কেন?
এর পেছনে অবশ্যই আছে নানা কাহিনী। এখানে সমাহিত করার পেছনেও আছে নানা কাহিনী।
বাংলাদেশের সর্ব কনিষ্ঠ বীরক্রিম হামিদুল হোসেন তারেক- এর সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তাঁর কাছ থেকেই জানলাম, মতিউর রহমানকে খানিকটা বাইরে সমাহিত না করা হলে একজনের সমাধিস্থলের গুরুত্ব নাকি কমে যাবে। বেশ, যা হোক। তো, ১ বছরেও আমরা মতিউর রহমানের এপিটাফ স্থাপন করতে পারিনি এখনও। এটাও ভাল, হয়তো আরও ৩৫ বছর লাগবে আমাদের এই মহা মহা জটিল কাজটা করতে। আমি ’ফ্রিডম’ বইটিতে মিলি রহমানের ২টি লেখা ব্যবহার করেছিলাম। প্রয়োজন মনে করায় আবারও এখানে দিচ্ছি।
———————–
মিলি রহমান একটি দৈনিকে মর্মস্পর্শী ভাষায় লিখেছিলেন: মতিউরের জন্য একটু জায়গা···
প্রতিটি মানুষেরই একটি ঠিকানা থাকে, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানেরও ছিল। ’৭০-’৭১ সালে সেই ঠিকানা ছিলঃ ১৯/২ অফিসার্স ফ্যামিলি কোয়ার্টার, মসরুর বেস, করাচি, পশ্চিম পাকিস্তান। এখনো মতিউর রহমানের একটা ঠিকানা আছেঃ চতুর্থ শ্রেণীর কবরস্থান, মসরুর বেস, করাচি, পাকিস্তান। শুধু ঘর বদলেছে আর বদলেছে নম্বর। তবে আগে ঘরটি ছিল মাটির ওপর, এখন মাটির নিচে। নতুন ঘরের নম্বর আমার জানা নেই, আর কেউ জানে কি না তাও জানি না।
ভালবাসার মানুষটির জীবনের বিনিময়ে আমার কিন্তু একটা নতুন ঠিকানা হয়েছে। আমি এখন বাংলাদেশী। ‘৭১-এর ২৯ সেপ্টেম্বর ছোট দুই মেয়েকে নিয়ে বোনের হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে ভালোবাসার মানুষটিকে ভিনদেশে ফেলে বাংলাদেশে চলে আসি।
১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলো। মতিউরের ত্যাগের স্বীকৃতিস্বরুপ তাকে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করা হলো। কিন্তু কেউ তার ঠিকানা বদলাতে সচেষ্ট হলো না। আমরা সবাই বাংলার মাটিতে নতুন করে ঘর বাঁধলাম, কিন্ত আমার মতির জন্য এতটুকু জায়গা পাওয়া গেল না। আমি কিন্তু এখনো ভোর বেলা হাঁটতে গিয়ে বকুলতলা থেকে দুহাত ভরে ফুল কুড়িয়ে আনতে পারি, শোবার ঘরের জানালা দিয়ে দেখতে পারি শিউলিতলায় ছড়িয়ে থাকা ফুল, শুনতে পারি বাড়ির ছাদে পোষা পায়রার বাকবাকুম।
···আমি এক অক্ষম স্ত্রী। ৩৩ বছরেও আমার মতির ঠিকানাটা আমি বদলাতে পারিনি।
···২০০৩ সালের ৩১ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে ভিত্তি স্থাপন করা হয় শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের স্মৃতিসৌধ। ভিত্তি স্থাপন করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রেদওয়ান আহমেদ চৌধুরী। সেদিন বীরশ্রেষ্ঠ মতিউরের কবর স্থানান্তরিত করার কথা উঠলে এমন কথাও বলা হয় যে, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরও তো চট্টগ্রাম থেকে উঠিয়ে ঢাকায় এনে দাফন করা হয়েছিল।
কদিন আগে ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতকে ইসরায়েলের প্রবল বাধার কারণে তার প্রিয় শহর জেরুজালেমের পরিবর্তে রামাল্লায় দাফন করা হয়। ফিলিস্তিনিরা স্বপ্ন দেখছে তাদের প্রিয় নেতার কবর একদিন জেরুজালেমে স্থানান্তরিত করার। সে জন্য তাকে পাথরের কফিনে সমাহিত করা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, কবর স্থানান্তরিত করার ক্ষেত্রে ধর্মীয় বাঁধা নেই। সার্ক দেশভূক্ত পাকিস্তানেরও কোনো আপত্তি থাকার কথা না···।