এর নাম বাবুল। চট করে যেটা চোখে পড়বে যে এর একটা পা নেই। কিন্তু একটু ভাল করে লক্ষ করলে বোঝা যাবে অন্য পা-তেও কেবল একটাই আঙ্গুল, বুড়ো আঙ্গুল।
এর সম্বন্ধে আমি বিশেষ কিছু জানি না- আসলে জানতে ইচ্ছা করেনি। আমি তো আর দুঁদে সাংবাদিক না যে কারো কাতর মুখে বুম ধরে বলব, আপুনি এখন কেমন বোধ করিতেছেন? কেবল লক্ষ করেছি, এ
একা। এর সঙ্গে কেউ নেই!
কেন আমার জানতে ইচ্ছা করেনি? কারণ এই শিশুটির এই সমস্ত বিষয়ে কথা বলতে বিশেষ আগ্রহ নেই। আমি খানিকটা আঁচ করতে পারি এর ভুবনটা পুরোটাই এলোমেলো হয়ে আছে। যেখানে কেবল অন্ধকার, নিকষ অন্ধকার! আর অতীতে সম্ভবত একে অসংখ্যবার এই সমস্ত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে, ক্যামনে হইল, বাড়ি কই, থাহোস কই, বাড়িতে কে কে আছে, এইসব?
বাবুলকে আমি দেখেছি হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেরা করতে। আমি কেবল জানতে চেয়েছিলাম, ক্রাচ বললে বুঝবে না তাই বলেছিলাম, ‘ভর দেওন্না লাঠি দিলে হাঁটতে পারবা’?
বাবুল গা দুলিয়ে বলে, ‘হ’।
আমি খানিকটা বিপাকে পড়ি কারণ আমার কাছে যে ক্রাচ আছে সেগুলো প্রমাণ সাইজের, এর হবে না। এর ক্রাচ বানাতে হবে এর সাইজের। এটা অবশ্য খুব বড়ো কোনো সমস্যা না। কোনো কাঠমিস্ত্রিকে বললে অল্প টাকায় এর মাপে একটা কাঠের ক্রাচ বানিয়ে দেবে।
আমি আমার অল্প জ্ঞান নিয়ে এই শিশুটির মনঃসমীক্ষণ বোঝার চেষ্টা করছিলাম। ব্যর্থ চেষ্টা- এই নিতল কুয়ায় দেখার ক্ষমতা আমার নাই। আমি কেবল ভাবার চেষ্টা করছিলাম, বাবুলের কাছে জীবনটা কেমন?
আমাদেরটা জীবন তো বোঝা খানিকটা সহজ। আমাদের জীবনকে দেখার প্রয়াস একেক জনের কাছে একেক রকম। আমরা কেউ নেশায় বুঁদ হয়ে জীবনকে বোঝার চেষ্টা করি তো কেউ কাজে ডুবে যাই। অবশ্য আমার মত সামান্য মানুষ দিশামিশা না-পেয়ে ‘ছাতাফাতা’ লেখালেখির চেষ্টা করে।
তো...। বাবুলের কাছে জীবন মানে কি ডিম দিয়ে একবেলা সাদা-সাদা ভাত খাওয়া? বা একটা ক্রাচ পেলে খানিকটা আরাম করে হাঁটা?
পূর্বে কোথাও লিখেছিলাম, “জীবনকে দেখতে হবে কোনো মৃত্যুপথযাত্রীর চোখ দিয়ে”। তখন চকচকে একটা পাতা দেখেও মনে হবে, আহ, জীবন! আজ এর সঙ্গে খানিকটা যোগ করি, আসলে জীবনকে দেখতে হবে বাবুলের চোখ দিয়ে...।
No comments:
Post a Comment