গণতন্ত্র ভাল জিনিস নিঃসন্দেহে, ভারী স্বাদু! সমস্যাটা হচ্ছে, স্টমাক ঘি-মাখন হজম করার শক্তি রাখে কি না? দীর্ঘ অনেক কটা বছর ধরে গণতন্ত্রের অর্থ দাড়িয়েছে ক্রমাগত নিয়ম করে হরতাল। এটা নাকি অতীব জরুরি। হরতাল ব্যতীত গণতন্ত্র নাকি নিঃশ্বাস নিতে পারে না। শাসক দল ৫ বছর শাসন করে। বিরোধী দল দিনের পর দিন হরতাল নামের হরতালের চাবুকটা সাঁই সাঁই করে চালাতে থাকে। কিন্তু শাসক দলকে ১ সেকেন্ড আগেও হঠাতে পারে না। নমুনা দেখে মনে হয়, এটা কেয়ামতের আগ পযর্ন্ত চলতে থাকবে।
কী সীমাহীন লুটপাট। ৩ কোটি টাকার গাড়ি যিনি হাঁকান তিনি কিন্তু এ দেশের সবচেয়ে বেশি করদাতা নন! দেশের সবচেয়ে বেশি করদাতা, তিনি হলেন সাধারণ ব্যবসায়ী মি. অসিত সাহা। একজন আমলা কোটি কোটি টাকা খরচ করে এম. পি হন, ওনার নাকি দেশ সেবা না করলে চলছে না। এ দেশে নাকি ঘুসের টাকা পেলে কাঠের পুতুলও হাঁ করে। সততা নামের জিনিসটা ক্রমান্বয়ে জাদুঘরে স্থানান্তরিত হচ্ছিল। রাবারের মতো প্রসারিত হচ্ছিল ধর্মবাজরা।
একটা পরিবর্তন না এসে উপায় ছিল কি আদৌ? অনেককেই দেখি মুখ অন্ধকার করে রাখেন। তাঁরা নিবাচির্ত সরকার ব্যতীত অন্য কিছু মেনে নিতে চান না। মেনে নেয়াটা তীব্র কষ্টের, এতে আমার কোন অমত নাই। আমি একমত, এটা মেনে নেয়া কঠিন। কিন্তু বিকল্পটা কি, বলেন? ঘুরেফিরে তো ওই গুটিকয়েক দলই এই দেশ শাসন করবে। এরা তো দেশটাকে ১০০ বছর পিছিয়ে দিয়েছে। দিচ্ছে।
বলা হচ্ছে, এরা (কেয়ারটেকার সরকার) যে অল্প সময়ের জন্য এসেছেন এই সময়ে নির্বাচন নিয়ে মাথা না-ঘামিয়ে অন্য কিছুর চিন্তা করার অবকাশ নাই। আমার কাছে মনে হয় এমন, তাদের কাছ থেকে যেন আমরা আশা করি; গরু কিনে, ঘাস খাইয়ে, গরুর কাছ থেকে দুধ কালেক্ট করে, গরুর দুধ জ্বাল দিয়ে, দুধটা খাইয়ে দেবেন, দুধের সর দিয়ে তাদের মুখে লেপে ত্বকের জৌলুশ বৃদ্ধি করবেন। ব্যস। চক্রাকারে এই কাজটা চলতেই থাকবে। আমি তো দেখছি, এই অল্প কয় জন মানুষ দেশটা তো ভালই চালান। এখন যাদের ধরা হচ্ছে বা চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে, এদের টিকিটিও স্পর্শ করার সাধ্য কার ছিল? তবে এদের মধ্যে আমলা গামলাদের খুব একটা দেখছি না। এরা সবাই এখন সাধু হয়ে গেছেন!
আমার চোখে দেখা একটা ঘটনা এখানে শেয়ার করি। যে এডিএম সাহেব অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে দিচ্ছেন, অনেকটা গায়ের জোরে, তিনি সাধারণ একজন জেলের কাছ থেকেও ঘুস খেয়েছিলেন। এখন তার কী দবদবা!
