সবাই বলে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নাকি মারা গেছেন! আরে-আরে, সুনীল গঙ্গোপাধ্যারে মত মানুষদের আবার কেমন করে মৃত্যু হয়! যার হাত দিয়ে এমন একটা জিনিস বের হয়! 'ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি' নামে তাঁর একটা কবিতা আছে:
...
২০১২, এ বছরের শুরু। জানুয়ারি মাসের ২০ তারিখের পত্র-পত্রিকায় ছেয়ে গেল। কাঁপছিল পত্রিকা ছাপাবার যন্ত্র, কাঁপছিল দেশ। কী?! সরকার উৎখাতের চেষ্টা ব্যর্থ। কী সর্বনাশ-কী সর্বনাশ! গণতান্ত্রিক একটা সরকার উৎখাত করার অপচেষ্টা।
যেকোনো সচেতন মানুষেরই পায়ের নীচের মাটি কেঁপে উঠবে।
তখন আমাদের সেনাবাহিনীও সাফ-সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, '...আমরা আর এ ধরনের কাজের দায়ভাগ নিতে চাই না'। বেশ-বেশ।
ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কল্যাণে তখন সেনাবাহিনীর প্রেসব্রিফিংও দেখেছিলাম। ও আল্লা, কী দবদবা একেকজনের, কী জলদমন্দ্র গলার বাতচিত! শুনে আমাদের মত সাধারণ মানুষ আপ্লুত। আহারে-আহারে, আমাদের দেশের দুই লাখ [১] সেনাবাহিনী সদস্য কেবল কাল্পনিক যুদ্ধের মহড়া নিয়েই ব্যস্ত থাকেন না, একটি জলজ্যান্ত সেনা অভ্যুত্থানকে থামিয়ে আমাদের চোখের সামনে হাজিরও করেন!
এর মূল হোতা ছিলেন নাকি প্রবাসী ইশরাক আহমেদ এবং তার সাঙ্গপাঙ্গ। সেনাবাহিনীতে কর্মরত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক নাকি ইশরাকের পক্ষে কলকাঠি নাড়িয়েছেন, ঘুটার পর ঘুটা দিয়েছেন। তখন সেনাবাহিনীর কল্যাণে আমরা এটাও জানতে পেরেছিলাম, ইশরাক প্রবাসে। আর ইশরাকের চুলের টিকিটিও স্পর্শ করার কথা তখন কেউ বলেননি, আমরাও শুনিনি! দেশে ধড়পাকড় নিয়েই সবাই ব্যস্ত।
এবং তখন মেজর জিয়াউল হক নাকি সেনাবাহিনীর খপ্পর থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন! এ এক বিস্ময়! আঙুল গলে টুপ করে যেমন আঙ্গুর গড়িয়ে মাটিয়ে গড়াগড়ি খায় তেমনি জিয়াউল হকও পালিয়ে গড়াগড়ি-নড়ানড়ি শুরু করলেন। মানুষটা কেবল পালিয়েই ক্ষান্ত হননি, তিনি নাকি ফেসবুব-টেসবুকে হাবিজাবি সব কথাও বলা শুরু করেছিলেন। ওমুক-তমুকের সঙ্গে মেইল চালাচালিও করেছিলেন। একে-ওকে ফোনও দিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য লোকজনকে প্ররোচিতও করেছিলেন। হুম, বটে...!
পরে আরও জানা গেল, এই সেনা অভ্যুত্থানের সঙ্গে শতশত লোকজন না, কেবল ১৪ থেকে ১৬ জন জড়িত। এরাই নাকি বাংলাদেশের চেহারা-মুখচ্ছবি পাল্টে ফেলবেন। অনেকটা এমন আর কী, সেই কবে নাকি বখতিয়ার খলজী মাত্র ১৭জন অশ্বারোহী নিয়ে বঙ্গালদেশ জয় করে ফেলেছিলেন [২]!
হিস্ট্রি রিপিট হতে হতে বেঁচে গেল। বেঁচে গেলাম আমরাও! তখন দেশব্যাপী বাহবা-'সাবাসির' ঝড় বয়ে গিয়েছিল।
ভাগ্যিস, এই ক্যূ-টা আমাদের চৌকশ সেনাবাহিনী ঠিক ঠিক সময়ে খপ করে হাতেনাতে ধরে ফেলেছিলেন নইলে রিপলিস-এর 'বিলিভ ইট অর নট'-এ অনায়াসে জায়গা করে নিত।
পূর্বেই বলেছি, তখনও ইশরাকের টিকিটিও স্পর্শ করা যায়নি, এখনও। টিকির প্রসঙ্গটা কথার কথা- আজকাল আধুনিক লোকজনেরা টিকি রাখেন বলে শুনিনি। এই মানুষটার নাকি রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার স্বপ্ন ছিল।
তবে তখন গ্রেফতার করা হয়েছিল অবসরপ্রাপ্ত দু-জন কর্মকর্তাকে। এরা হলেন, লে. কর্নেল (অব.) এহসান ইউসুফ এবং সাবেক মেজর জাকির হোসেন। এই কর্মকান্ডের সঙ্গে এরাও জড়িত ছিলেন এমন অভিযোগ ছিল সেনাবাহিনীর। এরা দুজনই সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত। পত্র-পত্রিকায় আমরা পড়েছি, এরা দুজনই সিভিল কোর্টে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর কি এদেরকে সিভিল কোর্টে হস্তান্তর করা হয়েছিল? নাকি এদের বিচার কোর্ট-মার্শাল, সামরিক আদালতে চলবে-চলছে-চলছে না?
আমি আইনজ্ঞ নই, আইনের মানুষ এটা ভাল বলতে পারবেন। ঘটনার সময় এঁরা তো আর সামরিক বাহিনীর লোক ছিলেন না। আমার নির্দোষ প্রশ্ন, আইনের বক্তব্য কি? এঁদেরকে সামরিক আইনে বিচার করা চলে কি না?
এমনিতে আমরা সাধারণেরা বুঝি, গোপন বিচার মানেই হচ্ছে তমোময়, ছায়া-ছায়া। কারণ আমরা কর্ণেল তাহেরের বিচারও দেখেছি [৩]। এর পরিণতিও আমাদের জানা। এখন আমরা দিনের আলোর ন্যায় জানি, কর্ণেল তাহেরকে রাষ্ট্র বিচার করে শাস্তি দেয়নি, তাহেরকে স্রেফ খুন করা হয়েছিল। বেশ, খুন করা হয়েছিল জেনে এখন আমরা আনন্দিত কিন্তু রাষ্ট্র কী এখন তাহেরকে ফিরিয়ে দেবে?
এই অভ্যুত্থান নিয়ে আমাদের মত অল্প বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের বুঝতে বেশ খানিক বেগ পেতে হয়েছিল। এখানে ঘুরেফিরে অল্প কিছু মানুষেরই নাম এসেছিল আর সর্বসাকুল্যে ১৫ জন মানুষ নাকি এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অধিকাংশের বিষয়ে এমনটা শোনা গেছে, কাউকে ফাঁকি দিয়ে চাকুরি দেয়ার নাম করে ডাকা হয়েছিল, তো কেউ ঈদের দিন ছল করে কারো বাড়িতে সেমাই খেতে গিয়েছিলেন, কেউ বা কারও কাছে ফোন করে ইতংবিতং বলেছেন, এইসব। ব্যস। এই সবই নাকি বিরাট দোষ হিসাবে গণনা করা হয়েছে।
এখন, আমার সঙ্গে লেখালেখি করেন এমন অনেকেই আছেন। অনেকে আমার এখানে দয়া করে পদধূলিও দিয়েছেন। কে কোন দল করেন, কার সঙ্গে কার কোন কানেকশন আছে সব বুঝি আমি জেনে বসে আছি। কে মোসাদের চর আর কে বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টালিজেন্সের মাসুদ রানার ইয়ারদোস্ত তা তো এরা মাইকিং করে বেড়ান না যে আমি দুম করে জেনে যাব!
