স্টেশনে শারীরিক অসুবিধাসম্পন্ন এই শিশুটিকে পূর্বে কখনও দেখেছিলাম সম্ভবত, খুব ভাল খেয়াল নেই! এর সঙ্গের লোকজন চিকিৎসার নাম করে টাকাপয়সা উঠাতো। চিকিৎসার নাম করে টাকাপয়সা উঠিয়ে কারও-কারও রুজিরোজগার মন্দ হয় না।
সোজা কথায় শিশুটি একটি পণ্য, লাভজনক পণ্য। সবই পণ্য, বিক্রির জন্য।
আজ একে দেখলাম প্ল্যাটফর্মে পড়ে আছে, গায়ে একটা সুতোও নেই। ভাতবিক্রেতা মহিলাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানালেন এই শিশুটির বাবা একে ফেলে গেছে, উধাও! স্টেশনেরই একজন রোগা-রোগা কালোমতন মহিলা নাকি একে গোসল করিয়েছেন, ভাত খাইয়েছেন। আমার বিস্ময়ের শেষ নেই কারণ এই মহিলাকে আমি প্রায়ই দেখি, এর তো নিজেরই থাকা-খাওয়ার ঠিকঠিকানা নেই। অথচ এই মানুষটাই শিশুটির দায়িত্ব নিয়েছেন এটা সমস্ত অংক এলোমেলো করে দেয়। এই মহিলা আমাকে বারবার এটা বলতে লাগলেন এর দায়িত্ব নিয়ে তিনি না কোনো প্রকারের ঝামেলায় পড়েন।
স্টেশনে তখন আমি একজন দায়িত্বশীল মানুষের দেখা পেয়ে গেলাম। রেলওয়ের গোয়েন্দা কর্মকর্তা। মানুষটা অন্য একজনের সঙ্গে দাঁড়িয়ে যেখানটায় চা খাচ্ছেন, এই শিশুটির কাছ থেকে সামান্যই দূরে। আমি তাকে বললাম একটু এসে এই শিশুটিকে দেখে যেতে। বিস্তর চাপাচাপি করেও এই ভদ্রলোকটার (!) পা ফাঁক করানো গেল না! যদি শিশুটিকে দেখে ফেললে বাড়তি কোনও দায়িত্ব চাপে, তাই। আমাকে পরামর্শ দিলেন জিআরপি ওসির কাছে লিখিত আকারে জানাতে। এই বিষয়ে আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা বড়ই তিক্ত। একবার ও-রাস্তা মাড়ালে জীবনটা ভাজা-ভাজা হয়ে যাবে। এমন সব প্রশ্ন করা হবে যেটা আমি তো দূরের কথা শিশুটির বাপও জানে কিনা সন্দেহ।
এই গোয়েন্দাপ্রবরকে দেখে কেবল এই ভাবনাটাই কাজ করছিল রেলওয়ে এদের পোষে কোন কাজে? এরপর আমি অন্য রাস্তা ধরলাম। সেই রাস্তার অলিগলির খোঁজ দিতে চাই না, ‘অসুবিদা’ আছে।
এই সমস্যা সমাধানের পর চটজলদি এই শিশুটির জন্য কিছু গরম কাপড়-টাপড়ের প্রয়োজন দেখা দিল। এহ রে, খানিক ঝামেলা হয়ে গেল। মাসের শেষ, টানাটানি চলছে। উপায় একটা বের হয়, কাজ তো থেমে থাকে না। নাদুসনুদুস একজনকে গড়িয়ে গড়িয়ে আসতে দেখে স্বস্তির শ্বাস ফেললাম। এই মানুষটার সঙ্গে আমার হৃদ্যতা আছে এবং পূর্বের কিছু ঘটনাও আছে, সে অন্য প্রসঙ্গ।
আমি ঝলমলে মুখে বললাম, ‘আরে-আরে, কি খবর- আমি তো আপনাকেই খুঁজছি’। মানুষটা মুখ একহাত লম্বা করে কষ্টার্জিত হাসি হাসলেন কারণ তিনি এটা বিলক্ষণ জানেন তাকে খোঁজাখুঁজি করার পেছনে আমার কোনও-না-কোনও একটা ঝামেলা জড়িয়ে আছে। আমি আবারও বললাম, ‘আরে-আরে, কী কান্ড, আপনার স্বাস্থ্য যেহারে বাড়ছে...’।
তিনি আমাকে কথা শেষ করতে দিলেন না হাত তুলে থামিয়ে বিরস মুখে বললেন, ‘ব্যস-ব্যস, আর বলতে হবে না। রাস্তাঘাটে চলতে গিয়ে চট করে সরতে পরব না, কোনও একটা গাড়ি চাপা দিয়ে চলে যাবে, এইসব তো। তা আপনার কত টাকা দরকার’?
আমি বিষম চিন্তায় পড়ে গেলাম। জনে-জনে লোকজন যেভাবে আমার চাল বুঝে ফেলছে এ তো বিরাট সমস্যা,ভবিষ্যৎ অন্ধকার! যাই হোক, মানুষটার কল্যাণে এই শিশুটির জন্য কম্বল, গরম কাপড়ের ব্যবস্থা হয়। স্টেশনে যে মহিলা ভাত বিক্রি করেন তাকে বলে নিয়মিত ভাত খাওয়ার একটা ব্যবস্থাও হলো। ফিরে আসতে আসতে আমার মাথায় যেটা ঘুরপাক খাচ্ছিল সব মিলিয়ে নড়বড়ে একটা ব্যবস্থা হলো বটে কিন্তু এটা তো কোনও স্থায়ী সমাধান না। আর এই মহিলাটির কথাও ঘুরে ঘুরে আসে, তার এই মমতার উৎস কী?