আল্লা মালুম, এখনই এই ভাঙ্গাভাঙ্গি করার আইডিয়াটা কার মাথা থেকে বেরিয়েছে? আমি মনে করি, যাদের মাথা থেকে এটা বেরিয়েছে, এরা তাঁদের নিজেদের কফিনে পেরেক ঠুকলেন।
আমাদের জায়গা বড়ো অপ্রতুল, এটা করা প্রয়োজন ছিল অনেক পরে। সব বিগ শটদের কাবু করে, দেশের অধিকাংশ টাকা অন্যায় করে যে সব অল্প মানুষরা দখল করে রেখেছেন, সে সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে, এবং দ্রুত শ্রম বাজার সৃষ্টি করে। তারপর সরকার যদি বলতেন, প্রিয় দেশবাসী, আমরা আমাদের কাজ করেছি এবার আপনারা আমাদের জন্য কিছু কাজ করুন। দখলকারীরা সরকারী জায়গা ছেড়ে দিন। আমার মনে হয় গরীব দেশবাসীরা তখন হাসিমুখেই এই নির্দেশ মেনে নিতে বাধ্য হতেন।
ছলিম মিয়ার টং, বস্তী যে ভেঙ্গে দেয়া হচ্ছে, এর শেষ কোথায়! এরা কি আসলেই এর পরিণাম জানেন? এইসব ডিসিশন মেকারদের পেছনে থাকা প্রয়োজন ছিল মানবিক একজন মানুষের। যিনি একজন মানবিক মানুষের পাশাপাশি একজন মনোবিদও বটে। একেকটা পেশার লোকজনদের জন্য ভাবতে হবে একেক রকম করে। অসংখ্য পেশা থেকে একটার কথা বলি: আমরা খুব আমোদ পাই যখন শুনি বস্তি উচ্ছেদ করা হলো। একটা কাজের কাজ হলো যা হোক। শহরটা বড় সাফ সুতরো হলো।
বিশ্বাস করেন, আমি গার্মেন্টস কর্মীদের পায়ের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকি। এরা যখন হেঁটে যান, আমার কেবল মনে হয় এই দ্রুত হেঁটে যাওয়া পা আমাদের দেশটাকে সচল রাখার পেছনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের স্যারদের যে বাবুগিরি এতে এঁদের অবদান যে কী প্রবল এটা আপনারা আমার চেয়ে ভাল জানেন। এরা থাকবেনটা কোথায়, ফ্ল্যাটে? কয় টাকাই বা এঁদের বেতন? এঁদের ঘরটা ভেঙ্গে দিয়ে উল্লসিত হওয়ার অবকাশ কোথায়? ফিরে এসে যখন কেউ ওই ভেঙ্গে দেয়া বস্তীতে তাঁর প্রিয় মানুষ খুঁজে পাবেন না, যে শিশু সন্তানটি হারিয়ে গেল! এ অন্যায়ের দায় কে নেবে? যেটা করা প্রয়োজন ছিল: সমস্ত দেশে শ্রম বাজার সৃষ্টি হয়, এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো ছড়িয়ে দেয়া। নিয়ম করে দেয়া, যারা এই ধরনের প্রতিষ্ঠান করবে তাদেরকে আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে, বাধ্যতামুলক। যে টাকা এঁরা বস্তীতে থাকার জন্য দিতেন এমন একটা অংক এদের থাকার জন্য নেয়া।
বাংলাদেশের লোকসংখ্যা কত এখন? অথচ ঢাকায় সম্ভবত দেড় কোটি! আমরা সব লাটিমকে বনবন করে ঘুরাচ্ছি ঢাকাকে কেন্দ্র করে, এটা ক্রমশ বন্ধ করতে হবে। যারা রংপুর, খুলনায় শিল্প প্রতিষ্ঠান বসাবেন তাদের জন্য ট্যাক্সসহ অন্যান্য কর আদায়ের বেলায় ছাড় দেয়া হলে অনেকেই আগ্রহী হবেন বলেই আমার ধারণা। এবং রাষ্ট্রীয় বিশেষ সম্মান থাকুন এদের জন্য, কত উপায়েই না এঁদের সম্মান জানানো যেতে পারে। বাহে, আইডিয়া কেউ চাইলে গাদাগাদা আইডিয়া দেয়া যাবে নে।
