কপালের ফের, আমি যেটাতেই এখন হাত দেই তা কেমন-কেমন করে যেন ভন্ডুল হয়ে
যায়, গণেশ উল্টে যায়! সুধিন্দ্রনাথের কবিতা ধার করে বলতে হয়, '...অকস্মাৎ
স্বপ্ন গেল টুটি, দেখিনু সরমে চাহি...'।
কী গভীর আগ্রহ নিয়েই না আমাদের দেশের এই প্রিন্সের কথা লিখলাম, 'একজন প্রিন্স, মুসা বিন শমসের!':
https://www.facebook.com/ ali.mahmed1971/posts/ 10151504510607335
এরপর জনে-জনে বলে বেড়িয়েছি আমাদের দেশেও প্রিন্স আছে, বাহে। দেশ-বিদেশের লোকজনেরা চোখ বড়-বড় করে অপার বিস্ময়ে স্বীকার যেতে বাধ্য হয়েছিলেন, সমীহের চোখে তাকিয়েছেন। কেন-কেন-কেন, কেন এমনটা হয়? এখন চিঁ চিঁ ব্যতীত আমার গলার স্বর বের হবে কেমন করে! এই পোড়া দেশে যাও একজন প্রিন্স পাওয়া গেল এখন দেখা যাচ্ছে আরেক কাহিনী!
দৈনিক জনকন্ঠ, প্রথম পৃষ্ঠায় এটা ছাপায় ২৪ মার্চ, ২০০১ সালে। ওখান থেকে খানিকটা এখানে তুলে দেই:
"ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট এলাকার মেয়ে কমলা ঘোষ। সবে বিয়ে হয়েছে তার। বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসে আটকা পড়ে যান কমলা! একদিন পাকিস্তানি মেজর কোরায়শী ও তিন জন সৈন্যসহ কমলাদের বাড়িতে আসে নুলা মুসা। এরপর যা হওয়ার তাই হয়, পাকিস্তানি সৈন্যরা চরম শারিরীক নির্যাতন করে কমলাকে।
...পরে কমলার স্বামী কমলাকে আর কখনই ঘরে ফিরিয়ে নেয়নি।
...ফরিদপুর শহরের মহিম স্কুলের সঙ্গে এক ধর্মশালা দেখাশোনা করতেন কেষ্টমন্ডল। কেষ্টমন্ডলের চার মেয়ে: ননী, বেলী, সোহাগী ও লতা। নুলা মুসার তত্ত্বাবধানে এই বেলী ও ননী মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় পাকিস্তানি সৈন্যদের মনোরঞ্জনে বাধ্য হয়েছিলেন। পরে এই চার বোন এবং তাদের মা-র ঠাঁই হয়েছিল ফরিদপুরের পতিতাপল্লীতে।
...কেবল ননী, বেলীই নয় পাকিস্তানি সেনাদের হাতে অর্ধশতাধিক বাঙালি মা-বোনের সন্ভ্রম লুটের প্রধান নায়ক এই নুলা মুসা।
এখন তার নাম ড. মুসা বিন শমশের হলেও সার্টিফিকেটের নাম এডিএম মুসা। কিন্তু একটা হাত খানিকটা বিকলাঙ্গ থাকায় তার ব্যাপক পরিচিতি ছিল, 'নুলা মুসা' হিসাবেই। নিজেকে ডক্টর বলে দাবী করলেও, ১৯৬৮ সালে ঈশান স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হয়েছিল মুসা। ১৯৮৬ সালে মুসার নামের আগে ডক্টর যুক্ত হলেও উচ্চ-মাধ্যমিক পাসের কোনো প্রমাণ মেলেনি কোথাও!
অভিযোগ আছে, একাত্তরের ২১ এপ্রিল পাকিস্তানি সৈন্যদের ফরিদপুরে ঢোকার ব্যাপারে মানচিত্র এবং পথনির্দেশনা দিয়ে সহযোগিতা করেছে এই মুসা। মেজর আকরাম কোরায়শীর সঙ্গে মুসার গভীর ঘনিষ্ঠতা ছিল! ফরিদপুরে পাকিস্তানি সৈন্য ঢোকার পরদিনই (একাত্তরের ২২ এপ্রিল) ফরিদপুর সার্কিট হাউজে মুসা এবং মেজর কোরায়শীকে খুবই অন্তরঙ্গ পরিবেশে দেখেন, মুক্তিযোদ্ধা একেএম আবু ইউসুফ সিদ্দিক পাখী।
একাত্তরে মুসা ছিল ফরিদপুরের এক মূর্তিমান আতঙ্ক। তার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহায়তায় পাকিস্তানি সেনারা অসংখ্য মানুষকে হত্যা, নারী নির্যাতন একং লুটতরাজ করেছে।
ফরিদপুরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ শহরের সমস্ত শহীদ মিনার মুসা পাকিস্তানি সেনাদের সহায়তায় ভেঙ্গে ফেলে!