এই মহিলার সঙ্গে কখনও বাচ্চাকাচ্চা দেখিনি-তবে কী অদেখা সন্তানের মায়া ঝপ করে নেমে আসে!।
সোজা কথায় শিশুটি একটি পণ্য, লাভজনক পণ্য। সবই পণ্য, বিক্রির জন্য।
আজ একে দেখলাম প্ল্যাটফর্মে পড়ে আছে, গায়ে একটা সুতোও নেই। ভাতবিক্রেতা মহিলাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানালেন এই শিশুটির বাবা একে ফেলে গেছে, উধাও! স্টেশনেরই একজন রোগা-রোগা কালোমতন মহিলা নাকি একে গোসল করিয়েছেন, ভাত খাইয়েছেন। আমার বিস্ময়ের শেষ নেই কারণ এই মহিলাকে আমি প্রায়ই দেখি, এর তো নিজেরই থাকা-খাওয়ার ঠিকঠিকানা নেই। অথচ এই মানুষটাই শিশুটির দায়িত্ব নিয়েছেন এটা সমস্ত অংক এলোমেলো করে দেয়। এই মহিলা আমাকে বারবার এটা বলতে লাগলেন এর দায়িত্ব নিয়ে তিনি না কোনো প্রকারের ঝামেলায় পড়েন।
স্টেশনে তখন আমি একজন দায়িত্বশীল মানুষের দেখা পেয়ে গেলাম। রেলওয়ের গোয়েন্দা কর্মকর্তা। মানুষটা অন্য একজনের সঙ্গে দাঁড়িয়ে যেখানটায় চা খাচ্ছেন, এই শিশুটির কাছ থেকে সামান্যই দূরে। আমি তাকে বললাম একটু এসে এই শিশুটিকে দেখে যেতে। বিস্তর চাপাচাপি করেও এই ভদ্রলোকটার (!) পা ফাঁক করানো গেল না! যদি শিশুটিকে দেখে ফেললে বাড়তি কোনও দায়িত্ব চাপে, তাই। আমাকে পরামর্শ দিলেন জিআরপি ওসির কাছে লিখিত আকারে জানাতে। এই বিষয়ে আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা বড়ই তিক্ত। একবার ও-রাস্তা মাড়ালে জীবনটা ভাজা-ভাজা হয়ে যাবে। এমন সব প্রশ্ন করা হবে যেটা আমি তো দূরের কথা শিশুটির বাপও জানে কিনা সন্দেহ।
এই গোয়েন্দাপ্রবরকে দেখে কেবল এই ভাবনাটাই কাজ করছিল রেলওয়ে এদের পোষে কোন কাজে? এরপর আমি অন্য রাস্তা ধরলাম। সেই রাস্তার অলিগলির খোঁজ দিতে চাই না, ‘অসুবিদা’ আছে।
এই সমস্যা সমাধানের পর চটজলদি এই শিশুটির জন্য কিছু গরম কাপড়-টাপড়ের প্রয়োজন দেখা দিল। এহ রে, খানিক ঝামেলা হয়ে গেল। মাসের শেষ, টানাটানি চলছে। উপায় একটা বের হয়, কাজ তো থেমে থাকে না। নাদুসনুদুস একজনকে গড়িয়ে গড়িয়ে আসতে দেখে স্বস্তির শ্বাস ফেললাম। এই মানুষটার সঙ্গে আমার হৃদ্যতা আছে এবং পূর্বের কিছু ঘটনাও আছে, সে অন্য প্রসঙ্গ।
আমি ঝলমলে মুখে বললাম, ‘আরে-আরে, কি খবর- আমি তো আপনাকেই খুঁজছি’। মানুষটা মুখ একহাত লম্বা করে কষ্টার্জিত হাসি হাসলেন কারণ তিনি এটা বিলক্ষণ জানেন তাকে খোঁজাখুঁজি করার পেছনে আমার কোনও-না-কোনও একটা ঝামেলা জড়িয়ে আছে। আমি আবারও বললাম, ‘আরে-আরে, কী কান্ড, আপনার স্বাস্থ্য যেহারে বাড়ছে...’।
তিনি আমাকে কথা শেষ করতে দিলেন না হাত তুলে থামিয়ে বিরস মুখে বললেন, ‘ব্যস-ব্যস, আর বলতে হবে না। রাস্তাঘাটে চলতে গিয়ে চট করে সরতে পরব না, কোনও একটা গাড়ি চাপা দিয়ে চলে যাবে, এইসব তো। তা আপনার কত টাকা দরকার’?
আমি বিষম চিন্তায় পড়ে গেলাম। জনে-জনে লোকজন যেভাবে আমার চাল বুঝে ফেলছে এ তো বিরাট সমস্যা,ভবিষ্যৎ অন্ধকার! যাই হোক, মানুষটার কল্যাণে এই শিশুটির জন্য কম্বল, গরম কাপড়ের ব্যবস্থা হয়। স্টেশনে যে মহিলা ভাত বিক্রি করেন তাকে বলে নিয়মিত ভাত খাওয়ার একটা ব্যবস্থাও হলো। ফিরে আসতে আসতে আমার মাথায় যেটা ঘুরপাক খাচ্ছিল সব মিলিয়ে নড়বড়ে একটা ব্যবস্থা হলো বটে কিন্তু এটা তো কোনও স্থায়ী সমাধান না। আর এই মহিলাটির কথাও ঘুরে ঘুরে আসে, তার এই মমতার উৎস কী?
এই মহিলার সঙ্গে কখনও বাচ্চাকাচ্চা দেখিনি-তবে কী অদেখা সন্তানের মায়া ঝপ করে নেমে আসে!।
No comments:
Post a Comment