আসলে এই দেশের জন্য টাকা কোন সমস্যা না। বিদেশী লালমুখোদের কাছে শিঁরদাড়া বাঁকা করে কাতর হাত বাড়াবার কোন প্রয়োজনই নেই। আর আমরা এটাও জানি, জানার আর বাকি নাই এরা ১০০ টাকা দিলে ২০০টা উপদেশ দেয়। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে এদের কাছ থেকেই হেনতেন কত কিছু কিনতে আমাদেরকে বাধ্য করে। দেখুন না, হাজার হাজার কোটি টাকার রেমিটেন্স যে সব প্রবাসীরা দেশটায় পাঠাচ্ছেন। আমরা এদেরকে কি সম্মান দিচ্ছি, কচু! এদের ভোট দেয়ার অধিকারই নাই। চোরচোট্টা ভোট দিতে পারবে, এঁরা পারবেন না! প্রবাসী অনেকেই দেশে ইনভেস্ট করার জন্য মুখিয়ে আছেন, শুধু প্রয়োজন সদিচ্ছার।
যে ভদ্রলোক সবচেয়ে বেশি টাকা ট্যাক্স দেবেন তাঁদের জন্য আমরা কি করি, ঘেচু! আমার সাধ্য থাকলে তাঁকে গার্ড অভ অনার দিতাম। তাঁকে গার্ড অভ অর্ডার দেয়ার প্রস্তাব শুনে কি আপনারা ঠা ঠা করে হাসছেন? বেশ, যখন ফিফার ব্লটারকে আমাদের দেশে গার্ড অভ অনার দেয়া হলো, তখন আমরা বড়ো আমোদ পাই, না? কোন দেশ দেয়নি, ব্লটারকে দিলাম, আমরা দিয়ে দেখিয়ে দিলাম! যেন ব্লটারের ব্লাডার আমরা গার্ড অভ অনার দিয়ে দিয়ে ফাটিয়ে ফেলব! দেশের ট্যাক্স যদি যথার্থ ভাবে আদায় করা হয়, ভিক্ষা করতে হবে না, আমি নিশ্চিত।
অনেক হাজী সাহেবকে দেখেছি, যাকাত দেন কিন্তু ট্যাক্স দেন না। কিছুটা ভয়ে, অনেকটা অসচেতনার কারণে। যাকাতের মতোই ট্যাক্স হচ্ছে সরকারী যাকাত। একজন কখনোই নিজেকে ভালমানুষ বলে দাবী করতে পারেন না, ট্যাক্স না দিলে। সরকার এই ট্যাক্সের টাকায় রাস্তা করেন, হাসপাতাল গড়েন। ওই রাস্তায় চোর হাঁটে, সাধুও হাঁটে। চুতিয়ারা বলে, এই রাস্তা ওমুক মন্ত্রী বাহাদুর করেছেন, তমুক হাসপাতাল তমুক মন্ত্রী- যেন এই মন্ত্রী টন্ত্রীদের বাপের তালুক বিক্রির টাকা। যদি এখুনি আমার মতো সাধারন মানুষের জরুরী নিরাময়ের প্রয়োজন হলে, আমি কোথায় ছুটব, অ্যাপোলো হাসপাতালে? বিলের ধাক্কায় মৃত্যু এগিয়ে আসবে গলাগলি করার জন্য। আরও কতো ভাবে টাকার উপায় করা যায়।
আমাদের মাথাপিছু জাতীয় ঋণ কতো? অনুমান করি হাজার দশেক টাকা। আচ্ছা, আমাকে সরকার সার্টিফিকেট দিতে পারবেন, 'আলী মাহমেদ, জাতীয় ঋনমুক্ত ব্যক্তি'? তাহলে আমি টাকাটা দিয়ে দিতে চাই। কেন আমি ঋণের বোঝা বয়ে বেড়াব? আমার মতো হয়তো আরও পাগল পাওয়া যাবে।
কোরবানীর সময় দেশে কতো টাকার কোরবানী হয়? অনুমান করি নিদেনপক্ষে ৫ হাজার কোটি টাকা। বেশ, অপশন রাখুন, যিনি কোরবানীর নিয়ত করেছেন তিনি ইচ্ছা করলে দেশের জাতীয় ফান্ডে টাকাটা জমা দেবেন। তাঁকে সমুহ টাকা বুঝে রসিদ দেয়া হবে। যিনি মনে করবেন পশুর গলায় ছুরি না চালানো পর্যন্ত ধর্ম টিকে থাকবে না তিনি ধর্ম পালন করুন না, কে তাকে বাঁধা দিচ্ছে।
কিন্তু, একটা কঠিন কিন্তু রয়ে যায়। আমরা সাধারণ মানুষরা চাইব আমাদের প্রতিটা পয়সার পাই পাই হিসাব যেন থাকে। নইলে যা হবে, এক কাপ চায়ে দুই কাপ চিনি!
