Search

Friday, March 15, 2013

ব্লগিং-বোলোগিং, আস্তিক-নাস্তিক!


এই মুহূর্তে ব্লগারদের চেয়ে স্পর্শকাতর আর কোনো জীব জীবিত আছে বলে আমার জানা নাই! 'ব্লগার' শব্দটা এখন একটা গালি। আগে যে মানুষটার ব্লগ বিষয়ক কোনো প্রসঙ্গ শুনলে মুখের রেখা নরোম হয়ে আসত সেইসব মানুষেরাই এখন কঠিন আগুনদৃষ্টিতে তাকান। ব্লগারদের বিষফোঁড়ার মত এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন।
অনলাইনে লেখালেখি করে এখন আমাদের যে যে অর্জন তাও আজ প্রশ্নবিদ্ধ।

প্রিন্ট মিডিয়া এবং অন লাইন মিডিয়ার মধ্যে একটা অলিখিত লাগালাগি আছে। এবং এর পুরোধা হচ্ছে প্রিন্ট মিডিয়া। এরা কোনো অবস্থাতেই মেনে নিতে চায়নি, চায় না অন-লাইন মিডিয়ার উত্থান। কারণ প্রিন্ট মিডিয়ার এই সব স্বঘোষিত বুদ্ধিজীবীদের যারা জ্বী হুজুর-জ্বী হুজুর করে হাতের রেখা মুছে ফেলার উপক্রম করত তারাই আজ ক্রমশ নিজের একটা ভুবনে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এ উল্লাস সহ্য হয় কেমন করে! আহা, এদের যে পেটভরা হিংসা!

কিন্তু অন-লাইনের লোকজনের উদ্যোগেই যখন একটা বিপ্লব হয়ে গেল তখন প্রিন্ট মিডিয়ার লোকজনের কী দৌড়। দৌড়-দৌড়-দৌড়, এক দৌড়ে মঞ্চের উপর। বেঢপ গায়ে আবার পতাকামার্কা টিশার্ট। তখন একজন অন্যজনের পিঠ চুলকে দেন। আপনারা কি ওনাকে চেনের? ওনার ম্যা ডাক শুনেছেন, ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু এখন যখন অন-লাইন মিডিয়া মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে তখন আর এইসব দুধের মাছির খবর নাই। অথচ এরা এই দুঃসময়ে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারতেন। কেমন করে?


একজন মাহমুদুর রহমান অন-লাইন যোদ্ধাদের একেবারে শুইয়ে দিয়েছেন। যারা মাটিতে পড়ে শুয়ে আছেন তারা যদি এখনও এটা না-বুঝে থাকেন তবে ভাল..., ভাল তো!
আর মাহমুদুর রহমান নামের এই চুতিয়ার তো পত্রিকার সম্পাদক দূরের কথা, চাপরাশি হওয়ার যোগ্যতাও নাই। একে কে বোঝাবে, সব বলতে নাই, সব ছাপাতে নাই, সব দেখাতে নাই। সব দেখিয়ে ফেললে... ভয়ে আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি, তাহলে যে আমরা ওনার ইয়েটাও দেখতে পেতাম। ঈশ রে, তাহলে সর্বনাশ হয়ে যেত!


ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় যে অন-লাইনের লোকজনেরা এখন ব্যবহৃত হচ্ছেন এটাও বুঝলে ভাল। অন-লাইন লোকজনের প্রতি, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার অথবা প্রিন্ট মিডিয়ার যদি সামান্যতম আবেগ থাকত তাহলে এরা এদের প্রতি মমতার হাত বাড়িয়ে দিতেন। একের-পর-এক উদ্যোগ নিতেন। সাধারণ লোকজনকে বোঝাবার চেষ্টা করতেন, ব্লগিং কি, ব্লগার কারা, কেমন করে দেশের জন্য দশের জন্য এরা ভূমিকা রাখছেন। সবাই যে এখানে মন্দ কাজে লিপ্ত আছেন এমনটাও না। ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু এই চেষ্টাটা হয়েছে এমন একটা উদাহরণ কি কেউ আমাকে দেখাতে পারবেন?


সাধারণ মানুষ 'বোলগার'-'বলগিং'-ই বলত। আসলে এখানে যে কি হয় এ সম্বন্ধে এদের ছিল জ্ঞান ভাসা ভাসা। আর এখন তো মাহমুদুর রহমানের মত নগ্ন মানুষদের কল্যাণে হরেদরে এখানকার সবাই নাস্তিক তকমাধারী!
এমনিতে যে দেশে চাঁদে সাঈদীকে দেখা গেছে বলে লক্ষ-লক্ষ মানুষ উত্তেজিত হয়ে পড়েন সেই দেশে ধর্ম নিয়ে খেলাধুলাটা কম করলেই ভাল। আর অতি সভ্য দেশের লোকজনেরা যখন ধর্মগ্রন্থ হাতে নিয়ে শপথ নেন তখন সমস্যা হয় না, না? সমস্যা কেবল বাংলাদেশের মত দেশেই কেবল!


