"এই দেশে আমার পছন্দের মানুষ খুব অল্প, এই অল্প মানুষদের মধ্যে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল একজন, নানা কারণে।
ড. মুহম্মদ জাফর সাদাসিদে কথায় ‘একজন অসুখী রাষ্ট্রপতি’ নামে একটি কলাম লিখেন (০৩.১১.০৬)। পড়ে বিষণ্ন হই। কেন যেন আমার মনে হচ্ছে, এইসব আলোকিত মানুষরা, এঁরা যদি এমন করে ভাবেন, লিখেন তখন ক্রমশ পায়ের নীচ থেকে মাটি সরে যায়!
ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল লিখেছেন: 'আমার কেন জানি মনে হয়, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে অসুখী মানুষ রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ। ...তাঁকে দেখে মনে হচ্ছিল তিনি শুধু অসুখী নন, তিনি ক্লান্ত, ভীত এবং আতঙ্কিত। রাষ্ট্রপতির আশেপাশে মিলিটারী পোশাক পরা এতো লোক থাকে আমি জানতাম না...।'
বেশ-বেশ! কাউকে অসুখী মনে হওয়া দোষের কিছু না কিন্তু রাষ্ট্রপতির আশেপাশে মিলিটারী পোশাক পরা লোকজন থাকেন, এটা মনে হয় অভূতপূর্ব ঘটনা? নিরাপত্তার জন্য টোকাই শ্রেণীর কেউ থাকে বলে তো শুনিনি! আপনার বিভিন্ন লেখায় পড়েছি বলেই জানি, মিলিটারীর উপর দেখি আপনার ভারী রাগ! এই মিলিটারী তো পাক-মিলিটারী না, এরা তো এ দেশেরই সন্তান! কারও বাবা, কারও ভাই...।
'তাঁর (অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ) এ দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার কথা ছিল না, অধ্যাপক বি, চৌধুরীকে অসম্মান করে সরিয়ে দেয়ার পর প্রায় হঠাৎ করেই তাঁর ওপর এ দায়িত্বটি এসে পড়ে...।'
আচ্ছা! তাঁর ওপর দায়িত্বটি এসে পড়ে, বাংলাদেশের কোন সংবিধান অনুযায়ী? আমার যতটুকু মনে পড়ে, তিনি স্বইচ্ছায় এই পদটি আগ্রহের সঙ্গে বেছে নিয়েছিলেন। বন্দুকের মুখে কেউ এই দায়িত্বটি নিতে বাধ্য করেছিল বলে তো শুনিনি। আমার তো মনে হয়, বি চৌধুরীর অসম্মানের সঙ্গে বিদায়ের পর কোন সচেতন-মর্যাদাবান মানুষের এই পদ নেয়াটা সমীচীন ছিল না!
হিষ্ট্রি রিপিট!
'১৪ দলের কর্মীদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ এবং ক্রোধ বিস্ফোরনের মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণটুকু একটা ষড়যন্ত্রের মতো, রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা, ক্রোধোম্মত্ত কর্মীরা হাতের লগি এবং বৈঠা নিয়ে এখন কি করবে...?'
আহা! সিম্পল উত্তর, মাথা ফাটাবে, পিটিয়ে মানুষ মারবে।
'তখন হাসিমুখে শেখ হাসিনা যেভাবে পুরো বিষয়টি গ্রহন করলেন তার কোন তুলনা নেই। পুরো দেশটিকে তিনি যেভাবে একটা ভয়ঙ্কর সংঘাত থেকে রক্ষা করে দিলেন, দেশের সব মানুষ সেটি মনে রাখবে। আমি খোদার কাছে তখন শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করেছি। আমার ধারণা শুধু আমি নই, এই দেশের লাখ কোটি মানুষ তার জন্য দোয়া করছে।'
অট্টহাস্য দেয়া ব্যতীত আমার বলার কিছুই নেই!
'ফিরে আসার পর তাকে ( রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দি আহম্মেদ) সিএমএইচে আটকে রাখা হলো। তিনি আবার বঙ্গভবনে ঢুকতে পারবেন বলে মনে হচ্ছিল না, অধ্যাপক বি, চৌধুরীর অপসারণ প্রক্রিয়া থেকে অল্প একটু বেশী সম্মানজনক প্রক্রিয়া! সেই সময়কার বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা তখন অনেক বাগবিতন্ডা করে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে বঙ্গভবনে সম্মানজনকভাবে ঢোকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন...।'
আহা! ক্ষমতার যার এমন মায়া, তাঁর আবার সম্মান অসম্মান নিয়ে মাথা ঘামাবার প্রয়োজন কী! ৭৬ বছর বয়স্ক, ২ কোটি টাকা দামের দুর্বল হৃদপিন্ডের একজন মানুষের প্রয়োজন কী বাড়তি দায়িত্ব নেয়ার, আর প্রয়োজনই বা কি বেছে বেছে জটিল ১১ টি দপ্তর নেয়ার!
এই কষ্ট কাকে বলি, বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের এই সাবেক অধ্যাপক, যিনি বাংলা ভাষাটা শুদ্ধ করে উচ্চারণ করতে পারেন না! তাঁর এক ভাষণে পাঁচ মিনিটের মাথায় আমি ২২টা অশুদ্ধ শব্দ নোট করে হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম।
জাফর ইকবাল নিজে শিক্ষক বলেই সম্ভবত অন্য শিক্ষকের প্রতি পক্ষপাতিত্বের দোষে দুষ্ট! হরতাল নিয়ে জনাব ইকবালের বাকেয়াজ একটা কলাম ছিল, শিক্ষা বিভাগকে হরতালের আওতামুক্ত রাখার আবেদন। বাহ, কী চমৎকার কথা, একজনের মুখের কথায় ১৪ কোটি মানুষ একটা কারাগারে আটকা পড়বে, বছরের পর বছর এটা চলতেই থাকবে, গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে! স্যার, শিক্ষা বিভাগ হরতালের আওতার বাইরে থাকলে, একজন ছাত্রী ঢাকা থেকে সিলেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে কিসে করে, ঘোড়ায় করে নাকি এম্বুলেন্সে চড়ে?"
এরপর পানি অনেক গড়িয়েছে। ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে (মতান্তরে ইয়েসউদ্দি আহম্মেদ) নিয়ে কী লিখতেন? নাকি শিক্ষক-মমতায় সোনালী রোদে বুঁদ হয়ে পক্ষপাতদুষ্টই থেকে যেতেন! জানতে বড় ইচ্ছা করে।
অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ শিক্ষক লিখিত বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন, পত্র-পত্রিকায়, 'ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ আমাদের সহকর্মী ছিলেন এই কারণে আমরা লজ্জিত'।
কিন্তু ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ নামক মানুষটা কোন লাজ ছিল বলে অন্তত আমার মনে হয় না। তিনি ছিলেন নির্বিকার, ক্ষমতার লোভে। শনৈঃ শনৈঃ ক্ষমতার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। সীমাহীন ক্ষমতার লোভে তার জিভ সক সক করছিল।
এমন ক্ষমতার লোভ রাজনীতিবিদদের থাকে বলে আমার ধারণা ছিল কিন্তু একজন শিক্ষত-মর্যাদাবান মানুষের মধ্যে এটা বিরল!