Search

Wednesday, June 19, 2013

ফাইভ হানড্রেড ডেইজ!

১২.০৯.১২ তারিখেও সেনাবাহিনীর তরফ থেকে সংসদীয় কমিটিকে জানানো হয়েছিল, সেনা অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত প্রবাসী ব্যবসায়ী ইশরাক আহমেদ এবং মেজর সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক, এদের দুজনকে ধরার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। আর মেজর জিয়াকে ধরার জন্য সমুদ্রেও নাকি পাহারা বসানো হচ্ছে! তখন এটাও জানা গিয়েছিল মূল হোতা ইশরাক থাইল্যান্ডে আছে। অতি উত্তম! জেনে ভাল লাগল।
মি.-সেনর-হের ইশরাক যদি থাইল্যান্ডেই আছেন এটা যখন জানাই আছে; তাহলে তাঁকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে না কেন! ধরা হচ্ছে না কী মনে করে? কারণ তিনিই তো সমস্ত তালার চাবি। ভাল কথা, প্রায় এই এক বছরে থাইল্যান্ডের সঙ্গে কটা চিঠি চালাচালি হয়েছে ইশরাককে ফিরিয়ে আনার জন্য? কিন্তু ২০১৩-এ এসে জানা যাচ্ছে, সেনর ইশরাক এখন কোথায় আছেন এটা কেউ জানে না!

৫ জুন, ২০১৩। পত্রিকার খবর,
"...সেনা অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত প্রবাসী ব্যবসায়ী ইশরাক আহমেদ এবং মেজর সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হককে খুঁজে বের করতে ইন্টারপোলের সহায়তা কামনা করা হয়েছে।...যদিও এ পর্যন্ত ওই দুজনের অবস্থান সম্পর্কে এখনও কিছু জানা সম্ভব হয়নি"
এখন আর 'অতি উত্তম' বলার যো নেই!

অনেকের হয়তো মনে আছে, ২০১২, জানুয়ারি মাসের ২০ তারিখের পত্র-পত্রিকায় ছেয়ে গিয়েছিল। কাঁপছিল পত্রিকা ছাপাবার যন্ত্র, কাঁপছিল দেশ। কী, ঘটনা কী?! সরকার উৎখাতের চেষ্টা ব্যর্থ। কী সর্বনাশ-কী সর্বনাশ! গণতান্ত্রিক একটা সরকার উৎখাত করার অপচেষ্টা!
যেকোনো সচেতন মানুষেরই পায়ের নীচের মাটি কেঁপে উঠবে। তখন আমাদের সেনাবাহিনীও সাফ-সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন: 
"...আমরা আর এ ধরনের কাজের দায়ভাগ নিতে চাই না"।
বেশ-বেশ। প্রিন্ট মিডিয়া এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কল্যাণে তখন সেনাবাহিনীর প্রেসব্রিফিংও দেখেছিলাম।

পরে আরও জানা গেল, এই সেনা অভ্যুত্থানের সঙ্গে শতশত লোকজন না, কেবল ১৪ থেকে ১৬ জন জড়িত! সেনাবাহিনীতে কর্মরত লোকজন ব্যতীত এই কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দুজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাকেও আটক করা হয়েছিল। এর মধ্যে একজন মেজর জাকির (অবঃ)
ইতিপূর্বে পত্র-পত্রিকায় আমরা পড়েছিলাম, এরা দুজনই সিভিল কোর্টে জবানবন্দিও দিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর কি এদেরকে সিভিল কোর্টে হস্তান্তর করা হয়েছিল? নাকি এদের বিচার কোর্ট-মার্শাল, সামরিক আদালতে হয়েছে? বিচারে কি পাওয়া গেল? কাকে কতটুকু শান্তি দেয়া হলো? এই সম্বন্ধে আমরা কিছুই জানি না।

নাকি সামরিক আইনে বিচার চলছে? ইতিমধ্যে কিন্তু চলে গেছে ৫০০ দিন- ফাইভ হান্ড্রেড ডেইজ! বিচারে কোনো সাজা হয়েছে এমনটা তো শুনিনি! নাকি এখনও ট্রায়ালই শুরু হয়নি? প্রচলিত আইন না-হয় বাদ দিলাম তা সামরিক আইন কি বলে?
"... If the accused is in custody, then the investigation must be started within 48 hours from the time of his arrest excluding public holidays..." (Army Act, Section 74)
বা এই আইনটা:
"...A person who has been kept in such custody must be brought before the trial within 8 days (if not in active service). If, for reasonable grounds it was not possible then on the expiry of the 8th day it should be reported to superior authority. And such report should be sent on exceeds 32 days the alleged accused should be released from arrest without prejudice to re-arrest. (Army Act, Section 75)
যদি এমনটা হয়ে থাকে যে এখনও বিচারই শুরু হয়নি তাহলে এটা তো এক ভয়াবহ অন্যায়! একটা মানুষের জীবন থেকে অহেতুক হারিয়ে গেছে ৫০০ দিন, ফাইভ হান্ড্রেড ডেইজ। এতে কী হয়? হয়! থমকে যায় একটা জীবন, একটা পরিবার, একটা সভ্যতা...!
 