মেজর কোরায়শীসহ অনেক পাকিস্তানি সেনা-সদস্যের অবাধ যাতায়াত ছিল মুসার বাড়িতে। মুসার পিতা তথাকথিত পীর শমসের মোল্লা পাকিস্তানি সেনাদের মনোবল বাড়াতে তাদের গায়ে ফুঁ দিত আর বলত, 'ইন্ডিয়া পাকিস্তান বন যায়েগা'।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ডিসেম্বরেই মুসা মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়ে ফরিদপুর থেকে পালিয়ে চলে যায় পাবনায়। সেখানে বড় ভাইয়ের শ্যালিকাকে বিয়ে করে ঢাকা-চট্টগ্রামে ছুটাছুটি করে। ঢাকার এক অবাঙ্গালিকে পাকিস্তানে পাঠাবার নাম করে তাঁর সহায়সম্পত্তি আত্মসাতের মাধ্যমে একপর্যায়ে ঢাকায় 'শাহবাজ ইন্টারন্যাশনাল' নামে আদম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলে। এরপর বিদেশে লোক পাঠাবার নাম করে উত্তরবঙ্গের কয়েকশ' লোকের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে উধাও হয়ে যায়। বছর তিনেক পর ঢাকায় ফিরে 'ড্যাটকো' নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে আবারও শুরু করে আদম ব্যবসা! এরশাদ আমলে শুরু হয় তার উত্থান। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি মুসাকে...।"
*দৈনিক জনকন্ঠে এই প্রতিবেদন ছাপাবার পর প্রতিবাদ দূরের কথা এই প্রতিবেদনটি তৈরীর সময় বারবার তার সঙ্গে যোগাযোগের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল এমনটাই দাবী এই পত্রিকার।
কী গভীর আগ্রহ নিয়েই না আমাদের দেশের এই প্রিন্সের কথা লিখলাম, 'একজন প্রিন্স, মুসা বিন শমসের!':
https://www.facebook.com/
এরপর জনে-জনে বলে বেড়িয়েছি আমাদের দেশেও প্রিন্স আছে, বাহে। দেশ-বিদেশের লোকজনেরা চোখ বড়-বড় করে অপার বিস্ময়ে স্বীকার যেতে বাধ্য হয়েছিলেন, সমীহের চোখে তাকিয়েছেন। কেন-কেন-কেন, কেন এমনটা হয়? এখন চিঁ চিঁ ব্যতীত আমার গলার স্বর বের হবে কেমন করে! এই পোড়া দেশে যাও একজন প্রিন্স পাওয়া গেল এখন দেখা যাচ্ছে আরেক কাহিনী!