আমরা পত্র-পত্রিকায় এটাও পড়েছি, মূল যে পান্ডা ইশরাক নাকি আওয়ামী লীগের সৈয়দ আশরাফের ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন (আমার দেশ, ০১.০২.১২) [৪]। কেউ-না-কেউ, কারো-না-কারো বন্ধু হতেই পারেন, এ তো বিচিত্র কিছু না। কেবল বন্ধুত্বের কারণে নিশ্চয়ই সৈয়দ আশরাফকেও আইনের আওতায় আনা চলে না।
এরই মধ্যে চলে গেছে মাসের-পর-মাস! বছর গড়াতে এলো প্রায় কিন্তু আমরা এখনও জানি এর শেষ গতি কী হয়েছে! অল্প দিন পূর্বে জানা গেল, মেজর সৈয়দ জিয়াউল হককে খুঁজে বের করার জন্য নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু তিনি কী আকাশে আছেন না পাতালে তা জানা যায়নি তবে এটা জানা গেছে নাটের গুরু ইশরাক সাহেব থাইল্যান্ডে আছেন। উত্তম! সেনাবাহিনীর তরফ থেকে সংসদীয় কমিটিকে জানানো হয়েছে (প্রথম আলো, ১২.০৯.১২) [৫] এদের দুজনকে ধরার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। আর মেজর জিয়াকে ধরার জন্য সমুদ্রেও নাকি পাহারা বসানো হচ্ছে।
অতি উত্তম! জেনে ভাল লাগছে।
ছোট্ট একটা প্রশ্ন ছিল, মি.-সেনর-হের ইশরাক যদি থাইল্যান্ডেই আছেন এটা যখন জানাই আছে; তাহলে তাঁকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে না কেন, ধরা হচ্ছে না কী মনে করে? কারণ তিনিই তো সমস্ত তালার চাবি। ভাল কথা, প্রায় এই এক বছরে থাইল্যান্ডের সঙ্গে কটা চিঠি চালাচালি হয়েছে ইশরাককে ফিরিয়ে আনার জন্য? এই কারণে কাকে কাকে ধরাধরি করা হয়েছে?
আর সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত যে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল এরা এখন কোথায়? কোন আদালতে তাঁদের বিচার চলছে- সামরিক, নাকি বেসামরিক? কতটুকু অপরাধের সঙ্গে এরা জড়িত ছিলেন? আদৌ কী কোনো অপরাধের সঙ্গে এরা জড়িত ছিলেন?
নাকি এই সব তথ্য জড়বফত, সোনা-রুপার তারে বোনা অতি সূক্ষ বস্ত্রবিশেষ যা আমাদের মত আমজনতার নাগালের বাইরে?
নাকি এঁরা কোনো অপরাধই করেননি! এমন সম্ভাবনার কথা তো একেবারে উড়িয়ে দেয়া চলে না। বাই এনি চান্স, যদি এমনটা হয়ে থাকে যে এরা নিরপরাধ তাহলে রাষ্ট্র কী এঁদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া দশ-দশটি মাস, দুঃসহ সময়টা ফিরিয়ে দেবে...?
নাকি অনেকের মত এঁরাও হারিয়ে যাবেন...এঁদের সন্তানেরা যখন কাঁদবে তখন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ক্যামেরা, বুম ধরা হবে এদের মুখের সামনে। ড্রয়ং-স্টাডিতে আয়েশি ভঙ্গিতে পেট ভাসিয়ে সেই আকাশ-ফাটা কান্না দেখে ইন্দিরার মত আমাদেরও মুখ ফস্কে বেরিয়ে যাবে, বাহ, বেশ তো...।
সহায়ক সূত্র:
১. বাংলাদেশ আর্মি: http://www.bdmilitary.com/index.php?option=com_content&view=article&id=68&Itemid=124
২. বখতিয়ার খলজী: http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=31&dd=2011-08-04&ni=66826
৩. কর্নেল তাহের: http://www.ali-mahmed.com/2009/01/blog-post_8805.html
"প্রিয় ইন্দিরা, তুমি বিমানের জানলায় বসে,
গুজরাটের বন্যা দেখতে যেও না
এ বড় ভয়ঙ্কর খেলা...
তোমার শুকনো ঠোঁট কতদিন সেখানে চুম্বনের দাগ পড়েনি,...
