আজ স্টেশনে
দাঁড়িয়ে আছি। আমার প্যান্টে
টান পড়লে আমি ফিরে দেখি এই শিশুটিকে। তার সোজাসাপটা প্রশ্ন, ‘তোমার কাছে টেকা আছে’?
আমি বললাম, থাকলে!
সে একগাল হেসে বলে, ‘ভাত খামু’।
আমি বললাম, ‘তোমার নাম কি’?
তার ষ্পষ্ট উত্তর, ‘রাজু মস্তান’।
তার বলার ভঙ্গি নামের বিশেষত্ব
আমাকে চমকে দেয়। আমি হাসি লুকিয়ে বলি, ‘তুমি দেখি বিরাট মস্তান’!
তার উত্তর, ‘হ’।
আমি এইবার তাকে বললাম, ‘তোমার মা কই’?
সে একজন মহিলাকে দেখিয়ে বলে, ‘ওইডা আমার মা’।
সে যে মহিলাকে দেখিয়ে দিলো একে আমি চিনি। কারণ ওভারব্রিজের
নীচে একে প্রায়ই শুয়ে থাকতে দেখেছি। এর সঙ্গে কখনও কোনো শিশুকে দেখেছি বলে মনে করতে পারছি না।
যে মহিলা স্টেশনে ভাত বিক্রি করে একে জিজ্ঞেস
করলাম, ‘এটা কি ওই মহিলার ছেলে’?
তার কাছ থেকে যেটা জানা গেল। এই রাজুর গল্পটা সহজ-সরল না, অনেকখানি
আঁকাবাঁকা। রাজুর মার মাথা এলোমেলো ছিল। তার জন্মের শিশুটিকে
(এই মহিলার ভাষ্য অনুযায়ী) মেরে ফেলে এরপর রাজুকে ফেলে কোথায় চলে গেছে কেউ জানে না! এরপর থেকে রাজু এই মহিলার কাছে থাকে, এই মহিলাটিকেই 'মা' ডাকে।
আমি চুপ করে শুনে যাই। তিনি আরও কীসব বলছিলেন কিন্তু আমি মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম
না। কেবল আমার মাথায় ঘুরপাক খায়, রাজুকে এখন দেখভাল করছেন যে মহিলা তিনি নিজেই অসুস্থ! পূর্বেই
বলেছি, প্রায় সময় আমি তাঁকে দেখেছি ওভারব্রিজের নীচে শুয়ে থাকতে। কখনও জিজ্ঞেস করা হয়নি তাঁর দিন চলে কেমন করে? অথচ কী অবলীলায়
এই শিশুটিকে
তিনি কোলে তুলে নিয়েছেন।
আমার মত ‘ভদ্দরনোকের’ ভাবাভাবি করেই দিন পার হয়- এঁর এতো ভাবার সময় কোথায়!…
No comments:
Post a Comment