ড· আবুল খায়ের ছিলেন ভারী আত্মভোলা টাইপের মানুষ।
একদিনের ঘটনা। তিনি নিজেই গাড়ী চালিয়ে যাচ্ছেন। সিগনালের লাল বাতি দেখে গাড়ী থামালেন। লাল বাতী সবুজ হলো । আবার লাল হলো কিন্তু এই আত্তভোলা মানুষটা গাড়ী থামিয়ে চুপচাপ গাড়ীতে বসে আছেন।
কিন্তু আল বদররা এই আলাভোলা মানুষটাকেও ক্ষমা করেনি!
ড· আবুল খায়েরের ফ্ল্যাট ছিল নীচ তলায়।
১৪ ডিসেম্বর। সকাল ৮টা।
ঘুমাবার পোষাক পায়জামা, শার্ট পরেই তিনি পায়চারী করছেন। এই আলাভোলা মানুষটা, তাঁর গায়ের চাদরটা যে তাঁর স্ত্রীর- খেয়ালই করেননি।ভাবছিলেন, কারফিউ উঠে গেলেই তিনি পরিবারের সবাইকে নিয়ে এখান থেকে অন্য কোথাও চলে যাবেন- তাঁর স্ত্রী বারবার তাগাদা দিচ্ছিলেন।
এমনি সময় আল বদরের লোকজন এসে হাজির। তাঁকে ঠিক ওই অবস্থায়ই ধরে নিয়ে গেল। আল বদরদের সঙ্গে তাঁর কি কথা হয়েছিল, তা কেউ শোনেনি!
ড· আবুল খায়ের তাঁর স্ত্রীকে কিছু বলে যেতে পারেননি!
* সূত্রঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, অষ্টম খন্ড, পৃষ্ঠাঃ ৬২৪
(এই মানুষটার শেষ কথা আমরা জানি না। কেউ কোন দিন আর এটা দেখবে না, সিগনালের বাতী লাল থেকে সবুজ হচ্ছে, সবুজ থেকে লাল- কিন্তু একটা গাড়ী থেমে আছে। ভেতরে একজন মানুষ বসে আছেন। বসে আছেন তো বসেই আছেন। চারদিকে হইচই অথচ মানুষটার বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই- একমনে কি যেন ভাবছেন। আলাভোলা, বুদ্ধিদীপ্ত এই মানুষ- যার চোখগুলো অসম্ভব ঝকঝকে- যার চোখে আটকে থাকে গোটা সুর্যটা!)