এরশাদ-খালেদা জিয়ার সময় যেভাবে লেখা গেছে, ক্যারিকেচার, কার্টুন আঁকা গেছে আওয়ামী শাসনামলে সেটা ছিল স্রেফ একটা স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন! একদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (!) শহিদুল আলমকে নগ্ন পায়ে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেল। কোথায় নিয়ে গেল সেটা আবার অনেক পরে জানা গেল। কোর্টে আবার 'মাই লর্ড' বিচারক পুলিশকে জিজ্ঞেস করছেন, পুলিশ আসামীর (শহিদুল আলমের) ফোনের পাসওয়ার্ড নিয়েছে কিনা, সেদিনই লেখালেখির কফিনে পেরেক ঠোকা হয়ে গেল...!
Friday, June 29, 2007
কফিনের শক্ত পেরেকটা
আমি আগেও বলেছিলাম, আবারও বলি, ভাংচুরের নামে এরা সবচেয়ে মোটা পেরেকটা ঠুকছে এদের কফিনে। এ নিয়ে আমার একটা পোস্ট আছে, গণতন্ত্র- বড্ডো গুরুপাক।
৪ দিন আগে আমার অফিসটা গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বুলডজার দিয়ে। যদিও এটা আমার নিজস্ব সম্পদ না, কিন্ত আমার বুক ভেঙ্গে আসছিল। পিতা যেমন তাঁর সন্তানের লাশ কবরে নামাবার সময় অস্ফুটে বলতে থাকেন, আহা, আস্তে নামাও না, ও বুঝি দুকখু পায় না। তেমনি আমারও গলা ফাটিয়ে বলতে ইচ্ছা করছিল, আহারে আহারে! হায়রে নির্বোধ মানুষ- জড় পদার্থের জন্য কী মায়া!
আমার নিজের না, ভাড়ার অফিস ছিল। কিন্ত পৈত্রিকসূত্রে আমরা প্রায় ৪৫ বছর ধরে ভাড়া ছিলাম। এখানে আমি আমার অফিসের পাশাপাশি লেখালেখি করেছি, কত লেখা লিখতে গিয়ে চোখের জলে ভেসেছি। কত স্মৃতি- এক লহমায় সব হারিয়ে গেল! অনেক প্রয়োজনীয় উপাত্ত হারিয়ে গেল। বিশেষ করে আমি খুব কষ্ট পাচ্ছি, মুক্তিযুদ্ধের অনেক অমূল্য উপাত্ত আমি হারিয়েছি। বুলডজারের সামনে আমার মতো ৩ টাকা দামের কলমবাজের দাঁড়াবার শক্তি কই! নপুংসক আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম।
বেচারা বাড়িওয়ালার তো দোষ আমি খুঁজে পাই না। তিনি প্রায় ৫০ বছর ধরে নিয়মিত খাজনা দিয়েছেন। এটা তাঁর কেনা জমি। ওদিন দুম করে বাংলাদেশ রেলওয়ে, ব্রিটিশ আমলের আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের একটা ম্যাপ নিয়ে এসে বলল, এটা তাদের জায়গা।
কাহিনীটা হচ্ছে, মহারাজা থেকে আসাম বেঙ্গল রেলরাস্তা করার জন্য জায়গা চেয়ে নিয়েছিল। রেলরাস্তা বানাবার পর এরা যখন দেখল, তাদের আর জমির প্রয়োজন নেই- মহারাজার কাছে উদ্বৃত্ত জমি ফেরত দিয়ে দেয়। মহারাজা তাঁর এই জমিগুলো বিভিন্ন লোকজনকে দান করেন, বিক্রি করেন।
বেশ, তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, এই জায়গা রেলের। তাইলে ভূমি মন্ত্রানালয় ৫০ বছর ধরে নিয়ম করে খাজনা নিল কেন? এটা ভেঙ্গে ফেলার পেছনে যুক্তি কি? সরকার নিজের দখলে নিয়ে নিলেও তো পারত। বা বলত, ১ মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত হবে এটা নিয়ে কি করা হবে। এটা রেলের, না ভূমির- এটা এরা নিজারা ঠিক করে নিয়ে বললেই তো পারত, এখন থেকে এটা অমুক মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রনে। আপনি অমুক মন্ত্রণালয়কে রেভিনিউ দেবেন। এইসব সম্পদ ধ্বংস করে লাভটা কার হচ্ছে? কী পার্থক্য- আগে গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে সম্পদ বিনস্ট হতো, এখন কার নামে সম্পদগুলো বিনস্ট করা হচ্ছে।
লোকজন যে বলাবলি করে, ...ফকির বানায়া দিব। এটা কী সত্যি হবে?
এর পরিণাম কি সুদুরপ্রসারী এটা কি এঁরা বুঝতে পারছেন? এঁরা যে অসাধারণ কাজগুলো করছেন সব ঢাকা পড়ে যাচ্ছে জনগণকে কষ্ট দিয়ে। আজ যে সব অধিকাংশ সরকারী কর্মকর্তারা সাধু সাজছেন- জেলে, মজুর, পতিতা কার কাছ থেকে এরা ঘুস খাননি?
অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুনতে বড়োই ভালো লাগে। তিনি অবৈধ দখলদার হয়ে থাকলে কেন সরকার ৫০ বছর ধরে তাঁকে স্বীকার করল? তাইলে কি ধরে নেব ভূমি মন্ত্রণালয় এক সরকারের এবং রেল মন্ত্রণালয় অন্য সরকারের। আরেকটা বিষয়, যদি ব্রিটিশ আমলের ম্যাপ দিয়ে অবৈধ স্থাপনা নিশ্চিত করা হয়, বেশ তো, ভালই। তাইলে আমরা ব্রিটিশ আমলে ফিরে যাই! ওয়েল, ওই সময় লোকসংখ্যা কত ছিল? ব্রিটিশ আমলে বাংলাদেশের এই পরিধিতে লোকসংখ্যা কত হবে- বড় জোর ৫০ লাখ।
রেল তার জায়গা সমস্ত খালি করে ফেলল- এখন এই আনুমানিক বাড়তি সাড়ে ১৩ কোটি মানুষের কি হবে? উপায় একটা আছে। এই বাড়তি সাড়ে ১৩ কোটি মানুষকে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেয়া হোক। সব সমস্যার সমাধান।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment