গতকাল খানিকটা
ঝামেলা হয়ে গেল। আমার বুকের বাম পাশে ব্যথা! লোকজনের
গ্যাস্ট্রিক-ফ্যাস্ট্রিকের কারণে এমন ব্যথা হরহামেশাই হয়ে থাকে- এটা নিয়ে গা করার তেমন কিছু থাকে না। কিন্তু আমি জানতাম এটা গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা না। কারণ নিজের উপর নিজেই আমি ক্ষেপে গেলে নিজেকেই শাস্তি দেই। শাস্তিপর্বটা মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। একটু আগেই সেই পর্বটা যখন সমাপ্ত হলো তখন আমি শ্বাস ফেলতে পারছিলাম
না। হার্ট বাবাজি বাদ্য বাজিয়ে কূল পাচ্ছিল
না। এমনিতে শরীরের উপর মাত্রাতিরিক্ত অত্যাচার হচ্ছিল তার উপর ওভার-টাইম করার কারণে ব্যাটা সম্ভবত ক্ষেপে গেল। এরপর থেকেই ব্যথাটা...।
যাই হোক, রামের যেমন সুমতি হয়েছিল আমারও তেমনি সুমতি হলো। আমি খানিকটা আঁচ করতে পারছিলাম বলেই একটা ইসিজি করালাম। এখানকার
হাসপাতালে গিয়ে, ভাল ইসিজি বোঝেন এমন একজন ডাক্তারকে
খুঁজে বের করলাম।
ডাক্তার সুমন নামের এই ডাক্তার
যখন মনোযোগ সহকারে আমার ইসিজিটা
পর্যবেক্ষণ করছিলেন
তখন সামনে বসা একজন মানুষ একের-পর-এক ছাপানো কাগজ ডাক্তারের
দিকে এগিয়ে দিচ্ছিলেন এবং তোতাপাখির মত কীসব বিড়বিড় করে অনবরত বকে যাচ্ছিলেন। আমার বুঝতে সমস্যা হয় না মানুষটা কোনো একটা ওষুধ কোম্পানির
প্রতিনিধি।
আমাদের দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো অনেক ডাক্তারদেরকে কি দেয় এই বেহুদা প্রশ্ন না-করে, কী দেয় না সেটা জিজ্ঞেস করলে ভাল হয়। নগদ টাকার সঙ্গে এমন কোনো জিনিস নেই যা ডাক্তার
সাহেবরা পান না। টিভি-ফ্রিজ-এসি এসব তো পুরনো। এবারের কোরবানির ঈদে জবাই এবং মাংস কাটাকাটির
জন্য ওষুধ কোম্পানিগুলো ছুঁরিও দিয়েছে! আমি জানি না ডাক্তার সাহেবদের
আন্ডারওয়্যারও ওষুধ কোম্পানিগুলো দেয় কি না? দিলে, ওষুধ কোম্পানিগুলো কেমন করে ডাক্তার সাহেবদের
সাইজ নির্ধিরণের
জটিল কাজটা সম্পন্ন
করে থাকে?
এরা কী পূর্বেই কোনো ফর্ম পূরণ করে? যেটায় লেখা থাকে, আপনার আন্ডারওয়্যারের সাইজ কতো? আচ্ছা, ওটায় কী ওষুধ কোম্পানির
লোগো-টোগো থাকে নাকি। আহা, থাকলে লাভ কী! ডাক্তার সাহেবের
ওই বিশেষ ভূষণ তো বিশেষ সময়ে, বিশেষ লোকজন ব্যতীত অন্য কেউ দেখতে পাচ্ছে না কারণ তিনি তো আর সুপারম্যান না যে প্যান্টের উপর আন্ডারওয়্যার পরবেন। আমরা আমরা দেখে পুলকিত হবো!