কী সীমাহীন লুটপাট। ৩ কোটি টাকার গাড়ি যিনি হাঁকান তিনি কিন্তু এ দেশের সবচেয়ে বেশি করদাতা নন! দেশের সবচেয়ে বেশি করদাতা, তিনি হলেন সাধারণ ব্যবসায়ী মি. অসিত সাহা। একজন আমলা কোটি কোটি টাকা খরচ করে এম. পি হন, ওনার নাকি দেশ সেবা না করলে চলছে না। এ দেশে নাকি ঘুসের টাকা পেলে কাঠের পুতুলও হাঁ করে। সততা নামের জিনিসটা ক্রমান্বয়ে জাদুঘরে স্থানান্তরিত হচ্ছিল। রাবারের মতো প্রসারিত হচ্ছিল ধর্মবাজরা।
একটা পরিবর্তন না এসে উপায় ছিল কি আদৌ? অনেককেই দেখি মুখ অন্ধকার করে রাখেন। তাঁরা নিবাচির্ত সরকার ব্যতীত অন্য কিছু মেনে নিতে চান না। মেনে নেয়াটা তীব্র কষ্টের, এতে আমার কোন অমত নাই। আমি একমত, এটা মেনে নেয়া কঠিন। কিন্তু বিকল্পটা কি, বলেন? ঘুরেফিরে তো ওই গুটিকয়েক দলই এই দেশ শাসন করবে। এরা তো দেশটাকে ১০০ বছর পিছিয়ে দিয়েছে। দিচ্ছে।
বলা হচ্ছে, এরা (কেয়ারটেকার সরকার) যে অল্প সময়ের জন্য এসেছেন এই সময়ে নির্বাচন নিয়ে মাথা না-ঘামিয়ে অন্য কিছুর চিন্তা করার অবকাশ নাই। আমার কাছে মনে হয় এমন, তাদের কাছ থেকে যেন আমরা আশা করি; গরু কিনে, ঘাস খাইয়ে, গরুর কাছ থেকে দুধ কালেক্ট করে, গরুর দুধ জ্বাল দিয়ে, দুধটা খাইয়ে দেবেন, দুধের সর দিয়ে তাদের মুখে লেপে ত্বকের জৌলুশ বৃদ্ধি করবেন। ব্যস। চক্রাকারে এই কাজটা চলতেই থাকবে। আমি তো দেখছি, এই অল্প কয় জন মানুষ দেশটা তো ভালই চালান। এখন যাদের ধরা হচ্ছে বা চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে, এদের টিকিটিও স্পর্শ করার সাধ্য কার ছিল? তবে এদের মধ্যে আমলা গামলাদের খুব একটা দেখছি না। এরা সবাই এখন সাধু হয়ে গেছেন!
আমার চোখে দেখা একটা ঘটনা এখানে শেয়ার করি। যে এডিএম সাহেব অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে দিচ্ছেন, অনেকটা গায়ের জোরে, তিনি সাধারণ একজন জেলের কাছ থেকেও ঘুস খেয়েছিলেন। এখন তার কী দবদবা!