ইন্দিরা, তখন সেই বন্যার দৃশ্য দেখেও একদিন তোমার মুখ ফস্কে
বেরিয়ে যেতে পারে, বাঃ কী সুন্দর...!"
এই কবিতাটি এখানে দেয়ার কারণ হচ্ছে, তখন ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতায়। বিপুল ক্ষমতা ইন্দিরার। কিন্তু এই কবিতার কারণে ইন্দিরা সুনীলের প্রতি একটা শব্দ উচ্চারণ করারও স্পর্ধা দেখিয়েছেন বলে আমার জানা নাই।...
২০১২, এ বছরের শুরু। জানুয়ারি মাসের ২০ তারিখের পত্র-পত্রিকায় ছেয়ে গেল। কাঁপছিল পত্রিকা ছাপাবার যন্ত্র, কাঁপছিল দেশ। কী?! সরকার উৎখাতের চেষ্টা ব্যর্থ। কী সর্বনাশ-কী সর্বনাশ! গণতান্ত্রিক একটা সরকার উৎখাত করার অপচেষ্টা।
যেকোনো সচেতন মানুষেরই পায়ের নীচের মাটি কেঁপে উঠবে।
তখন আমাদের সেনাবাহিনীও সাফ-সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, '...আমরা আর এ ধরনের কাজের দায়ভাগ নিতে চাই না'। বেশ-বেশ।
ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কল্যাণে তখন সেনাবাহিনীর প্রেসব্রিফিংও দেখেছিলাম। ও আল্লা, কী দবদবা একেকজনের, কী জলদমন্দ্র গলার বাতচিত! শুনে আমাদের মত সাধারণ মানুষ আপ্লুত। আহারে-আহারে, আমাদের দেশের দুই লাখ [১] সেনাবাহিনী সদস্য কেবল কাল্পনিক যুদ্ধের মহড়া নিয়েই ব্যস্ত থাকেন না, একটি জলজ্যান্ত সেনা অভ্যুত্থানকে থামিয়ে আমাদের চোখের সামনে হাজিরও করেন!
এর মূল হোতা ছিলেন নাকি প্রবাসী ইশরাক আহমেদ এবং তার সাঙ্গপাঙ্গ। সেনাবাহিনীতে কর্মরত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক নাকি ইশরাকের পক্ষে কলকাঠি নাড়িয়েছেন, ঘুটার পর ঘুটা দিয়েছেন। তখন সেনাবাহিনীর কল্যাণে আমরা এটাও জানতে পেরেছিলাম, ইশরাক প্রবাসে। আর ইশরাকের চুলের টিকিটিও স্পর্শ করার কথা তখন কেউ বলেননি, আমরাও শুনিনি! দেশে ধড়পাকড় নিয়েই সবাই ব্যস্ত।
এবং তখন মেজর জিয়াউল হক নাকি সেনাবাহিনীর খপ্পর থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন! এ এক বিস্ময়! আঙুল গলে টুপ করে যেমন আঙ্গুর গড়িয়ে মাটিয়ে গড়াগড়ি খায় তেমনি জিয়াউল হকও পালিয়ে গড়াগড়ি-নড়ানড়ি শুরু করলেন। মানুষটা কেবল পালিয়েই ক্ষান্ত হননি, তিনি নাকি ফেসবুব-টেসবুকে হাবিজাবি সব কথাও বলা শুরু করেছিলেন। ওমুক-তমুকের সঙ্গে মেইল চালাচালিও করেছিলেন। একে-ওকে ফোনও দিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য লোকজনকে প্ররোচিতও করেছিলেন। হুম, বটে...!
পরে আরও জানা গেল, এই সেনা অভ্যুত্থানের সঙ্গে শতশত লোকজন না, কেবল ১৪ থেকে ১৬ জন জড়িত। এরাই নাকি বাংলাদেশের চেহারা-মুখচ্ছবি পাল্টে ফেলবেন। অনেকটা এমন আর কী, সেই কবে নাকি বখতিয়ার খলজী মাত্র ১৭জন অশ্বারোহী নিয়ে বঙ্গালদেশ জয় করে ফেলেছিলেন [২]!