আর নাস্তিক প্রসঙ্গ। দুম করে একজন বলে দিল, নাস্তিক। ব্যস আর যায় কোথায়, সে নাস্তিক হয়ে গেল। (হালে এই কাতারে খালেদা জিয়া যুক্ত হয়েছেন) কত সোজা, না! এরচেয়ে সহজ কাজ সম্ভবত এই গ্রহে আর নাই। চিবিয়ে পানি খাওয়ার চেয়েও এটা সহজ!
আচ্ছা, এরা যে যাকে খুশি তাকে নাস্তিক বলে দিচ্ছেন এটা এরা বুঝতে পারেন কেমন করে? এদের কাছে কী 'নাস্তিকমিটার' নামের কোনো যন্ত্র আছে? কাছাকাছি আসামাত্র যন্ত্রটা চিঁহিহি করে জানান দেয়! নাকি এরা একজনের মনের কথা পড়তে পারেন? সব জেনে বসে অছেন বুঝি। এরা নিজেদেরকে কী ভাবেন, অন্তর্যামী?


কেউ কারো ধর্ম নিয়ে অহেতুক কটাক্ষ করলে তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক সমস্যা তো নাই কিন্তু ফট করে একজনকে নাস্তিক বলে দেয়া কেন?
যে মানুষটাকে নাস্তিক বলা হচ্ছে, ওই মানুষটা কি নিজেকে নাস্তিক বলে ঘোষণা দিয়েছেন বা নাস্তিক হওয়ার জন্য আইনগত উদ্যোগ নিয়েছেন? (এবং মৃত্যু পরবর্তী জটিলতা এড়াবার জন্য ওই মানুষটা কি মৃত্যুর পর তার দেহ নিয়ে কী করা হবে এই লিখিত নির্দেশনা রেখে গেছেন, যে তার মরদেহ চিকিৎসাবিদ্যা কাজে ব্যবহৃত হবে। যেমনটা করেছিলেন আরজ আলী মাতুব্বর।)
এই সব প্রশ্নের উত্তরগুলো যদি 'না' হয় তবে মানুষটা যে নাস্তিক ছিলেন এটা এরা বুঝলেন কেমন করে?
এবং তার লিখিত নির্দেশনা না-থাকলে মৃত্যু পরবর্তী তার দেহ নিয়ে কি করা হবে এটার সিদ্ধান্ত নেবেন কেবলই তার প্রিয়মানুষেরা, অন্য কেউ না।


আর এমনিতে কে আস্তিক হবে বা কে নাস্তিক এটা তো তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত। নাস্তিক তার মত থাকবে, সমস্যা কোথায়? আর এ তো আজকের সমস্যা না। সেই অনাদিকাল থেকেই চলে আসছে। মদিনা সনদেও [১] তো সবার অধিকার নিশ্চিত করা আছে।
রবিবাবুর একটা চমৎকার কথা আছে, "I love God, because he has given me the freedom to deny him".
সোজা কথা, সৃষ্টিকর্তা ইচ্ছা করলে সবই কলাগাছ বানাতে পারতেন, এই মহাবিশ্বে অন্য কোনো গাছ আর থাকত না। এটা তাঁর ইচ্ছা ছিল না। তেমনি ইচ্ছা করলে তো সবাইকে আস্তিক বা একই ধর্মে রাখতে পারতেন। এমনটাও তাঁর ইচ্ছা ছিল না।
তাঁর যেখানে ইচ্ছা নাই সেখানে আমরা ইচ্ছা করার কে? কেউ কী তাঁর চেয়েও নিজেকে বড় ভাবার চেষ্টা করেন? নইলে এরা এই হুজ্জত করেন কেন? অন্যের উপর জুলুম করেন কেন?

"...আল্লাহ তো মানুষের প্রতি কোনো জুলুম করেন না। আসলে মানুষ নিজেরাই নিজেদের উপর জুলুম করে থাকে।" (-সুরা ইউনুস,: ৪১-৪৪)

কারো ধর্ম নিয়ে অহেতুক কটাক্ষ করা যেমন অপরাধ তেমনি কাউকে অহেতুক নাস্তিক বলাও অপরাধ...।

সহায়ক সূত্র:
১. মদিনা সনদ: http://www.ali-mahmed.com/2013/03/blog-post.html

1 comment:

Anonymous said...

দারুন পোস্ট...।।