জন্তুগুলো খালি ভাত খেতে চাইতো। জুঁই ফুলের মতো শাদা শাদা স্বপ্নখাদ্য ভাতের সঙ্গে সামান্য ডাল কিংবা আলু ভর্তাই প্রিয় আর আরাধ্য ছিলো ওই দু’পেয়েগুলোর।
এই জন্তুগুলোর মৃত্যুতে তাদের চেহারা ও আকৃতির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হোমোসেপিয়ান্সরা এক দিনের জাতীয় শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছে। এই ঘোষণায় পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া জন্তুগুলোর লাশবৃন্দ আনন্দে হেসে উঠেছে। কিন্তু ওদের পরিবারের অশিক্ষিত সদস্যরা তারপরেও বইয়ে দিচ্ছে অশ্রুর প্লাবন! অশ্রুর প্লাবনে কি আগুন নেভানো যায়? যায় না। কিন্তু এই সিম্পল সত্যটা ওই অশিক্ষিতের দল বুঝতে না পেরে সলো আর কোরাস বিলাপে মশগুল! এইসব অশিক্ষিত আর দরিদ্র জন্তুগুলোর কারণেই এই দেশটার কোনো উন্নতি নেই। ওদের সবকটাকে ‘দারিদ্র্য জাদুঘরে’ পাঠানোর অলৌকিক প্রস্তাবকে সমর্থন না করে আর তো কোনো উপায় দেখছি না!

পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া একটি লাশ ‘যে কোন একজন গার্মেন্টস মালিককে পুড়িয়ে মারার’ শেষ ইচ্ছে ব্যক্ত করতে এসেছিলো। ওটাকে তড়িঘড়ি বেওয়ারিশ হিশেবে শনাক্ত করে মিডিয়ার সামনে আসতেই দিইনি।

ওর শেষ ইচ্ছেটা মিডিয়ার নাটুকেপনায় সংক্রমিত হলে তো বিপদ! কর্পোরেটবাণিজ্যফাঁদে আকণ্ঠনিমজ্জিত কনফিউজড ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াগুলোর মায়াকান্না অসহ্য আকার ধারণ করেছে। এরা কখন কেনো কার জন্যে কেঁদে উঠবে ঠাওর করা মুশকিল। যে কারণে একেকটা স্যাটেলাইট টিভি মৃতের একেকটা সংখ্যা পাঠ করে যাচ্ছে।

গুড। পাবলিককে কনফিউজড করার চে মহৎ জার্নালিজম হয় নাকি আর? পাবলিক শালারা ভোদাই। দিনরাত টিভি দেখার নামে মুঠোফোন কোম্পানির দেশপ্রেম দেখে আহাউহু করে আর এসএমএস করে—দিবানিশি অবিরাম যতো খুশি ততো! তাইতো কবি গাহিয়াছেন—এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি...।
সরকারও বলিহারি। মাথাপিছু একলাখ ঘোষণা করে বসে আছে! আরে বাবা, এইসব জন্তুর একুশ মাসের স্যালারির সমপরিমাণ ওই একলাখ। একুশ মাস কাজ না করেই মাইনে! দেশটার এই জন্যেই কোনো উন্নতি হয় না! ছিঁচকাদুনে বেকুবের দল সারাক্ষণ ব্যয় করে অপচয় খাতে! লুকিয়ে বা গুম করে কেটেছেঁটে একশোও যদি ধরি মৃত—কোটি টাকা চলে যাবে তহবিল থেকে!

অংকে কাঁচা অর্থমন্ত্রীকে পুনরায় কিনে দিতে হবে নতুন একটা ডিজিটাল স্যামসঙ ক্যালকুলেটর। হিশেবের গোলমাল টের পেলে উড়ে এসে জুড়ে বসবে মিডিয়ার মাছি। মাঝরাতে টকশোতে ‘ডিসকোর্স-রিকন্সিলিয়েশন-হেজিমনিতে’ পটু চতুর অধ্যাপক আর বাচাল সাংবাদিক অনায়াসে মেরে দেবে কানের পোকা। আচ্ছা, সংসদে কি ফায়ার এলার্ম আছে? সংসদে কি ফায়ার এক্সিট আছে? যদি থেকে থাকে তাহলে অবিলম্বে সেটা বন্ধ করে দেয়া হোক। সব কটা পুড়ে মরুক। তারপর নতুন সাংসদেরা শপথ নিক—ভবিষ্যতে কেহ ফায়ার এক্সিটসহ গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রির আবেদন করিলে তাহার আবেদন তৎক্ষণাৎ বাতিল গণ্য হবে।

বিখ্যাত ইবনে বতুতা এই দেশ ভ্রমণ শেষে লিখেছিলেন—এইদেশে ঢোকার পথ আছে কিন্তু বেরুবার পথ নেই কোনো। গার্মেন্টস-এও সেই রীতির আলোকে বেরুবার পথের কলাপসিবল গেটসমূহে লাগিয়ে দিতে হবে অবিনাশী তালা। চাবি থাকবে মালিকের হাতে। আর মালিক থাকবেন চায়না কিংবা আমেরিকায় প্রমোদে, ভ্রমণে। সুতরাং তালা খোলার জন্যে কাউকেই খুঁজে পাওয়া যাবে না আগুনদগ্ধকালে। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ইয়ে চিপে বের করে নেয়া যাবে ক্ষতির দ্বিগুণ।

সুতরাং ভ্রাত! এসো গাই আগুনের স্তুতি। এসো নিই শোকের প্রস্তুতি। ব্ল্যাক লেবেলের উপচানো গ্লাসে হাস্য পরিহাসে ছেড়ে দিই কয়েক টুকরো চৌকোণা ক্রিস্টাল বরফ। শোকের পদাবলী রচনা করুকগে যতোসব অকর্মা বাংলা হরফ। রেজওয়ানা বন্যাকে গাইতে দাও ঠাকুরের পুতুপুতু গান। হুইস্কির সঙ্গে পোড়ামাংস এবং ঠাকুর মিশিয়ে খেলে অবসাদে নিমেশেই ফিরে পাবে প্রাণ। চুমুকে চুমুকে চলো টিভি পর্দায় দেখি বালিকা রিপোর্টার তালিকায় কটা সংখ্যা বাড়াতে পেরেছে! ধিরে ধিরে সবকিছু ড্রাউজি ও হেইজি হয়ে গেলে এভ্রিথিং উইল বি দ্য সেইম য়্যাজ বিফোর। সো, ডোন্ট ওয়রি বি হ্যাপি গাইজ...।"

2 comments:

রুহান said...

রিটন ভাই জানতাম ছড়া লিখেন কিন্তু তিনি যে এমন দুর্ধর্ষ গদ্য লিখেন এই লেখা টা না পড়া হলে জানতাম না। থাম্বস আপ

Anonymous said...

রিটন সাহেব দেখি একজন বস পাব্লিক,,,,