হিস্ট্রি রিপিট হতে হতে বেঁচে গেল। বেঁচে গেলাম আমরাও! তখন দেশব্যাপী বাহবা-'সাবাসির' ঝড় বয়ে গিয়েছিল।
ভাগ্যিস, এই ক্যূ-টা আমাদের চৌকশ সেনাবাহিনী ঠিক ঠিক সময়ে খপ করে হাতেনাতে ধরে ফেলেছিলেন নইলে রিপলিস-এর 'বিলিভ ইট অর নট'-এ অনায়াসে জায়গা করে নিত।
পূর্বেই বলেছি, তখনও ইশরাকের টিকিটিও স্পর্শ করা যায়নি, এখনও। টিকির প্রসঙ্গটা কথার কথা- আজকাল আধুনিক লোকজনেরা টিকি রাখেন বলে শুনিনি। এই মানুষটার নাকি রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার স্বপ্ন ছিল।
তবে তখন গ্রেফতার করা হয়েছিল অবসরপ্রাপ্ত দু-জন কর্মকর্তাকে। এরা হলেন, লে. কর্নেল (অব.) এহসান ইউসুফ এবং সাবেক মেজর জাকির হোসেন। এই কর্মকান্ডের সঙ্গে এরাও জড়িত ছিলেন এমন অভিযোগ ছিল সেনাবাহিনীর। এরা দুজনই সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত। পত্র-পত্রিকায় আমরা পড়েছি, এরা দুজনই সিভিল কোর্টে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর কি এদেরকে সিভিল কোর্টে হস্তান্তর করা হয়েছিল? নাকি এদের বিচার কোর্ট-মার্শাল, সামরিক আদালতে চলবে-চলছে-চলছে না?
আমি আইনজ্ঞ নই, আইনের মানুষ এটা ভাল বলতে পারবেন। ঘটনার সময় এঁরা তো আর সামরিক বাহিনীর লোক ছিলেন না। আমার নির্দোষ প্রশ্ন, আইনের বক্তব্য কি? এঁদেরকে সামরিক আইনে বিচার করা চলে কি না?
এমনিতে আমরা সাধারণেরা বুঝি, গোপন বিচার মানেই হচ্ছে তমোময়, ছায়া-ছায়া। কারণ আমরা কর্ণেল তাহেরের বিচারও দেখেছি [৩]। এর পরিণতিও আমাদের জানা। এখন আমরা দিনের আলোর ন্যায় জানি, কর্ণেল তাহেরকে রাষ্ট্র বিচার করে শাস্তি দেয়নি, তাহেরকে স্রেফ খুন করা হয়েছিল। বেশ, খুন করা হয়েছিল জেনে এখন আমরা আনন্দিত কিন্তু রাষ্ট্র কী এখন তাহেরকে ফিরিয়ে দেবে?
এই অভ্যুত্থান নিয়ে আমাদের মত অল্প বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের বুঝতে বেশ খানিক বেগ পেতে হয়েছিল। এখানে ঘুরেফিরে অল্প কিছু মানুষেরই নাম এসেছিল আর সর্বসাকুল্যে ১৫ জন মানুষ নাকি এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অধিকাংশের বিষয়ে এমনটা শোনা গেছে, কাউকে ফাঁকি দিয়ে চাকুরি দেয়ার নাম করে ডাকা হয়েছিল, তো কেউ ঈদের দিন ছল করে কারো বাড়িতে সেমাই খেতে গিয়েছিলেন, কেউ বা কারও কাছে ফোন করে ইতংবিতং বলেছেন, এইসব। ব্যস। এই সবই নাকি বিরাট দোষ হিসাবে গণনা করা হয়েছে।
এখন, আমার সঙ্গে লেখালেখি করেন এমন অনেকেই আছেন। অনেকে আমার এখানে দয়া করে পদধূলিও দিয়েছেন। কে কোন দল করেন, কার সঙ্গে কার কোন কানেকশন আছে সব বুঝি আমি জেনে বসে আছি। কে মোসাদের চর আর কে বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টালিজেন্সের মাসুদ রানার ইয়ারদোস্ত তা তো এরা মাইকিং করে বেড়ান না যে আমি দুম করে জেনে যাব!