আল্লা মালুম, এখনই এই ভাঙ্গাভাঙ্গি করার আইডিয়াটা কার মাথা থেকে বেরিয়েছে? আমি মনে করি, যাদের মাথা থেকে এটা বেরিয়েছে, এরা তাঁদের নিজেদের কফিনে পেরেক ঠুকলেন।
আমাদের জায়গা বড়ো অপ্রতুল, এটা করা প্রয়োজন ছিল অনেক পরে। সব বিগ শটদের কাবু করে, দেশের অধিকাংশ টাকা অন্যায় করে যে সব অল্প মানুষরা দখল করে রেখেছেন, সে সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে, এবং দ্রুত শ্রম বাজার সৃষ্টি করে। তারপর সরকার যদি বলতেন, প্রিয় দেশবাসী, আমরা আমাদের কাজ করেছি এবার আপনারা আমাদের জন্য কিছু কাজ করুন। দখলকারীরা সরকারী জায়গা ছেড়ে দিন। আমার মনে হয় গরীব দেশবাসীরা তখন হাসিমুখেই এই নির্দেশ মেনে নিতে বাধ্য হতেন।
ছলিম মিয়ার টং, বস্তী যে ভেঙ্গে দেয়া হচ্ছে, এর শেষ কোথায়! এরা কি আসলেই এর পরিণাম জানেন? এইসব ডিসিশন মেকারদের পেছনে থাকা প্রয়োজন ছিল মানবিক একজন মানুষের। যিনি একজন মানবিক মানুষের পাশাপাশি একজন মনোবিদও বটে। একেকটা পেশার লোকজনদের জন্য ভাবতে হবে একেক রকম করে। অসংখ্য পেশা থেকে একটার কথা বলি: আমরা খুব আমোদ পাই যখন শুনি বস্তি উচ্ছেদ করা হলো। একটা কাজের কাজ হলো যা হোক। শহরটা বড় সাফ সুতরো হলো।
বিশ্বাস করেন, আমি গার্মেন্টস কর্মীদের পায়ের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকি। এরা যখন হেঁটে যান, আমার কেবল মনে হয় এই দ্রুত হেঁটে যাওয়া পা আমাদের দেশটাকে সচল রাখার পেছনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের স্যারদের যে বাবুগিরি এতে এঁদের অবদান যে কী প্রবল এটা আপনারা আমার চেয়ে ভাল জানেন। এরা থাকবেনটা কোথায়, ফ্ল্যাটে? কয় টাকাই বা এঁদের বেতন? এঁদের ঘরটা ভেঙ্গে দিয়ে উল্লসিত হওয়ার অবকাশ কোথায়? ফিরে এসে যখন কেউ ওই ভেঙ্গে দেয়া বস্তীতে তাঁর প্রিয় মানুষ খুঁজে পাবেন না, যে শিশু সন্তানটি হারিয়ে গেল! এ অন্যায়ের দায় কে নেবে? যেটা করা প্রয়োজন ছিল: সমস্ত দেশে শ্রম বাজার সৃষ্টি হয়, এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো ছড়িয়ে দেয়া। নিয়ম করে দেয়া, যারা এই ধরনের প্রতিষ্ঠান করবে তাদেরকে আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে, বাধ্যতামুলক। যে টাকা এঁরা বস্তীতে থাকার জন্য দিতেন এমন একটা অংক এদের থাকার জন্য নেয়া।
বাংলাদেশের লোকসংখ্যা কত এখন? অথচ ঢাকায় সম্ভবত দেড় কোটি! আমরা সব লাটিমকে বনবন করে ঘুরাচ্ছি ঢাকাকে কেন্দ্র করে, এটা ক্রমশ বন্ধ করতে হবে। যারা রংপুর, খুলনায় শিল্প প্রতিষ্ঠান বসাবেন তাদের জন্য ট্যাক্সসহ অন্যান্য কর আদায়ের বেলায় ছাড় দেয়া হলে অনেকেই আগ্রহী হবেন বলেই আমার ধারণা। এবং রাষ্ট্রীয় বিশেষ সম্মান থাকুন এদের জন্য, কত উপায়েই না এঁদের সম্মান জানানো যেতে পারে। বাহে, আইডিয়া কেউ চাইলে গাদাগাদা আইডিয়া দেয়া যাবে নে।
