রেলপুলিশ এক নায়ককে নিয়ে লিখেছিলাম [১]। যথারীতি নায়কের পাশাপাশি হাত ধরাধরি করে চলে আসে খল নায়কের কথা।
মোস্তফা নামের যে মানুষটার কথা বলেছিলাম ওই মানুষটার দুর্গতির
জন্যও দায়ী অন্য এক রেলপুলিশ।
ঘটনার আদ্যপ্রান্ত মোস্তফার মুখে পরে
শুনেছিলাম। আমার ধারণা ছিল মোস্তফা নামের মানুষটার সেরে উঠতে অন্তত দু-তিন
দিন সময় লাগবে অথচ আজ সকালেই এই মানুষটা হাসপাতাল থেকে আমার বাসায় এসে হাজির।
খেটেখাওয়া শক্তপোক্ত মানুষ বলে কথা!
মোস্তফা আমাকে যেটা বললেন: টিকেট না-পেয়ে ট্রেনের ছাদে যাত্রা
করছিলেন এ সত্য কিন্তু মাগনা না, রেলের লোকজনকে
টাকা দিয়ে। গাড়ি এখানে থামামাত্র কোনও এক রেলপুলিশ স্টেশনে খেলতে থাকা ডাঙ্গর
ছেলেপেলেদেরকে বলে, ট্রেনের ছাদের লোকজনকে নামাতে। ছেলেরা মহা উসাহে
ক্রিকেটস্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে লোকজনকে নামায়। এদের কাছ থেকে কিছু টাকাও হাতিয়ে
নেয়।
এমন সময় মোস্তফার ফোন বেজে উঠে। সঙ্গে সঙ্গে ওই রেলপুলিশ
অশ্রাব্য গালি দিয়ে ওই ছেলেদেরকে বলে, একে ধর, এর কাছে টাকাপয়সা পাওয়া যাবে।
ছেলেরা স্ট্যাম্প দিয়ে মোস্তফাকে পেটাতে থাকে। ছিনিয়ে নেয় মোবাইল ফোন। যেটা ওই
পুলিশকে হস্তান্তর করে। এক পর্যায়ে মোস্তফাকে পেটাতে পেটাতে
ট্রেনের ছাদ থেকে ফেলে দেয়। নীচে পড়ে যাওয়ার পরও এরা স্ট্যাম্প দিয়ে নির্দয়
ভাবে মোস্তফাকে পেটাতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত না মোস্তফা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। জ্ঞান
হারিয়ে ফেলার পর মোস্তফার কাছে থাকা ১৭০০ টাকাও এরা ছিনিয়ে নেয়।
বলি। পূর্বের লেখায় আমি অনুমান করে লিখেছিলাম, “একটা মানুষ তো কেবল
একটা সংখ্যা না- একজন মানুষের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে পরিবার নামের অনেকগুলো
মানুষ। নথ-নাড়া গ্রাম্য
বধু, ছোট্ট-ছোট্ট রেশমি
চুড়ি পরা বালিকা, দুরন্ত বালক, খকখক করে কাশতে থাকা বুড়া-বুড়ি নামের বাবা-মা”।
বাস্তবেও মোস্তফার বউ, এক ছেলে, এক মেয়ে, আর বাবা-মা। ঝিনাইদহে
কাজের বড়ো অভাব তাই অনেকের সঙ্গে লাঙ্গলকোটে গিয়ে দিনমজুরের কাজ করেন। একা যাত্রা
করার কারণ হচ্ছে বাড়িতে অসুখ শুনে গিয়েছিলেন- এরপর ফিরছিলেন। এরপরওই এই ঘটনা।
যাই হোক, এই সব তো গেল অন্ধকারের কথা। আলোর
কথাটাই বলি। বিকালে যখন মানুষটা পৌঁছে ফোন দেন, ‘আমি
ঠিকঠাক তো পৌঁছে গেছি’, তখন আমি বিড়বিড় করি, ঘরের ছেলে...।
*বিষয়টা প্রাসঙ্গিক বলে খানিকটা শেয়ার করি। মোস্তফা ফিরে
যাওয়ার পর ঘন্টায়-ঘন্টায় আমাকে ফোন করছেন। বারবার এটাও বলছেন, ‘আপনারে
বিরক্ত করতাছি...’।
এই লেখাটা যখন লিখছি তখনও ফোন, ‘ভাইজান, ভাত খাইছেন...’।
অনেক দিন এমন মায়া করে কেউ বলে না! আমি অতি সাধারণ মানুষ বলেই স্বল্প শিক্ষিত এই
মানুষটার আবেগ আমাকে স্পর্শ করে।
অথচ কামরুজ্জামান লিটন
নামের এই মানুষটার কথা আমি ভুলে গিয়েছি সেই কবেই [২]। আজ আবারও
মনে পড়ল। অন্য ভঙ্গিতে মোস্তফা মনে করিয়ে দিলেন। অতি শিক্ষিত কামরুজ্জামান লিটন নামের মানুষটা ফিরে গিয়ে আমার সঙ্গে
আর কখনই যোগাযোগ করেননি, আজও না।
২. http://www.ali-mahmed.com/2011/08/blog-post_26.html
1 comment:
আমি কিন্তু সবসময়ই আপনার সাথে যোগাযোগের চেস্টা করি।আমি যখন আর্থিকভাবে স্বাধীন হবো তখন আশা করি আপনার মত দুই একটা জনকল্যাণমূলক কাজ করতে পারবো
Post a Comment