যাই হোক, আমি আমার বুকের ব্যথা উপেক্ষা করে শীতল গলায় ওই ওষুধ প্রতিনিধিকে বললাম, ‘আমি একটা জরুরি বিষয় নিয়ে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলছি, আমার কথা শেষ হোক এরপর আপনি আপনার এই সব হাবিজাবি
কথা বলবেন’।
আমার অপার সৌভাগ্য যে ওই প্রতিনিধি এবং ডাক্তার সাহেবও এটা নিয়ে উচ্চবাচ্য করেননি! করলে ঝামেলা হয়ে যেত কারণটা আমার অসুস্থতা।
তো, ডাক্তার
সাহেব ইসিজি দেখে যেটা বললেন, আমার হার্টের নীচের দিকে রক্ত প্রবাহিত
হতে সমস্যা হচ্ছে। একজন কার্ডিওলজিস্টকে দেখাবার জন্য।
হার্ট নিয়ে নাড়াচাড়া করেন এমন একজন মানুষকে ফোনে বিস্তারিত বলামাত্র
তিনি আমাকে বললেন, ‘আপনি অতি দ্রুত একটা ওষুধের দোকানে যান। নাইট্রোগ্লিসারিন জিহ্বার
নিচে দু-বার স্প্রে করে এরপর আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন তখন আমি আপনাকে আরও কিছু ওষুধের নাম বলব। আর আমি পৌঁছে আপনাকে দেখে ওষুধ দেব’।
এরপর যথারীতি
চিকিৎসা শুরু হয়ে গেল- ওষুধ চলার পাশাপাশি আমাকে দু-সপ্তাহ বেড-রেস্টও দেয়া হয়েছে যদিও বেডের সঙ্গে আমার যোগাযোগ তেমন বিশেষ হচ্ছে না। আরে, আমার যে হাবিজাবি কতো অকাজ! তবে সাবধানে
থাকছি কারণ এটা আমার বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা না যে হার্ট বাবাজি আমার জন্য একটা সংকেত দিয়েছে, পাগল, তোকে ছুঁয়ে দিলাম। শ্লা, তিনি ভারী একটা 'সংকেতবাজ'
হয়েছেন!
যাগ গে, লেখা প্রসঙ্গে এই সব চলে এলো। আমি যেটা বলতে চেয়েছিলাম, কারো-কারো কাছে আমরা কী কেবল একটা সংখ্যা, একটা গিনিপিগ? ডাক্তার
সুমনের কাছে আমি অশেষ কৃতজ্ঞ কারণ তাঁর পর্যবেক্ষণ
সঠিক ছিল, কিন্তু...। এই ইসিজিটা
পর্যবেক্ষণের সময় ডাক্তারের যে পূর্ণ মনোযোগ থাকা প্রয়োজন ছিল সেটায় ওষুধ কোম্পানির ওই প্রতিনিধি অনবরত ব্যঘাত ঘটিয়েই যাচ্ছিলেন-
এটা এরা হরহামেশাই করে থাকেন। যেটায় সায় আছে এই ডাক্তারের এবং এই হাসপাতালের প্রধানেরও।
অথচ মনোযোগের
কারণে ওই ডাক্তারের এই পর্যবেক্ষণ ভুল হলে আজ আমার এই লেখাটা লেখার কথা না। আমি লিখতাম না- কে জানে, তখন হয়তো কেউ-না-কেউ আমাকে নিয়ে শোকগাথা লিখতেন। লিখতেনই এটা বলছি না, হয়তো লিখতেন, আলী মাহমেদের জন্য এলিজি। তবে আমার সেটা আর পড়া হতো না, বেচারা আমি...!
*পোস্টের সঙ্গে এই ছবিটা বছর দুয়েক আগের। আমার মা
তখন যে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন সেই হাসপাতালের নীচের দৃশ্য এটা। এখানে যে সমস্ত মোটর সাইকেল দেখা যাচ্ছে (ছড়িয়ে-ছিটিয়ে
থাকায় সবগুলোকে একই ফ্রেমে আনা সম্ভব হয়নি!) প্রায় সবগুলোই ওষুধ কোম্পানি।যেন এক ঝাঁক কাক, আর এদের কাছে হাসপাতাল হচ্ছে একটা ভাগাড়...।
No comments:
Post a Comment