আসলে এই দেশের জন্য টাকা কোন সমস্যা না। বিদেশী লালমুখোদের কাছে শিঁরদাড়া বাঁকা করে কাতর হাত বাড়াবার কোন প্রয়োজনই নেই। আর আমরা এটাও জানি, জানার আর বাকি নাই এরা ১০০ টাকা দিলে ২০০টা উপদেশ দেয়। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে এদের কাছ থেকেই হেনতেন কত কিছু কিনতে আমাদেরকে বাধ্য করে। দেখুন না, হাজার হাজার কোটি টাকার রেমিটেন্স যে সব প্রবাসীরা দেশটায় পাঠাচ্ছেন। আমরা এদেরকে কি সম্মান দিচ্ছি, কচু! এদের ভোট দেয়ার অধিকারই নাই। চোরচোট্টা ভোট দিতে পারবে, এঁরা পারবেন না! প্রবাসী অনেকেই দেশে ইনভেস্ট করার জন্য মুখিয়ে আছেন, শুধু প্রয়োজন সদিচ্ছার।
যে ভদ্রলোক সবচেয়ে বেশি টাকা ট্যাক্স দেবেন তাঁদের জন্য আমরা কি করি, ঘেচু! আমার সাধ্য থাকলে তাঁকে গার্ড অভ অনার দিতাম। তাঁকে গার্ড অভ অর্ডার দেয়ার প্রস্তাব শুনে কি আপনারা ঠা ঠা করে হাসছেন? বেশ, যখন ফিফার ব্লটারকে আমাদের দেশে গার্ড অভ অনার দেয়া হলো, তখন আমরা বড়ো আমোদ পাই, না? কোন দেশ দেয়নি, ব্লটারকে দিলাম, আমরা দিয়ে দেখিয়ে দিলাম! যেন ব্লটারের ব্লাডার আমরা গার্ড অভ অনার দিয়ে দিয়ে ফাটিয়ে ফেলব! দেশের ট্যাক্স যদি যথার্থ ভাবে আদায় করা হয়, ভিক্ষা করতে হবে না, আমি নিশ্চিত।
অনেক হাজী সাহেবকে দেখেছি, যাকাত দেন কিন্তু ট্যাক্স দেন না। কিছুটা ভয়ে, অনেকটা অসচেতনার কারণে। যাকাতের মতোই ট্যাক্স হচ্ছে সরকারী যাকাত। একজন কখনোই নিজেকে ভালমানুষ বলে দাবী করতে পারেন না, ট্যাক্স না দিলে। সরকার এই ট্যাক্সের টাকায় রাস্তা করেন, হাসপাতাল গড়েন। ওই রাস্তায় চোর হাঁটে, সাধুও হাঁটে। চুতিয়ারা বলে, এই রাস্তা ওমুক মন্ত্রী বাহাদুর করেছেন, তমুক হাসপাতাল তমুক মন্ত্রী- যেন এই মন্ত্রী টন্ত্রীদের বাপের তালুক বিক্রির টাকা। যদি এখুনি আমার মতো সাধারন মানুষের জরুরী নিরাময়ের প্রয়োজন হলে, আমি কোথায় ছুটব, অ্যাপোলো হাসপাতালে? বিলের ধাক্কায় মৃত্যু এগিয়ে আসবে গলাগলি করার জন্য। আরও কতো ভাবে টাকার উপায় করা যায়।
আমাদের মাথাপিছু জাতীয় ঋণ কতো? অনুমান করি হাজার দশেক টাকা। আচ্ছা, আমাকে সরকার সার্টিফিকেট দিতে পারবেন, 'আলী মাহমেদ, জাতীয় ঋনমুক্ত ব্যক্তি'? তাহলে আমি টাকাটা দিয়ে দিতে চাই। কেন আমি ঋণের বোঝা বয়ে বেড়াব? আমার মতো হয়তো আরও পাগল পাওয়া যাবে।
কোরবানীর সময় দেশে কতো টাকার কোরবানী হয়? অনুমান করি নিদেনপক্ষে ৫ হাজার কোটি টাকা। বেশ, অপশন রাখুন, যিনি কোরবানীর নিয়ত করেছেন তিনি ইচ্ছা করলে দেশের জাতীয় ফান্ডে টাকাটা জমা দেবেন। তাঁকে সমুহ টাকা বুঝে রসিদ দেয়া হবে। যিনি মনে করবেন পশুর গলায় ছুরি না চালানো পর্যন্ত ধর্ম টিকে থাকবে না তিনি ধর্ম পালন করুন না, কে তাকে বাঁধা দিচ্ছে।
কিন্তু, একটা কঠিন কিন্তু রয়ে যায়। আমরা সাধারণ মানুষরা চাইব আমাদের প্রতিটা পয়সার পাই পাই হিসাব যেন থাকে। নইলে যা হবে, এক কাপ চায়ে দুই কাপ চিনি!
No comments:
Post a Comment