আমরা পত্র-পত্রিকায় এটাও পড়েছি, মূল যে পান্ডা ইশরাক নাকি আওয়ামী লীগের সৈয়দ আশরাফের ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন (আমার দেশ, ০১.০২.১২) [৪]। কেউ-না-কেউ, কারো-না-কারো বন্ধু হতেই পারেন, এ তো বিচিত্র কিছু না। কেবল বন্ধুত্বের কারণে নিশ্চয়ই সৈয়দ আশরাফকেও আইনের আওতায় আনা চলে না।
এরই মধ্যে চলে গেছে মাসের-পর-মাস! বছর গড়াতে এলো প্রায় কিন্তু আমরা এখনও জানি এর শেষ গতি কী হয়েছে! অল্প দিন পূর্বে জানা গেল, মেজর সৈয়দ জিয়াউল হককে খুঁজে বের করার জন্য নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু তিনি কী আকাশে আছেন না পাতালে তা জানা যায়নি তবে এটা জানা গেছে নাটের গুরু ইশরাক সাহেব থাইল্যান্ডে আছেন। উত্তম! সেনাবাহিনীর তরফ থেকে সংসদীয় কমিটিকে জানানো হয়েছে (প্রথম আলো, ১২.০৯.১২) [৫] এদের দুজনকে ধরার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। আর মেজর জিয়াকে ধরার জন্য সমুদ্রেও নাকি পাহারা বসানো হচ্ছে।
অতি উত্তম! জেনে ভাল লাগছে।
ছোট্ট একটা প্রশ্ন ছিল, মি.-সেনর-হের ইশরাক যদি থাইল্যান্ডেই আছেন এটা যখন জানাই আছে; তাহলে তাঁকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে না কেন, ধরা হচ্ছে না কী মনে করে? কারণ তিনিই তো সমস্ত তালার চাবি। ভাল কথা, প্রায় এই এক বছরে থাইল্যান্ডের সঙ্গে কটা চিঠি চালাচালি হয়েছে ইশরাককে ফিরিয়ে আনার জন্য? এই কারণে কাকে কাকে ধরাধরি করা হয়েছে?
আর সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত যে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল এরা এখন কোথায়? কোন আদালতে তাঁদের বিচার চলছে- সামরিক, নাকি বেসামরিক? কতটুকু অপরাধের সঙ্গে এরা জড়িত ছিলেন? আদৌ কী কোনো অপরাধের সঙ্গে এরা জড়িত ছিলেন?
নাকি এই সব তথ্য জড়বফত, সোনা-রুপার তারে বোনা অতি সূক্ষ বস্ত্রবিশেষ যা আমাদের মত আমজনতার নাগালের বাইরে?
নাকি এঁরা কোনো অপরাধই করেননি! এমন সম্ভাবনার কথা তো একেবারে উড়িয়ে দেয়া চলে না। বাই এনি চান্স, যদি এমনটা হয়ে থাকে যে এরা নিরপরাধ তাহলে রাষ্ট্র কী এঁদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া দশ-দশটি মাস, দুঃসহ সময়টা ফিরিয়ে দেবে...?
নাকি অনেকের মত এঁরাও হারিয়ে যাবেন...এঁদের সন্তানেরা যখন কাঁদবে তখন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ক্যামেরা, বুম ধরা হবে এদের মুখের সামনে। ড্রয়ং-স্টাডিতে আয়েশি ভঙ্গিতে পেট ভাসিয়ে সেই আকাশ-ফাটা কান্না দেখে ইন্দিরার মত আমাদেরও মুখ ফস্কে বেরিয়ে যাবে, বাহ, বেশ তো...।
সহায়ক সূত্র:
১. বাংলাদেশ আর্মি: http://www.bdmilitary.com/index.php?option=com_content&view=article&id=68&Itemid=124
২. বখতিয়ার খলজী: http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=31&dd=2011-08-04&ni=66826
৩. কর্নেল তাহের: http://www.ali-mahmed.com/2009/01/blog-post_8805.html
৫. ইশরাক এখন থাইল্যান্ডে: http://eprothomalo.com/index.php?opt=view&page=1&date=2012-09-12#
No comments:
Post a Comment