Search

Sunday, April 27, 2025

'দেখা হবে...', দাউদ ভাই!

দাউদ হায়দার। তাঁর সঙ্গে আমার বেশ কিছু ছবি কিন্তু তখন তাঁর নিরাপত্তার কারণে তাঁর ছবি ছাপাবার বিষয়ে সমস্যা ছিল। আহা, আজ আর সেই সমস্যা নেই। এখন তিনি সমস্ত নিরাপত্তার ঊর্ধ্বে চলে গেছেন!

এই স্ক্রিনশটটি Mubashar Hasan-এর ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া। কৃতজ্ঞতা।

যেখানে গেছেন সেখানে এখন আর কেউ তাঁকে 'Atheist Poet' বলে ডাকবে না। আহ, একটাই জীবন! একটা জীবনে কেবল 'একটা বাক্য' [*] কেমন করে একটা মানুষকে প্রতি মুহূর্তে মেরে ফেলে- ১৯৭৪ থেকে ২০২৫ সাল। আমৃত্যু মানুষটা আর তাঁর দেশে ফিরতে পারেননি! এরচেয়ে যে ফায়ারিং স্কোয়াডে গুলি করাও শ্রেয় ছিল। 

জার্মানিতে থাকাকালীন তাঁর ঘুমাবার সময় আমি সবিস্ময়ে লক্ষ করেছিলাম:

মানুষটা ঘুমের মধ্যে বিচিত্র শব্দ করছেন! শব্দগুলো ভারী বেদনার, কেমন একটা হু-হু-করা শব্দ! কানে আটকে আছে এখনো আমার। আমি জানি না, ঘুমের মধ্যে দাউদ ভাই যে অপার্থিব শব্দ করেন এটা কী তাঁর জানা আছে! কেন করেন? তাঁর কি ফেলে আসা জন্মস্থান 'দোহারপাড়ার' কথা মনে পড়ে যায়? আমি জানি না। 

দাউদ ভাইকে সেই কবে, সেই কবে বলেছিলাম, "দাউদ ভাই, গেলাম। আপনার সঙ্গে দেশে দেখা হবে, সহসাই"। []। আজ ভারী বিষণ্ন হই, কুন্ঠিত হই! আমার মত অতি সামান্য-একজন মানুষ কেন এই অসামান্য কথাটা বলতে গেলাম যে, দেশে দেখা হবে! যাক, আজ মানুষটা সব কিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে নিজে যেমন বেঁচেছেন আমাদেরকেও বাঁচিয়ে দিয়েছেন! অন্যদের কথা জেনে আমার কাজ নেই কিন্তু নিজেকে এখন আর নগ্ন বোধ হচ্ছে না।

... ... ... 

* এমন বিচিত্র একটা দেশ, এই গ্রহে বিরল! যে দেশে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয় রমজান মাসে! রোজা রেখে কোনও ঘুষখোর এই প্রতিজ্ঞা করেছে বলে আমার জানা নেই যে, সংযমের মাসে আমি শু... মাংস ওরফে হারাম, ওরফে ঘুষ খাব না। বরং এর পরিমাণ বিপুল আকারে বেড়ে যায়! কারণ সামনে যে ঈদ! আফসোস, ঈদের দিন ঘুষ ওরফে শু... মাংস খেতে পারেন না কারণ সেদিন আপিস বন্ধ থাকে। বে-চা-রা-রা!

রোজাদার ওরফে একজন ক্ষুধার্ত মানুষ যা-যা খান ব্যবসায়িরা সেসব পণ্য রমযান মাসে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেন! ১০০-২০০-৩০০ গুণ লাভ করতে কোন বিকার নাই! খাবারে ভেজাল মেশাই আমরা অবলীলায়...!

মায় অতি নিরীহ একজন গোয়ালা, একজনকে সারা বছর দুধ দেন ১০০ টাকা করে কিন্তু রমজান মাসে ১২০ টাকা। বাড়তি টাকা না-দিলে বেচারা দুধ দিতে পারবেন না। কারণ? কারণ তখন গরুর বাচ্চা যার চালু নাম, বাছুর, সে চুকচুক করে তার মা-র সমস্ত দুধ খেয়ে ফেলবে। বাড়তি টাকা না-দিলে বাছুরের 'এই খাওয়াখাওয়ি' চলবে গোটা রমজান মাস জুড়ে। ভাবা যায়, বাছুরটা কী পাজি, নচ্ছার একটা! তো, বাছুরটা ঈদ করে এরপর দুধ খাওয়া বন্ধ করবে। তখন আপনি আবার যথারীতি দুধ পাবেন।

এমন একটা আজব দেশ! যে দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্থ পেশা হচ্ছে, পুলিশ না, ডাক্তার! অতি মানবিক একটা পেশা! অধিকাংশ ডাক্তার, আই রিপিট, অধিকাংশ- হেন কোন অন্যায় নাই যেটা করেন না। গলাকাটা ফিস নেওয়া, অহেতুক, অপ্রয়োজনে এন্তার প্যাথলজি টেস্ট দেওয়া। সেই টেস্ট থেকে ৩০-৪০ পার্সেন্ট কমিশন নেওয়ার নামে হারাম খাওয়া। নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রাইব করে বিস্তর সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্য ওই ওষুধ কোম্পানি থেকে মোটা মাসোহারা নেওয়া। ওষুধ কোম্পানি প্রকারান্তরে ডাক্তারদের কিনে ফেলে বলেই ডাক্তারদের সামনে রোগীর ব্যবস্থাপত্রের ছবি উঠালেও ডাক্তার বাহাদুর উদাসীন থাকেন:

 

ব্যবস্থাপত্রের নামের অতি গোপনীয় বিষয়টা আর গোপন থাকে না। রোগী নামের সাবজেক্ট কি 'গণোকক্কাস' নাকি 'ট্রেপিনামা পেলিডাম' জীবাণুতে আক্রান্ত সেটা কেবল মাইকিং করে জানানো বাকী থাকে। রোগীর একটা প্রেসক্রিপশন বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানীর লোকজনেরা গোল হয়ে ফটাফট ছবি উঠাচ্ছেন এটা খুবই স্বাভাবিক একটা দৃশ্য। কারও কোন বিকার নেই। এখানে আইনের কোন প্রকার ব্যত্যয় হয় বলে এটা কেউ মনে করেন না। কারণ রোগী এখানে যে কেবল একটা সংখ্যা মাত্র!

উপহারের নামে এহেন কোন জিনিস নাই যেটা ডাক্তার সাহেবরা নেন না! নো-নো-নো, কারেকশন! একটা আইটেম, অন্তর্বাস সম্ভবত বাদ পড়ে। কারণ, 'স্যার-ম্যাডাম আপনার ইয়ের মাপ কত', এটা তো আর জনে-জনে জিজ্ঞেস করা চলে না।

ডাক্তারি পেশাকে কেন সবার উপরে রাখলাম? একমাত্র এই পেশায় বেতনের বাইরেও হালাল উপায়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের মাধ্যমে বিপুল টাকা আয় করা সম্ভব। পাশাপাশি তার অতি সামান্য আয় করার সুযোগ কেবল ইঞ্জিনিয়ার ব্যতীত অন্য আর কোনও পেশায় নেই। 

রাষ্ট্রের বেতনভুক্ত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান উপদেষ্টা, বিচারপতি, সেনাপ্রধান, পুলিশের আইজিপি কারও এই সুযোগ নেই! বেতনের বাইরে দশ পয়সা নিলেও এরা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন না, আমি সৎ!

আমাদের এই দেশটা বড়ই চিত্র-বিচিত্র! মসজিদে নামাজে গিয়ে মাথায় কেবল ঘুরপাক খায় জুতা চুরি হয়ে গেল না তো? আহারে, জুতা! সব ছাড়িয়ে যায় জুতা, জুতাই সত্য তাহার উপরে আর কিছু নাই ...!

এমন একটা অতি বিচিত্র দেশে দাউদ হায়দারের 'একটা বাক্য'-এর শক্তি যে একটা পারমাণবিক অস্ত্রের চেয়েও ভয়াবহ হবে এতে অবাক হওয়ার কী আছে!

সূত্র:

১. বৈদেশ পর্ব: বারো: https://www.ali-mahmed.com/2010/07/blog-post_05.html