প্রথম আলো নতুন একটা ডিম্ব প্রসব করেছে। আমি তাদের প্রসব বেদনার সীমাহীন কষ্টের প্রতি পূর্ণ মায়া প্রকাশ করছি। আহা, কী কষ্টই না হয়েছে এতোটা কাল পর এমন অতিকায় এক ডিম্ব প্রসব করতে। আহারে-আহারে!
প্রথম আলোর 'প্রথমা' নামের প্রকাশনায় গ্রন্থ বের করার নাম করে প্রথম আলোর ইনকিউবিটরে বসে-বসে যিনি নিরলস তা দিলেন তার নাম হচ্ছে মহিউদ্দিন আহমদ। তিনি আবার লেখক ও গবেষকও বটে। প্রসবের পূর্বেই যেমন আল্ট্রাসাউন্ডে ভ্রুণের একটা অবয়ব আমরা দেখে ফেলি তেমনি এই গ্রন্থ প্রকাশ হওয়ার পূর্বেই প্রথম আলোর ঈদ সংখ্যায় অবয়বটা-র একটা আকৃতি আমরা পেয়ে গেছি। এটা আবার কিছু পত্রিকা, ওয়েব পোর্টাল ফলাও করে রসিয়ে-রসিয়ে ছাপিয়েছেও।
লেখার কিছু অংশ এমন:
"...১৭ই আগস্ট সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নঈম জাহাঙ্গীর নারায়ণগঞ্জে তাহেরের বাসায় যান পরিস্থিতি সম্পর্কে আঁচ করতে। ১৯৭১ সালে নঈম ১১ নম্বর সেক্টরে তাহেরের সহযোদ্ধা ছিলেন এবং প্রায়ই তার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতেন। তাহের আক্ষেপ করে নঈমকে বললেন, ওরা বড় রকমের একটা ভুল করেছে। শেখ মুজিবকে কবর দিতে অ্যালাও করা ঠিক হয়নি। এখন তো সেখানে মাজার হবে। উচিত ছিল লাশটা বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেওয়া।..."
তাহেরকে নিয়ে ভালমন্দ যতটুকু পড়েছি কিন্তু কোথাও এমন বয়ান পাইনি। এখন জানতে পারছি কোথাকার কোন-এক নঈমকে নাকি তাহের চিবিয়ে চিবেয়ে এটা বলেছিলেন! এটা এখন প্রথম আলো গং বিস্তর গবেষণা করে ডিপ-ফ্রিজ থেকে বের করেছে।
এমন একটা অতি স্পর্শকাতর লেখা লিখে প্রথম আলো আবার জাঁক করে লিখেছে, 'স্থানাভাবে তথসূত্র দেওয়া হলো না'। মরদুদ বলে কথা!
'সশস্ত্র বাহিনীতে গণহত্যা' এই গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়:
"...২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে তাহের পাকিস্তানের কোয়েটার স্কুল অব ইনফ্রেন্ট্রি এন্ড টেকটিক্স-এ সিনিয়র টেকনিকেল কোরে অংশ নিচ্ছিলেন। ২৬ মার্চ সামরিক অফিসার ক্লাবে একজন পাঞ্জাবি অফিসার শেখ মুজিব সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করায় তাহের এর তীব্র প্রতিবাদ করলে তাকে বন্দি করা হয়।..."
তাহের এমনই ছিলেন। কাউকে ছেড়ে কথা বলতেন না। এ সত্য, পরবর্তীতে কারও প্রতি তাঁর মনোভাব পরিবর্তন হতেই পারে কিন্তু তাহেরের মত মানুষ এমন মন্তব্য করবেন এটা অকল্পনীয়! তাঁর চরিত্রে সঙ্গে এটা মিশ খায় না।
যদিও প্রেক্ষাপট ভিন্ন... (সিপাহী বিপ্লবের মামলায় এক বছর সশ্রম কারাভোগী) হাবিলদার মেজর আবদুল হাই মজুমদার (অব.) আনোয়ার কবীরের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন,
"...কর্নেল তাহেরসহ আমিও যখন ঢুকলাম (রেডিও স্টেশনে) তখন খন্দকার মোশতাক আহমদ তাহেরকে দেখে বসা থেকে দাঁড়িযে গেলেন। কর্নেল তাহের প্রশ্ন করলেন- কী লেখা হচ্ছে? আপনাকে এখানে কে আসতে দিল? আপনি কেন এসেছেন এখানে?
খন্দকার মোশতাক বললেন- আমাকে সৈনিকেরা নিয়ে এসেছে।
...কর্নেল তাহের বললেন, ইউ আর গেট আউট।"
প্রথম আলো প্রডাকশন হাউজ থেকে দুম করে মহিউদ্দিন আহমদ নঈম জাহাঙ্গীরের বয়ানে যে ফিকশন প্রসব করে মরদামি দেখিয়েছে এর পেছনে সুদূরবর্তী কেরামতি আছে এতে অন্তত আমার কোনও সন্দেহ নেই।
এই নিয়ে অবশ্য আমার কোনও দ্বিমত নাই যে মানুষটা যেহেতু আকাশলোকের বাসিন্দা ছিলেন না তাই কর্নেল তাহেরের ভাবনা, মতাদর্শ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হতেই পারে এতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু এরা তিন মরদুদ মিলে যে কাজটা করেছে সেটা হচ্ছে এই প্রজন্মের কাছে ইচ্ছাকৃতভাবে তাহেরের মত অগ্নিপুরুষকে খাটো করার অপচেষ্টা।
তিন মরদুদের পোকায় কিলবিল করা গলিত শবের পাশে দাঁড়িয়ে আমি বিড়বিড় করি, 'মার গিয়া মরদুদ, না ফাতেহা না দরুদ'!
*তাহেরকে নিয়ে কিছু লেখা: https://www.facebook.com/723002334/posts/10151527427692335
No comments:
Post a Comment