* মেজর জাকির নামের এই মানুষটাকে প্রথমে গুম তারপর আটক রাখা হয়েছিল ফাইভ হান্ড্রেড ডেইজ না, ৮৪৩ দিন। সাত কোটি আটাশ লক্ষ পঁয়ত্রিশ হাজার দুই শত সেকেন্ড! 
বিনা বিচারে। এখানেই শেষ না! এরপর বিচারের নামে 'সে এক প্রহসন'! জেল দেওয়া হয়েছিল। দুর্ধর্ষ কয়েদি হিসাবে রাখা হয়েছিল কাশেমপুর কারাগারে। দেশের এই সেরা সন্তান মেজর জাকির, তাঁর সঙ্গে তাঁর সন্তানদের কপালে জুটেছিল অপরাধীর সন্তানের তকমা! জেল থেকে বেরুবার পরও মানুষটাকে শেখ হাসিনার হায়েনারা তাড়া করেছিল, সবিরাম...।
...
এই ভিডিও ঋণ: জনাব, ড. কনক সরওয়ার। তাঁর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি:
 
এই দেশ নামের 'দেশমা' তার এই সন্তানকে ফেলে দিলেও সন্তান কিন্তু তার মার কোল ছাড়েনি!
হাসিনার শাসনামলে এই মানুষটাকে বিভিন্ন অন্যায্য শাস্তি দেওয়ার পরও নিস্তার ছিল না। সুদূর ইংল্যান্ডে পালিয়ে প্রাণ বাঁচাতে হয়েছিল। কিন্তু ওখানে থেকেও মানুষটা লড়ে গেছেন দেশের জন্য। কখনও জনসচেনতা তৈরিতে চোঙ্গা হাতে মুখর ছিলেন তো কখনও 'হাউস অভ কমনস'-এ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সিও দুঁদে আইনজ্ঞ টোবি ক্যাডম্যানের সঙ্গে।

... ... ...
লেখায় কেবল এই অংশটুকুর লেখক, Julkarnain saer
"আওয়ামী সরকারের শাসনামলে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (সদর দপ্তর ডিজিএফআই) অভ্যন্তরে পরিচালিত গুম ঘরের কোড নাম ছিলো, 'আয়নাঘর'।
১৩ আগষ্ট ২০২২ নেত্র নিউজে প্রকাশিত 'আয়নাঘরের বন্দী, ডিজিএফআইয়ের গোপন বন্দীশালা' প্রতিবেদন প্রকাশের পর সংস্থাটিতে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। আয়নাঘরের বন্দীদের আভ্যন্তরীনভাবে স্থানান্তর করা হয়। যার সব কিছুই বিশ্বস্ত সূত্রদের মাধ্যমে আমাদের নজরদারির মধ্যে ছিলো।
আয়নাঘর কেবল একটি বন্দীশালার কোড নাম। এছাড়াও অন্যান্য সংস্থারও নিজস্ব বন্দীশালা ছিলো, যেমন RAB এর বিশেষ একটি কেন্দ্র ছিলো TFI, এনএসআইয়ের ঢাকা শহর জুড়েই ছিলো কিছু সেইফ হাউজ। গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনপ্রয়োগের নিয়ম না-থাকা সত্বেও এনটিএমসির নিজস্ব বন্দীশালা এবং ইন্টারোগেশন সেল ছিলো।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর AIC ছিলো, যা সম্ভবত এখনো আছে। এছাড়াও আরো একটি স্থাপনা ছিলো সেনাসদরের পুরাতন অফিসার্স মেস। যেখানে সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূতভাবে সামরিক বাহিনীতে কর্মরত/অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোন রকমের গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেলে আটকে রাখা হতো। এ সকল গুরুতর অভিযোগের বেশিরভাগই হতো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। 
 
এমনি একজন ভিকটিম ছিলেন বিএ ৫০৯৩ মেজর এ কে এম জাকির হোসেইন (অবঃ), যাকে 'সেনাবাহিনীতে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন' এই অভিযোগে ৩১ ডিসেম্বর ২০১১ নিজ বাসস্থান থেকে তৎকালীন মেজর মোস্তাফিজের নেতৃত্বে গুম করা হয়। ১১ দিন গুম করে নির্যাতনের পর ১০ জানুয়ারি ২০১২ কোন বিচার ছাড়াই দেশের প্রচলিত আইনের পরোয়া না-করে সেনাসদরের পুরাতন অফিসার্স মেসের একটি কক্ষে একপ্রকারের সলিটারি কনফাইনমেন্টে রাখা হয়।
১০ জানুয়ারি ২০১২ - ২৩ এপ্রিল ২০১৪, দুই বছরের অধিক সময় মেজর জাকিরকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে সেনাসদরের পুরাতন অফিসার্স মেসের ওই কক্ষটিতে আটক রাখা হয়। পরবর্তীতে সামরিক আদালতে তার বিচার করে ২ বছরের সিভিল জেল দিয়ে হাই সিকিউরিটি জেলে প্রেরণ করা হয়। যেখান থেকে বহু কাঠখড় পুড়িয়ে ২০১৫ সালের মার্চে মুক্তি মেলে মেজর জাকিরের। 
সেনাসদরের পুরাতন অফিসার্স মেসের কক্ষে সলিটারি কনফাইনমেন্টে বন্দী থাকা অবস্থায় কক্ষের দেয়ালে লিখে মেজর জাকির তাঁর সময় পার করতেন। কিছুদিন আগে তিনি তার সেসব দেয়াল লিখনের এবং ওই সেলের ছবি (যা তাকে সিভিল জেলে পাঠানোর সময় কারো সহায়তায় তুলতে সক্ষম হন) আমাকে পাঠান। যার বিস্তারিত প্রকাশ করা হলো।
মেজর জাকির (অবঃ) বর্তমান যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন।"

No comments: