Search

Monday, April 15, 2013

সেই দিন আর নাই রে, প্রথম আলো, হাসনাত আবদুল হাই!

আগের এক লেখায় 'টিভি ক্যামেরার সামনে মেয়েটি' এটার একটা হাইপার-লিংক ছিল [১]। ওখানে এখন ক্লিক করে দেখছি হাসনাত আবুল হাইয়ের ওই লেখাটা দেখাচ্ছে না। আমি ভুল না-করে থাকলে প্রথম আলো লেখাটা সরিয়ে ফেলেছে। প্রথম আলো পূর্বেও অজস্র বার বিভিন্ন অন্যায় করেছে কিন্তু কখনও ভুল স্বীকার করেনি। এবারও করবে এমনটা আমি মনে করি না।
কারণ এদের মধ্যে তীব্র অহংকার কাজ করে। কোনো এক লেখায় আমি লিখেছিলাম, এই গ্রহে ডায়নোসর নাই, সোভিয়েট ইউনিয়ন নাই, আদমজী জুটমিল নাই...।

লেখাটা সরিয়ে ফেললেই কী এমন ক্ষমাহীন অন্যায় আমরা ভুলে যাব? এটা স্পষ্ট এক চোরের লক্ষণ। যেটা করাটাই সমীচীন ছিল কেন এমন একটা লেখা ছাপা হলো তার পরিষ্কার একটা ব্যাখ্যা পাঠকের সামনে তুলে ধরা। পাঠককে নতজানু হয়ে সরি বলা। লেখককে কালো তালিকাভুক্ত করা এবং এই পাতার দায়িত্বে যিনি আছেন তাকে পত্রপাঠ বিদায় দেয়া।
সুমন্ত আসলামকে যেমনটা বিদায় করা হয়েছিল অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, সুমন্ত আসলামই কেবল ওটার জন্য দায়ী ছিলেন না। মূল দায় যার ছিল সেই চালবাজ মানুষটা এখনও বহাল তবিয়তে এই পত্রিকায় আছেন এবং কেয়ামতের আগ পর্যন্ত এই পত্রিকায় সঙ্গে থাকবেন এমনটাই আমরা আশা করি। কারণ আমরা জানি তিনি বাচ্চু ভাইয়ের খুব পেয়ারের 'লুক'!

অথচ আলপিনের যে কার্টুন নিয়ে তুলকালাম কান্ড হয়েছিল, যে কারণে কার্টুনিস্ট আরিফকে প্রথম আলো ফাঁসিয়ে দিয়েছিল অথচ সেই বেচারার কোনো দোষই ছিল না। প্রথম আলো মা-বাপছাড়া এই অল্পবয়সি ছেলেটির জন্য কিছুই করেনি, কিচ্ছু না- আইনগত সহায়তাও না। বাচ্চু মিয়া যখন তওবা সেরে আসলেন তখন তিনি অনেক কথাই সেখানে বিজবিজ করে বললেন, বললেন না কেবল এই অভাগা ছেলেটির কথা।
আরিফ নামের এই ছেলেটিকে গ্রেফতারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে তার সময়টা কাটছিল অসহ্য, দুঃসহ।


ড. মো: আনোয়ার হোসেনের 'রিমান্ড ও কারাগারের দিনলিপিতে' আমরা পাই:
"...সেখানে আলপিনের কার্টুন আঁকিয়ে আরিফুর রহমানকে রাখা হয়েছিল। ...এখনও বড় ভীত, কারণ কারাগারে আসার পর একজন কয়েদি লাঠিতে পায়খানা লাগিয়ে তার মুখে আঘাত করেছে। হুমকিও দিয়েছে অনেক (সে নবীর অপমান করেছে এই কারণে)।
...আরিফ জানাল, যে কার্টুনের জন্য তার এই হেনেস্তা, তার সংলাপগুলোও তার নয়।
"(পৃ নং: ৩৮)
 
আর আমাদের লেখক শ্রদ্ধাভাজনেষু, শ্রদ্ধাস্পদেষু হাসনাত আবুল হাই, স্যার, আপনারা তো এই সবই লিখে লিখেই আমাদেরকে মুগ্ধ করেন, না? তবে এখন আপনারা এটা বিস্মৃত না-হলেই ভাল করবেন সেই দিন আর নাই। যেমনটা আপনাদের সেই টাইপ-রাইটারও আর নাই।
আমরা এই প্রজন্ম নিজের আপন বাপকে ছাড়ি না আপনি কোন লাটসাব? ছেঁড়া স্যান্ডেলের মত আপনাকে ছুঁড়ে ফেলতে আমাদের হাত কাঁপবে এমনটাই ভাবছেন বুঝি। ভুল! আপনাদের সময়ে লোকজনেরা বলত, বংশ। আমাদের সময়ে আমরা বলি, জেনেটিক কোড। আপনার কোডে ঝামেলা আছে। বড় রকমের ঝামেলা আছে।
আমরা এও জানি আপনি একজন আমলা ছিলেন। আমলা এবং গামলার মধ্যে খুব একটা ফারাক নাই। গামলার মাধ্যমে মানুষ যেমন নোংরা মোজা, নোংরা অর্ন্তবাস ধৌত করে; তেমনি আমলাকেও, যিনি যখন ক্ষমতায় থাকেন তিনি তার সমস্ত আবর্জনা তার মাধ্যমেই ধৌত করান।

ওহে প্রথম আলো, সেই দিন আর নাই রে, পাগলা। দিন বদলেছে। সফটকপি সরিয়ে ফেলেই বুঝি আমরা বিস্মৃত হব। হার্ডকপি থেকে আমরা সফটকপি করব। সযতনে ওয়েবে রেখে দেব। কেউ-কেউ ভুলে যাবে কিন্তু ব্যাটা গুগল ঠিকই মনে রাখবে।


*পরে জানা গেল প্রথম আলো ক্ষমা চেয়ে একটা বিবৃতি প্রকাশ করেছে:
"১৪ এপ্রিল ২০১৩ তারিখের প্রথম আলোর বাংলা নববর্ষের ক্রোড়পত্রে হাসনাত আবদুল হাই রচিত ‘টিভি ক্যামেরার সামনে মেয়েটি’ শীর্ষক ছোটগল্পে ব্যক্ত মতামত এই পত্রিকার নীতি ও আদর্শের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। অসাবধানতাবশত লেখাটি মুদ্রণের জন্য প্রথম আলো আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং পাঠকের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। []" 

মন্দের ভালো তবে এই অপরাধের জন্য কেবল এই উদ্যোগকেই আমি যথেষ্ট মনে করি না।

সহায়ক সূত্র:
১. লুঙ্গি-ছাগল-হাই-প্রথম আলো: http://www.ali-mahmed.com/2013/04/blog-post_15.html
২. প্রথম আলোর ক্ষমাপ্রার্থনা: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-04-14/news/344974



**কৃতজ্ঞতা, লেখাটির স্ক্রিণশট দিয়ে সহায়তা করেছেন: Mohammad JF Shimul , Murad Hafiz, হিমাংশু মাহের

No comments: