এই মানুষটাকে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে পেয়েছিলাম ঠিক এই অবস্থায়। রক্তাক্ত মুখ, মুখে না-কামানো কাচা-পাকা দাড়ি। পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে আমার বোঝার বাকী রইল না খাবারের সঙ্গে বিষাক্ত কিছু একটা খাইয়ে এই মানুষটাকে ট্রেন থেকে ফেলে দিয়েছে।
এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে আমি খুব একটা আরাম বোধ করি না কারণ এটা বিস্তর ঝামেলার কাজ। ইচ্ছা করলেই এই মানুষটাকে হাসপাতালে ভর্তি করা যাবে না। স্টেশন মাস্টার ‘মেমো’ দিলে রেল-পুলিশকে দিয়ে ভর্তি করতে হবে। সোজা কথা, এটা পুলিশ কেস।
বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে লম্বা-লম্বা পা ফেলে এখান থেকে হেঁটে চলে যাওয়া, শত-শত হাত দূরে। আমি বুদ্ধিমান এমন দাবী আমি অন্যের কাছে দূরের কথা নিজের কাছেও করি না। কিন্তু আমি খানিকটা আতংকিত কারণ... আমি আমার গায়ের পশুটার গন্ধটা ঠিক টের পাই যেমনটা পাচ্ছিলাম তখন। আমার ভেতরের পশুটা অনবরত বকে মরছে, সরে পড়-সরে পড়, আলগোছে সরে পড়।
পশুটা বকে মরে কিন্তু আমার চোখে ভেসে উঠে এই মানুষটা তো কেবল একটা সংখ্যা না। হয়তো এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে কোঁচকানো চামড়ার খকখক করে বেদম কাশতে থাকা বুড়ো-বুড়ি। নাকের নথনাড়া ঢলঢলে মুখের বধূটি। গাল ফুলিয়ে থাকা কিশোরী যার চোখের কাজল লেপ্টে যাচ্ছে এটা ভেবে ভেবে যে, বাপজানটা কেমুন অখনো আমার কাঁচের চুড়ি লয়া আইলো না।
এরপর পশুটির কথা ভাবাভাবির সময় কোথায় আমার! কত কাজ, স্টেশন মাস্টারের কাছ থেকে মেমো নেওয়া, একে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য ভ্যান যোগাড় করা, রেলের একজন আনসারকে খুঁজে বের করা- যে মানুষটা আনুষ্ঠানিক ভাবে একে হাসপাতালে ভর্তি করাবেন। অবশ্য একবার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে গেলে আর চিন্তার কিছু নেই এটা বলতে পারলে ভাল লাগত কিন্তু হাসপাতালে কখনই ওষুধ নামের জিনিসগুলো থাকে না। সেটা অবশ্য খুব বড় একটা সমস্যা না।
রোগির সঙ্গে যে আনসার নামের মানুষটা গেছেন, পলাশ- একে দেখে মনে হচ্ছে বাংলা সিনেমায় নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করলে কেউ আপত্তি করবেন এমনটা তো আমার মনে হয় না।
যাই হোক, মানুষটা চলে গেলেন তার শেকড়ের কাছে। গুড বাই হানিফ। ফ্লাই এওয়ে পিটার, ফ্লাই এওয়ে হানিফ...।
3 comments:
Many thanks! Whoever reads this would think twice before leaving a person unattended. May almighty bless you.
:) @Enayet
Post a Comment