বাড়িতে মুখ খারাপ করতে পারি না, মন ভাল না, কারো সঙ্গে ঝগড়া করেছি, তো চলো শালার গালি দিয়ে সবাইকে একহাত নেই! যেন ভারী একটা কাজ হলো! এই কাজটা আমরা অবলীলায় করি কোন একটা ব্লগ-সাইটে এসে!
ফ্লাডিং একটা সমস্যা! কেউ কেউ ইচ্ছা করে এ ন্যাক্কারজনক কাজটা করেন সবার আপত্তি উপেক্ষা করে। সবাই তিতিবিরক্ত। কে শোনে কার কথা! এরা সগর্বে ঘোষণা দিয়ে এই কাজটা করেন। অনেকে আবার এদেরকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে নিজেরাও এ কাজে নেমে পড়েন। সব মিলিয়ে একটা যা তা, যাচ্ছেতাই অবস্থা। এটলিস্ট একটা লেখা পোস্ট করে অন্য ব্লগারদের পড়ার জন্য অন্তত সময়টুকু তো দিতে হবে। আমি আগেও বলেছি আমাদের মধ্যে সহনশীলতার বড়ো অভাব- এর সঙ্গে যোগ হয় অন্যের প্রতি অসম্মান করার প্রবণতা।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ডিগবাজী। এটা এখন একটা ফ্যাশনের পর্য়ায়ে চলে গেছে। মুক্তিযুদ্ধে একজন দুর্ধর্ষ কমান্ডো ঠেলাগাড়ি চালান, সুরুয মিয়ার মত মুক্তিযোদ্ধা ১৬ ডিসেম্বরে আত্মহত্যা করেন, একজন মুক্তিযোদ্দাকে ১০০ টাকা দিয়ে জুতা মারি। আর আমরা লম্বা লম্বা বাতচিত করি। কবে কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদিবস গেল এটা আমরা কোন ছার প্রথম শ্রেণীর দৈনিকেরই বা এতো সময় কই!
অল্প কিছু নেতা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে স্বপ্ন দেখতে দেখতে স্বপ্ন দো...রোগ বাধিয়ে বসে আছেন। হায়রে, ভার্চুয়াল শিশুরা- এদের জন্য করুণা করতেও করুণা হয়! মুক্তিযুদ্ধ মানেই বিশেষ একটা দলের নিজস্ব তালুক বানিয়ে ফেলবেন, এমন চুতিয়া অধিকার কে তাকে দিয়েছে! বিচিত্র দেশ- গোলাম আযম এই দেশের নাগরিক হতে পারবেন কিন্তু ফাদার রিগন পারবেন না!
আহ ধর্ম! আহ ধার্মিক! এটা নিয়ে অনেকে এমন আচরণ করেন, তাঁর ধর্মটা যেন একটা কাঁচের বাসন- হাত থেকে পড়ামাত্র খানখান হয়ে যাবে। ধর্মকে এহেন তুচ্ছ পর্যায়ে নামিয়ে এনে প্রকারন্তরে ধর্মকে হেয় করা হয়! অথচ ধর্ম নিয়ে আলোচনাটা খুব জরুরী।
ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই- ওই দিন পড়লাম, একজন দায়িত্বশীল মানুষ বলছেন, বাংলায় ‘আল্লাহ মহান’ এটা লিখে লাভ নাই কারণ আল্লাহ তো আর বাংলা পড়তে পারেন না । এইসব মূর্খ মন্তব্যকারী, এরা ধর্মকে কোন পর্যায়ে নিয়ে গেছে! সৌদি আরবের লোকজনরা গালি কি ভাষায় লেখে, বাংলায়?
আর কারো যদি কোন ধর্মের প্রতি আবেগ না থাকে তো অহেতুক অন্যকে খোঁচাখুঁচি করার সার্থকতা কোথায়? পাশাপাশি কারো কোন ধর্মের প্রতি দ্বিমত থাকলে যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিলেই তো হয়। কলমের উত্তর কলম দিয়ে, এটা আমরা প্রায়শ ভুলে যাই। হুমায়ুন আজাদকে কেন হত্যা করার চেষ্টা করা হবে, তিনি তো কাউকে হত্যা করেননি! একজন মানুষ যেখানে প্রাণ সৃষ্টি করতে পারে না তার কি অধিকার আছে একজন সৃষ্টির সেরা জীবের প্রাণ নষ্ট করার! তাঁর কোন লেখায় কারো অমত থাকতেই পারে, তা কলমের মাধ্যমে উত্তর দিলে তো সমস্যা নাই।
ইনকিলাব জাতীয় পত্রিকা পড়লে সাবান দিয়ে আমার হাত ধুতে ইচ্ছা করে, কিন্ত এদের একটা ব্যাপার আমার মনে এখনো দাগ কেটে আছে। হুমায়ুন আজাদ ‘পাক সার জমিন…’ লেখার পর ওখানে একজন কলাম লিখেছিলেন, 'হুমায়ুন আজাদ কি তাঁর মেয়েদেরকে এ বইটা পড়তে দিতে পারবেন'? ইনকিলাবের মতো পত্রিকার এই সহনশীলতা ভালো লেগেছিল কারণ এদের উত্তরটা ছিল কলম দিয়ে এবং ওই কলামে মি. আজাদের প্রতি একটা খারাপ শব্দ ব্যবহার করা হয়নি, অন্তত ওই সময়টাতে।
শ্লীল-অশ্লীল, এটা অসম্ভব একটা জটিল বিষয়। এ নিয়ে কঠিন কঠিনসব মতবাদ আছ্। ব্লগে অনেকেই বলেন এটা ওপেন ফোরাম- এখানে যা কিছু আলোচনা হতে পারে, পারে যে কোন শব্দের প্রয়োগ। আমি আমার স্বল্প বুদ্ধিতে যা বুঝি, আসলে এটা বিচারের ভারটা ছেড়ে দিতে হবে আমাদের হাতেই। কিন্ত অবস্থান এবং সময় একটা বিচার্য বিষয়। আমেরিকার একজন ব্লগারের কাছে যেটা অতি শ্লীল মনে হবে আমদের দেশে এটা হয়তো অশ্লীলতার পর্যায়ে পড়ে। অনেক দেশেই অনেক আগে থেকেই বাথরুমের দরোজা বলে কোন জিনিসই থাকে না- এটা আমাদের দেশে অকল্পনীয়! এখন প্রবাসের ঢং এদেশে চালু করার চেষ্টা করে তো লাভ নেই!
বাক স্বাধনীতা, খুব প্রিয় একটা শব্দ কিন্ত এর নামে তো যা খুশী লেখা যায় না, কারণ একজন লেখকের পায়ে অসংখ্য শেকল থাকে। কঠিন শেকলটা হচ্ছে তার নিজের। একজন লেখককে দাঁড়াতে হয় তার নিজের কাঠগড়ায়, তেমনি একজন ব্লগারকেও! কলম একটা ভয়াবহ অস্ত্র- এর প্রয়োগ কিভাবে হবে এটা নির্ভর করে কলমটা কার হাতে, তার উপর!