সায়েরা বেগমকে [১] নিয়ে
লেখার পর মমতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন কেউ কেউ। এঁদের মধ্যে একজন ভদ্রমহিলাও আছেন
বিধায় তাঁর নাম প্রকাশে অনুমতির একটা বিষয় জরুরি হয়ে পড়ে। অনুমতি চাওয়ার পর তিনি সাফ না করে দেন।
নাম প্রকাশে তিনি ইচ্ছুক নন।
Muquit Mohammad-এর কাছে আর অনুমতি
চাওয়ার চেষ্টা করিনি কারণ আমি নিশ্চিত ছিলাম তিনিও একই পথে হাঁটবেন। তাই Muquit Mohammad-এর
অনুমতির আর তোয়াক্কা করিনি। বেচারা সাগর পারে বসে দাঁতে দাঁত ঘষবেন। এই নিয়ে আমি
কাতর না কারণ তিনি তো নিজের দাঁতই ঘষবেন- খুলে আসলে
তাঁরটা খুলে আসবে, আমার সমস্যা কোথায়!
সায়েরা বেগমের অপারেশনের
পূর্বে এবং পরে যে টাকার প্রয়োজন হবে সেটার পুরোটার ব্যবস্থা হয়নি বলে আমি
অনেকখানি চিন্তিত ছিলাম। যা হোক একটা ব্যবস্থা হবে, হবেই এই দুর্দান্ত আস্থাটা ছিল
বলেই আমি এবং Dulal Ghose তাঁকে নিয়ে জেলা সদর
হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। আমি আর দুলালকে
এটা বলিনি যে পুরো টাকার ব্যবস্থা হয়নি।
সম্ভবত এরা দুলালের কাছে এই
সম্বন্ধে শুনে থাকবে। পৌঁছার পর একে একে এই বান্দারা হাজির হয় লিমন ভূঁইয়া, রুবেল,
সাহাদাত হোসেন। এরা মুঠ করে আমাকে টাকা এগিয়ে
দেয়। আমি গুণে দেখার প্রয়োজন বোধ করি না কারণ এই
স্বপ্নযাত্রায় আসলে টাকার অংকটা মূখ্য না, মমতা, একগাদা মমতাই কেবল, আর কিছু না।
এক পলকে আমি এটাও লক্ষ করি
এরা যে টাকাটা আমাকে দিয়েছে এর মধ্যে অনেক খুচরো টাকাও আছে। আমি অনুমান করার
চেষ্টা করি এই পাগলাগুলো কেমন কেমন করে টাকাগুলো
যোগাড় করেছে।
এই ছেলেগুলোর সঙ্গে আমার এই
প্রথম দেখা। এক ফাঁকে আমি লক্ষ করি লিমন দুলালের কানে কীসব যেন বলছে। আমি খানিকটা চিন্তায়
পড়ে যাই, কী কথা তাহাদের মধ্যে? Limon Bhuiyan দুলালকে কী বলছে? আমার কান বড়ো বড়ো, এটা?
অজান্তেই আমার হাত নিজের কানে চলে যায়।
আমি এবার রাশভারী গলায়
দুলালকে বলি, ‘ঘটনা কি’?
দুলাল একগাল হেসে বলে, ‘ঘটনা অন্য কিছু না। লিমন বলছে, ওর রক্তের গ্রুপ এ-পজেটিভ, সায়েরা বেগমের রক্তের প্রয়োজন হলে, গ্রুপ মিললে ও রক্ত দেবে।
দুলাল একগাল হেসে বলে, ‘ঘটনা অন্য কিছু না। লিমন বলছে, ওর রক্তের গ্রুপ এ-পজেটিভ, সায়েরা বেগমের রক্তের প্রয়োজন হলে, গ্রুপ মিললে ও রক্ত দেবে।
আমি ভেজা চোখ আড়াল করে অন্য
দিকে তাকিয়ে বলি, ‘এহ-হ, বললেই
হলো, মামাবাড়ির আবদার নাকি! আমার এবি-পজেটিভ, দেখবা ঠিক ঠিক আমারটা ম্যাচ করবে’।
আমার চেয়ে হয়তো লিমনের
আবেগটা বেশি তাই সায়েরা বেগমের সঙ্গে তার রক্তের গ্রুপ ম্যাচ করে। এখানে এসে
অনায়াসে লিমন আমাকে হারিয়ে দেয়। কিছু-কিছু পরাজয়েও বড়ো সুখ।
যে গাইনি ডা. ফাউজিয়ার কাছে
সায়েরা বেগমকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল প্রথম দিকে তিনি খুব
একটা সহযোগিতা করছিলেন না। দুলালের মুখ ক্রমশ লম্বা
হয়, অন্ধকারে ছেয়ে যায়! আমি এবার ডা. ফাউজিয়াকে বললাম, ‘আপনি সম্ভবত সায়েরা খাতুনের সম্বন্ধে শুনে থাকবেন, তিনি এই-এই-এই...’।
এবার ডা. ফাউজিয়া ঝলমলে
মুখে বললেন, ‘আরে বলেন কী, চিনি তো খুব
ভাল করে চিনি। আমি এঁর অপারেশন নিজে করব। এ তো আমার জন্য গর্বের’।
আমি আটকে রাখা শ্বাস ফেলি,
যাক, একটা গতি হলো। দুলালের মুখের আধার ক্রমশ কেটে গেল।
এখন থেকে বেরিয়ে আমার
নির্ভার লাগছিল। এই ছেলেগুলো আলগোছে সব দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে। এরা ডানে গেলে আমিও
ডানে যাই, বাঁয়ে গেলে বাঁয়ে। উপর-নীচে গেলে আমি কেবল অনুসরণ করি মাত্র। আসলে এরপর
আর আমার করার কিছুই থাকে না। সায়েরা বেগমের একগাদা টেস্ট করানো হলো, কিছু টেস্ট
ঢাকা থেকে করিয়ে আনতে হবে। অপারেশন হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
এই স্বপ্নযাত্রা একটা লম্বা দৌড়- এখানে থামাথামির কোনো স্থান নেই। এখানে
ব্যাটন বদল হয় কেবল...।
No comments:
Post a Comment