Search

Friday, June 29, 2007

একটি কাকতাড়ুয়ার আত্মকাহিনী

আমার একটি কাকতাড়ুয়ার ছবির প্রয়োজন ছিল। কই পাই? খোঁজ-খোঁজ-খোঁজ। পেলাম না। এখন নাকি কৃষকরা কাঠির আগায় সারের পলিব্যাগ লাগিয়ে রাখে!
সিদ্ধান্ত নিলাম একটা কাকতাড়ুয়া বানিয়ে ফেলব। এ্যাহ, বললেই হল! কাকতাড়ুয়া কী বাদামের ছুলকা! অবশেষে একজন পাকোয়াজ(!) মানুষের খোঁজ পাওয়া গেল। ইনি নাকি কাকতাড়ুয়া বানাতে ওস্তাদ।

গেলাম। মোষের মত কালো একজন মানুষ, খালি গায়ে, মালকাছা দিয়ে লুঙ্গি পরনে। চোখের দৃষ্টি নিরাসক্ত।

আমি বললাম, আপনি নাকি কাকতাড়ুয়া বানাতে পারেন?
মানুষটা গম্ভীর, এইডা কি জিনিস, না জানলে বানামু কেমনে?

বুঝিয়ে বলার পর মাছি তাড়াবার ভঙ্গিতে হাত নাড়লেন, অ, বুজছি, কাউয়া হাগানি।
আমি বিভ্রান্ত, কি বললেন, আগামাথা নাই।

ঠিকই বলছি, এইটার উপর বইয়া কাউয়া হাগে।
আমি বিরক্তি চেপে বললাম, ধ্যাৎ!

মানুষটা এবার খানিকটা ছাড় দিয়ে বললেন, আইচ্ছা যান, কাউয়া হাগানি না, কাউয়া ভাগানি। তয়, এইটা দিয়া আপনের কাম কি?
আমার বিরক্তির একশেষ। মানুষটার সে সম্বন্ধে কোন হুঁশ নাই।
আপনের কাম হয়া যাইব। পাতিল লাগব, বন (খড়) লাগব, বাঁশ, দড়ি, ডেগের কালি, চট...।

আমি চকচকে চোখে ভাবলাম, বাপধন, প্রাণটা চাইতে দোষ কী ছিল! আমি এসব পাব কোথায়? বললাম, আপনি যোগাড় করেন, টাকার ব্যবস্থা হবে।

নির্দিষ্ট সময়ে গেলাম। অরি আল্লা, এ করেছে কি! এটাকে কাকতাড়ুয়া বলা যাবে কি আদৌ! প্যান্ট আছে, শার্টও আছে ইন করা। দেখ দেখি কান্ড, এর পায়ে একটা জুতাও শোভা পাচ্ছে।
আমি মানুষটা উপর খানিকটা বিরক্তও। এ নির্ঘাত এসেবের জন্য গলাকাটা দাম চার্জ করবে- বাগে পেলে যা হয় আর কি।

মানুষটার কাঠখোট্টা গলা, কি, পুতলা পছন্দ হয় নাই?
আমি উচ্ছ্বাস চেপে বললাম, তা হয়েছে কিন্ত এই শার্টের জন্য আলাদা টাকা...।

মানুষটা উদাস ভঙ্গিতে বলল, শার্টটা আমার। থাউক, দিতে হইব না।
প্যান্ট?

আমার পুলার। থাউক, দিলে হইব না। আপনের পছন্দ হইছে এইটাই বড় কথা। কেউ তো এইগুলা এখন আর বানায় না। আপনের উছিলায় একটা বানাইলাম। মজা পাইছি। শখের তোলা আশী টেকা, মজার তোলা একাশী টেকা।

এইবার আমি মানুষটার দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকালাম। আগের কাঠিন্য ধরে রেখেছে ঠিকই কিন্ত চোখ হাসি হাসি।

কাকতাড়ুয়া নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকে আমার বারান্দার এক কোনায়। কাক ওকে, ও কাককে, কেউ কাউকে বিরক্ত করে না। কে জানে, আমার চোখের দেখার ভুল- কখনও কখনও আমার মনে হয়, কাকতাড়ুয়াটার অদ্ভুত মুখে অন্য রকম একটা ভাব খেলা করে। অবিকল ওই মানুষটার কাঠিন্যময় মুখ, তলতলে চোখ!

একটি কাকতাড়ুয়ার আত্মকাহিনী:
আমি না চিজকে; জাঁক করে বলি, আমার অফিসিয়াল নেম কাকতাড়ুয়া। যে মানব আমাকে ইহধামে আনায়ন করিবার নিমিত্তে নির্দেশ প্রদান করিলেন, সেই মানবের কথা বলিয়া আপনাদের সময়ের অপচয় করিবার সাহস কস্মিনকালেও আমার নাই! বিশেষ সময়ে তাহার মাথায় গোলমাল হয় ইহা সত্য নহে। তাহার মাথায় গোলমাল লাগিয়াই আছে- সারিয়া উঠিবে ইহার কোন দিশা পাইবার যো নাই।

মানবটি কোন বুদ্ধিতে আমাকে এখানে আনিয়া দাঁড় করাইয়া রাখিয়াছে! হায়, এখানে কোন কাজ করিবার অবকাশ কোথায়! হায়রে মানুষ, খোলা মাঠে কাক তাড়াইয়া যে সুখ তাহা এই বদ্ধ ঘরে কোথায়? এইসব অর্বাচীন বুঝিতে পারিবে এই দুরাশা করিবার অভিলাষও আমার নাই। ছ্যা, ইহাকেই কি বলে জীবন, তাইলে বাঁচিয়া থাকা কেন!
কেন কেন কেন? (মুষ্টিঘাত)!