দৈনিক জনকন্ঠ, প্রথম পৃষ্ঠায় এটা ছাপায় ২৪ মার্চ, ২০০১ সালে। ওখান থেকে খানিকটা এখানে তুলে দেই:
"ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট এলাকার মেয়ে কমলা ঘোষ। সবে বিয়ে হয়েছে তার। বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসে আটকা পড়ে যান কমলা! একদিন পাকিস্তানি মেজর কোরায়শী ও তিন জন সৈন্যসহ কমলাদের বাড়িতে আসে নুলা মুসা। এরপর যা হওয়ার তাই হয়, পাকিস্তানি সৈন্যরা চরম শারিরীক নির্যাতন করে কমলাকে।
...পরে কমলার স্বামী কমলাকে আর কখনই ঘরে ফিরিয়ে নেয়নি।
...ফরিদপুর শহরের মহিম স্কুলের সঙ্গে এক ধর্মশালা দেখাশোনা করতেন কেষ্টমন্ডল। কেষ্টমন্ডলের চার মেয়ে: ননী, বেলী, সোহাগী ও লতা। নুলা মুসার তত্ত্বাবধানে এই বেলী ও ননী মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় পাকিস্তানি সৈন্যদের মনোরঞ্জনে বাধ্য হয়েছিলেন। পরে এই চার বোন এবং তাদের মা-র ঠাঁই হয়েছিল ফরিদপুরের পতিতাপল্লীতে।
...কেবল ননী, বেলীই নয় পাকিস্তানি সেনাদের হাতে অর্ধশতাধিক বাঙালি মা-বোনের সন্ভ্রম লুটের প্রধান নায়ক এই নুলা মুসা।
এখন তার নাম ড. মুসা বিন শমশের হলেও সার্টিফিকেটের নাম এডিএম মুসা। কিন্তু একটা হাত খানিকটা বিকলাঙ্গ থাকায় তার ব্যাপক পরিচিতি ছিল, 'নুলা মুসা' হিসাবেই। নিজেকে ডক্টর বলে দাবী করলেও, ১৯৬৮ সালে ঈশান স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হয়েছিল মুসা। ১৯৮৬ সালে মুসার নামের আগে ডক্টর যুক্ত হলেও উচ্চ-মাধ্যমিক পাসের কোনো প্রমাণ মেলেনি কোথাও!
অভিযোগ আছে, একাত্তরের ২১ এপ্রিল পাকিস্তানি সৈন্যদের ফরিদপুরে ঢোকার ব্যাপারে মানচিত্র এবং পথনির্দেশনা দিয়ে সহযোগিতা করেছে এই মুসা। মেজর আকরাম কোরায়শীর সঙ্গে মুসার গভীর ঘনিষ্ঠতা ছিল! ফরিদপুরে পাকিস্তানি সৈন্য ঢোকার পরদিনই (একাত্তরের ২২ এপ্রিল) ফরিদপুর সার্কিট হাউজে মুসা এবং মেজর কোরায়শীকে খুবই অন্তরঙ্গ পরিবেশে দেখেন, মুক্তিযোদ্ধা একেএম আবু ইউসুফ সিদ্দিক পাখী।
একাত্তরে মুসা ছিল ফরিদপুরের এক মূর্তিমান আতঙ্ক। তার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহায়তায় পাকিস্তানি সেনারা অসংখ্য মানুষকে হত্যা, নারী নির্যাতন একং লুটতরাজ করেছে।
ফরিদপুরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ শহরের সমস্ত শহীদ মিনার মুসা পাকিস্তানি সেনাদের সহায়তায় ভেঙ্গে ফেলে!
মেজর কোরায়শীসহ অনেক পাকিস্তানি সেনা-সদস্যের অবাধ যাতায়াত ছিল মুসার বাড়িতে। মুসার পিতা তথাকথিত পীর শমসের মোল্লা পাকিস্তানি সেনাদের মনোবল বাড়াতে তাদের গায়ে ফুঁ দিত আর বলত, 'ইন্ডিয়া পাকিস্তান বন যায়েগা'।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ডিসেম্বরেই মুসা মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়ে ফরিদপুর থেকে পালিয়ে চলে যায় পাবনায়। সেখানে বড় ভাইয়ের শ্যালিকাকে বিয়ে করে ঢাকা-চট্টগ্রামে ছুটাছুটি করে। ঢাকার এক অবাঙ্গালিকে পাকিস্তানে পাঠাবার নাম করে তাঁর সহায়সম্পত্তি আত্মসাতের মাধ্যমে একপর্যায়ে ঢাকায় 'শাহবাজ ইন্টারন্যাশনাল' নামে আদম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলে। এরপর বিদেশে লোক পাঠাবার নাম করে উত্তরবঙ্গের কয়েকশ' লোকের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে উধাও হয়ে যায়। বছর তিনেক পর ঢাকায় ফিরে 'ড্যাটকো' নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে আবারও শুরু করে আদম ব্যবসা! এরশাদ আমলে শুরু হয় তার উত্থান। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি মুসাকে...।"
*দৈনিক জনকন্ঠে এই প্রতিবেদন ছাপাবার পর প্রতিবাদ দূরের কথা এই প্রতিবেদনটি তৈরীর সময় বারবার তার সঙ্গে যোগাযোগের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল এমনটাই দাবী এই পত্রিকার।
দৈনিক জনকন্ঠ, (প্রথম পৃষ্ঠা) ২৪ মার্চ, ২০০১ |
No comments:
Post a Comment