Search

Wednesday, February 12, 2014

জীবন, তোকে চাবকে দিলাম



আহ জীবন লেখাটায় লিখেছিলাম [১], এই শিশুটির কাছে জীবনটা কেমন? আজ খানিকটা বুঝতে পারি। এই প্রসঙ্গে পরে আসছি।
প্রথমেই একটা তথ্যগত ভুলের বিষয়ে বলে নেই। এর নাম বাবুল না, হাবিব। আমার দুর্বল স্মৃতিশক্তি বা এ ভুল নাম বলেছিল- কোনোটাই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ একে নামটা জিজ্ঞেস করার পর উত্তর দিতে অনাবশ্যক দেরি করেছিল। যেন নামে কী আসে যায়- এর নিজের নাম বলতেও ভারী আলস্য। কেমন করে হাবিব নামটা জানলাম সেটা বলি।
 এর একটা ক্রাচের ব্যবস্থা হলো যা হোক। দুয়েক বার উল্টে পড়ল কিন্তু অনেকক্ষণ এদিক-ওদিক হাঁটাহাঁটি করে বেশ রপ্ত করে ফেলল। আমি পূর্বেই লক্ষ করেছিলাম এ গা খুব নোংরা। এর সঙ্গে আমাকে কথা বলতে হয় খুব সাবধানে কারণটা পূর্বেই বলেছি, এর ভুবনটা হয়ে আছে এলোমেলো।
আমি উদাস হয়ে বললাম, আচ্ছা, গোসল করলে কেমন হয়?
এ বলল, তুমি করবা?
এ আমাকে অবলীলায় তুমি-তুমি করে বলে। কোনো জড়তা নেই, আড়াল হয়ে থাকে নিখাদ তীব্র দাবী।
আমি আরও উদাস হয়ে বলি, নাহ, আমি না তুমি করবা
এ বলল, কেমনে করব? পা নাই, পুকুরে তো ডুইবা যাব
এ সুযোগ হারাতে দেওয়া যায় না। আমি হড়বড় করে বললাম, আরে নাহ, পুকুরে না। স্টেশনে গোসল করার জায়গা আছে
এ নিজে নিজেই গোসল করে। নিজের কাপড় কাচে।

স্টেশনে ভাত বিক্রি করে এমন একজন মহিলার কাছে একে রেখে চলে আসতে হলো কারণ সায়েরা বেগম [২] কী কারণে জানি অনেক দূর থেকে চলে আসছেন, আমার সঙ্গে তাঁর নাকি কি এক কাজ আছে।
একটু পরেই দেখি দুজন খেটেখাওয়া সহৃদয় মানুষ ধরাধরি করে এই শিশুটিকে নিয়ে আসছেন। দরদর করে এর মাথা থেকে রক্ত পড়ছে। ঘটনাটা জানা গেল। এ খেতে বসেছিল। অসতর্ক এর হাতধোয়া পানির সামান্য ছিটা নাসির নামের একজন মানুষের গায়ে পড়েছিল। এই সামান্য কারণে ওই আজিজ নামের মানুষটা এই শিশুটির মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। আমি জীবনে এমন হতভম্ব কমই হয়েছি। এতো সামান্য কারণে, এর মতো একটা শিশুর মাথা ফাটিয়ে ফেলতে পারে পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষ!

যাই হোক, একে ধরাধরি করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলো। সেলাই দেওয়া প্রয়োজন হলো। তখন কাগজে নাম লেখার প্রয়োজন হলে, নামটা জানা গেল, হাবিব।
পরে নাসির নামের ওই অমানুষটাকে তন্নতন্ন করে খোঁজা হলো। কিন্তু ওই শুয়োরের বাচ্চা উধাও হয়ে গেছে। জিআরপি ওসি আমাকে কথা দিয়েছেন, ওই হারাজাদাকে দেখামাত্র ধরে আইনের আওতায় নেওয়া হবে।
বিকেলে যখন হাবিবের সঙ্গে দেখা হলো তখন এর মাথার ব্যান্ডেজটা মনে হচ্ছিল যেন এটাও তার শরীরের একটা অংশ! শেষ যে ছবিটা এখানে আমি যোগ করছি এটা দেখে আমার কেবল মনে হচ্ছিল, সুমনের পাগলটা সাপ-লুডু খেলে বিধাতার সঙ্গে তবে হাবিব সাপ-লুডু খেলে কিনা জানি না; কেবল এটা জানি, হাবিবের কাছে জীবনটা হচ্ছে নস্যি-তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া। অনেকটা কাপড় কাচা বা বাতিল পুতুলের মত...।
...
চার দিনের মাথায় নাসিরকে ধরা হয়েছে। কখনও-কখনও জঙ্গলে চলে জঙ্গলের আইন...
এই সেই কুখ্যাত নাসির
সহায়ক সূত্র:
১. আহ, জীবন: http://www.ali-mahmed.com/2014/02/blog-post_11.html
২. সায়েরা বেগম: http://www.ali-mahmed.com/2013/12/blog-post_16.html

No comments: